পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
আস্ সাহু (সালাতে) ভুলে যাওয়া
সালাতে ভুল হলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার বিধান সর্ম্পকে বিদ্বানগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে।
শাফি’ঈদের মতে সকল প্রকার ভুলের জন্য সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা সুন্নাত।
মালিকীদের মতে ভুলের কারণে সালাতে কমতি হলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব। তবে বৃদ্ধি হলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব নয়।
হানাবেলাদের মতে ভুলের কারণে ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব। সালাতে যে সমস্ত দু’আ বা তাসবীহ সুন্নাত তাতে ভুল হলে সিজদা্ করা ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে ভুলের কারণে সালাতে কোন বৃদ্ধি হলে অথবা ইচ্ছাকৃত যে কথা বললে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে যায় এমন কোন কথা ভুলবশতঃ বলে ফেললে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব। তবে সালাতের কোন রুকন ছুটে গেলে সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) যথেষ্ট নয় বরং ঐ রুকন আদায় করে সিজদা্ করতে হবে।
হানাফীদের মতে সকল ভুলের কারণে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব।
১০১৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালে তার নিকটে শায়ত্বন (শয়তান) আসে। সে তাকে সন্দেহ-সংশয়ে ফেলে দেয়, এতে সে স্মরণ রাখতে পারে না কত রাক্’আত সালাত সে আদায় করছে। তাই তোমাদের কোন ব্যক্তি এ অবস্থাপ্রাপ্ত হলে সে যেন (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السَّهْوِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن أحدكُم إِذا قَامَ يُصَلِّي جَاءَهُ الشَّيْطَان فَلبس عَلَيْهِ حَتَّى لايدري كَمْ صَلَّى؟ فَإِذَا وَجَدَ ذَلِكَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سجدين وَهُوَ جَالس»
ব্যাখ্যা: (جَاءَهُ الشَّيْطَان) ‘‘তার নিকট শায়ত্বন (শয়তান) আসে’’ অর্থাৎ সালাতের জন্য বিশিষ্ট শায়ত্বন (শয়তান) যার নাম খিনযাব সে আগমন করে সালাতে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশে।
‘‘সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা্ করে’’ আবূ দাঊদের বর্ণনায় ‘সালাম ফেরানোর পূর্বে’ অংশটুকু অতিরিক্ত আছে। ইবনু মাজাহ্-তে ও যুহরী সূত্রে ইবনু ইসহাক কর্তৃক বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশ রয়েছে। আবূ দাঊদ এ অতিরিক্ত অংশকে ত্রুটিযুক্ত বলে অবিহিত করেছেন। কেননা যুহরী থেকে বর্ণনাকারী হাফিযগণ যেমনঃ ইবনু ‘উয়াইনাহ্ মা‘মার লায়স ও মালিক প্রভৃতি রাবীগণ এ অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করেননি।
তবে দারাকুত্বনীতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘‘সালামের পূর্বে বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে’’ এর সানাদ সূত্র শক্তিশালী।
