পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৯-[২৮] মু’আয (রাঃ) ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটা ’আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে (সহজে) জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, কিন্তু যার পক্ষে আল্লাহ এটা সহজ করে দেন, তার পক্ষে এটা খুবই সহজ। তা হচ্ছে, আল্লাহর ’ইবাদাত করবে, কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না। নিয়মিত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করবে, যাকাত দিবে, রমাযানের সিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ/হজ্জ) করবে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ বলে দিব না? (জেনে রেখ) সিয়াম (কুপ্রবৃত্তির মুকাবিলায়) ঢালস্বরূপ। দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) গুনাহকে নির্মূল করে দেয় যেমনিভাবে পানি আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেয়। মানুষের মধ্য-রাত্রির (তাহাজ্জুদের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ শেষ হয়ে যায়)। অতঃপর (তার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করলেনঃ ’’সৎ মু’মিনদের পাঁজর বিছানা থেকে আলাদা থাকে (অর্থাৎ- তারা শয্যা ত্যাগ করে ’ইবাদাতে রত থাকে) আর নিজেদের পরওয়ারদিগারকে আশা-নিরাশার স্বরে ডাকতে থাকে। যে সম্পদ আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে। কোন মানুষই জানে না, এ সৎ মু’মিনদের চোখ ঠাণ্ডা করার জন্য কি জিনিস লুক্বায়িত রাখা হয়েছে। এটা হলো তাদের কৃত সৎ ’আমলের পুরস্কার’’- (সূরাহ্ আস্ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ৩২: ১৬-১৭)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব না, (দীনের) কাজের খুঁটি স্তম্ভ কি এবং তার উচ্চশিখরই বা কি? আমি বললাম, হাঁ, বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দীনের (সমস্ত কাজের) আসল হচ্ছে ইসলাম (অর্থাৎ- কালিমাহ্)। আর তার স্তম্ভ হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), আর উচ্চশিখর হচ্ছে জিহাদ। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এ সকলের মূল বলে দিব না? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর নবী! অবশ্যই তা বলে দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জিহবা ধরে বললেন, এটাকে সংযত রাখ। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা মুখ দ্বারা যা বলি, এ সম্পর্কেও কি (পরকালে) আমাদের জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সর্বনাশ, কি বললে হে মু’আয! (জেনে রেখ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) মানুষকে মুখ অথবা নাকের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার কারণ মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অসংযত কথা।[1]
(১) اَمْرٌ (‘আমর) শব্দটি তাখরীজের কোন গ্রহণযোগ্য উৎস গ্রন্থে নেই। (২) جُنَّةٌ (জুন্নাহ্) শব্দের অর্থ জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল। (৩) মুদ্রণে এরূপ হয়েছে যা মূলত লেখন বিকৃতি। সঠিক ইবারত হলোঃ (اَلَا أُخْبِرُكَ عَلى بِرَأسِ الْاَمْرِ)। আবার কোন কোন বর্ণনায় (أَدُلُّكَ عَلى رَأسِ الْأَمْرِ) রয়েছে।
الفصل الثانى
عَن معَاذ بن جبل قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سفر فَأَصْبَحت يَوْمًا قَرِيبا مِنْهُ وَنحن نسير فَقلت يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدنِي عَن النَّار قَالَ لقد سَأَلتنِي عَن عَظِيمٍ وَإِنَّهُ لِيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْت ثُمَّ قَالَ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةُ كَمَا يُطْفِئُ المَاء النَّار وَصَلَاة الرجل من جَوف اللَّيْل قَالَ ثمَّ تَلا (تَتَجَافَى جنُوبهم عَن الْمضَاجِع)
حَتَّى بَلَغَ (يَعْمَلُونَ)
ثُمَّ قَالَ أَلَا أَدُلُّكَ بِرَأْس الْأَمر كُله وَعَمُودِهِ وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ قُلْتُ بَلَى يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ فَقَالَ كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نتكلم بِهِ فَقَالَ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه
Chapter - Section 2
Mu‘adh b. Jabal reported:
I said, “Inform me, messenger of God, of an act which will cause me to enter paradise and remove me far from hell.” He replied, “You have asked a serious question, but it is easy for the one whom God helps to answer it. Worship God, associate nothing with Him, observe the prayer, pay the zakat, fast during Ramadan, and make the Pilgrimage to the House.” He said, “Shall I not guide you to the gateways of what is good? Fasting is a protection, and almsgiving extinguishes sin as water extinguishes fire, and a man's prayer in the middle of the night [has the same effect].” Then he recited, “Withdrawing themselves from their couches ... they have been doing.” 1 Then he said, “Shall I not guide you to the head and support of the matter and the top of its hump?” I replied, “Yes, messenger of God.” He said, “The head of the matter is Islam, its support is prayer, and the top of its hump is jihad.” Then he said, “Shall I not inform you of the controlling of all that?” I replied, “Yes, Prophet of God.” So he took hold of his tongue and said, “Restrain this.” I asked, “Prophet of God, shall we really be punished for what we talk about?” He replied, “I am surprised at you, 2 Mu'adh! Will anything but the harvests of their tongues overthrow men in hell on their faces (or, on their nostrils)?”
