পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
حَيْضٌ (হায়য) শব্দের শাব্দিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া। পরিভাষায় حَيْضٌ বলা হয় কোন মহিলা সাবালক হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে তার জরায়ু থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে।
৫৪৫-[১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের কোন স্ত্রীলোকের হায়য হলে তারা শুধু তাদের সাথে একত্রে খাওয়াই বন্ধ করে দিতো না, বরং তাদেরকে একত্রে ঘরেও রাখতো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ তাঁকে (এ বিষয়ে) জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তা’আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ’’আর তারা আপনাকে হায়য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে........’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ ২: ২২২) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের সাথে যৌনসঙ্গম ব্যতীত আর সব কিছু করতে পারো। এ সংবাদ ইয়াহূদীদের কাছে পৌঁছালে তারা বললো, এ ব্যক্তি আমাদের সব কিছুতেই বিরোধিতা না করে ছাড়তে চায় না।
অতঃপর উসায়দ ইবনু হুযায়র এবং ’আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ)আসলেন। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ইয়াহূদীরা এসব কথা বলে বেড়ায়। আমরা কি আমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনসঙ্গম করার অনুমতি পেতে পারি? এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তাতে আমাদের ধারণা হলো, তিনি তাদের ওপর রাগ করেছেন। তারপর তারা বের হয়ে গেলেন। এমন সময় তাদের সামনেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু দুধ হাদিয়্যাহ্ আসলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পেছনে পেছনে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ডেকে এনে দুধ খেতে দিলেন। এতে তারা বুঝলেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সাথে রাগ করেননি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
عَن أنس: إِنَّ الْيَهُودَ كَانُوا إِذَا حَاضَتِ الْمَرْأَةُ فِيهِمْ لَمْ يُؤَاكِلُوهَا وَلَمْ يُجَامِعُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ فَسَأَلَ أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى (ويسألونك عَن الْمَحِيض قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ)
الْآيَة. فَبَلَغَ ذَلِكَ الْيَهُودَ. فَقَالُوا: مَا يُرِيدُ هَذَا الرَّجُلُ أَنْ يَدَعَ مِنْ أَمْرِنَا شَيْئًا إِلَّا خَالَفَنَا فِيهِ فَجَاءَ أُسَيْدُ بْنُ حَضَيْرٍ وَعَبَّادُ بْنُ بِشْرٍ فَقَالَا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْيَهُودَ تَقُولُ كَذَا وَكَذَا أَفَلَا نُجَامِعُهُنَّ؟ فَتَغَيَّرَ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنْ قَدْ وَجَدَ عَلَيْهِمَا. فَخَرَجَا فَاسْتَقْبَلَتْهُمَا هَدِيَّةٌ مِنْ لَبَنٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَرْسَلَ فِي آثَارِهِمَا فَسَقَاهُمَا فعرفا أَن لم يجد عَلَيْهِمَا. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইয়াহূদীরা তাদের স্ত্রীরা ঋতুবতী হলে তাদের সাথে পানাহার বন্ধ রাখতো এবং মিলনও পরিহার করতো। এ বিষয়ে সাহাবায়ি কিরাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা মিলন ব্যতীত সব কিছু করো। তখন সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্’র ২২২ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
৫৪৬-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাপাক অবস্থায় আমি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র হতে গোসল করতাম। তিনি আমাকে হুকুম করতেন, আমি শক্ত করে লুঙ্গি বেঁধে দিতাম, আর তিনি আমার গায়ে গা লাগাতেন অথচ তখন আমি হায়য অবস্থায় ছিলাম। তিনি ই’তিক্বাফ অবস্থায় তাঁর মাথা মাসজিদ থেকে বের করে দিতেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি দিয়ে তাঁর মাথা ধুয়ে দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ وَكِلَانَا جُنُبٌ وَكَانَ يَأْمُرُنِي فَأَتَّزِرُ فَيُبَاشِرُنِي وَأَنَا حَائِضٌ وَكَانَ يُخْرِجُ رَأْسَهُ إِلَيَّ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فَأَغْسِلُهُ وَأَنَا حَائِض
ব্যাখ্যা: ফরয গোসল স্বামী-স্ত্রী একই পাত্রে এবং একসাথে করায় কোন বাধায় নেই। হায়য হলে স্ত্রীর সাথে রাত্রী যাপন করতে পারে এবং শরীরের সাথে শরীর লাগাতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