আবূ দাঊদে যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্র থেকে তার চাচা যুহরী থেকেও বর্ণিত আছে সালামের পূর্বে বসা অবস্থায় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। ইবনু ইসহাক্ব থেকেও যুহরী সূত্রে আবূ দাঊদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। আল আলায়ী বলেনঃ এই অতিরিক্ত অংশটির সকল সূত্র একত্র করলে তা অবশ্যই হাসানের মর্যাদার কম নয়। অতএব আবূ দাঊদ এই অতিরিক্ত অংশকে ত্রুটিযুক্ত বললেও আল ‘আলায়ী এ অংশটিকে দলীলযোগ্য বলে ব্যক্ত করেছেন। আর এটিই সঠিক। কেননা এটি সিকাহ রাবী কর্তৃক বর্ধিত অংশ যা অন্য সিকাহ রাবীর বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই এ অংশটি গ্রহণযোগ্য। তবে হ্যাঁ আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও বায়হাক্বীতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার থেকে মারফূ‘ রূপে বর্ণিত ‘যে ব্যক্তি সালাতে সন্দেহে নিপতিত হয় সে যেন সালামের পরে দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দেয়’। তাই বলা যায় বিষয়টির ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা নেই। সালামের আগে ও সালামের পরে উভয় পদ্ধতিতেই সাহু সিজদা্ দেয়া যায়।
পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০১৫-[২] ’আত্বা বিন ইয়াসার (রহঃ) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সালাতের মধ্যে সন্দেহ করে যে, সে কতটুকু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে? তিন রাক্’আত না চার রাক্’আত, তাহলে সে যেন সন্দেহ দূর করে। যে সংখ্যার উপর তার দৃঢ়তা সৃষ্টি হয় তার ওপর নির্ভর করবে। তারপর সালাতের সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টো সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। যদি সে পাঁচ রাক্’আত সালাত আদায় করে থাকে তাহলে এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) এ সালাতকে জোড় সংখ্যায় (ছয় রাক্’আতে) পরিণত করবে। যদি সে পুরো চার রাক্’আত আদায় করে থাকে তাহলে এ দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শায়ত্বন (শয়তান) কে লাঞ্ছনাকারী গণ্য হবে। (মুসলিম; ইমাম মালিক এ হাদীসটিকে ’আত্বা হতে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছে যে, সালাত আদায়কারী এ দু’ সিজদা্ দিয়ে পাঁচ রাক্’আতকে জোড় সংখ্যা বানাবে।)[1]
بَابُ السَّهْوِ
وَعَن عَطاء بن يسَار وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَلَمْ يَدْرِ كَمْ صَلَّى ثَلَاثًا أم أَرْبعا فليطرح الشَّك وليبن عَلَى مَا اسْتَيْقَنَ ثُمَّ يَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ فَإِنْ كَانَ صَلَّى خَمْسًا شَفَعْنَ لَهُ صَلَاتَهُ وَإِنْ كَانَ صَلَّى إِتْمَامًا لِأَرْبَعٍ كَانَتَا تَرْغِيمًا لِلشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَرَوَاهُ مَالِكٌ عَنْ عَطَاءٍ مُرْسَلًا. وَفِي رِوَايَتِهِ: «شَفَعَهَا بِهَاتَيْنِ السَّجْدَتَيْنِ»
ব্যাখ্যা: ‘যখন তোমাদের কারো সালাতে সন্দেহ হয়’ জেনে রাখা ভাল যে, ফিক্বাহদের মতে কোন কিছু সংঘটিত হওয়া বা না হওয়া উভয় ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাকে ‘শাক্ক’ (সন্দেহ) বলে। আর উসূলবিদদের মতে কোন কিছু সংঘটিত হওয়া বা না হওয়ার ক্ষেত্রে উভয়টি যদি সমান সন্দেহ হয় তাকে ‘শাক্ক’ বলে। পক্ষান্তরে উভয় ক্ষেত্রের কোন একটির প্রতি যদি মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাকে ‘যান্ন’ বলে। আর যে দিকের মাত্রা কম থাকে তাকে ‘ওয়াহাম’ বলে। ইমাম আবূ হানীফার মতে ‘শাক্ক’ অর্থ সন্দেহের মাত্রা কোন দিকে বৃদ্ধি না পাওয়া (فَلْيَطْرَحِ الشَّكَّ) শাক্ক পরিত্যাগ করবে, অর্থাৎ যে কাজটি হওয়া সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে কাজের সে অংশটি পরিত্যাগ করবে যেমন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিন রাক্‘আত হয়েছে এক্ষেত্রে সন্দেহ চতুর্থ রাক্‘আত নিয়ে, অতএব চতুর্থ রাক্‘আত হয়নি ধরে নিয়ে তৃতীয় রাক্‘আতের উপর ভিত্তি করে বাকী সালাত সম্পন্ন করবে। হাদীসে বর্ণিত ‘ইয়াকীনের উপর ভিত্তি করবে’ এর উদ্দেশ্য এটাই।
(قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ) ‘সালামের পূর্বে’ এ অংশটুকু তাদের দলীল যারা বলেন যে, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সাহু সালাতের পূর্বে করতে হবে।
(شَفَعْنَ لَه صَلَاتَه) মুসল্লীর সালাতকে জোড় বানিয়ে দিবে। সিন্দী বলেনঃ সাহু সিজদা্ দু’টি ৬ষ্ঠ রাক্‘আতের সমুতুল্য হবে। অর্থাৎ পাঁচ রাক্‘আত সালাত আদায় করার পর সাহু সিজদা্ দ্বারা তার সালাত ছয় রাক্‘আতে পরিণত হবে। ফলে তার সালাত জোড় সালাত হবে বিজোড় হবে না। আর এ দু’ রাক্‘আত নফল সালাত বলে গণ্য হবে।
(كَانَتَا تَرْغِيمًا لِلشَّيْطَانِ) প্রকৃতপক্ষে যদি তার সালাত চার রাক্‘আত হয়ে থাকে তবে তার সাহু সিজদা্ শায়ত্বনের (শয়তানের) লজ্জার কারণ হবে। অর্থাৎ শায়ত্বন (শয়তান) মুসল্লীর হৃদয়ে খটকা সৃষ্টি করে সালাত বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ মুসল্লীর জন্য পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সে উক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে তার সালাত বিনষ্ট হতে মুক্ত করল। আর যে সিজদা্ না করায় শায়ত্বন অভিশপ্ত হয়েছিল তা পালন করে আদম সন্তান তার সালাত পূর্ণ করল। আর এটাই হল শায়ত্বনের (শয়তানের) লজ্জিত হওয়ার কারণ।
(شَفَعَهَا بِهَاتَيْنِ السَّجْدَتَيْنِ) বিজোড় সালাতকে এ দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দ্বারা জোড় বানিয়ে নিলো। অর্থাৎ ইয়াকীনের উপর ভিত্তি করে সালাত আদায়ের কারণে যদি তার সালাত পাঁচ রাক্‘আত হয়ে থাকে তাহলে এ সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দু’টো তার সালাতকে ছয় রাক্‘আতে পরিণত করে তা জোড় সালাতে পরিণত করলো।
পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০১৬-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাঁচ রাক্’আত আদায় করে নিলেন। তাঁকে বলা হলো, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, কি হয়েছে? সাহাবীরা বললেন, আপনি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাঁচ রাক্’আত আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরানোর পরে দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে নিলেন।
আর এক সূত্রে এ শব্দগুলোও আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আমিও একজন মানুষ। তোমাদের যেমন ভুল হয়, আমারও তেমন ভুল হয়। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাতে সন্দেহ করলে সে যেন সঠিকটি চিন্তা-ভাবনা করে এবং সে সঠিক চিন্তার উপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করে। তারপর সে যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টো সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السَّهْوِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الظُّهْرَ خَمْسًا فَقِيلَ لَهُ: أَزِيدَ فِي الصَّلَاةِ؟ فَقَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالُوا: صَلَّيْتَ خَمْسًا. فَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ بَعْدَمَا سَلَّمَ. وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِي وَإِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَتَحَرَّ الصَّوَابَ فَلْيُتِمَّ عَلَيْهِ ثُمَّ لِيُسَلِّمْ ثمَّ يسْجد سَجْدَتَيْنِ»
ব্যাখ্যা: (وَمَا ذَاكَ؟) ‘কি হয়েছে?’ অর্থাৎ সালাতে বৃদ্ধি করা হয়েছে তোমাদের এ প্রশ্ন কেন?
