বিগত দেড় হাযার বছরে পৃথিবীতে বহু কিছু ওলট-পালট হয়েছে। কিন্তু কুরআনের কোন বক্তব্য, অতীত ইতিহাস বা কোন ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়নি। যেমন, (১) পারসিকরা রোমকদের উপর বিজয়ী হ’ল। রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস সিরিয়া ছেড়ে রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে যেতে বাধ্য হলেন। এতে মক্কার মুশরিকরা খুশী হ’ল। কেননা পারসিকরা অগ্নি উপাসক ও মূর্তিপূজারী ছিল। পক্ষান্তরে মুসলমানেরা এতে দুঃখিত হ’ল। কেননা রোমকরা ছিল আহলে কিতাব। বিষয়টি আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন। জবাবে তিনি বললেন, রোমকরা সত্বর বিজয়ী হবে। এ বিষয়ে সূরা রূম ১-৬ আয়াত নাযিল হ’ল। এর বিরুদ্ধে কাফের নেতা উবাই বিন খালাফ আবুবকর (রাঃ)-এর সঙ্গে ১০০ উটের বাজি ধরলেন। দেখা গেল ৯ বছর পর বদর যুদ্ধের দিন রোমকরা বিজয়ী হ’ল। এভাবে কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হ’ল। তাতে বহু লোক মুসলমান হয়ে গেল।[1] (২) অতীত ইতিহাস হিসাবে কওমে ছামূদ-এর ধ্বংসস্থল সঊদী আরবের হিজর এলাকা, যা এখন ‘মাদায়েনে ছালেহ’ নামে পরিচিত। সমতলভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা উন্নতমানের প্রকোষ্ঠসমূহ তৈরী করত। এগুলির গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো এ স্থানটিকে World heritage বা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
৯ম হিজরীতে তাবূক অভিযানে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী এখানে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন, তোমরা ঐ অভিশপ্ত এলাকায় প্রবেশ করোনা ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্যতীত। নইলে তোমাদের উপর ঐ গযব আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছিল’ (বুখারী হা/৪৩৩)। (৩) লূতের কওমের ধ্বংসের ঘটনা, যা কুরআনে বিধৃত হয়েছে (হিজর ১৫/৭৫, ৭৭; আনকাবূত ২৩/৩৫)। বর্তমান ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী ৭৭ * ১২ ব. কি. এলাকা ব্যাপী ৪০০ মিটার গভীরতার ‘মৃত সাগর’ যার বাস্তব প্রমাণ বহন করছে।[2] (৪) মূসার বিরুদ্ধে ফেরাঊনের সাগরডুবির পর তার লাশ অক্ষত থাকবে বলে কুরআন যে ঘোষণা দিয়েছিল (ইউনুস ১০/৯২), তার মমিকৃত লাশ ১৯০৭ সালে সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম তীরে ‘জাবালে ফেরাঊন’ নামক পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়ার পর এখন তা দিবালোকের ন্যায় সত্যে পরিণত হয়েছে। যা এখন কায়রোতে পিরামিডে রক্ষিত আছে’ (নবীদের কাহিনী ২/১১ পৃঃ)। এটি কুরআনের অকাট্য ও অভ্রান্ত সত্য হওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করে।
[2]. দ্রঃ লেখক প্রণীত নবীদের কাহিনী ১/১৬০, টীকা-১১৬।