পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭১-[২] আবুল জা’দ আয্ যুমায়রী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা করে পরপর তিন জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার দিলে মুহর লাগিয়ে দেবেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
عَنْ أَبِي الْجَعْدِ الضُّمَيْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন যে, জুমু‘আহ্ পরিত্যাগ দ্বারা মুত্বলাক্ব বর্জন উদ্দেশ্য হতে পারে, সেটা ধারাবাহিক হোক কিংবা আলাদাভাবেই হোক, এমনকি যদি প্রতি বছরেই জুমু‘আয় তরক হয়, তবে আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয় জুমু‘আর পর মুহর মেরে দিবেন এবং এটাই হাদীসের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিয়মান হয়, আর এর দ্বারা তিন জুমু‘আহ্ লাগাতার উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন- দায়লামী কর্তৃক প্রণীত মুসনাদ আল ফিরদাওস গ্রন্থে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এবং এ হাদীসের সমর্থনে আবূ ইয়া‘লা (রহঃ) বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
من ترك الجمعة ثلاث جمع متواليات فقد نبذ الإسلام وراء ظهره.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তিন জুমু‘আহ্ লাগাতার বর্জন করল সে ইসলাম থেকে নিজেকে দূরে ঠেলে দিলো।
কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কোন কারণ ছাড়াই বর্জন করা।
‘‘আল লুম্‘আত’’ গ্রন্থে রয়েছে যে, تَهَاوُنٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ অলসতা করা, সেটা আদায়ে চেষ্টা না করা সেটার প্রতি গুরুত্ব কম দেয়া। তবে تَهَاوُنٌ দ্বারা অবজ্ঞা করা ও তুচ্ছ মনে করা উদ্দেশ্য নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কোন ফরযকে তুচ্ছ বা অবজ্ঞা করাটা কুফরী।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭২-[৩] ইমাম মালিক (রহঃ) সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম (রাঃ)থেকে।[1]
وَرَوَاهُ مَالك عَن صَفْوَان بن سليم
ব্যাখ্যা: ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন যে, আমি জানি না এটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কি-না। নিশ্চয় তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়াই তিন জুমু‘আহ্ বর্জন করবে। আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মহর মেরে দিবেন। আর সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম-এর পূর্ণ নাম হলো সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম আল মাদানী আবূ ‘আবদুল্লাহ আল ক্বারশী আয যুহরী (রহঃ), তিনি ১৩২ হিজরীতে ৭২ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭৩-[৪] আর আহমাদ (রহঃ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمد عَن أبي قَتَادَة
ব্যাখ্যা: আহমাদ ৫ম খন্ডের ৩০০ পৃষ্ঠায়, ক্বাতাদাহ্ থেকে মারফূ' সানাদে বর্ণিত, যে ব্যক্তি বিনা কারণে তিন জুমু‘আহ্ বর্জন করবে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরে মুহর মেরে দিবেন। হাদীসটির সানাদ-হাসান। যেমন- মুনযির (রহঃ) আত তারগীবে, হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায়, দারাকুত্বনী ইলাল গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭৪-[৫] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক কোন কারণ ব্যতীত জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দেবে সে যেন এক দীনার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। যদি এক দীনার পরিমাণ সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে অর্ধেক দীনার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَرَكَ الْجُمُعَةَ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلْيَتَصَدَّقْ بِدِينَارٍ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِنِصْفِ دِينَارٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন যে, এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) জুমু‘আহ্ বর্জনের পূর্ণ পাপ মিটিয়ে দিবে না, যা ওই হাদীসের বিরোধী হবে যে, যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুমু‘আহ্ বর্জন করবে তার জন্য ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবস ছাড়া কোন কাফ্ফারাহ্ নেই এবং