মুসলিমের বর্ণনায় আছে ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করার পর লোকজন আপোসে গোলমাল করতে থাকলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কি হয়েছে? তখন তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ ‘না’ এ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সাহাবীগণের এ প্রশ্ন ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রশ্ন করার পর।
‘‘অতঃপর তিনি সালাম ফেরানোর পর দু’টি সিজদা্ করলেন’’। যারা বলেনঃ সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হবে সালাম ফেরানোর পর এ হাদীস তাদের দলীল। তবে তাদের এ দলীলের সমালোচনায় বলা হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পূর্বে তার এ অতিরিক্ত রাক্‘আতের কথা অবহিত হননি বরং সালাম ফেরানোর পর তা অবহিত হয়েছেন। আর এ অবস্থায় সকল বিদ্বানদের মতেই সালামের পরে সাহু সিজদা্ করতে হবে। কেননা সালামের পূর্বে তা করা সম্ভব নয় অবহিত না হওয়ার কারণে। আর এটাও বলা হয়ে থাকে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা এ কাজ সংঘটিত হয়েছে তা বৈধতার বর্ণনা স্বরূপ। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সাহু সালামের পূর্বে ও সালামের পরে উভয় অবস্থায় পালন করার অবকাশ রয়েছে।
হাদীসের শিক্ষাঃ
- কোন ব্যক্তি যদি চার রাক্‘আত সালাত আদায়ের পর ভুলবশতঃ দাঁড়িয়ে যায় এবং পাঁচ রাক্‘আত সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত বিনষ্ট হবে না।
- ভুলবশতঃ সালাতে বৃদ্ধি করলেও সালাত বিনষ্ট হয় না।
- সালাত সংশোধনের নিমিত্তে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বললে সালাত বিনষ্ট হয় না।
- ভুলবশতঃ ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) ভিন্ন অন্যদিকে সালাত আদায় করলে তার সে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।
(إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ) ‘আমি তোমাদের মতই মানুষ’ অর্থাৎ মানাবীয় সকল গুণাবলীতে আমি তোমাদেরই মতো তবে পার্থক্য এই যে, আমার নিকট ওয়াহী আসে যা তোমাদের নিকট আসে না।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মানবীয় গুণাবলীর ঊর্ধ্বে মনে করেন এ হাদীস তাদের বিপক্ষে দলীল। বরং তিনি মানবীয় সকল গুণের অধিকারী। ‘আমিও ভুলে যাই যেমন তোমরা ভুলে যাও’।
এ কথা প্রমাণ করে যে ভুলে যাওয়া বা ভুল হওয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে তিনি দীন প্রচারের ক্ষেত্রে ভুল করেন না। এক্ষেত্রে ইজমা রয়েছে যেমনটি ‘আয়ায বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০১৭-[৪] ইবনু সীরীন (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপরাহ্নের দু’ সালাতের (যুহর অথবা ’আসরের) কোন এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আমাদেরকে নিয়ে আদায় করালেন, যার নাম আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছিলেন, কিন্তু আমি ভুলে গেছি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সাথে নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তারপর সালাম ফিরালেন। পরপরই মসজিদে আড়াআড়িভাবে রাখা একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল যে, তিনি খুব রাগতঃ অবস্থায় আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন এবং স্বীয় ডান মুখমণ্ডল কে বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাদের তাড়া আছে তারা জলদি মসজিদের বিভিন্ন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তারা বলতে লাগলো, সালাতকে কমানো হয়েছে? যারা তখনো মসজিদে ছিল তাদের মধ্যে আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ)ও ছিলেন। কিন্তু তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল।
