পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬০-[৭] সালামাহ্ ইবনু আক্ওয়া’ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। আমি কি (লুঙ্গি পায়জামা ছাড়া) এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিউত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আদায় করে নিতে পারো। তবে একটি কাঁটা দিয়ে হলেও (গলার নীচে কাপড়ের দু’ দিক) আটকিয়ে নিও। (আবূ দাঊদ;[1] এ হাদীসটি ঠিক এভাবে নাসায়ীও বর্ণনা করেছেন)
عَن سَلمَة بن الْأَكْوَع قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي رَجُلٌ أَصِيدُ أَفَأُصَلِّي فِي الْقَمِيصِ الْوَاحِدِ؟ قَالَ: نَعَمْ وَازْرُرْهُ وَلَوْ بِشَوْكَةٍ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى النَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: শিকারীকে সাধারণত হালকা হতে হয়, শিকারকে ধরতে দ্রুতবেগে ধাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এমন কিছু তার শরীরে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে বলা হলো। তবে জামার গলাবন্ধ বা বুক শক্ত করে বেঁধে নিতে হবে এবং জামার দুই মাথা একত্র করতে হবে যাতে লজ্জাস্থান প্রকাশ না হয়ে পড়ে।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, এক কাপড়ে সালাত আদায় বৈধ। সালাতের আদাব হচ্ছে, নিজের চোখ থেকে লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখার জন্য জামার বুতাম লাগিয়ে রাখা তবে এটা সালাতের শর্ত নয়। যদি জামার গলাবন্ধ খুলে যায় এবং মুসল্লীর চোখ তার লজ্জাস্থানে পড়ে তাহলে তাকে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬১-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি লুঙ্গি (পায়ের গিটের নীচে) ঝুলিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে আসো। লোকটি গিয়ে উযূ করে আসলো। এ সময় এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এ লোকটিকে কেন উযূ করতে বললেন (অথচ তার উযূ ছিল)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তার লুঙ্গি (গিটের নীচে) ঝুলিয়ে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিল। আর যে ব্যক্তি লুঙ্গি ঝুলিয়ে রেখে সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার সালাত কবূল করেন না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَيْنَمَا رَجُلٌ يُصَلِّي مسبلا إِزَارِهِ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اذْهَبْ فَتَوَضَّأ» فَذهب وَتَوَضَّأ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَكَ أَمَرْتَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ؟ قَالَ: «إِنَّهُ كَانَ يُصَلِّي وَهُوَ مُسْبِلٌ إِزَارَهُ وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَا يَقْبَلُ صَلَاةَ رَجُلٍ مُسْبِلٍ إِزَارَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: সুনানু আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই টাখনুর নিচে কাপড়ের যে অংশ থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। তাঁর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবার উযূ করার নির্দেশ দেয়ার কারণ হলো, তাকে এ শিক্ষা দেয়া যে, সে গুনাহ করেছে। আর উযূ গুনাহকে ঢেকে দেয় এবং গুনাহের কারণকে দূর করে। যেমন, রাগ ইত্যাদি।
বাহ্যিক পবিত্রতা আভ্যন্তরীণ পবিত্রতার উপর প্রভাব ফেলে। এখানে রসূলের কথাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা অহংকারী, দাম্ভিক, বড়াইকারীর সালাত কবূল করেন না। এটা অহংকারীদের জন্য সতর্কবার্তা।
লুঙ্গি বা পায়জামাকে ঝুলিয়ে পরিধান করে সালাত আদায় করলে আল্লাহ এরূপ ব্যক্তির সালাত পূর্ণভাবে গ্রহণ করেন না। এ হাদীস দ্বারা এটাও সাব্যস্ত করা যায় যে, টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়া সালাতকে নষ্ট করে দেয়। আর যখন কাপড় ঝুলিয়ে সালাত আদায়কারীর সালাত প্রত্যাখ্যাত হয় তখন ঐ সালাতও বতিল হয়ে যায়। (আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬২-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’ওড়না’ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হয় না। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ حَائِضٍ إِلَّا بِخِمَارٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: বালেগা বা সাবালিকা অর্থাৎ- যে বয়সে পৌঁছলে মেয়েরা ঋতুবতী হয় বা স্বপ্নদোষ হয় কিংবা শারী‘আহ্ পালনের যোগ্য হয় সে বয়সের মেয়ের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) খিমার বা ওড়না ছাড়া বৈধ বা বিশুদ্ধ হবে না । যে জিনিস কোন জিনিসকে ঢেকে রাখে তাকেই খিমার বলে। পরিভাষায় প্রত্যেক ঐ জিনিসকে খিমার বলে যা মাথাকে ঢেকে রাখে। অত্র হাদীসে খিমার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ বস্ত্ত যা দ্বারা মহিলারা তাদের মাথা এবং ঘাড় ঢেকে রাখে।
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারীর মাথা ঢেকে রাখতে হবে। নারীর জন্য সালাতরত অবস্থায় মাথা ঘাড় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এ হাদীসের দ্বারা ঋতুবতী নারীর কথা বর্ণনার দ্বারা স্বাধীন ও দাসী নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। উভয়েই সমান। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীরের আকর্ষণীয় অংশ বা লজ্জাস্থান ঢাকা শর্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৩-[১০] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাদের কাছে যদি লুঙ্গি পায়জামার কোন কাপড় ভিতরে পরার জন্য না থাকে, শুধু জামা ও ওড়না পরে তারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে কিনা? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, সালাত হয়ে যাবে। তবে জামা এতটা লম্বা হতে হবে যাতে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে যায়। (আবূ দাঊদ;[1]
মুহাদ্দিসগণের একদল উল্লেখ করেছেন যে, এ হাদীসটি স্বয়ং উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর উক্তি।
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّهَا سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتُصَلِّي الْمَرْأَةُ فِي درع وخمار لَيْسَ عَلَيْهَا إِزَارٌ؟ قَالَ: «إِذَا كَانَ الدِّرْعُ سَابِغًا يُغَطِّي ظُهُورَ قَدَمَيْهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَذَكَرَ جمَاعَة وَقَفُوهُ على أم سَلمَة
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা নারীর দু’ পায়ের পাতা পর্যন্ত আবরণীয় ঢেকে রাখা আবশ্যক প্রমাণিত হয়। কেননা রসূলের বাণী ‘‘পায়ের পিঠ ঢেকে রাখবে’’ দ্বারা পায়ের পিঠ খোলা রাখার নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হয়।
সালাতে এবং সালাতের বাইরে নারীর আবশ্যিক আবরণীয় অংশের সীমা নির্ধারণ ক্ষেত্রে ‘আলিমগণ বহু মতবিরোধ করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ইবনু কুদামার ‘‘আল মুগনী’’ গ্রন্থ দেখুন। এ ব্যাপারে আমার (লেখকের) নিকট অগ্রগণ্য/অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত হলো হাম্বালীদের মত। সে মত হচ্ছে সালাতে স্বাধীনা, বালেগা/সাবালিকা নারীর পূর্ণ শরীর এমনকি তার নখ, চুলও আবশ্যিক আবরণীয়, চেহারা ছাড়া। সালাতের বাইরে বাকী শরীরের মতো চেহারা এবং দুই হাতের তালুও আবশ্যিক আবরণীয়।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৪-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় ’সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلَاةِ وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কালে ‘সাদল’ করতে নিষেধ করেছেন। সাদ্ল এর একাধিক অর্থ রয়েছে। পরিধেয় কাপড়কে জমিন পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়া। দুই পার্শ্বকে একত্র না করে পায়ের নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়া।
এ হাদীস সালাতে ‘সাদল’ হারাম হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তাতে সাদল এর উপর কামীস বা পাজামা থাক বা কিছুই না থাক। বর্ণিত রয়েছে যে, সাদল ইয়াহূদীদের বৈশিষ্ট্য।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে মুখকে ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে সালাতে ‘হাই’ আসলে তখন মুখে হাত চাপা দেয়া যাবে। এ হাদীস মুখ ঢেকে সালাত আদায় হারাম করেছে। মুখ ঢেকে সালাত আদায় নিষিদ্ধ করার কারণ হচ্ছে মুখ ঢেকে রাখা সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) ও যিকর-আযকার পাঠ করতে বাধা দেয়। কাপড় দ্বারা মুখ ঢাকা অগ্নিপূজকদের সাদৃশ্যমূলক। কারণ তারা আগুন পূজা করার সময় কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে রাখতো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কারো যদি সালাতের মধ্যে হাই আসে তাহলে সাধ্য অনুযায়ী তা দমনের চেষ্টা করবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন তার হাত মুখে রেখে হাইকে আটকে রাখে। তা না হলে শায়ত্বন (শয়তান) তার মুখে ঢুকে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৫-[১২] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুতা-মোজাসহ সালাত আদায় করে ইয়াহূদীদের বিপরীত কাজ করবে। কারণ জুতা-মোজা পরে তারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَالِفُوا الْيَهُودَ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّونَ فِي نِعَالِهِمْ وَلَا خِفَافِهِمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুতা পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ক্ষেত্রে তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা কর। কারণ ইয়াহূদীরা জুতা ও মোজা পড়ে সালাত আদায় করতে অপছন্দ করতো। এ হাদীস জুতা পরে সালাত আদায় করার বৈধতার প্রমাণ। ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যের দিক থেকে জুতা পরে সালাত আদায়কে মুস্তাহাব বলা যেতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৬-[১৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পা থেকে জুতা খুলে বাম পাশে রেখে দিলেন। তা দেখে লোকেরাও নিজেদের জুতা খুলে ফেললেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন, তোমরা কেন নিজেদের পায়ের জুতা খুলে ফেললে? তারা উত্তর দিলেন, আপনাকে জুতা খুলে ফেলতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখে দিয়েছি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে খবর দিলেন, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তোমাদের কেউ যখন মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতায় নাপাক আছে কিনা তা দেখে নেয়। যদি তার জুতায় নাপাকী দেখে তাহলে সে যেন তা মুছে ফেলে। এরপর জুতা সহকারেই সালাত আদায় করে। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي بِأَصْحَابِهِ إِذْ خلع نَعْلَيْه فَوَضَعَهُمَا عَنْ يَسَارِهِ فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ الْقَوْمُ أَلْقَوْا نِعَالَهُمْ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاتَهُ قَالَ: «مَا حَمَلَكُمْ على إلقائكم نعالكم؟» قَالُوا: رَأَيْنَاك ألقيت نعليك فَأَلْقَيْنَا نِعَالَنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ جِبْرِيلَ أَتَانِي فَأَخْبَرَنِي أَنَّ فيهمَا قذرا إِذا جَاءَ أحدكُم إِلَى الْمَسْجِدَ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِي نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَو أَذَى فَلْيَمْسَحْهُ وَلِيُصَلِّ فِيهِمَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: এখানে সালাতের মধ্যে ছোট-খাট (عَمَلُ قَلِيْل) কাজ করার বৈধতার প্রমাণ রয়েছে। আর হালকা বা সামান্য কাজ সালাতকে নষ্ট করে না।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, কেউ যদি ভুলে বা অজ্ঞতাবশত নাপাকী সহ কাপড় পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করে। এবং সালাতের মধ্যে নাপাকীর খবর জানতে পারে তাহলে তার জন্য ওয়াজিব হলো ঐ নাপাকী দূর করা। এরপর সে তার সালাতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাকী সালাত আদায় করবে। অজ্ঞতাবশত কাপড়ে নাপাকসহ সালাত আদায় করে ফেললে সালাত হয়ে যাবে।
এ হাদীসে প্রমাণ হয় যে, নাপাকী না থাকলে জুতা পরে সালাত আদায় জায়িয। আরো প্রমাণ হয় নাপাকী থেকে জুতা মোছার মাধ্যমে তা পবিত্র হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৭-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালে সে যেন তার জুতা তার ডান পাশেও না রাখে, বাম পাশেও না রাখে। কারণ এদিক অন্য কারও ডান দিক হবে। তবে যদি বাম দিকে কেউ না থাকে (তাহলে বামদিকে রেখে দিবে)। অন্যথায় সে যেন জুতা দু’ পায়ের মধ্যে (সামান্য সামনে) রেখে নেয়।
আর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো এসেছেঃ (যদি জুতা পাক-পবিত্র হয় তা না খুলে) পায়ে রেখেই সালাত আদায় করবে। (আবূ দাঊদ)[1] ইবনু মাজাহ্ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلَا يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ وَلَا عَنْ يَسَارِهِ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ إِلَّا أَنْ لَا يَكُونَ عَنْ يسَاره أحد وليضعهما بَيْنَ رِجْلَيْهِ» . وَفَّى رِوَايَةٍ: «أَوْ لِيُصَلِّ فِيهِمَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: ডান কিংবা বাম দু’দিকেই যেহেতু অন্য মুসল্লী থাকেন, তাই কোনদিকেই না রেখে পায়ের মাঝখানে রাখতে বলা হয়েছে। আর একজন মু’মিন ব্যক্তির উচিত সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করবে তা তার সাথীর জন্যও পছন্দ করবে।
আর সে নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে তা অপর সাথীর জন্যও অপছন্দ করবে। তবে বাম পাশে কোন মুসল্লী না থাকে তাহলে বাম পাশে জুতাজোড়া রাখা বৈধ। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ইচ্ছা করে সে যেন তার জুতাজোড়া তার সাথীর ডানে বা সামনে রাখার মাধ্যমে কাউকে কষ্ট না দেয়। আর জুতাজোড়া যেন সে তার দুই পায়ের মাঝের ফাঁকা স্থানে রাখে অথবা তা যদি পবিত্র থাকে তাহলে সে যেন তা পরেই সালাত আদায় করে।