রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, তাঁর পবিত্র জীবনী, তাঁর জিহাদ ও বিপদাপদের বর্ণনা শুনে আমাদের কর্ণকে সুরভিত করার পর এবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে হক রয়েছে, তা আদায় করা আমাদের উপর ওয়াজিব যাতে করে আমরা পূর্ণ মঙ্গলের অধিকারী হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করি। তাঁর উম্মতের উপর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হল:

কথা ও কাজের মাধ্যমে তাঁর উপর পূর্ণ ঈমানের প্রকাশ ঘটানো ও তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেগুলিকে বিশ্বাস করা এবং তাঁর অনুসরণ করা ও তার অবাধ্যতা করা হতে বেঁচে থাকা। আর জীবনের প্রতিটি দিক তার আদর্শ মতে ফয়সালা করা এবং তার দেয়া বিধানে সন্তুষ্ট থাকা ও বাড়াবাড়ি বা অবমাননা না করে তাঁর যথাযথ সম্মান প্রদান করা। আর জীবনের প্রতিটি বিষয়ে তাঁর অনুসরণ করা ও তাঁকে আদর্শের মূর্ত প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা। স্বীয় পরিবার, সম্পদ, সন্তান ও সকল মানুষ থেকে তাঁকে বেশী ভালবাসা। তাঁকে সম্মান দেয়া, তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করা ও তাঁর সুন্নাতকে রক্ষা করা ও তা মুসলমানদের মাঝে বিস্তার করা, এবং তার সাহাবীদের ভালবাসা ও তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও তাদের সম্মান রক্ষা করা ও তাদের জীবন চরিত পাঠ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহাব্বতের অন্তর্ভুক্ত হল: যে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦ ﴾ [الاحزاب : ٥٦]

অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি সালাত প্রেরণ করেন, হে মু’মিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য সালাত ও যথাযথভাবে সালাম জানাও।[1]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فيه: خلق آدم، وفيه النفخة، وفيه الصعقة، فأكثروا عليّ من الصلاة فيه فإن صلاتكم معروضة عليّ. فقالرجل: يا رسول الله! كيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت؟ يعني بليت. قال: إن الله حرّم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء.

অর্থাৎ সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে তোমাদের জন্য শুক্রবার হল সর্বোত্তম দিন। যাতে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে দিনেই সিঙ্গায় ফু দেয়া হবে এবং সে দিনেই সকল জীবন মৃত্যবরণ করবে। সুতরাং তোমরা তাতে আমার উপর বেশী বেশী সালাত পাঠ করো, কেননা তোমাদের সালাত আমার সম্মানে উপস্থাপন করা হবে। এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যাবেন, অতএব, আমাদের সালাত আপনার প্রতি কিভাবে পেশ করা হবে? তিনি বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহ হজম করাকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।[2]

উম্মতে মুহাম্মাদী যেন এ নবীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন কৃপণতা না করে, সেক্ষেত্রে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন:

«البخيل من ذكرت عنده فلم يصل عليَّ»

“প্রকৃত কৃপণ তো সেই ব্যক্তি যার সামনে আমার আলোচনা হল, অথচ সে আমার প্রতি সালাত পড়ল না।”[3]

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

«ما جلس قوم مجلسًا لم يذكروا الله فيه، ولم يصلوا على نبيهم إلا كان عليه ترة فإن شاء عذبهم وإن شاء غفر لهم»

“কোন জাতি এক মজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে না আল্লাহর কথা আলোচনা করল, না তারা তাদের নবীর প্রতি সালাত পড়ল। এতএব, এ হবে তাদের জন্য হতাশার কারণ, আল্লাহ চাইলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন, চাইলে তাদেরকে ক্ষমাও করতে পারেন।[4]

[1] সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬

[2] আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ এবং আলবানী সহীহ বলেছেন

[3] ইবনে মাযাহ, হাদিস: ১৬৩৭, ১৬৩৬

[4] তিরমিযী, হাদিস: ৩৩৮০