এখানে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দ্বারা পাপ হালকা হওয়ার আশা করা যেতে পারে। আর এখানে ১ দীনার ও অর্ধ দীনার উল্লেখ করা হয়েছে পূর্ণ বিবরণের জন্য। সুতরাং তা দিরহাম বা অর্ধ দিরহাম উল্লেখের বিরোধী নয় এবং আবূ দাঊদের বর্ণনা অনুযায়ী এক সা‘ বা অর্ধ সা‘ গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) দেয়া যেতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭৫-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর আযান শুনতে পাবে, তার ওপর জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয হয়ে যায়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «الْجُمُعَةُ عَلَى مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যারা আযান শুনবে তাদের প্রত্যেকের ওপর জুমু‘আহ্ আবশ্যক। দারাকুত্বনী বর্ণনা করেছেন ও বায়হাক্বীর সূত্রে রয়েছে, ‘যে জুমু‘আহ্ আযান শুনে তার উপরই আবশ্যক।’ আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেছেন যে, এ হাদীসের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যারা আযান শুনতে পারে না তাদের ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয়, চাই জুমু‘আহ্ সংঘটিত হওয়ার শহরেই থাকুক কিংবা বাইরে থাকুক না কেন এবং আল্লামা ‘ইরাক্বী (রহঃ) শারহু আত্ তিরমিযীতে ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক ও আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় তাঁরা (ইমামত্রয়) বলেছেন যে, আযান না শুনলেও শহরবাসীর ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব। তবে জুমু‘আহ্ সংঘটিত হওয়ার শহর থেকে যারা বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ব্যাপারে বিদ্বানদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। (এখান থেকে বুঝা যায় যে, যেখানে জুমু‘আহ্ সংঘটিত হয় উক্ত স্থানই শহর)।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭৬-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার ওপরই ফরয যে তার ঘরে রাত কাটায়। (তিরমিযী, তার মতে হাদীসের সানাদ দুর্বল)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْجُمُعَةُ عَلَى مَنْ آوَاهُ اللَّيْلُ إِلَى أَهْلِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث إِسْنَاده ضَعِيف
ব্যাখ্যা: আল মাজহার (রহঃ) বলেন যে, জুমু‘আহ্ ঐ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব যার বাসস্থান এবং যে স্থানে জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয় তার মাঝে এমন দূরত্ব যে, সে জুমু‘আহ্ আদায় করার পর তার বাসস্থানে রাতের পূর্বেই ফিরতে পারবে তার ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব। হাফিয (রহঃ) ফাতহুল বারীতে এ হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, এর অর্থ হলোঃ যে জুমু‘আহ্ পড়ে রাত হওয়ার পূর্বেই তার পরিবারে ফিরতে পারবে তার ওপরই জুমু‘আহ্ ওয়াজিব।
‘‘প্রিয় পাঠক, জেনে রাখতে হবে যে, ‘উলামাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, জুমু‘আর জন্য জামা‘আত, সময়, খুতবাহ্, বালেগ বিবেকবান বা জ্ঞান সম্পন্ন, পুরুষ, স্বাধীন, সুস্থ এবং মুক্বীম হওয়া শর্ত। তবে জুমু‘আর জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা শর্ত কি-না এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে এবং তাতে অনেক মত রয়েছেন, যা ইবনু হাজার (রহঃ) উল্লেখ করেছেন ফাতহুল বারীতে (৪র্থ খন্ড, ৫০৭ পৃঃ), ইবনু হাযম উল্লেখ করেছেন আল মাহলীতে (৫ম খন্ড, ৪৬-৪৯ পৃঃ), শাওকানী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন আন নায়লুল আওতারে (৩য় খন্ড, ১০৮, ১০৯ পৃষ্ঠা)।
তন্মধ্যে একটি মত হলোঃ দু’জন, যেমন জামা‘আতের জন্য দু’জন শর্ত। এটাই আন্ নাখ্‘ঈ ও আহলুয্ যাহিরদের মত। দ্বিতীয় মত হলো, দু’জন ইমামের সাথে এবং এটা আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর মত। তৃতীয়তঃ ইমামের সাথে তিনজন, আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। চতুর্থতঃ ১২ জন, পঞ্চমতঃ ইমামের সাথে ৪ জন, এটা ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মত এবং এ দু’টো মতের যে কোন একটি গ্রহণ করার পক্ষে ইমাম আহমাদ (রহঃ) মত দিয়েছেন।
