পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৬-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। বাতাস আল্লাহর তরফ থেকে আসে। এ বাতাস রহমত নিয়েও আসে। আবার আযাব নিয়েও আসে। তাই একে গাল মন্দ দিও না। বরং আল্লাহর কাছে এর কল্যাণের দিক কামনা করো ও মন্দ হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও। (শাফি’ঈ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী’র দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الرِّيحُ مِنْ روح الله تَأْتِي بِالرَّحْمَةِ وَبِالْعَذَابِ فَلَا تَسُبُّوهَا وَسَلُوا اللَّهَ مِنْ خَيْرِهَا وَعُوذُوا بِهِ مِنْ شَرِّهَا» . رَوَاهُ الشَّافِعِي وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
ব্যাখ্যা: মাজহার বলেন, (الرِّيْحُ مِنْ رُوْح ِاللهِ) আলোচ্য হাদীসাংশের অর্থ হল বাতাস আল্লাহর পক্ষ হতে আসে। এখানে (رُوْح ِاللهِ) দ্বারা আল্লাহর রহমাত বুঝানো হয়েছে বাতসের মধ্যে ভয়াবহ শাস্তি ও ক্ষতি নিহিত থাকা সত্ত্বেও বাতাসকে রহমাত হিসেবে আখ্যায়িত করার কারণ সম্পর্কে দু’টি অভিমত পরিলক্ষক্ষত হয়ঃ
১। প্রবাহিত বাতসের মধ্যে রয়েছে কাফিরদের জন্য ‘আযাব এবং মু’মিনদের জন্য রহমাত যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ্ আল আন্‘আমে ইরশাদ করেন, ‘‘অতঃপর যালিমদের মূল শিকড় কর্তিত হল সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক’’- (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৪৫)।
২। روح অর্থ رحمة নয় বরং رائح অর্থ অনুগ্রহ প্রদানকারী। অতএব এ পরিসরে হাদীসাংশের অর্থ হবে বাতাস সে বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহর পক্ষ হতে আগমন করে যা কখনো সৃষ্টি জগতের উপর শাস্তি বহন করে আনে আবার কখনো রহমাত তথা অনুগ্রহ নিয়ে আসে। যার জন্য হাদীসে বাতাসকে গালমন্দ না করে এর মন্দ দিক হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর এটা আল্লাহর পক্ষ হতে শিক্ষা আর এ শিক্ষাই বান্দার ওপর রহমাত স্বরূপ।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৭-[৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে বাতাসকে অভিসম্পাত করল। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাতাসকে অভিসম্পাত করো না। কারণ তারা আজ্ঞাবহ। আর যে ব্যক্তি এমন কোন জিনিসকে অভিশাপ দেয় যে জিনিস অভিশাপ পাবার যোগ্য নয়। এ অভিশাপ তার নিজের ওপর ফিরে আসে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَجُلًا لَعَنَ الرِّيحَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا تَلْعَنُوا الرِّيحَ فَإِنَّهَا مَأْمُورَةٌ وَأَنَّهُ مَنْ لَعَنَ شَيْئًا لَيْسَ لَهُ بِأَهْلٍ رَجَعَتِ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৮-[৮] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বাতাসকে গালি-গালাজ করো না। বরং তোমরা যখন (এতে) মন্দ কিছু দেখবে বলবে, হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে এ বাতাসের কল্যাণ দিক কামনা করছি। এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা এবং যে জন্য তাকে হুকুম দেয়া হয়েছে তার ভাল দিক চাই। আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই, এ বাতাসের খারাপ দিক হতে। যত খারাপ এতে নিহিত রয়েছে তা হতেও। এ বাতাস যে জন্য নির্দেশিত হয়েছে তার মন্দ দিক হতেও। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَسُبُّوا الرِّيحَ فَإِذَا رَأَيْتُمْ مَا تَكْرَهُونَ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৯-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটু ঠেক দিয়ে বসতেন আর বলতেন, ’’হে আল্লাহ! এ বাতাসকে তুমি রহমতে রূপান্তরিত করো। ’আযাবে পরিণত করো না। হে আল্লাহ! একে তুমি বাতাসে পরিণত করো। ঝড়-তুফানে পরিণত করো না।’’ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কিতাবে রয়েছেঃ আমি তাদের ওপর পাঠিয়েছিলাম প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি’’- (সূরাহ্ আল ক্বামার ৫৪: ১৯)। ’’আমি তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম অকল্যাণকর বাতাস’’- (সূরাহ্ আয্ যা-রিয়া-ত ৫১: ৪১)। ’’আমি বৃষ্টি-সঞ্চারী বাতাস প্রেরণ করি’’- (সূরাহ্ আল হিজর ১৫: ২২)। ’’তিনি বায়ু প্রেরণ করেন সুসংবাদ দানের জন্য’’- (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০: ৪৬)। (শাফি’ঈ, বায়হাক্বী’র দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَا هَبَّتْ رِيحٌ قَطُّ إِلَّا جَثَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم على رُكْبَتَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رَحْمَةً وَلَا تَجْعَلْهَا عَذَابًا اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رِيَاحًا وَلَا تَجْعَلْهَا رِيحًا» . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى: (إِنَّا أرسلنَا عَلَيْهِم ريحًا صَرْصَرًا)
و (أرسلنَا عَلَيْهِم الرّيح الْعَقِيم)
(وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاح لَوَاقِح)
و (أَن يُرْسل الرِّيَاح مُبَشِّرَات)
رَوَاهُ الشَّافِعِي وَالْبَيْهَقِيّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير
ব্যাখ্যা: খাত্ত্বাবী বলেন, নিশ্চয় যখন মৃদু বাতাস প্রচুর হয় মেঘ টেনে আনে আর প্রচুর বৃষ্টি হয় তখন শস্য ও বৃক্ষরাজি বৃদ্ধি হয় আর যখন মৃদু বাতাস প্রচুর হয় না আর এক ঝড় তুফান হয় তখন এ ঝড় হয় বন্দা। তাই ‘আরবরা বলে এ ঝড় বৃষ্টি বর্ষাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫২০-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশে মেঘ দেখলে কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে তার দিকেই নিবিষ্টচিত্ত হয়ে যেতেন। তিনি বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন শাররি মা- ফীহি’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই। এতে যে মন্দ রয়েছে তা হতে।)। এতে যদি আল্লাহ মেঘ পরিষ্কার করে দিতেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন। আর যদি বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হত বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা সাক্বয়ান না-ফি’আনা-’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি কল্যাণকর পানি দান করো)। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, শাফি’ঈ; শব্দাবলী তাঁর)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَبْصَرْنَا شَيْئًا مِنَ السَّمَاءِ تَعْنِي السَّحَابَ تَرَكَ عَمَلَهُ وَاسْتَقْبَلَهُ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهِ» فَإِنْ كَشَفَهُ حَمِدَ الله وَإِن مطرَت قَالَ: «اللَّهُمَّ سَقْيًا نَافِعًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه وَالشَّافِعِيّ وَاللَّفْظ لَهُ
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫২১-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেঘের গর্জন, বজ্রপাতের শব্দ শুনলে বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগাযাবিকা ওয়ালা- তুহলিকনা- বি’আযা-বিকা ওয়া ’আ-ফিনা- ক্ববলা যা-লিকা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার গজব দ্বারা মৃত্যু দিও না এবং তোমার ’আযাব দ্বারা ধ্বংস করো না। বরং এ অবস্থার আগেই তুমি আমাদের নিরাপত্তার বিধান করো।)। (আহমাদ, তিরমিযী, তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ إِذَا سَمِعَ صَوْتَ الرَّعْدِ وَالصَّوَاعِقَ قَالَ: «اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