Ahmad, Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it.
1 Quran, xxxii, 16f.
2 Literally, may your mother be bereft of you.
ব্যাখ্যা: সওম, সদাক্বাহ্ (সাদাকা) এবং রাতের সালাতকে কল্যাণের দরজা বলা হয়েছে। এজন্য যে, সওম নাফসের জন্য কষ্টদায়ক। অনুরূপভাবে মাল থেকে সদাকাহ্ বের করা এবং রাতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা- এসব কাজ নাফসের জন্য কষ্টদায়ক। অতএব যে ব্যক্তি এ কষ্টদায়ক কাজের অভ্যাস গড়ে তুলবে তার জন্য সকল কল্যাণের কাজই সহজসাধ্য হয়ে যায়।
(رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ) এখানে ‘ইসলাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য কালিমাহ্ শাহাদাত। যেমনটি ইমাম আহমাদ মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন ‘‘এ বিষয়ের মূল হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরই বান্দা ও রসূল।’’ ‘ইসলাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য কালিমাহ্ শাহাদাত, আর الْأَمْرِ দ্বারা উদ্দেশ্য দীনী বিষয়। অর্থাৎ- কোন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কালিমাহ্ শাহাদাতকে স্বীকার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দীনের কোন ভিত্তি পাওয়া যাবে না। যখন সে এর সাক্ষ্য দিবে তখন তার মধ্যে দীনের মূল ভিত্তি পাওয়া যাবে। তবে এর দ্বারা দীনের খুঁটি বা স্তম্ভ পাওয়া যাবে না। অতঃপর যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং তা অব্যাহত রাখবে তখন তার দীন মজবুত হবে। কিন্তু তার পূর্ণতা ও মর্যাদা অর্জিত হবে না। এরপর যখন জিহাদ করবে তখন তার দীনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।
‘‘তাদের জিহবা দ্বারা অর্জিত ফসল’’। মানুষ যে সকল কথাবার্তা বলে তাকে ফসলের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা কাঁচি দ্বারা কাটা হয়। কাঁচি যেমন কোন পার্থক্য না করে কাঁচা-পাকা, ভালো-মন্দ সব কর্তন করে তেমনই কোন কোন মানুষের জিহবা ভালো-মন্দ পার্থক্য না করেই সকল ধরনের কথা বলে। অতএব হাদীসের অর্থ হলো মানুষকে তার জিহবা দ্বারা অর্জিত ফসলই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। হতে পারে তা কুফরী, শির্ক, আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কোন কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু করা, অপবাদ দেয়া, গালি দেয়া, মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখোরী করা ইত্যাদি এ সবই জিহ্বার ফসল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩০-[২৯] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত করে, আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে। (আবূ দাঊদ)[1]
الفصل الثانى
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتكْمل الْإِيمَان» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter - Section 2
Abu Umama reported that God’s messenger said, “If anyone loves for God’s sake, hates for God’s sake, gives for God’s sake and withholds for God's sake, he will have perfected faith.”