মির‘আত প্রণেতা (রহঃ) বলেনঃ আমার নিকট অধিক অগ্রগণ্য মত হলো আহলুয্ যাহিরদের মত, তা হলোঃ দু’জনের সাথেই জুমু‘আহ্ বিশুদ্ধ হবে। কেননা সংখ্যার শর্তের কোন দলীল নেই, আর সকল সালাতে দু’জনেই জামা‘আত বিশুদ্ধ হয়। আর জুমু‘আহ্ ও জামা‘আত-এর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন বক্তব্য নেই যে, এ সংখ্যা ছাড়া জুমু‘আহ্ সংঘটিত হবে না। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
জুমু‘আহ্ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্থান নিয়েও ‘উলামাদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তার সহচরবৃন্দ বলেছেন, শহর ব্যতীত জুমু‘আহ্ সঠিক হবে না। ইমামত্রয় বলেছেন, শহর ও গ্রামে সবখানেই জুমু‘আহ্ বৈধ। হানাফীগণ ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত ‘‘জামে' শহর ব্যতীত জুমু‘আহ্ হবে না’’ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। আহমাদ এটিকে য‘ঈফ বলেছেন, তবে আমাদের নিকট ইমামত্রয়ের মতই গ্রহণযোগ্য ও অগ্রগণ্য যে, জুমু‘আর জন্য শহরবাসী হওয়া শর্ত নয় বরং তা গ্রামবাসীর জন্যও বৈধ, কারণ সূরাহ্ আল জুমু‘আর ৯নং আয়াতটি ‘আম এবং মুত্বলাক্ব।
গ্রামে জুমু‘আহ্ পড়া শারী‘আত সম্মত, এর উপর ইমাম বুখারী (রহঃ) ও অন্যান্যের বর্ণনায় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত (মাসজীদে নাবাবীতে সংঘটিত জুমু‘আর পর প্রথম জুমু‘আহ্ হয়েছিল যাওয়াই গ্রামের ‘আবদুল ক্বায়স গোত্রের মাসজিদ যা ছিল বাহরাইনের একটি গ্রাম [যাওয়াই]) হাদীস প্রমাণ করে। আর বায়হাক্বীর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমনের সময় মদীনাহ্ এবং কুবা-এর মধ্যবর্তী গ্রামে প্রথম জুমু‘আহ্ আদায় করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত ফরয
১৩৭৭-[৮] ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জামা’আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। ওই চার ব্যক্তি হলো (১) গোলাম যে কারো মালিকানায় আছে, (২) নারী, (৩) বাচ্চা, (৪) রুগ্ন ব্যক্তি। (আবূ দাঊদ; শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে মাসাবীহ কিতাবের মূল পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা ওয়ায়িল গোত্রের এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণিত।)[1]
وَعَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلَّا عَلَى أَرْبَعَةٍ: عَبْدٍ مَمْلُوكٍ أَوِ امْرَأَةٍ أَوْ صَبِيٍّ أَوْ مَرِيضٍ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ بِلَفْظِ الْمَصَابِيحِ عَنْ رَجُلٍ مِنْ بني وَائِل
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কয়েকটি বিষয়ের দলীল রয়েছে,
(১) সালাতুল জুমু‘আহ্ ফারযে আইন, যারা বলেন তা ফারযে কিফায়াহ্- তাদের কথা প্রত্যাখ্যাত।
(২) আর জুমু‘আহ্ জামা‘আত ব্যতীত সঠিক নয় এর উপর ইজমা রয়েছে।
(৩) এতে জুমু‘আহ্ ওয়াজিব হওয়ার জন্য স্বাধীন হওয়া শর্ত, আর দাসের ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয় এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।
(৪) জুমু‘আহ্ ফরয হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত, নারীর ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ নারীদের জন্য স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে জুমু‘আয় উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব।
(৫) জুমু‘আহ্ ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালেগ হওয়া শর্ত, শিশুর ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয়। এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের ঐকমত্য রয়েছে।
(৬) পাগলও এ অর্থের অন্তর্ভুক্ত। এমন অসুস্থতা যে, জুমু‘আয় আসা তার জন্য দুঃসাধ্য। তার উপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয়।
(৭) জুমু‘আহ্ ওয়াজিব হওয়ার জন্য সুস্থ দেহ হওয়া শর্ত।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মাসাবীহের শব্দে এরূপ রয়েছে,
تجب الجمعة على كل مسلم إلا امرأة أو صبياً أو مملوكاً أو مريضاً
অর্থাৎ মহিলা, শিশু-দাস ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত সবার ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব। আর শারহুস সুন্নাহর শব্দে রয়েছে, যা উল্লেখ করেছেন আল্লামা ক্বারী (রহঃ)
تجب الجمعة على كل مسلم إلا امرأة أو صبي أو مملوك.
অর্থাৎ মহিলা, শিশু কিংবা দাস ব্যতীত প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব।