পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪১-[১] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন মাসে রোযাহীন কাটাতেন। এমনকি আমরা মনে করতাম, তিনি হয়তো এ মাসে সওম পালন করবেন না। আবার তিনি সওম পালন করতে থাকতেন। আমরা ধারণা করতাম, তিনি বুঝি এ মাসে সওম পালন করা ছাড়বেন না। তুমি যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা অবস্থায় দেখতে চাও, তাহলে দেখতে পাবে তিনি সালাত আদায় করেছেন। আবার তুমি যদি ঘুম অবস্থায় দেখতে চাও তাহলে দেখতে পাবে তিনি ঘুমাচ্ছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ مِنَ الشَّهْرِ حَتَّى يُظَنَّ أَنْ لَا يَصُومَ مِنْهُ وَيَصُومُ حَتَّى يُظَنَّ أَنْ لَا يُفْطِرَ مِنْهُ شَيْئًا وَكَانَ لَا تَشَاءُ أَنْ تَرَاهُ مِنَ اللَّيْلِ مُصَلِّيًا إِلَّا رَأَيْتَهُ وَلَا نَائِمًا إِلَّا رَأَيْتَهُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن انس قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يفطر من الشهر حتى يظن ان لا يصوم منه ويصوم حتى يظن ان لا يفطر منه شيىا وكان لا تشاء ان تراه من الليل مصليا الا رايته ولا ناىما الا رايته. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের অর্থ হলো আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তুমি যদি তাহাজ্জুদ পড়া অবস্থায় দেখতে চাইতে দেখতে পেতে আবার রাত্রিতে নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে চাইলেও দেখতে পারতে। তার সকল কর্মকান্ড ও ‘ইবাদাত ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং মাধ্যম পন্থার। কোন ‘ইবাদাতেই তিনি সীমালঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ী করতেন না। রাতের প্রথমার্ধে তিনি ঘুমাতেন দ্বিতীয়ার্ধে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, রমাযান ছাড়া কোন মাসেই তিনি পূর্ণ এক মাস সওম পালন করতেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪২-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর নিকট বান্দার সবচেয়ে প্রিয় ’আমল হলো সর্বদা তা করা যদি (পরিমাণে) কমও হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى الله أدومها وَإِن قل»

وعن عاىشة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «احب الاعمال الى الله ادومها وان قل»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি একটি প্রশ্নের উত্তরে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী এবং মুসলিম গ্রন্থে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আল্লাহর কাছে প্রিয় ‘আমল কোন্টি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারই প্রেক্ষিতে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রিয় ‘আমল হলো যা সর্বদা করা হয়, যদিও তা কম হয়।’

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে ‘আমল ক্ষুদ্র হলেও তা সদা-সর্বদা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। সদা সর্বদা কৃত ক্ষুদ্র ‘আমল বিচ্ছিন্ন বা ঘটাক্রমে আদায়কৃত বৃহৎ ‘আমলের চেয়ে উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৩-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যত পরিমাণ তোমরা সমর্থ রাখো তত পরিমাণ ’আমল করো। এজন্য আল্লাহ তা’আলা সাওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ তোমরা ক্লান্ত না হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذُوا مِنَ الْأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يمل حَتَّى تملوا»

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خذوا من الاعمال ما تطيقون فان الله لا يمل حتى تملوا»

ব্যাখ্যা: সালাতসহ সকল প্রকার নেক ‘আমল সাধ্য মোতাবেক করতে হবে। পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যায় তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সহীহ মুসলিমে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাওলা নাম্নী এক মহিলা ‘আয়িশার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকটেই ছিলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললাম এই যে হাওলা, লোকেরা মনে করে সে রাতে ঘুমায় না, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাতে ঘুমায় না! অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারই শানে এ হাদীসটি বর্ণনা করলেন। হাদীসটি শুধু রাতের ‘ইবাদাত সালাতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হলেও সকল ‘ইবাদাতেই এর বিধান ও হুকুম প্রযোজ্য। এতে নারী পুরুষেরও কোন ভেদাভেদ নেই।

‘ইবাদাত কম হলেও সেটি প্রফুল্লচিত্তে এবং সাধ্যের মধ্যে থেকে করতে হবে। সর্বোপরি তা সর্বদা করতে হবে। কষ্ট ক্লেশ করে বিরক্তির সাথে ‘ইবাদাত করা উচিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা তো বেশি বেশি ‘ইবাদাতকারীর সাওয়াব দিতে ক্লান্তও হবেন না বিরক্তও হবেন না, কিন্তু এমনটি যেন না হয় যে, বান্দাই শেষে ক্লান্ত বিরক্ত হয়ে ‘ইবাদাত ছেড়ে নিষ্ক্রান্ত হয়ে পড়ে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৪-[৪] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কারো উচিত ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত আদায় করা যতক্ষণ সে প্রফুল্ল বা সতেজ থাকে। ক্লান্ত হয়ে গেলে সে যেন বসে যায় (অর্থাৎ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِيُصَلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ وَإِذَا فَتَرَ فَلْيَقْعُدْ)

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليصل احدكم نشاطه واذا فتر فليقعد)

ব্যাখ্যা: ইতিপূর্বেও আলোচনা হয়েছে, ‘ইবাদাত প্রফুল্লচিত্তে সম্পাদন করতে হবে। ‘ইবাদাতের মধ্যে বিশেষ করে সালাতের মধ্যে অলসতা, দুর্বলতা অথবা ক্লেশ ক্লান্তি আসলে ঐ অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পাদন করা মোটেও উচিত নয়। দাঁড়িয়ে সালাত আদায় রত অবস্থায় যদি এরূপ দুর্বলতা এসে যায় তবে বাকী সালাতটুকু বসে আদায় করবে। আর যদি সালাম ফিরানোর পর এ অবস্থা দেখা দেয় তাহলে বাকী রাক্‘আতগুলোর জন্য আর দাঁড়াবে না। পারলে বসেই আদায় করবে, না পারলে বিরত থাকবে। সালাত শুরু করার পর মাঝ সালাতে যদি এ অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে এ নফল সালাতের ক্ষেত্রে বাকী সালাতটুকু ছেড়ে দিবে। ইমাম মালিক (রহঃ) অবশ্য এই ছেড়ে দেয়ার পক্ষপাতি নন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৫-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা অবস্থায় ঝিমাতে শুরু করে তবে সে যেন ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুম দূর না হওয়া পর্যন্ত। কারণ তোমাদের কেউ যখন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে (ঘুমের কারণে) সে জানতে পারে না (সে কি পড়ছে)। হতে পারে সে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করতে গিয়ে (ঝিমানীর কারণে নিজে) নিজেকে গালি দিচ্ছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لَا يدْرِي لَعَلَّه يسْتَغْفر فيسب نَفسه»

وعن عاىشة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا نعس احدكم وهو يصلي فليرقد حتى يذهب عنه النوم فان احدكم اذا صلى وهو ناعس لا يدري لعله يستغفر فيسب نفسه»