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: আবূ দাঊদ-এর এ বর্ণনাটি সহীহ। তবে হাদীসটি শাওহার ইবনু হাওশাব সূত্রে মু‘আয (রাঃ) হতেও বর্ণিত যা ইমাম আহমাদ ৫ম খণ্ডের ২৪৫ পৃঃ বর্ণনা করেছেন। এ শাওহার সমালোচিত রাবী। ইমাম আহমাদ হাদীসটি ৫ম খণ্ডে ২৩৭ পৃঃ ‘উরওয়াহ্ ইবনু নাযর ও মায়মূন ইবনু আবী শাবীব (রহঃ) সূত্রে মু‘আয (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এ ‘উরওয়াহ্ ও মায়মূন মু‘আয (রাঃ) থেকে কোন হাদীস শুনেননি। এ হাদীসের আরো অনেক সূত্র রয়েছে সবই দুর্বল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩১-[৩০] তিরমিযী এ হাদীসটি শব্দের কিছু আগ-পিছ করে মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং এতে বর্ণিত হয়েছে, ’সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিয়েছে’।[1]
الفصل الثانى
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ عَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ مَعَ تَقْدِيمٍ وَتَأْخِير وَفِيه: «فقد اسْتكْمل إيمَانه»
Chapter - Section 2
Tirmidhi transmitted it from Mu'adh b. Anas with a transposition of phrases, including “he will have perfected his faith.”
ব্যাখ্যা: (فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَاَن) এ অংশটুকু তিরমিযীতে মু‘আয ইবনু আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বিদ্যমান। তবে ইমাম তিরমিযী ঐ অংশটুকু মুনকার বলে মন্তব্য করেছেন। এটাও বলা যেতে পারে যে, ইমাম তিরমিযী মুনকার দ্বারা গরীব উদ্দেশ্য করেছেন। কেননা এ অংশটুকু তার থেকে তার ছেলে সাহল বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে এটি গরীব। আর মুনকার শব্দটি দুই অর্থে আসে।
(১) দুর্বল রাবী কর্তৃক শক্তিশালী রাবীর বিপরীত বর্ণনা।
(২) যা শুধুমাত্র একজন দুর্বল রাবী বর্ণনা করেছেন। যদিও তা শক্তিশালী রাবীর বিপরীত নয়। আর এখানে মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী একমাত্র তার ছেলে সাহল। যাকে ইবনু মা‘ঈন য‘ঈফ বলেছেন। আর আবূ হাতিম আর্ রাযী বলেছেন, তার বর্ণনা দলীলযোগ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩২-[৩১] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’আমলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হলো আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা, আর আল্লাহর জন্যই কারো সাথে ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করা। (আবূ দাঊদ)[1]
الفصل الثانى
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
Chapter - Section 2
Abu Dharr reported God’s messenger as saying, “The most excellent action is love for God’s sake and hatred for God’s sake.”
Abu Dawud transmitted it.
ব্যাখ্যা: আল্লাহর জন্য ভালোবাসা তাঁর ওয়ালী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত লোকেদেরকে ভালোবাসা আবশ্যক করে দেয়। আর তাঁদেরকে ভালোবাসার জন্য শর্ত হলো তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা এবং তাদের আনুগত্য করা। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, লোকেদের জন্য শত্রু থাকা জরুরী যাদের সাথে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিদ্বেষ পোষণ করবে। পক্ষান্তরে তার এমন কিছু বন্ধু থাকবে যাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে। এর বিশদ বর্ণনা হচ্ছে যে, যখন তুমি কোন লোককে আল্লাহর আনুগত্য করা ও তাকে ভালোবাসার কারণে ভালোবাসবে তখন যে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা করে তাহলে অবশ্যই তুমি তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে। এজন্য যে, সে আল্লাহর অবাধ্য পাপী এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয়। অতএব সে ব্যক্তি কোন কারণে কাউকে ভালোবাসলে এর বিপরীত কারণের জন্য অবশ্যই বিদ্বেষ রাখবে। আর ভালোবাসা ও বিদ্বেষ পোষণ করার স্বাভাবিক নিয়ম এটাই।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৩-[৩২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি মুসলিম যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত ও পরিপূর্ণ) মু’মিন সে ব্যক্তি যার থেকে মানুষ নিজের জীবন ও সম্পদকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে মনে করে। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]
الفصل الثانى
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ
Chapter - Section 2
Abu Huraira reported that God’s messenger said, “The Muslim is he from whose tongue and hand the Muslims are safe; and the believer is he whom men trust with their lives and their property.”