৫৪৭-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়য অবস্থায় পানি পান করতাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা দিতাম। তিনি আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখেই পানি পান করতেন। আমি কখনও হায়য অবস্থায় হাড়ের মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) খেতাম। অতঃপর আমি এ হাড় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিতাম। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখে তা খেতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعٍ فِيَّ فَيَشْرَبُ وَأَتَعَرَّقُ الْعَرْقَ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَيَضَع فَاه على مَوضِع فِي. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, হায়য অবস্থায় স্ত্রীর সাথে পানাহার করা, উঠা-বসা করা বৈধ। তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গও পবিত্র। যেমন- হাত, মুখ, পা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে তার থু থু এবং তার অতিরিক্ত খাদ্য ও পানীয় সবই পবিত্র। হায়য অবস্থায় স্ত্রীর সন্তানকে খানা খাওয়ানোয় কোন বাধা নেই এবং তার সাথে পানাহারও করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
৫৪৮-[৪] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়য অবস্থায় থাকতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يتكئ على حجري وَأَنا حَائِض ثمَّ يقْرَأ الْقُرْآن
ব্যাখ্যা: হায়যকালীন স্ত্রীর উরুতে হাত রেখে কুরআন তিলাওয়াত জায়িয আছে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
৫৪৯-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, মাসজিদ হতে আমাকে চাটাই এনে দাও। আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার হায়য তো তোমার হাতে নয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَاوِلِينِي الْخُمْرَةَ مِنَ الْمَسْجِدِ» . فَقُلْتُ: إِنِّي حَائِضٌ فَقَالَ: «إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِي يدك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : ঋতুবতী স্ত্রী মসজিদে হাত বাড়িয়ে স্বামীর পোষাক ও খাবার প্রেরণ করতে পারে।
(إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِي يَدِكِ) ‘‘তোমার হায়য তো তোমার হাতে নয়।’’ ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা অস্বীকার করলেন যে, হায়যের রক্ত তো তোমার হাতে লেগে নেই যা অপবিত্র। যার ফলে তোমার হাত থেকে তা চাটাইতে লেগে তা অপবিত্র হয়ে যাবে অথবা হাত মসজিদে প্রবেশ করালে মাসজিদ অপবিত্র হয়ে যাবে।
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ঋতুবতী মহিলা মসজিদের বাহিরে থেকে মসজিদের ভিতরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তা থেকে কিছু নিতে পারে। এতে আরো প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি শপথ করে বলে যে, আমি ঘরে অথবা মসজিদে প্রবেশ করবো না। অতঃপর সে যদি তার কোন অঙ্গ ঘরে বা মসজিদে প্রবেশ করায় তাতে তার শপথ ভঙ্গ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - হায়য-এর বর্ণনা
৫৫০-[৬] মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাদরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। যার একটি অংশ আমার শরীরের উপর থাকতো আর অন্য অংশ তাঁর শরীরের উপর থাকতো। অথচ তখন আমি ঋতুবতী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَيْضِ
وَعَنْ مَيْمُونَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي مِرْطٍ بَعْضُهُ عَلَيَّ وَبَعْضُهُ عَلَيْهِ وَأَنا حَائِض
ব্যাখ্যা: (بَعْضُه عَلَيَّ وَبَعْضُه عَلَيْهِ وَأَنَا حَائِضٌ) ‘‘চাদরের এক অংশ আমার উপর থাকতো আর এক অংশ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (কাঁধের) উপর থাকতো, অথচ তখন আমি ঋতুবতী।’’ অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় যে চাদর তিনি তাঁর কাঁধের উপর রাখতেন সে চাদরের একটি অংশ আমার উপর পড়ে থাকতো। আর এ অবস্থায়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এতে বুঝা যায় যে, ঋতুবতী মহিলার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পবিত্র। কেননা যদি তা পবিত্র না হত তাহলে কাপড়ের কোন অংশ তার উপর পতিত হলে তা অপবিত্র হয়ে যেত। ফলে ঐ কাপড়ের অন্য অংশ গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা বৈধ হত না।
এ হাদীস থেকে এও জানা যায় যে, একই কাপড়ের এক অংশ সালাত আদায়কারীর শরীরে থাকাকালে সেটার অন্য অংশ সালাতরত নয় এমন ব্যক্তির শরীর উপরে রাখা বৈধ।