ব্যাখ্যা: পূর্বে এ জাতীয় অবস্থার ব্যাখ্যা কিঞ্চিৎ অতিবাহিত হয়েছে। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অবস্থায় তন্দ্রা অথবা ঝিমুনী আসলে সালাত ত্যাগ করে নিদ্রা দূর না হওয়া পর্যন্ত শুয়ে থাকবে। কেননা ঝিমুনী, তন্দ্রা ইত্যাদি অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা থাকে না। এ অবস্থায় সালাত আদায় করতে হয়তো সে নিজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে কিন্তু নিজের অজান্তে সেটা তার মুখ থেকে বদ্দু‘আর শব্দ বেরিয়ে আসছে। এ বিধান কি সকল সালাতের জন্যই প্রযোজ্য নাকি রাতের নফল বা তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য? এ প্রশ্নে ইমাম মালিকসহ একদল ‘আলিমের মতে এটা রাতের নফল সালাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কিন্তু জমহূরের মত তার বিপরীত। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি বিশেষ ব্যক্তির বিশেষ সালাতকে কেন্দ্র করে এসেছে কিন্তু এর শিক্ষা ও হুকুম সর্বজনীন। সুতরাং এটা ফরয এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তবে সময়ের মধ্যেই তা আদায় করে নিতে হবে। এ হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত যে, তন্দ্রা ও ঝিমুনীর দ্বারা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ও সালাত কোন কিছুই ভেঙ্গে যায় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৬-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয়ই দীন সহজ। কিন্তু যে লোক দীনকে কঠিন করে তুলে, দীন তাকে পরাভূত করে দেয়। অতএব দীনের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন ও সাধ্য অনুযায়ী ’আমল কর (নিজকে ও অন্যকে) শুভ সংবাদ দাও, আর সকাল-সন্ধ্যা এবং রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। (বুখারী)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيْءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الدين يسر ولن يشاد الدين احد الا غلبه فسددوا وقاربوا وابشروا واستعينوا بالغدوة والروحة وشيء من الدلجة» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘ইবাদাতে কঠোরতা অবলম্বন উচিত নয় বর এক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। দীনের কাজ প্রতিপালনের জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত দেয়ার মাধ্যমে দীন থেকে মানুষকে দূরে রাখা যাবে না বরং তা সহজ করে তুলে ধরা এবং মানুষকে সুসংবাদ প্রদান করা উচিত। সকাল-সন্ধ্যা এবং শেষ রাতের ‘ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করা উচিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৭-[৭] ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন লোক রাতের বেলা তার নিয়মিত ’ইবাদাত অথবা তার আংশিক না করে শুয়ে গেল। তারপর সে ফাজ্‌র (ফজর) ও যুহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা করে নিলে যেন সে রাতেই তা পড়েছে বলে লিখে নেয়া হয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَن عمر رَضِي الله ع نه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ فَقَرَأَهُ فِيمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الظُّهْرِ كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْل» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عمر رضي الله ع نه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من نام عن حزبه او عن شيء منه فقراه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كتب له كانما قراه من الليل» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: রাতের নির্দিষ্ট ওয়াযীফা অথবা কুরআন তিলাওয়াতের চলমান অভ্যাস বা ‘আমল রেখে কেউ যদি ঘুমিয়ে যায় তাহলে সে ফাজ্‌র (ফজর) ও যুহরের সালাতের মাঝ সময়ের মধ্যে তা পূর্ণ করে নিবে। তার এ কর্ম রাত্রিতে পাঠের ফাযীলাতের ন্যায়ই হবে। ইমাম কুরতুবী বলেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। আর তা ঐ ব্যক্তির জন্য যে, নিয়্যাত করেছিল রাত্রিতে উঠে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং অন্যান্য ওয়াযীফা করবে কিন্তু হঠাৎ নিদ্রার কারণে তা করতে পারেনি। এর জন্য সে অনুশোচনা করে, আল্লাহ তাকেই রাতের ফাযীলাত দান করেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৮-[৮] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে আদায় করবে। যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে আদায় করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে (শুয়ে) কাত হয়ে আদায় করবে। (বুখারী)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تستطع فعلى جنب» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عمران بن حصين قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «صلى الله عليه وسلم قاىما فان لم تستطع فقاعدا فان لم تستطع فعلى جنب» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এটা ফরয সালাতের কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এমনিতেই বসে আদায় করা বৈধ। মূলত ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন বাউশী রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কষ্টকর হয়ে পড়ে, এ জন্য তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেন, তার-ই প্রেক্ষিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। এতে প্রমাণিত যে, সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য সালাতের মধ্যে দন্ডায়মান হওয়াটা ওয়াজিব। এজন্য জমহূরের মতে নৌকায় আরোহীদের সাধ্য হলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে, তাও না পারলে শুয়ে। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদসহ আরো কতিপয় ইমাম বলেন, সক্ষমতা শর্ত নয় বরং দাঁড়াতে কষ্ট অনুভব হলেই বসে পড়বে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস তাদের এ দাবির পক্ষে প্রামাণ্য দলীল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে তার যদি কষ্ট হয় তবে বসে, তাও যদি কষ্ট হয় তবে শুয়ে ইশারার সাথে সালাত আদায় করবে।