'Tirmidhi and Nasa’i transmitted it.
ব্যাখ্যা: পূর্ণাঙ্গ মু’মিন সেই যার মধ্যে আমানাতদারী, ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যবাদিতা প্রকাশ পায়। যার ফলে তার ব্যাপারে মানুষের এ আশংকা থাকে না যে, সে তাদের মাল বিনষ্ট করবে। রক্তপাত ঘটাবে বা তাদের স্ত্রীদের প্রতি হাত বাড়াবে। এ গুণ অর্জন ছাড়া ঈমানের মধ্যে পরিপূর্ণতা আসে না। এ গুণ অর্জন না করে কেউ পূর্ণ মু’মিনও হতে পারে না। তবে এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, এ গুণ অর্জিত হলেই সে পূর্ণ মু’মিন হয়ে যাবে যদিও সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করে বা অনুরূপ কোন ফরয ‘ইবাদাত পালন করা থেকে বিরত থাকে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৪-[৩৩] ইমাম বায়হাক্বী তাঁর শু’আবুল ঈমান গ্রন্থে ফাযালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তাতে এ শুব্দগুলো বেশি রয়েছেঃ ’’আর প্রকৃত মুজাহিদ হলো সে, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজের নাফসের সাথে জিহাদ করে এবং (প্রকৃত) মুহাজির সে ব্যক্তি, যে সকল অপরাধ ও গুনাহ বর্জন করে।’’[1]
الفصل الثانى
وَزَادَ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» . بِرِوَايَةِ فَضَالَةَ: «وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِي طَاعَةِ اللَّهِ وَالْمُهَاجِر من هجر الْخَطَايَا والذنُوب»
Chapter - Section 2
Baihaqi added in Shu'ab al-iman by the transmission of Fadala, “And the mujahid is he who strives with himself regarding obedience to God, and the muhajir is he who abandons transgressions and sins.
ব্যাখ্যা: সে ব্যক্তি প্রকৃত মুজাহিদ নয়, সে শুধুমাত্র কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বরং প্রকৃত মুজাহিদ সেই যে স্বীয় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং স্বীয় প্রবৃত্তিকে আল্লাহর আনুগত্য করতে বাধ্য করে। কেননা মানুষের প্রবৃত্তির শত্রুতা কাফিরদের শত্রুতার চেয়েও ভয়ংকর। কারণ কাফেরতো তার থেকে অনেক দূরে। যার পক্ষে সর্বদা তার সাথে মিলিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে কখনো কখনো তার কাছে এসে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু স্বীয় প্রবৃত্তি সর্বদাই তার সাথে থাকে এবং প্রবৃত্তি তাকে কল্যাণ অর্জন ও আল্লাহর আনুগত্য করতে পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যে শত্রু সর্বদা তার পিছে লেগে থাকে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ সে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার চাইতে যে তার থেকে অনেক দূরে।
হিজরত করার প্রকৃত রহস্য এই যে, মু’মিনের পক্ষে যাতে কোন বাধা ব্যতিরেকেই আনুগত্য করা সম্ভব হয়। আর এমন সব খারাপ লোকেদের সাহচর্য থেকে দূরে থাকা যায় যাদের সাথে অবস্থান করলে খারাপ চরিত্র ও কুকাজে জড়িয়ে পড়তে হয়। অতএব প্রকৃত হিজরত হলো এ খারাপ চরিত্র ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। আর প্রকৃত মুহাজির সেই, যে এসব থেকে দূরে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫-[৩৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে, যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়া’দা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই। (বায়হাক্বী-এর শু’আবুল ঈমান)[1]
