পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - তায়াম্মুম
تَيَمُّمٌ (তায়াম্মুম) শব্দের শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা করা, মনস্থ করা। শার’ঈ পরিভাষায় সালাতের বৈধতার লক্ষ্যে মুখমণ্ডল এবং হস্তদ্বয় মাসাহ করার জন্য পবিত্র মাটির মনস্থ করা। এটি এ উম্মাতের জন্য নির্দিষ্ট। তবে তায়াম্মুম আবশ্যিক না ঐচ্ছিক, এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ দু’টির মাঝে পার্থক্য করে বলেছেন পানি না পাওয়া গেলে আবশ্যিক, আর ওযর থাকলে ঐচ্ছিক।
৫২৬-[১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল মানুষের উপর তিনটি বিষয়ে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। (১) আমাদের [সালাতের] কাতারকে মালায়িকার সারির মতো মর্যাদা দেয়া হয়েছে। (২) সমস্ত পৃথিবীকে বানানো হয়েছে আমাদের সালাতের স্থান এবং (৩) মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি পাবো না। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّيَمُّمِ
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثٍ جُعِلَتْ صُفُوفُنَا كَصُفُوفِ الْمَلَائِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الْأَرْضُ كلهَا مَسْجِدا وَجعلت تربَتهَا لنا طَهُورًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার ওপর আল্লাহর বড় নি‘আমাত যে, তিনি ইসলামকে তাদের জন্য অন্য উম্মাতের তুলনায় সহজ করে দিয়েছেন। যেমন- ১. তাদের মর্যাদা দিয়েছেন সালাতের কাতারকে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) কাতারের। ২. জমিন পুরাটাই তাদের জন্য পবিত্র ও মাসজিদ। ৩. মাটিকে পবিত্র করেছেন। উযূর জন্য যদি পানি না পাওয়া যায় তবে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - তায়াম্মুম
৫২৭-[২] ’ইমরান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখলেন এক ব্যক্তি পৃথক হয়ে বসে আছে, অথচ সে মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? লোকটি বলল, আমি নাপাক ছিলাম, অথচ তখন পানি পাচ্ছিলাম না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মাটি (তায়াম্মুমের মাধ্যমে) ব্যবহার করা উচিত ছিল। আর (পবিত্রতা অর্জনে) এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّيَمُّمِ
وَعَن عمرَان بن حُصَيْن الْخُزَاعِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رأى رجلا مُعْتَزِلا لم يصل فِي الْقَوْم فَقَالَ: «يَا فلَان مَا مَنعك أَن تصلي فِي الْقَوْم فَقَالَ يَا رَسُول الله أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلَا مَاءَ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّعِيدِ فَإِنَّهُ يَكْفِيك»
ব্যাখ্যা: ফরয গোসল প্রয়োজন হওয়ায় পানি না পাওয়া গেলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে। এ মাস্আলাতে কোন মতভেদ নেই। এ বিষয়ে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ)-ও এ মাস্আলায় কূফাবাসীদের সাথে একমত হয়েছেন। ‘উমার (রাঃ)-ও পূর্বের মত থেকে ফিরে এসে জুনুবী ব্যক্তির জন্য তায়াম্মুম জায়িয হওয়ার ফাতাওয়া দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - তায়াম্মুম
৫২৮-[৩] ’আম্মার (ইবনু ইয়াসির) (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি নাপাক হয়েছি, পানি পেলাম না। ’আম্মার (রাঃ)’উমার (রাঃ) কে বললেন, আপনার কি মনে নেই যে, এক সময়ে আমি ও আপনি উভয়ে (নাপাক) ছিলাম? আপনি (পানি না পাওয়ায়) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম। এরপর আমি ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ কথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই হাতের তালু মাটিতে মারলেন এবং দু’হাত (উঠিয়ে) ফুঁ দিলেন। তারপর উভয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন- (বুখারী)।
এভাবে ইমাম মুসলিমও বর্ণনা করেছেন, যার শেষ শব্দগুলো হলো (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ) তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তোমরা তোমাদের হাত মাটিতে মারবে, তারপর হাতে ফুঁ দিবে, অতঃপর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে।[1]
بَابُ التَّيَمُّمِ
وَعَن عمار قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ: إِنِّي أَجْنَبْتُ فَلَمْ أُصِبِ الْمَاءَ فَقَالَ عمار بن يَاسر لعمر بن الْخطاب أَمَا تَذْكُرُ أَنَّا كُنَّا فِي سَفَرٍ أَنَا وَأَنْتَ فَأَمَّا أَنْتَ فَلَمْ تُصَلِّ وَأَمَّا أَنَا فتمعكت فَصليت فَذكرت للنَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ هَكَذَا فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم بكفيه الأَرْض وَنفخ فيهمَا ثمَّ مسح بهما وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَلِمُسْلِمٍ نَحْوُهُ وَفِيهِ قَالَ: إِنَّمَا يَكْفِيكَ أَنْ تَضْرِبَ بِيَدَيْكَ الْأَرْضَ ثمَّ تنفخ ثمَّ تمسح بهما وَجهك وكفيك
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মুজতাহিদ ভুলও করতে পারেন এবং ঠিকও করতে পারেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - তায়াম্মুম
৫২৯-[৪] আবূ জুহায়ম ইবনুল হারিস ইবনুস্ সিম্মাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রস্রাব করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি দেয়ালের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তাকে নিজের লাঠি দিয়ে খোঁচা মারলেন। এরপর দেয়ালের উপর হাত মেরে নিজের চেহারা ও দুই হাত মাসাহ করলেন। অতঃপর আমার সালামের উত্তর দিলেন। মিশকাত সংকলক বলেন, আমি এ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে এবং হুমায়দীর গ্রন্থেও পাইনি। তবে তিনি এটি শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান।[1]
بَابُ التَّيَمُّمِ
وَعَنْ أَبِي الْجُهَيْمِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ الصِّمَّةِ قَالَ: مَرَرْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ حَتَّى قَامَ إِلَى جِدَارٍ فَحَتَّهُ بِعَصًى كَانَتْ مَعَهُ ثُمَّ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى الْجِدَارِ فَمَسَحَ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ ثُمَّ رَدَّ عَلَيَّ. وَلَمْ أَجِدْ هَذِهِ الرِّوَايَةَ فِي الصَّحِيحَيْنِ وَلَا فِي كِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ وَلَكِنْ ذَكَرَهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث حسن
ব্যাখ্যা: বিনা উযূতে সালামের উত্তর নেয়া জায়িয, তবে জুনুবী অবস্থায় থাকলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সহকারে সালামের উত্তর নেয়া সঙ্গত। এ হাদীসের মূল কথা সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।
আর সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় দু’ যেরার (হাতের) কথা উল্লেখ নেই।