সাহাবীদের মধ্যে এক ব্যক্তি লম্বা হাত বিশিষ্ট ছিল। আর সেজন্য তাকে যুল্ ইয়াদায়ন অর্থাৎ দু’ হাতওয়ালা বলা হত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন বা সালাতকে কমানো হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ভুলিনি, সালাতও কমানো হয়নি। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরাও কি তাই বলছো যা যুল্ ইয়াদায়ন বলছে? সাহাবীরা আরয করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ কথা সঠিক। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে যে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে গিয়েছিল তা পড়ে নিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন তারপর তাকবীর বললেন। অতঃপর পূর্বের সাজদার মতো সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন বা তার চেয়েও বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন তারপর তাকবীর দিলেন এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তার অন্য সাজদার মতো বা তার চেয়ে বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন।
ইতোমধ্যে লোকসকল ইবনু সীরীনকে জিজ্ঞেস করল তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি সালাম ফিরালেন? তিনি বলেন যে, আমাকে অবহিত করা হয়েছে। যে ’ইমরান ইবনু হুসায়ন বলেছেন তারপর তিনি সালাম ফিরালেন। (বুখারী ও মুসলিম; মূল পাঠ বুখারীর। মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল্ ইয়াদায়নের জবাবে বললেন, ’’না ভুলেছি আর না সালাত কমানো হয়েছে’’। অন্য স্থানে বলেছেন, ’’যা তোমরা বলছো তার কোনটাই না। তিনি আবেদন করলেন, ’’হে আল্লাহর রসূল! এর কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে।’’)[1]
بَابُ السَّهْوِ
وَعَن ابْن سِيرِين عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِحْدَى صَلَاتَيِ الْعشي - قَالَ ابْن سِيرِين سَمَّاهَا أَبُو هُرَيْرَةَ وَلَكِنْ نَسِيتُ أَنَا قَالَ فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ فَقَامَ إِلَى خَشَبَةٍ مَعْرُوضَةٍ فِي الْمَسْجِدِ فَاتَّكَأَ عَلَيْهَا كَأَنَّهُ غَضْبَانُ وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ وَوَضَعَ خَدَّهُ الْأَيْمَنَ عَلَى ظَهْرِ كَفه الْيُسْرَى وَخرجت سرعَان مِنْ أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ فَقَالُوا قَصُرَتِ الصَّلَاةُ وَفِي الْقَوْمِ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَهَابَاهُ أَنْ يُكَلِّمَاهُ وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ فِي يَدَيْهِ طُولٌ يُقَالُ لَهُ ذُو الْيَدَيْنِ قَالَ يَا رَسُول الله أنسيت أم قصرت الصَّلَاة قَالَ: «لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ» فَقَالَ: «أَكَمَا يَقُولُ ذُو الْيَدَيْنِ؟» فَقَالُوا: نَعَمْ. فَتَقَدَّمَ فَصَلَّى مَا تَرَكَ ثُمَّ سَلَّمَ ثُمَّ كَبَّرَ وَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَطْوَلَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ وَكَبَّرَ ثُمَّ كَبَّرَ وَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَطْوَلَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ وَكَبَّرَ فَرُبَّمَا سَأَلُوهُ ثُمَّ سَلَّمَ فَيَقُولُ نُبِّئْتُ أَنَّ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ قَالَ ثمَّ سلم. وَلَفْظُهُ لِلْبُخَارِيِّ وَفِي أُخْرَى لَهُمَا: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَدَلَ «لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ» : «كُلُّ ذَلِكَ لَمْ يَكُنْ» فَقَالَ: قَدْ كَانَ بَعْضُ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ
ব্যাখ্যা: (الْعَشِيُّ) ‘বিকাল’- ইমাম যুহরী বলেনঃ আরবী ভাষীগণ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে ‘বিকাল’ বলে। হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমনঃ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে ‘সালাতটি যুহরের অথবা ‘আসরের কোন এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছিল। বুখারীর এক বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যুহর অথবা ‘আসরের সালাত আদায় করালেন। মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে ‘যুহরের সালাত’। অতঃপর তিনি মসজিদের এক পাশে রাখা কাঠের নিকট গেলেন, অর্থাৎ সালাম ফিরানোর পর স্বীয় সালাতের স্থান ত্যাগ করে মসজিদের সম্মুখ ভাগে ক্বিবলার দিকে রাখা খেজুর কান্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন, যে কান্ডের উপর মসজিদের ছাদ নির্মিত ছিল।
(فَقَالُوا قَصُرَتِ الصَّلَاةُ) মিশকাতে সকল সংকলনে এবং বুখারীর এক বর্ণনাতে قَصُرَتِ শব্দটি হামযাহ্ ইস্তিফহাম (প্রশ্নবোধক হামযাহ্) ব্যতীতই বর্ণিত হয়েছে। তবে বুখারীর এ বর্ণনাটি হামযাহ ইস্তিফহাম সহ বর্ণিত হয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ অন্য বর্ণনাগুলো অত্র বর্ণনার অর্থের উপর বহন করা হবে। অতএব এ বাক্যের অর্থ হবে ‘তারা জিজ্ঞেস করল সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে?’ তারা এভাবে জিজ্ঞেস করলেন এজন্য যে, সময়টি বিধান পরিবর্তনের সময় ছিল। (ذُو الْيَدَيْنِ؟) এটি তার উপাধি। তার নাম খিরবাক সুলামী, তিনি সুলায়ম গোত্রের লোক।
(لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ) ‘আমি ভুলিও নেই, সালাতও কম করা হয়নি’ এটি অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে ‘এর কোনটিই হয়নি’। তখন যুল ইয়াদায়ন বললেনঃ ‘এর কিছু তো অবশ্যই ঘটেছে’। ফলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যুল ইয়াদায়ন যা বলছে ঘটনা কি তাই?’ অর্থাৎ সে যা বলছে তোমরা কি তাই বল?
তারা বললোঃ ‘হ্যাঁ’ অর্থাৎ আপনি তো সালাত দু’ রাক্‘আতের বেশী আদায় করেননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চিত হলেন যে তিনি দু’ রাক্‘আত সালাত ছেড়ে দিয়েছেন। হয়ত তখন তাঁর স্মরণ হয়েছে অথবা প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এতে সাব্যস্ত হয় যে, সালাতের রুকন ছুটে গেলে তা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে। শুধুমাত্র সাহু সিজদা্ যথেষ্ট হবে না। ‘অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা পূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০১৮-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তিনি প্রথম দু’ রাক্’আত পড়ে (প্রথম বৈঠকে বসা ছাড়া তৃতীয় রাক্’আতের জন্য) দাঁড়িয়ে গেলেন, বসলেন না। অন্যান্যরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমনকি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যখন শেষ করলেন এবং লোকেরা সালাম ফিরাবার অপেক্ষা করলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসা অবস্থায় তাকবীর দিলেন এবং সালাম ফিরাবার পূর্বে দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السَّهْوِ
وَعَن عبد لله بن بُحَيْنَة: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِهِمُ الظُّهْرَ فَقَامَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ لَمْ يَجْلِسْ فَقَامَ النَّاسُ مَعَهُ حَتَّى إِذَا قَضَى الصَّلَاةَ وَانْتَظَرَ النَّاسُ تَسْلِيمَهُ كَبَّرَ وَهُوَ جَالِسٌ فَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ ثُمَّ سَلَّمَ
ব্যাখ্যা: ‘অতঃপর বসা অবস্থায় তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন’- এ থেকে জানা যায় যে, সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দেয়ার পূর্বে তাকবীর বলতে এবং তা স্বরবে বলতে হবে। আর এটাও সাব্যস্ত হয় যে, সালামের পূর্বেই সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিতে হবে। যদিও তা সর্বাবস্থায় নয় তবুও এ অংশটি তাদের মত প্রত্যাখ্যান করে যারা বলেন যে, সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সর্বাবস্থায় সালামের পরে হবে।