সাধারণভাবে যিকরের মাজলিসের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাঃ) ও আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
“যখনই কোনো সম্প্রদায় (কিছু মানুষ) বসে মহা মহিমান্বিত আল্লাহর স্মরণ (যিকর) করে, তখনই ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন, রহমত তাদেরকে আবৃত করে, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তাদের স্মরণ (যিকর) করেন তাঁর (আল্লাহর) নিকট যারা আছেন তাদের মধ্যে।”[1]
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَا مِنْ قَوْمٍ اجْتَمَعُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ (لا يُرِيدُونَ بِذَلِكَ إِلا وَجْهَه) إِلا نَادَاهُمْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ قُومُوا مَغْفُورًا لَكُمْ قَدْ بُدِّلَتْ سَيِّئَاتُكُمْ حَسَنَاتٍ
“যখনই কোনো সম্প্রদায় (কিছু মানুষ) একত্রিত হয়ে আল্লাহর যিকরে রত হয়, এদ্বারা তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কিছুই চায় না, তখনই আসমান থেকে একজন আহবানকারী তাঁদেরকে ডেকে বলেন, তোমরা পরিপূর্ণ ক্ষমাপ্রাপ্ত-গোনাহমুক্ত হয়ে উঠে যাও,
তোমাদের পাপগুলিকে পুণ্যে রূপামতি রত করা হয়েছে।”[2]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, আজ জমায়েতের দিনে সবাই জানবে কারা সম্মানের অধিকারী। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: হে আল্লাহর রাসূল, সম্মানের অধিকারী কারা? তিনি বলেন: (مجالس الذكر فى المساجد) “মসজিদের ভিতরের যিকরের মাজলিসগুলি।”[3]
আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
ليبعثن الله أقواما يوم القيامة في وجوههم النور على منابر اللؤلؤ يغبطهم الناس ليسوا بأنبياء ولا شهداء قال فجثى أعرابي على ركبتيه فقال يا رسول الله جلهم لنا نعرفهم قال هم المتحابون في الله من قبائل شتى وبلاد شتى يجتمعون على ذكر الله يذكرونه
“কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে উঠাবেন যাঁদের চেহারায় নূর উদ্ভাসিত থাকবে। তাঁরা মুক্তাখচিত মিম্বরের উপর থাকবে। সকল মানুষ যাঁদের নিয়ামত দেখে নিজেদের জন্য এই নিয়ামত কামনা করবে। তাঁরা নবী নন বা শহীদও নন।” তখন একজন
বেদুঈন হাঁটু গেড়ে বসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তাঁদের বৈশিষ্ট্য আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যেন আমরা তাঁদের চিনতে পারি। তিনি বলেন, “তাঁরা ঐসব মানুষ যাঁরা একে অপরকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, বিভিন্ন গোত্র বা গোষ্ঠী ও বিভিন্ন এলাকা বা দেশ থেকে এসে তাঁরা আল্লাহর যিকরের জন্য একত্রিত হয়ে আল্লাহর যিকর করবে।” হাদীসটি হাসান।[4]
আমর ইবনু আনবাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত এই অর্থের অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এসকল মহান সম্মানিত ও মর্যাদাপ্রাপ্ত মানুষদের পরিচয় দিয়ে বলেছেনঃ
هم جماع من نوازع القبائل ، يجتمعون على ذكر الله فينتقون أطايب الكلام كما ينتقي آكل التمر أطايبه
“এরা হলেন বিভিন্ন গোত্র, দেশ বা এলাকা থেকে আগত মানুষ, যাঁরা আল্লাহর যিকরের জন্য সমবেত হন এবং সুন্দর ও পবিত্র বাক্যসমূহ চয়ন করেন, যেমনভাবে খেজুর ভক্ষণকারী ভালো ভালো খেজুর বেছে বেছে নেয়।”[5]
অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ, হে আল্লাহর রাসূল, যিকরের মাজলিসের গনীমত (লাভ) কী ? তিনি বলেনঃ (غنيمة مجالس الذكر الجنة) “যিকরের মাজলিসসমূহের গনীমত বা লাভ জান্নাত।” হাদীসটির সনদ হাসান।[6]
[2] ইবনু আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ৭/২৪৪, মুসনাদ আহমাদ ৩/১৪২, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৭৬, আল-আহাদীসুল মুখতারাহ ৭/২৩৪-২৩৫। হাদিসটি হাসান।
[3] হাদিসটির সনদ হাসান। মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৭৬।
[4] মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৭৭, আত-তারগীব ২/৩৮৩।
[5] আত-তারগীব ২/৩৮৮-৩৮৯, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৭৭। সনদ মোটামুটি গ্রহনযোগ্য।
[6] মুসনাদ আহমাদ ২/১৭৭, ১৯০, আত-তারগীব ২/৩৮১, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/৭৮।