আমি (আলবানী) বলছিঃ اَلسُّنَنُ الْكُبْرى (আসসুনানুল কুবরা)-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৮৮ নং পৃষ্ঠায় লেখক হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আর লেখকের হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)-এর দিকে সন্বোধন করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকাটা ধারণা দেয় যে, হাদীসটি বায়হাক্বীর চেয়ে প্রসিদ্ধ এবং উঁচু স্তরের কেউ বর্ণনা করেনি। তবে বিষয়টি মোটেও এরূপ নয়। কারণ ইমাম আহমাদ (রহঃ) হাদীসটি তাঁর মুসনাদের ৩য় খণ্ডের ১৩৫, ১৫৪, ২৫১ নং পৃষ্ঠায় এবং اَلسُّنَّةٌ (আস্ সুন্নাহ) গ্রন্থের ৯৭ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন। উপরন্তু ‘আল্লামা যিয়া তার রচিত فِى الْأَحَادِيْثِ الْمُخْتَارِ (ফিল আহা-দীসিল মুখতা-র) নামক গ্রন্থে আনাস (রাঃ) হতে উভয় সূত্রেই ২/২৩৪ পৃঃ রিওয়ায়াত করেছেন। আর এ হাদীসটি ভালো তার একটি সানাদ হাসান স্তরের এবং তার অনেক শাহিদ বর্ণনাও রয়েছে।
الفصل الثانى
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا قَالَ: «لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
Chapter - Section 2
Anas said:
God’s messenger seldom addressed us without saying, “He who is not trustworthy has no faith, and he who does not keep his covenant has no religion."
Baihaqi transmitted it in Shu'ab al-lman.
ব্যাখ্যা: তার মধ্যে ঈমান নেই যার মধ্যে আমানাতদারী নেই। কেননা প্রকৃত মু’মিনতো সেই যাকে লোকেরা স্বীয় জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে। অতএব যে ব্যক্তি খিয়ানত করে ও যুলম করে সে প্রকৃত মু’মিন নয়। ঈমানের পূর্ণতাকে বুঝানো হয়েছে। আমানাতদারী বিলুপ্ত হলে ঈমানের পূর্ণতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কেননা খারাপ চরিত্র তাকে মানুষের সম্পদ, সম্মান ও রক্ত হালাল করার দিকে ধাবিত করে। আর এ অন্যায় আচরণগুলো ঈমানকে ত্রুটিযুক্ত করে। ফলে তার মধ্যে স্বল্প ঈমানই অবশিষ্ট থাকে। এমনকি কখনো কখনো এ খারাপ কাজগুলো কুফরীতেও লিপ্ত করে।
‘‘যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার ধর্ম নেই’’ অর্থাৎ- যার সাথে কারো কোন ওয়া‘দা বা চুক্তি হয়, অতঃপর শারী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত কোন কারণ ছাড়াই তা’ ভঙ্গ করে, তার ধর্মও অসম্পূর্ণ। এখানে প্রশ্ন উত্থাপন হতে পারে যে, ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, দীন, ঈমান ও ইসলাম সমার্থবোধক। এ হাদীসে তা পৃথক করা হয়েছে কেন? কেনইবা তার প্রতিটিকে একটি নির্দিষ্ট অর্থের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে? এর জওয়াব এই যে, যদিও তার শব্দাবলী ভিন্ন কিন্তু তার অর্থ একই। কেননা আমানত ও অঙ্গীকার মূলত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর ও বান্দার হক আদায় করার মধ্যে নিহিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন এ কথা বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করার পর তা পূর্ণ করে না, আল্লাহর পক্ষ হতে আমানাত গ্রহণ করার পর তা’ আদায় করে না তার মধ্যে দীন ও ঈমান নেই। আর এ ওয়া‘দা ‘ও আমানাত হলো আল্লাহ কর্তৃক আদেশ ও নিষেধ পালনের বাধ্যবাধকতা।