রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রার্থনা

দোয়া-প্রার্থনা হল মহান এক ইবাদাত, যা আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট করা কোন ভাবেই বৈধ নয়। দোয়ার অর্থ হল: আল্লাহর সমীপেই মুখাপেক্ষীতা প্রকাশ ও সকল সামর্থ ও শক্তি আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা। আর দোয়া বা প্রার্থনা করাই হল বান্দার আসল পরিচয় এবং মানবিক দুর্বলতা ও বশ্যতার বহি:প্রকাশ তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেছেন:

«الدعاء هو العبادة»

দোয়াই হল ইবাদাত।[1]

তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদায় দোয়া, বিনয়-নম্রতা ও আল্লাহর সমীপে স্বীয় অভাব প্রকাশ করতেন এবং তিনি ব্যাপক ভাব সম্পন্ন কথা বলতে ও দোয়া- প্রার্থনা করতে পছন্দ করতেন।

তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর দোয়ার মধ্যে এগুলি ছিল অন্যতম:

اَللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِيْ دِيْنِيْ الَّذِيْ هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِيْ ، وَأَصْلِحْ لِيْ دُنْيَايَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَاشِيْ وَأَصْلِحْ لِيْ آخِرَتِيْ التَّيْ فِيْهَا مَعَادِيْ وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِّيْ فِيْ كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِيْ مِنْ كُلِّ شَرٍّ .

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনকে সুন্দর-সঠিক কর যা আমার সকল কর্মের হেফাযতকারী। আমার পার্থিব জীবনকে সুন্দর কর যাতে আমার জীবিকা রয়েছে। আমার পরকালকে সুন্দর কর যাতে আমার প্রত্যাবর্তন হবে। সৎ কর্মের মধ্যে আমার হায়াত বৃদ্ধি কর এবং মন্দ কর্ম হতে মওতকে আমার জন্য আরাম দায়ক কর।[2]

আর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম দোয়ার অন্তর্ভুক্ত:

اَللَّهُمَّ عَالِمُ الْغَيْبَ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرِكِهَ وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِيْ سُوْءاً أَوْ أَجِرْهُ إِلىَ مُسْلِمٍ .

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি উপস্থিত ও অনুপস্থিত সম্পর্কে জ্ঞাত, আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকারী, হে প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও অধিপতি, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আমার আত্মার মন্দ হতে এবং শয়তান ও তার শিরকের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি নিজের অনিষ্ট হতে এবং কোন মুসলমানের অনিষ্ট করা হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।[3]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো পছন্দনীয় দোয়া হল:

اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ .

অর্থাৎ, হে আল্লাহ ! তুমি তোমার হারাম বস্তু হতে বাঁচিয়ে তোমার হালাল রিযিক দ্বারা আমাকে পরিতুষ্ট করে দাও। আর তোমার অনুগ্রহ অবদান দ্বারা তুমি ভিন্ন অন্য সব হতে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও।[4]

তিনি তাঁর প্রতিপালকের সমীপে এ প্রার্থনাও করতেন:

اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الأَعْلَى

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া করো ও আমাকে আমার সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত কর।[5]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাচ্ছন্দে ও দু:খ সর্বদায় আল্লাহর সমীপে প্রার্থনা করতেন, বদরের যুদ্ধের ময়দানে তিনি মুসলিম বাহিনীর বিজয় ও মুশরিক বাহিনীর পরাজয়ের জন্য দোয়া করতে করতে কাঁধ থেকে তাঁর চাদর পড়ে গিয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য, স্বপরিবারের জন্য, সাহাবীদের জন্য ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য দোয়া করতেন।

[1] তিরমিযী, হাদিস: ২৯৬৯

[2] মুসলিম, হাদিস: ২৭২০

[3] আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮৩

[4] তিরমিযী, হাদিস: ৩৫৬৩

[5] তিরমিযি, হাদিস: ৩৪৯৬; ইবনু মাযাহ, হাদিস: ১৬১৯