বসে সালাত আদায় করলে কিভাবে বসবে এ নিয়ে নানা কথা; হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘মুসল্লীর জন্য যেভাবে বসলে সুবিধা হয় সেভাবেই বসবে। আর শুয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে হলে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) সামনে নিয়ে ডান কাতে শুবে। তবে কতিপয় শাফি‘ঈ এবং হানাফী চিৎ হয়ে শুয়ে ক্বিবলার দিকে পা রাখার পক্ষপাতি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা

১২৪৯-[৯] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি কোন লোকের বসে বসে (নফল) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি দাঁড়িয়ে পড়ত ভাল হতো। যে লোক বসে বসে নফল সালাত আদায় করবে সে দাঁড়িয়ে পড়া লোকের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। আর যে লোক শুয়ে সালাত আদায় করবে সে বসে পড়া ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। (বুখারী)[1]

بَابُ الْقَصْدِ فِي الْعَمَلِ

وَعَن عمرَان بن حُصَيْن: أَنَّهُ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلَاةِ الرَّجُلِ قَاعِدًا. قَالَ: «إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَائِمِ وَمَنْ صَلَّى نَائِمًا فَلَهُ نصف أجل الْقَاعِد» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عمران بن حصين: انه سال النبي صلى الله عليه وسلم عن صلاة الرجل قاعدا. قال: «ان صلى قاىما فهو افضل ومن صلى قاعدا فله نصف اجر القاىم ومن صلى ناىما فله نصف اجل القاعد» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)-এর পূর্ব বর্ণিত হাদীসের ভিন্ন হাদীস এটি। তিনি বসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরে বলেন, তুমি যদি দাঁড়িয়ে আদায় করা সেটাই উত্তম। বসে আদায় করলে দাঁড়ানো ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। ইমাম খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এ হুকুম নফল সালাতের জন্য প্রযোজ্য ফার্‌যের (ফরযের/ফরজের) বেলায় নয়। কেননা সামর্থ্যবান ব্যক্তির ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বসে আদায় করা বৈধ নয়। ইমাম নাবাবী বলেনঃ ‘উলামাদের ইজমা বা সর্ববাদী সম্মত মতে এ হুকুম নফলের বেলায়, ফার্‌যের (ফরযের/ফরজের) বেলায় নয়। ফরয সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করতে যদি অক্ষম হয় তাহলে বসে আদায় করাবে আর এ সময় বসে আদায় করলে সাওয়াব কম হবে না। অনুরূপ দাঁড়িয়ে অথবা বসে সালাত আদায়ে সক্ষম ব্যক্তি যদি শুয়েই নফল সালাত আদায় করে তার জন্যও বসা ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব মিলবে। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, বিনা ওযরে নফল সালাত শুয়ে আদায় করা বৈধ।

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, শায়িতাবস্থায় যারা নফল সালাত আদায় জায়িয মনে করেন না তাদের বিরুদ্ধে এ হাদীস সুস্পষ্ট এবং বলিষ্ঠ প্রামাণ্য দলীল। শাফি‘ঈগণ বলেন, এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যই বিশেষত্ব ছিল, অন্যের জন্য বৈধ নয়। সুতরাং এ নিয়ে ‘আলিমদের মধ্যে ইখতিলাফ বিদ্যমান রয়েছে। জমহূরের মত হলো, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শুয়ে সালাত আদায়ের বৈধতা কেবল নফলের জন্যই প্রযোজ্য ফারযের জন্য নয়। অন্য এক শ্রেণীর ‘আলিমের মতে এটা ফার্‌যের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। ইমাম খাত্ত্বাবী এ মত পোষণ করেন। খাত্ত্বাবীর সিদ্ধান্ত হলো দাঁড়াতে সক্ষম তবে কষ্টসাধ্যে বসে ফরয সালাত আদায় করা, বসতে সক্ষম তবে কষ্টসাধ্যে শুয়ে ফরয সালাত আদায় করা বৈধ এবং এতে সে অর্ধেক সাওয়াব পাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে