পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
سَتْرِ (সাত্র) সতর অর্থাৎ- আচ্ছাদন অধ্যায়, আচ্ছাদন বলতে লজ্জাস্থানসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা বুঝায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যের পরিচ্ছদ পরিধান কর’’- (সূরাহ্ আল আ’রাফ ৭: ৩১)। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন যে, মহিলারা উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করত। এ প্রেক্ষিতেই উপর্যুক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ইবনু হাযম বলেন, মুসলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য লজ্জাস্থান ঢাকা শর্ত। কোন জনশূন্য স্থানে থাকলেও। আর সালাতের সময় ছাড়া অন্য সময় লজ্জাস্থানে তাকানো যাদের জন্য বৈধ নয় এমন লোকেদের দৃষ্টি থেকে লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
৭৫৪-[১] ’উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে কাপড়টি নিজের শরীরে এভাবে জড়িয়ে নিলেন যে, কাপড়ের দু’ দিক তাঁর কাঁধের উপর ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السَّتْرِ
عَن عمر بن أبي سَلمَة قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ مُشْتَمِلًا بِهِ فِي بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ وَاضِعًا طَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقيهِ
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত ‘‘মুশতামিল’’ বা ইশতিমাল কাপড় পরিধানের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে লম্বা কাপড়ের ডান মাথাকে পিঠের দিক হতে ডান হাতের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর ফেলতে হবে এবং কাপড়ের বাম মাথা বাম হাতের নিচ দিয়ে বের করে ডান কাঁধের উপর ফেলতে হবে। এ পদ্ধতিকে (اَلتَّوَشُّحِ) তাওয়াশশুহ ও তিহাফও বলা হয়। কাপড় পরিধানের এ পদ্ধতিকে অনুসরণ করলে মুসল্লী রুকূ‘ করার সময় তার নিজ লজ্জাস্থানের দিকে তাকাতে পারে না। আর যাতে করে রুকূ‘ ও সাজদার সময় কাপড় পড়ে না যায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এই পদ্ধতিতে কাপড় পরলে একটি মাত্র কাপড়েও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় বিশুদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৫৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে কাপড়ের কোন অংশ কাঁধের উপর না রেখে তোমাদের কেউ যেন এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السَّتْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَا يصلين أحدكُم فِي الثَّوْب الْوَاحِد لَيْسَ على عَاتِقيهِ مِنْهُ شَيْء»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসল্লীর কাপড়ের একটি অংশ তার কাঁধের উপর না থাকলে এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিষিদ্ধ। একটি কাপড়ে সালাত আদায়কালে কাপড়ের একটি অংশ কাঁধের উপর না রাখা হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৫৬-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে সে যেন কাপড়ের দু’কোণ কাঁধের উপর দিয়ে বিপরীত দিক হতে টেনে এনে জড়িয়ে নেয়। (বুখারী)[1]
بَابُ السَّتْرِ
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ فليخالف بَين طَرفَيْهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এরূপ তখন করবে যখন পরিধেয় কাপড়টি বড় বা প্রশস্ত হবে। আর যখন ছোট বা সংকীর্ণ হবে তখন তা তার কোমরে বাঁধবে। আলোচনায় ‘‘মুশতামাল’’ ‘‘মুতাওশশাহ’’ ও ‘‘মুখলিফ বায়না ত্বারাফাইহি’’ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৫৭-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাদর পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মতো কিছু কাজ করা ছিল। সালাতে এই কারুকার্যের দিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার তাকালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবূ জাহম-এর কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার ’আম্বিজা-নিয়াহ্’ নিয়ে আসো। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার সালাতে মনোযোগী হতে বিরত রেখেছে- (বুখারী ও মুসলিম)।[1]
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সালাতে চাদরের কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সালাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট করতে পারে।
بَابُ السَّتْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَمِيصَةٍ لَهَا أَعْلَامٌ فَنَظَرَ إِلَى أَعْلَامِهَا نَظْرَةً فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «اذْهَبُوا بِخَمِيصَتِي هَذِهِ إِلَى أَبِي جَهْمٍ وَأَتُوْنِي بِأَنْبِجَانِيَّةِ أَبِي جهم فَإِنَّهَا ألهتني آنِفا عَن صَلَاتي»
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: كُنْتُ أَنْظُرُ إِلَى علمهَا وَأَنا فِي الصَّلَاة فَأَخَاف أَن يفتنني
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত ‘‘খামীসা’’ এমন এক ধরনের চৌকা পাতলা কাপড় যা পশমী বা রেশমী দ্বারা তৈরিকৃত এবং চিহ্নযুক্ত। এমন কাপড় পরিধেয় অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি পতিত হয়।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খামিসা চাদরটি খুলে ফেললেন এজন্য যে, সালাতে ব্যাস্ত বা অমনোযোগী রাখে এমন প্রত্যেক জিনিস পরিত্যাগ করার সুন্নাত চালু করা। উদ্দেশ্য এটা নয় যে, আবূ জাহম খামিসা পরিধান করে সালাত আদায় করবে। কেননা তিনি নিজের জন্য যেটা অপছন্দ করতেন সেটা অপরের জন্য পাঠাতেন না। তিনি এটা পাঠিয়েছেন এজন্য যে, সে যাতে সেটা বিক্রি করে বা অন্য কাজে লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারে।
এ হাদীস থেকে সালাতে আত্মমনোযোগ এবং সালাতে ব্যাস্ত বা অমনোযোগী করে এমন সকল কাজ পরিত্যাগ করার প্রতি উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। কুরআন ভীত-সন্ত্রস্ত মুসল্লীকে সফলতার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর সফলতা হচ্ছে পরকালীন সৌভাগ্যের অপর নাম।
বুখারীর বর্ণনায় এসেছে আমি আশঙ্কা করছি যে, চিহ্নযুক্ত খামীসা চাদরটি আমাকে সালাত আদায়ে বাধা দিচ্ছে এবং সালাত থেকে আমাকে অমনোযোগী করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৫৮-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আয়িশাহ্ সিদ্দীক্বা (রাঃ)-এর একটি পর্দার কাপড় ছিল। সেটি দিয়ে তিনি ঘরের একদিকে ঢেকে রেখেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার এ পর্দাখানি এখান থেকে সরিয়ে ফেল। কারণ এর ছবিগুলো সব সময় সালাতে আমার চোখে পড়তে থাকে। (বুখারী)[1]
بَابُ السَّتْرِ
وَعَن أنس قَالَ: كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمِيطِي عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا فَإِنَّهُ لَا يَزَالُ تَصَاوِيرُهُ تَعْرِضُ لِي فِي صَلَاتِي» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্য: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসল্লীকে সালাতে গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যে কোন জিনিস দূর করতে হবে। হোক সেটা তার বাড়িতে আর সালাতের স্থানে। তবে এখানে এর কারণে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল বা নষ্ট হওয়া প্রমাণিত হয় না। কেননা এ ঘটনার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐ সালাত পুনরায় আদায় করতে কিংবা সালাত ছেড়ে দিতে দেখা যায়নি। হ্যাঁ সালাতের একাগ্রতা নষ্টকারী বা অন্তরকে ব্যাস্ত করার কারণ যখন পাওয়া যাবে তখন তা সালাতকে মাকরূহ করবে।
আবার আলোচ্য এ হাদীস প্রমাণ করে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা অনুমোদন দিয়েছেন এবং সে ঘরে তিনি সালাত আদায় করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, যে হাদীসে তিনি পর্দা সরাতে আদেশ দিয়েছেন। সেখানে তা এ জন্য যে, সেটা সালাতরত অবস্থায় ছবি দেখা গিয়েছিল। পর্দায় ছবি থাকা মূল কারণ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৫৯-[৬] ’উক্ববাহ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রেশমের একটি আলখেল্লা (পোশাক) হাদিয়্যাহ্ দেয়া হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সালাত শেষে তা যেন অত্যন্ত অপছন্দনীয়ভাবে শরীর থেকে খুলে ফেললেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরূপ পোশাক মুত্তাক্বীদের পরিধান করা ঠিক নয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السَّتْرِ
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: أُهْدِيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُّوجَ حَرِيرٍ فَلَبِسَهُ ثُمَّ صَلَّى فِيهِ ثُمَّ انْصَرَفَ فَنَزَعَهُ نَزْعًا شَدِيدًا كَالْكَارِهِ لَهُ ثمَّ قَالَ: لَا يَنْبَغِي هَذَا لِلْمُتقين
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি রেশমের কা‘বা (লম্বা আস্তিন বিশিষ্ট ঢিলেঢালা আলখেল্লা অনারবদের পোশাক) উপহার দেয়া হয়েছিল। এটা দিয়েছিল দাওমার (আলেকজান্দ্রিয়া) বাদশাহ আকাইদার ইবনু ‘আবদুল মালিক। অতঃপর রেশমী কাপড় বা পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম হওয়ার পূর্বে একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা পরিধান করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
জাবির (রাঃ) ইবনু মুসলিম থেকে বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমের আলখেল্লা পরে একদিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর সেটা খুলে ফেললেন এবং বললেন, জিবরীল (আঃ) আমাকে এটা পরতে নিষেধ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, রেশমী কাপড় পরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছিলেন রেশমী পরা পুরুষদের জন্য হারাম হওয়ার পূর্বে। জিবরীল (আঃ) এর নিষেধাজ্ঞাই তার জামা খুলে ফেলার কারণ। আর এ ঘটনা ছিল হারাম ঘোষণার শুরু।
মু’মিনদের জন্য রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করা বৈধ নয়।