পরিচ্ছেদঃ ৪৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৭২-[২০] জুনদুব ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক কুরবানীর ঈদে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। (আমি দেখলাম) তিনি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সালাম ফিরায়ে সালাত হতে অবসর হওয়া ছাড়া আর কিছু করলেন না। এ সময় তিনি কিছু কুরবানীর মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) দেখলেন, যা সালাত আদায়ের পূর্বেই যাবাহ করা হয়েছিল। তিনি তখন বললেন, যে সালাত আদায়ের আগে অথবা আমার সালাত আদায়ের আগে বর্ণনাকারীর সন্দেহ কুরবানীর পশু যাবাহ করছে সে যেন অন্য একটি কুরবানী করে নেয়।
আর এক বর্ণনায় আছে, জুনদুব বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন। তারপর ভাষণ প্রদান করলেন। এরপর কুরবানীর পশু যাবাহ করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের আগে কুরবানীর পশু যাবাহ করেছে সে যেন আর একটি পশু যাবাহ করে। আর যে যাবাহ করেনি সে যেন আল্লাহর নামে যাবাহ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
عَن جُنْدُب بن عبد الله قَالَ: شَهِدْتُ الْأَضْحَى يَوْمَ النَّحْرِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يَعْدُ أَن صلى وَفرغ من صلَاته وَسلم فَإِذا هُوَ يرى لَحْمَ أَضَاحِيٍّ قَدْ ذُبِحَتْ قَبْلَ أَنْ يَفْرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ فَقَالَ: «مَنْ كَانَ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ أَوْ نُصَلِّيَ فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ النَّحْرِ ثُمَّ خَطَبَ ثُمَّ ذَبَحَ وَقَالَ: «مَنْ كَانَ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَلْيَذْبَحْ أُخْرَى مَكَانَهَا وَمَنْ لَمْ يَذْبَحْ فليذبح باسم الله»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে কুরবানীর সময় হল ইমামের সালাত আদায়ের পরে অন্য কারও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পরে না। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা গেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৭৩-[২১] নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিনের পরেও অর্থাৎ দশই যিলহাজ্জের পরেও দু’দিন কুরবানীর দিন অবশিষ্ট থাকে। (মালিক)[1]
وَعَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ قَالَ: الْأَضْحَى يَوْمَانِ بعد يَوْم الْأَضْحَى. رَوَاهُ مَالك
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৭৪-[২২] তিনি (ইমাম মালিক) আরো বলেন, ’আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)হতেও এরূপ একটি উক্তি প্রমাণিত।[1]
وَقَالَ: وَبَلَغَنِي عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ مثله
ব্যাখ্যা: কুরবানীর দিন গণনায় ইমামগণের মতানৈক্যঃ
১। আবূ হানীফাহ্, মালিক, আহমাদ ও সওরীর অভিমত, ঈদের দিন ও এর পরে আরো দু’দিন ঈদুল আযহা ও কুরবানীর দিন। দলীল উপরোল্লিখিত হাদীস।
২। শাফি‘ঈর অভিমত, চারদিন পর্যন্ত কুরবানী বৈধ তথা কুরবানীর দিন, এরপর তাশরীকের দিনগুলো। দলীলঃ জুবায়র বিন মুত্‘ইম তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক তাশরীকের দিনগুলো যাবাহ এর দিন।
৩। ইবনু সীরিন ও হুমায়দ বিন ‘আবদুর রহমান ও দাঊদ জাহিরীর অভিমত, কুরবানী করার জন্য দিন হল মাত্র একদিন। কেননা ঈদের দিনে কুরবানীর কাজ যেমন ঈদুল ফিতরের দিন কাজ হল ফিতরাহ্ আদায় করা। আর এ দিনকে এ নামেই খাস করা হয়েছে। আর যদি বৈধ হত তাহলে বলত أَيَّامُ النَّحَرِ। কুরবানীর দিনগুলো যেমন বলা হয় أَيَّامُ مِنًى وَأَيَّامُ التَّشْرِيْقِ মিনা ও তাশরীকের দিনগুলো।
৪। সা‘ঈদ বিন জুবায়র ও জাবির বিন যায়দ-এর অভিমত নগরবাসীর জন্য শুধুমাত্র একদিন আর মিনায় অবস্থানকারীর জন্য তিনদিন। কেননা সেখানে অনেক কাজ রয়েছে যেমন কুরবানী, পাথর নিক্ষক্ষপ, ত্বাওয়াফ ইত্যাদি।
৫। ইবনু হুমাম-এর অভিমত, মুহারর্ম পর্যন্ত। দলীলঃ দারাকুতনী ইবনু শায়বাহ্ আর আবূ দাঊদ তার মারাসিলে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরবানী মুহাররমের চাঁদ উদয় পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য যে ঐ সময় উপনীত হয় বা বিলম্ব করতে চায়। এই পাঁচ রকম অভিমতের মধ্যে ইমাম শাফি‘ঈর অভিমতই বেশ শক্তিশালী ও প্রাধান্যকর।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৭৫-[২৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর বসবাস করেছেন। (আর এ দশ বছরই) তিনি একাধারে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضحي. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: অনেকে এ হাদীস দ্বারা কুরবানী করা ওয়াজিব হিসেবে দলীল প্রমাণ করে। মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, তার নিরবিচ্ছিন্নভাবে সম্পাদন করাই প্রমাণ করে ওয়াজিব শুধুমাত্র নিরবিচ্ছিন্নভাবে সম্পাদন করলে ওয়াজিব হিসেবে প্রমাণিত হয় না যা সুস্পষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৭৬-[২৪] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ কুরবানীটা কি? তিনি বললেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ এতে কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরবানীর পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে প্রতিদান রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কি হবে? (এদের পশম তো অনেক বেশী)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ؟ قَالَ: «سُنَّةُ أبيكم إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام» قَالُوا: فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ» . قَالُوا: فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَة» رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه