পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোজার উপর মাসাহ করা
৫১৯-[৩] আবূ বকরাহ (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুক্বীমের জন্য একদিন একরাত উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে মোজা পরার পর এর উপর মাসাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। আসরাম তাঁর ’সুনানে’ এবং ইবনু খুযায়মাহ্ ও দারাকুত্বনী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।[1] ইমাম খাত্ত্বাবী বলেছেন, হাদীসটির সানাদ সহীহ। আল মুন্তাক্বা কিতাবেও এরূপ উল্লেখ রয়েছে।
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ رَخَّصَ لِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ وَلِلْمُقِيمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً إِذَا تَطَهَّرَ فَلَبِسَ خُفَّيْهِ أَنْ يَمْسَحَ عَلَيْهِمَا. رَوَاهُ الْأَثْرَمُ فِي سُنَنِهِ وَابْنُ خُزَيْمَةَ وَالدَّارَقُطْنِيّ وَقَالَ الْخَطَّابِيُّ: هُوَ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ هَكَذَا فِي الْمُنْتَقى
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজার উপর মাসাহ করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন। মুসাফিরের জন্য তিনদিন ও তিনরাত এবং মুক্বীমের জন্য একদিন ও একরাত। অবশ্য পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করতে হবে। আর পবিত্র অবস্থায় থাকা অর্থ মোজা পরিধানের সময় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) অবস্থায় থাকা।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোজার উপর মাসাহ করা
৫২০-[৪] সফ্ওয়ান ইবনু ’আস্সাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফর অবস্থায় কোথাও রওনা হলে আমাদেরকে তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত পবিত্রতার গোসল ছাড়া, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘুমানোর পর মোজা না খুলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার আদেশ করতেন। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]
وَعَن صَفْوَان بن عَسَّال قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفَرًا أَنْ لَا نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের সময় সাহাবীগণের আদেশ করতেন মোজা না খুলতে। তিনদিন ও তিনরাতের জন্য এ বিধান ছিল ভিন্ন কথা। তবে গোসল ফরয হলে প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হলে এবং ঘুম হতে জাগলেও এ আদেশ বহাল থাকবে। এখানে হাদীসটি উযূর সময় মোজার উপর মাসাহ করার কথার দিকে ইঙ্গিত করছে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোজার উপর মাসাহ করা
৫২১-[৫] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাবূকের যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূর পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি মোজার উপর দিক ও তার নীচের দিক মাসাহ করেছিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্;[1]
ইমাম তিরমিযী [রহঃ] বলেছেন, এ হাদীসটি ত্রুটিযুক্ত। আমি আবূ যুর্’আহ্ ও ইমাম বুখারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছেন, হাদীসটির সানাদ সহীহ নয়। এভাবে ইমাম আবূ দাঊদও হাদীসটিকে য’ঈফ বলেছেন [অর্থাৎ- এর সানাদ মুগীরাহ্ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নেই, মধ্যখানে রাবী ছুটে গেছে]।
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ: وَضَّأْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ فَمَسَحَ أَعْلَى الْخُفِّ وَأَسْفَلَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ مَعْلُولٌ وَسَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ وَمُحَمَّدًا يَعْنَى الْبُخَارِيَّ عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَقَالَا: لَيْسَ بِصَحِيحٍ. وَكَذَا ضعفه أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীসটি সহীহ নয় বলে ইমাম বুখারী (রহঃ) মন্তব্য করেছেন। কারণ ‘আলী ও মুগীরাহ্ (রাঃ) হতে বিশুদ্ধ হাদীস হতে বর্ণিত হয়েছে মোজার উপরে মাসাহ করা। সুতরাং উত্তম কথা হলো মোজার উপরে মাসাহ করতে হবে, নীচে নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোজার উপর মাসাহ করা
৫২২-[৬] উক্ত রাবী [মুগীরাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি তাঁর দু’টো মোজার উপরের দিকে মাসাহ করেছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعنهُ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يمسح على الْخُفَّيْنِ على ظاهرهما. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মোজার উপরে মাসাহ করতে হবে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাসান বলেছেন এবং হাকিম, ইবনু হাজার সহীহ বলেছেন। আর ইমাম বুখারী হাদীসটি তার তারীখে আওসাত-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোজার উপর মাসাহ করা
৫২৩-[৭] উক্ত রাবী [মুগীরাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন এবং জুতার সাথে ’জাওরাব’ ও পা’ দু’টোর উপরের দিকও মাসাহ করলেন। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن الْمُغيرَة بن شُعْبَة قَالَ: تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ وَالنَّعْلَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: [جَوْرَبَيْنِ ‘জাওরাবায়ন’ শব্দটি جَوْرَبْ ‘জাওরাব’-এর দ্বিবচন। এর অর্থ কাপড়ের মোজা।] বর্ণিত হাদীসে প্রমাণ হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাওরাবায়ন বা পায়ের ঢাকনীর উপর মাসাহ করেছেন। সেটা চাই পশমী হোক বা চুলের হোক। আর চামড়ার হোক বা পস্নাস্টিকের হোক। মোটা হোক বা পাতলা হোক সেটার উপর মাসাহ করা জায়িয আছে। জাওরাবায়ন জুতার ন্যায় যা জমিন হতে পাকে রক্ষা করে। সেটার উপর মাসাহ করা উত্তম। ইমাম ইবনু হাযম সেটা মোটা হওয়ার জন্য শর্ত করেছেন।
অনেক সাহাবায়ি কিরাম এর ওপর ‘আমল করেছেন। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) সহীহ বলেছেন।