পরিচ্ছেদঃ ৫০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৯২-[১৩] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি তাদের নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিওয়ালে মুফাস্সালের সূরাহ্ দ্বারা ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর (প্রথম রাক্’আতে) পাঁচটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সিজদা্ করলেন। তারপর দ্বিতীয় রাক্’আতের জন্য দাঁড়ালেন। তিওয়ালে মুফাস্সালের একটি সূরাহ্ দিয়ে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর একটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। অতঃপর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে বসলেন। সূর্যগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত (বসে বসে) দু’আ করতে থাকলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فصلى بهم فَقَرَأَ بِسُورَة م الطُّوَلِ وَرَكَعَ خَمْسَ رَكَعَاتٍ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ قَامَ الثَّانِيَةَ فَقَرَأَ بِسُورَةٍ مِنَ الطُّوَلِ ثُمَّ رَكَعَ خَمْسَ رَكَعَاتٍ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ كَمَا هُوَ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ يَدْعُو حَتَّى انْجَلَى كسوفها. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দু’ রাক্‘আত আর প্রতিটি রাক্‘আতের পাঁচটি করে রুকূ' তবে হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত যা দু’রুকূ‘র হাদীসের মোকাবেলায় টিকে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৯৩-[১৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ হলে তিনি দু’ দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় শুরু করতেন ও মসজিদে বসে গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। (অর্থাৎ দু’ রাক্’আত সালাত আদায়ান্তে দেখতেন ’গ্রহণ’ শেষ হয়েছে কি-না? না হলে আবার দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন)। এভাবে ’গ্রহণ’ থাকা পর্যন্ত সালাত আদায় করতে থাকতেন। আবূ দাঊদ; নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণ লাগলে আমাদের সালাতের মতো সালাত আদায় করতে শুরু করতেন। রুকূ’ করতেন, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন।
(নাসায়ীর) অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, একদিন সূর্যগ্রহণ শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তড়িৎগতিতে মসজিদে চলে গেলেন এবং সালাত আদায় করতে লাগলেন। এ অবস্থায় সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, জাহিলিয়্যাতের সময় মানুষেরা বলাবলি করত পৃথিবীর কোন বড় মানুষ মৃত্যুবরণ করলে ’সূর্যগ্রহণ’ ও ’চন্দ্রগ্রহণ’ হয়ে থাকে। (ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়) আসলে কোন মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতে ’গ্রহণ’ হয় না। বরং এ দু’টি জিনিস (চাঁদ, সূর্য) আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিসমূহের দু’টি সৃষ্টি। আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টি জগতে যেভাবে চান পরিবর্তন আনেন। অতএব যেটারই ’গ্রহণ’ হয় তোমরা সালাত আদায় করবে। যে পর্যন্ত ’গ্রহণ’ ছেড়ে না যায়। অথবা আল্লাহ তা’আলা কোন নির্দেশ জারী না করেন (অর্থাৎ ’আযাব অথবা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) শুরু না হয়)।[1]
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ وَيَسْأَلُ عَنْهَا حَتَّى انْجَلَتِ الشَّمْسُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ. وَفِي رِوَايَةِ النَّسَائِيِّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى حِينَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ مِثْلَ صَلَاتِنَا يَرْكَعُ وَيَسْجُدُ
وَلَهُ فِي أُخْرَى: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا مُسْتَعْجِلًا إِلَى الْمَسْجِدِ وَقَدِ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى حَتَّى انْجَلَتْ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَقُولُونَ: إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ إِلَّا لِمَوْتِ عَظِيمٍ مِنْ عُظَمَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ وَإِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّهُمَا خَلِيقَتَانِ مِنْ خَلْقِهِ يُحْدِثُ اللَّهُ فِي خَلْقِهِ مَا شَاءَ فَأَيُّهُمَا انْخَسَفَ فَصَلُّوا حَتَّى ينجلي أَو يحدث الله أمرا
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, যদি হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত হয় তাহলে দু’ রাক্‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য দু’রুকূ‘ আর হাসান বসরীর হাদীসের ব্যাখ্যায় রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' নেয়া হয়েছে।
শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
যদি সূর্যগ্রহণ দীপ্তমান হওয়ার পূর্বে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হয় তাহলে পুনরায় সালাত আদায়ের প্রয়োজন নেই। বরং যিকর ও দু‘আয় ব্যাস্ত হবে দীপ্তমান হওয়া পর্যন্ত, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক্‘আতের অতিরিক্ত আদায় করেননি। এটা মালিক হাম্বালীদের মাযহাব। অনুরূপ হানাফীদের নিকট যদি সালাত আদায় করা অবস্থায় সূর্যগ্রহণ ছেড়ে যায় তাহলে সালাতের বাকী অংশ পূর্ণ করবে। আর যদি দু’সালাত একত্রিত হয় যেন সূর্যগ্রহণ সালাতের অন্য কোন সালাত যেমন জুমু‘আহ্, ফরয সালাত বা বিতর অথবা তারাবীহ। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, আমার নিকট বিশুদ্ধ মত হচ্ছে সূর্যগ্রহণ সালাতের পূর্বে ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হবে। অনুরূপ তারাবীহ ও বিতরের সাথে একত্রিত হলে তারাবীহ এবং বিতরের পূর্বে আদায় করে নিতে হবে।