বিজ্ঞান ও দর্শনের বহু তত্ত্ব ও তথ্য যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের কোন তত্ত্ব ও তথ্যের মধ্যে বৈপরীত্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। কুরআনের শত্রুরা শত চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছে।
যেমন (১) সূর্য ঘোরে, না পৃথিবী ঘোরে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এক সময় ছিল বিস্তর মতভেদ। খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীক বিজ্ঞানী পিথাগোরাস (খৃঃ পূঃ ৫৭০-৪৯৫) বলেন, পৃথিবী ঘোরে, সূর্য স্থির। তার প্রায় সাতশ’ বছর পর মিসরীয় বিজ্ঞানী টলেমী (৯০-১৬৮ খৃ.) বলেন, সূর্য ঘোরে পৃথিবী স্থির। তার প্রায় চৌদ্দশ’ বছর পর পোলিশ বিজ্ঞানী কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খৃ.) বলেন, টলেমীর ধারণা ভুল। বরং পৃথিবীই ঘোরে, সূর্য স্থির। কিন্তু এখন সবাই বলছেন, আকাশে সবকিছুই ঘোরে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে কুরআন ঘোষণা করেছে, كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ ‘নভোমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই সন্তরণশীল’ (আম্বিয়া ২১/৩৩; ইয়াসীন ৩৬/৪০)। (২) সমাজ বিজ্ঞানীদের অনেকে বলেন, নারী ও পুরুষ সবক্ষেত্রে সমান। এজন্য চলছে বিশ্বব্যাপী অনেক রাজনৈতিক হৈ চৈ। অথচ জীব বিজ্ঞান বলছে নারী ও পুরুষের মধ্যে আদপেই কোন সমতা নেই। দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী সত্তা। উভয়ের ইচ্ছা-আকাংখা-কর্মক্ষেত্র সবই পৃথক। কুরআন বহু পূর্বেই এ সত্য বর্ণনা করেছে (নিসা ৪/১ ও অন্যান্য)। যা নিতান্তই বাস্তব ও বিজ্ঞান সম্মত। (৩) কার্ল মার্কস তার ‘গতিতত্ত্ব’ বলে পরিচিত বিপ্লবের দর্শনে বলেছেন, সদা গতিশীল প্রাকৃতিক বিধান সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে মানবজীবনেও বিপ্লব ও পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে থাকে। এ দর্শন প্রচারের সাথে সাথে তিনি ‘দুনিয়ার মযদুর এক হও’ বলে ডাক দিলেন। যা ছিল তার দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক।[1] কেননা সামাজিক বিপ্লব যদি ঐতিহাসিক কার্যকারণের অনিবার্য পরিণতি হয়, তাহ’লে সেজন্য রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রয়োজন হবে কেন? আর রাজনৈতিক সংগ্রামের ফলেই যদি বিপ্লব আনতে হয়, তাহ’লে ঐতিহাসিক কার্যকারণের অনিবার্য দর্শন নিতান্তই অমূলক গণ্য হয়। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই মানুষকে কর্মদর্শন প্রদান করে বলেছে, إِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ ‘আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)।
এভাবে কুরআন প্রদত্ত দর্শনের সাথে বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদের তুলনামূলক আলোচনা করলে বৈপরিত্য ও স্ববিরোধিতার প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। অথচ কুরআন এসব থেকে মুক্ত।
অতএব যুগে যুগে বিজ্ঞান যত অগ্রগতি লাভ করবে, কুরআনের বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় তেমনি মানুষের সামনে খুলে যাবে। তবে সাবধান থাকতে হবে, এর দ্বারা যেন কোন ভ্রান্ত আক্বীদা জন্ম না নেয়। কেননা বিশুদ্ধ আক্বীদা কেবল সেটাই, যা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল। তাঁদের যুগে যেটি দ্বীন ছিল না, এখন সেটি দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।