পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০৬-[১৭] সা’ঈদ ইবনুল হারিস ইবনুল মু’আল্লা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) আমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তিনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাতে, সাজদায় যেতে ও দু’ রাক্’আতের পর মাথা উঠাবার সময় উচ্চস্বরে তাকবীর বললেন। তারপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। (বুখারী)[1]
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ الْمُعَلَّى قَالَ: صَلَّى لَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ فَجَهَرَ بِالتَّكْبِيرِ حِينَ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ وَحِينَ سَجَدَ وَحِينَ رَفَعَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ وَقَالَ: هَكَذَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) মদীনায় আমাদেরকে নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তখন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ইমামতি করাতে কষ্ট ব্যক্ত করলেন বা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি মদীনায় মারওয়ান-এর কর্তৃত্বে মানুষের ইমামতি করতেন। মারওয়ান ও অন্যান্যরা বানী ‘উমাইয়্যাহ্ থেকে ছিলেন। তারা সকলে তাকবীর নিঃশব্দে দিতেন।
আলোচ্য হাদীসে তিন স্থানে তাকবীর উচ্চৈঃস্বরে বলার কথা আলোচিত হয়েছে। ইমামদের জন্যে তাকবীর উচ্চৈঃস্বরে বলা সুন্নাত। আর একাকী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর জন্যে স্বরবে বা নীরবে তাকবীর বলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা রয়েছে। হাদীসে ইমামের জন্য সজোরে তাকবীর শার‘ঈ বিধান।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০৭-[১৮] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি মক্কায় এক শায়খের পিছনে [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি সালাতে মোট বাইশবার তাকবীর বললেন। আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে বললাম, (মনে হচ্ছে) এ লোকটি নির্বোধ। এ কথা শুনে ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, এটা তো ’আবুল কা-সিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাত। (বুখারী)[1]
وَعَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ شَيْخٍ بِمَكَّةَ فَكَبَّرَ ثِنْتَيْنِ وَعِشْرِينَ تَكْبِيرَةً فَقُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: إِنَّهُ أَحْمَقُ فَقَالَ: ثَكَلَتْكَ أُمُّكَ سُنَّةُ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: সে বৃদ্ধ লোকটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) যেমন- তার নাম সহ এসেছে আহমাদ, ত্বহাবী, ত্ববারানী-এর রিওয়ায়াতের মধ্যে। চার রাক্‘আত বিশিষ্ট সালাতে ২২টা তাকবীর হয়। শুরু তাকবীর, ক্বিয়ামের তাকবীর, তাশাহুদের সময়। কেননা প্রত্যেক রাক্‘আতে ৫টি তাকবীরই আছে- ৪ রাক্‘আতে মোট ২০টি। তারপর শুরু তাকবীর ও দু‘ রাক্‘আতের পর উঠার সময় তাকবীরসহ মোট ২২টি।
‘‘তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক’’ বলা গালি অর্থে ব্যবহার হয়নি। এটা একটি আরবের সামাজিক প্রথা বা রিওয়াজ অনুযায়ী প্রবাদ বাক্য। কোন কিছুর প্রতি গুরুত্ব প্রদান, চমক সৃষ্টি, বিরাগ প্রদর্শন ও বিস্ময় প্রকাশার্থে এ বাক্যগুলোর ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং এটাও একটি বাগধারা। অভিসম্পাত ঘৃণা প্রকাশ ইত্যাদির উদ্দেশে বলা হয় না।
‘তোমার মা তোমাকে হারাক’। এটা একটি তিরস্কার সূচক বাক্য। বানী ‘উমাইয়্যার শাসন আমলে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলার নিয়ম পরিত্যাগ করা হয়েছিল। ‘ইকরিমাহ্ তাকবীর বলার নিয়ম জানতেন না। এতে আশ্চর্য হয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে তিরস্কার করছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০৮-[১৯] ’আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) হতে মুরসাল হিসেবে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে রুকূ’ ও সাজদায় এবং মাথা ঝুঁকাতে ও উঠাতে তাকবীর বলতেন। আর তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্ত সব সময় এভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। (মালিক)[1]
وَعَنْ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ مُرْسَلًا قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الصَّلَاة كلما خفض وَرفع فَلم تزل صلَاته حَتَّى لَقِي الله تَعَالَى. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: হাফিয বলেন, সালাতের সকল ইনতিকালী কাজের সময় তাকবীর দিতে হবে। আর বিশেষ করে রুকূ' থেকে উঠার সময় তাহমীদ (সামি‘আল্লা-হু.....) বলার ব্যাপারে ইজমা হয়েছে এবং এটা শার‘ঈ নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০৯-[২০] ’আলকামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) আমাদেরকে বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাব? এরপর তিনি সালাত আদায় করালেন। অথচ প্রথম তাকবীরে একবার হাত উঠানো ছাড়া আর কোথাও হাত উঠাননি। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী;[1] আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি এ অর্থে সহীহ নয়।
وَعَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ: قَالَ لَنَا ابْنُ مَسْعُودٍ: أَلا أُصَلِّي بكم صَلَاة رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى وَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا مَرَّةً وَاحِدَةً مَعَ تَكْبِيرَةِ الِافْتِتَاحِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ. وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: لَيْسَ هُوَ بِصَحِيح على هَذَا الْمَعْنى
ব্যাখ্যা: প্রকৃতপক্ষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমায় একবার ছাড়া হাত উঠাননি। এটাই ভুল ব্যাখ্যা করে হানাফীরা দাবী করছেন যে, শুরু তাকবীর ছাড়া হাত উঠানো মুস্তাহাব নয়। এর উত্তর অনেক পদ্ধতিতে দেয়া যায়। তন্মধ্যে (১) এ হাদীসটি দুর্বল, সুতরাং এ হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া যায় না - হাদীসের সকল ইমাম একে দুর্বল বলেছেন। পক্ষান্তরে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সহীহ হাদীস যা বিশুদ্ধ সে হাদীসে রুকূতে যাওয়ার আগে বা পরে দু’হাত উঠানো রসূলের সুন্নাত যা ৫০ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত। তাই সেটার উপর ‘আমল করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, তাকবীরে তাহরীমায় হাত একবার উঠানোই সুন্নাত। অন্যান্য স্থানে হাত উঠানো এ হাদীসের প্রতিপাদ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮১০-[২১] আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে দাঁড়াতেন। হাত উপরে উঠিয়ে তিনি বলতেন, ’আল্লা-হ আকবার’। (ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: الله أكبر. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: সালাতে ক্বিবলাকে সামনে করা শার‘ঈ রীতি এবং এ হাদীস তা’ প্রমাণিত। আর স্বাভাবিক অবস্থায় সবসময় ক্বিবলামুখী হওয়া ওয়াজিব।
হানাফীরা নিয়্যাতকে জিহ্বা দিয়ে স্বশব্দে করা মুস্তাহাব মনে করেন। যাতে মুখ ও অন্তরের অবস্থা একই মিল থাকে। কিন্তু স্বশব্দে নিয়্যাত করা শার‘ঈ নীতি নিয়ম নয়, চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদী হোক, বা একাকি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী হোক। মালিকীরা বলেন, স্বশব্দে নিয়্যাত করা মাকরূহ। সুতরাং কোন সন্দেহ নেই যে, সেটা বিদ্‘আত কেননা সেটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ পদ্ধতিতে আসেনি। না য‘ঈফ পদ্ধতিতে না মুসনাদ না মুরসাল পদ্ধতিতে। না কোন সাহাবী উচ্চরণ করছেন, না কোন তাবি‘ঈ নিয়্যাত উচ্চারণ করছেন। তাই অবশ্যই সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়াতেন। তারপর তাকবীর দিতেন এবং সালাত শুরু করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮১১-[২২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। এক ব্যক্তি সর্বশেষ পিছনের সারিতে ছিল। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) খারাপভাবে আদায় করছিল। সে সালাতের সালাম ফিরাবার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন ও বললেন, হে অমুক! তুমি কি আল্লাহকে ভয় করছো না? তুমি কি জান না তুমি কিভাবে সালাত আদায় করছো? তোমরা মনে কর, তোমরা যা কর তা আমি দেখি না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দেখি আমার পিছনের দিকে, যেভাবে আমি দেখি আমার সামনের দিকে। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظّهْر وَفِي مُؤخر الصُّفُوف رجل فَأَسَاءَ الصَّلَاةَ فَلَمَّا سَلَّمَ نَادَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا فُلَانُ أَلَا تَتَّقِي اللَّهَ؟ أَلَا تَرَى كَيْفَ تُصَلِّي؟ إِنَّكُمْ تُرَوْنَ أَنَّهُ يَخْفَى عَلَيَّ شَيْءٌ مِمَّا تَصْنَعُونَ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى مِنْ خَلْفِي كَمَا أَرَى من بَين يَدي» رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এটা অন্তরের দেখা। হতে পারে ওয়াহী দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানছেন বা ইলহামের মাধ্যমে জানছেন। তবে সঠিক কথা হলো, নিশ্চয় তিনি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করছেন। ‘আবদুল হক দেহলবী বলেনঃ সঠিক কথা হলো তিনি যেভাবে দেখার দাবী করেছেন, সেটাই এর প্রকৃত অর্থ হবে। চোখে দেখা মানে চোখের অনুভূতির মাধ্যমে প্রকৃত উপলব্ধি করা, এ বিষয়টা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যে খাস। তার অলৌকিক ঘটনার অন্তর্ভুক্ত। ফলে সামনে না থাকলেও দেখতেন।
‘আল্লামা নাবাবী (রাঃ) বলেনঃ ‘আলিমগণ বলেছেন এর অর্থ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এর জন্যে তাঁর ঘাড়ের পশ্চাৎদিক এক উপলব্ধি যন্ত্র সৃষ্টি করলেন যার সাহায্যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পিছনের সবকিছু দেখতে পান। অবশ্য অনেক সময় এর থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক কিছু প্রকাশ পায়। যা অলৌকিক অভ্যাস বিরোধী। যা কোন আকল, বিবেক বাধা দিতে পারে না। কোন শারী‘আতও নিষেধ করতে পারে না বরং শারী‘আত বাহ্যিক প্রকাশ্য বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। যার ফলে এর উপরই কথা আবশ্যকভাবে থাকবে। আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও জমহূর ‘উলামাহ্ এ দেখাকে প্রকৃত চাক্ষুস দেখা মনে করছেন।