ইহরাম বাঁধার মধ্য দিয়ে হজ ও উমরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ করা। হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন হজ বা উমরা কিংবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ওপর কতিপয় হালাল ও জায়েয বস্তুও হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই এ প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।

শুধু হজ বা উমরার সংকল্প করলেই কেউ মুহরিম হবে না। যদিও সে নিজ দেশ থেকে সফর শুরুর সময় হজের সংকল্প করে। তেমনি শুধু সুগন্ধি ত্যাগ অথবা তালবিয়া পাঠ আরম্ভ করলেই মুহরিম হবে না। এ জন্য বরং তাকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করার নিয়ত করতে হবে।

তাই হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি গোসল ও পবিত্রতা অর্জন সম্পন্ন করে ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন, অতঃপর হজ অথবা উমরা কিংবা উভয়টি শুরুর নিয়ত করবেন। যদি তামাত্তুকারী হন, তাহলে বলবেন,

لَبَّيْكَ عُمْرَةً. (লাব্বাইকা উম্রাতান)

তবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেবেন, এ উমরা থেকে হালাল হবার পর এ সফরেই হজের ইহরাম করব। যদি কিরানকারী হন, তাহলে বলবেন,

لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا. (লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান)

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,[1]

لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا.

আর যদি ইফরাদকারী হন, তাহলে বলবেন,

لَبَّيْكَ َحَجًّا. (লাব্বাইকা হাজ্জান)

পক্ষান্তরে যদি উমরা পালনকারী হন, তাহলে বলবেন,

لَبَّيْكَ عُمْرَةً. (লাব্বাইকা উমরাতান)

এরপর তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন। হজ পালনকারী ব্যক্তি যদি অসুখ কিংবা শত্রু অথবা অন্য কোন কারণে হজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করেন, তাহলে নিজের ওপর শর্তারোপ করে বলবেন,

اللَّهُمَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي (আল্লাহুম্মা মাহিল্লী হাইছু হাবাসতানী)

‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যেখানে রুখে দেবেন, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।’[2] অথবা বলবে,

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، وَمَحِلِّي مِنَ الأَرْضِ حَيْثُ تَحْبِسُنِي.

(লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ওয়া মাহিল্লী মিনাল আরদি হাইছু তাহবিসুনী)

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, যেখানে তুমি আমাকে আটকে দেবে, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।’[3] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুবা‘আ বিন্ত জুবায়ের রা. কে এমনই শিখিয়েছেন।

নাবালকের ইহরাম

মুহরিম ব্যক্তি যদি ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী ও বোধসম্পন্ন বালক হয়, তাহলে সে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিহার করে ইহরামের কাপড় পরিধান করে নিজেই ইহরাম বাঁধবে। হজ বা উমরার যেসব আমল সে নিজে করতে পারে, নিজে করবে। অবশিষ্টগুলো অভিভাবক তার পক্ষ থেকে আদায় করবেন।

বালক যদি ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী বা বোধসম্পন্ন না হয়, তাহলে অভিভাবক তার শরীর থেকে সেলাইযুক্ত কাপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরিধান করাবেন। অতপর তার পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধবেন এবং তাকে নিয়ে হজের সকল আমল সম্পন্ন করবেন।

[1]. মুসলিম : ১২৩২।

[2]. বুখারী : ৫০৮৯; মুসলিম : ১২০৭।

[3]. নাসাঈ : ২৭৬৬।

ইহরাম হজের অন্যতম রুকন বা ফরয। ইহরাম ছাড়া হজ কিংবা উমরা- কোনটিই সহীহ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»

‘সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করে।’[1] আর হজ শুরু করার নিয়তের নামই ইহরাম। অতএব ইহরামের নিয়ত ছাড়া হজ সহীহ হবে না।

কেউ নফল হজ বা নফল উমরার ইহরাম বাঁধলে তার ওপর তাও পূরণ করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ ﴾ [البقرة: ١٩٦]

‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও উমরা পূর্ণ কর।’[2]

হজ বা উমরা পালনকারিগণ ইহরামের কাপড় খুলে ফেলার সময় হওয়ার পূর্বেই তা খুলে ফেলে হালাল হয়ে যাওয়ার সংকল্প করলেও তার ইহরাম বাতিল হবে না, বরং তার ইহরাম ত্যাগই অসার কাজ হিসেবে গণ্য হবে- এতে কারো দ্বিমত নেই। সুতরাং যেকোনোভাবে তাকে ইহরাম পরবর্তী কাজ শেষ করতে হবে।[3]


>

[1]. বুখারী : ০১; মুসলিম : ১৯০৭।

>

[2]. বাকারা : ১৯৬।

>

[3] একমাত্র ইসলাম পরিত্যাগ করা ছাড়া অন্য কিছু ইহরামের জন্য অন্তরায় নয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে গেলে তার ইহরাম বাতিল বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا وَلِقَآءِ ٱلۡأٓخِرَةِ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡۚ هَلۡ يُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ﴾ [الاعراف:١٤٧]

‘আর যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতে মিথ্যারোপ করেছে তাদের কর্মসমূহ বিনষ্ট হয়ে গেছে। তারা যা করে তা ছাড়া কি তাদের প্রতিদান দেয়া হবে ?’ এরপর যদি সে তাওবা করে এবং ইসলামে ফিরে আসে, তবে তাকে হজ বা উমরা করার জন্য নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে। কেননা, ইসলাম ত্যাগের কারণে তার আগের ইহরাম বাতিল হয়ে গেছে।

মীকাত শব্দের অর্থ, নির্ধারিত সীমারেখা। স্থান বা কালের নির্ধারিত সীমারেখাকে মীকাত বলে। অর্থাৎ হজ বা উমরা পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য ইহরাম ছাড়া যে স্থান অতিক্রম করা যায় না, অথবা যে সময়ের পূর্বে হজের ইহরাম বাঁধা যায় না সেটাই মীকাত। আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যেসব বিষয়ের সম্মানের নির্দেশ দিয়েছেন যথার্থভাবে সেগুলোর সম্মান প্রদর্শন করা ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত এবং কল্যাণ অর্জনের পথ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]

‘এবং যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করবে, তাঁদের হৃদয়ের তাকওয়ার কারণেই তা করবে।’[1] মহান আল্লাহর বিশেষ নিদর্শন বাইতুল্লাহ্‌র সম্মানার্থে বেশ দূর থেকে ইহরাম বেঁধে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে তার দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যই হজ বা উমরার মীকাতসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নে মীকাতের বিবরণ দেয়া হল।

প্রথম : মীকাতে যামানী অর্থাৎ কালবিষয়ক মীকাত

মীকাতে যামানী বলতে সেই সময়সমূহকে বুঝায় যার বাইরে উযর ছাড়া হজের কোন আমলই সহীহ হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ ﴾ [البقرة: ١٩٧]

‘হজের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ।’[2]

এ নির্দিষ্ট মাসগুলো হল, পুরো শাওয়াল ও যিলকদ এবং কারও কারও মতে যিলহজের ১০ তারিখ পর্যন্ত হজের মাস। কিন্তু বিশুদ্ধ মতানুসারে যিলহজ মাসের পুরোটিও হজের মাস। কেননা হজের কিছু কাজ যেমন পাথর নিক্ষেপ, মিনায় রাত্রি যাপন ইত্যাদি রুকন ১০ জিলহজের পরে আইয়ামে তাশরীকে আদায় করা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ উদয় হওয়ার পূর্বে হজের ইহরাম বাঁধা কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী।

[1]. হজ : ৩২

[2]. বাকারা : ১৯৭।
কালবিষয়ক মীকাত সম্পর্কে কিছু বিধান ও সতর্কিকরণ
  • কালবিষয়ক মীকাত কেবল হজের জন্য। উমরার জন্য কালবিষয়ক কোন মীকাত নেই। সারা বছরই উমরা করা যায়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৯৭ নং আয়াতে হজের সময় নির্দিষ্ট করেছেন, উমরার কোন সময় নির্দিষ্ট করেননি। এছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের মাসসমূহ ছাড়া অন্য মাসে উমরা পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

«فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي»

‘রমযানে উমরা করা হজ অথবা তিনি বলেছেন, আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।’[1]

  • হজের মাস শুরু হওয়ার আগে হজের ইহরাম সহীহ নয়। আল্লাহ তা‘আলা হজের মাসসমূহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইহরাম যেহেতু হজেরই একটি আমল, তাই হজের সময়ের আগে এটি সহীহ হবেনা। কেউ যদি হজের মাস অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের আগেই হজের ইহরাম বাঁধে তবে তার সে ইহরাম বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হজের ইহরাম হবেনা, বরং তা উমরার ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে। যেমন সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার আগে কেউ সালাত আদায় করলে তা নফল হিসাবে গণ্য করা হয়।
  • হজের কোন আমল উযর ছাড়া যিলহজ মাসের পরে পালন করা জায়েয নয়। যদি সঙ্গত উযর থাকে তবে ভিন্ন কথা। যেমন নিফাসবতী মহিলা যিলহজ মাসে পবিত্র না হলে তিনি তাওয়াফে ইফাযা অর্থাৎ ফরয তাওয়াফ যিলহজ মাসের পরে আদায় করতে পারবেন। আর কারো মাথায় জখম থাকলে তা ভালো হওয়া পর্যন্ত তিনি তার মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা বিলম্বিত করতে পারবেন। অর্থাৎ যিলহজ মাসের পরেও করতে পারবেন।
[1]. বুখারী : ১৮৬৩; মুসলিম : ১২৫৬।
দ্বিতীয় : মীকাতে মাকানী বা স্থানবিষয়ক মীকাত

হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির ইহরাম বাঁধার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানসমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেগুলোকে মীকাতে মাকানী বা স্থানবিষয়ক মীকাত বলা হয়। মীকাতে মাকানী পাঁচটি। যথা :

১. যুল-হুলাইফা। মসজিদে নববীর দক্ষিণে ৭ কি. মি. এবং মক্কা থেকে উত্তরে ৪২০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত, যা আবইয়ারে আলী নামে পরিচিত। এটি মদীনাবাসী এবং এ পথে যারা আসেন তাদের মীকাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মীকাত থেকে হজের ইহরাম বেঁধেছেন। বাংলাদেশী হাজীগণও যারা আগে মদীনা শরীফ যাবেন, তারা মদীনার কাজ সমাপ্ত করে মক্কা যাবার পথে এ মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবেন।

২. জুহফা। রাবেগ নামক স্থানের নিকটবর্তী একটি নিশ্চি‎হ্ন জনপদ, যা মক্কা থেকে ১৮৭ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। এটি সিরিয়া, মিসর ও মরক্কো অধিবাসীদের মীকাত। জুহফার নিদর্শনাবলি বিলীন হয়ে যাবার কারণে বর্তমানে লোকেরা মক্কা থেকে ২০৪ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত রাবেগ নামক স্থান থেকে ইহরামের নিয়ত করে।

৩. ইয়ালামলাম। যা সা‘দিয়া নামেও পরিচিত। মক্কা থেকে ১২০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। এটি ইয়ামানবাসী ও পাক-ভারত-বাংলাদেশসহ প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্য থেকে আগমনকারীদের মীকাত।

৪. কারনুল মানাযিল। যা আস-সাইলুল কাবীর নামেও পরিচিত। মক্কা থেকে ৭৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। এটি নজদ ও তায়েফবাসী এবং এ পথে যারা আসেন তাদের মীকাত।

৫. যাতু ইর্ক। বর্তমানে একে দারিবাহ নামেও অভিহিত করা হয়। মক্কা থেকে পূর্ব দিকে ১০০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। এটি প্রাচ্যবাসী তথা ইরাক, ইরান এবং এর পরবর্তী দেশগুলোর অধিবাসীদের মীকাত। বর্তমানে এ মীকাতটি পরিত্যক্ত। কারণ ঐ পথে বর্তমানে কোন রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজীগণ বর্তমানে সাইলুল কাবীর অথবা যুল-হুলাইফা থেকে ইহরাম বাঁধেন।

ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এই মীকাতসমূহের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি বলেন,

أَنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم وَقَّتَ لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلأَهْلِ الشَّامِ الْجُحْفَةَ وَلأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنًا.

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, শামবাসীদের জন্য জুহফা, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম এবং নজদবাসীদের জন্য কার্নকে মীকাত নির্ধারণ করেছেন।’[1]

অনুরূপভাবে আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَّتَ لأَهْلِ الْعِرَاقِ ذَاتَ عِرْقٍ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাকবাসীদের জন্য যাতু ইর্ককে মীকাত নির্ধারণ করেছেন।’[2]

[1]. বুখারী : ১৫২৯; মুসলিম : ১১৮১।

[2]. আবু দাউদ : ১৭৩৯।
স্থানবিষয়ক মীকাত সম্পর্কে কিছু বিধান ও সতর্কিকরণ

১. হজ ও উমরা আদায়কারির জন্য ইহরামের নিয়ত না করে মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। যদি কেউ ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ভেতরে চলে আসে তার উচিত হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরামের নিয়ত করা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। যদি সে মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে ইহরামের নিয়ত করে, তাহলে তার হজ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে তার ওপর ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। কেননা সে অন্তরে হজ বা উমরা অথবা উভয়টার ইচ্ছা রেখেই মীকাত অতিক্রম করেছে। ইবন আব্বাস রা. বলেন,

مَنْ نَسِىَ مِنْ نُسُكِهِ شَيْئًا أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقْ دَمًا

‘কেউ যদি তার হজের কোন আমল ভুলে যায় বা ছেড়ে দেয় সে যেন পশু যবেহ করে।’[1]

২. মীকাত থেকে ইহরামের নিয়ত করার বিধান মীকাত অতিক্রমকারী সবার জন্য প্রযোজ্য। তারা সেখানকার অধিবাসী হোক বা না হোক। কেননা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ»

‘এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য।’[2]

৩. যদি কারো পথে দুটি মীকাত পড়ে, তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তিনি দ্বিতীয় মীকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে মদীনা হয়ে মক্কায় গমনকারী হাজীগণ এই মাসআলার আওতায় পড়েন। তারা জেদ্দা বিমান বন্দরের পূর্বে যে মীকাত আসে সেখান থেকে ইহরাম না বেঁধে মদীনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে যে মীকাত পড়ে (যুল হুলায়ফা) সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে থাকেন।

৪. যদি কোন ব্যক্তি এমন পথ দিয়ে যায় যেখানে কোন মীকাত নেই, তবে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী মীকাত বরাবর পৌঁছলে তার ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। বসরা ও কুফা জয় লাভের পর এই দুই শহরের অধিবাসীরা উমর রা. এর নিকট এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিলকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু এটা আমাদের পথ থেকে অনেক দূরে। যদি আমরা সেখানে যেতে চাই তবে আমাদের অনেক কষ্ট হবে। উমর রা. বললেন,

فَانْظُرُوا حَذْوَهَا مِنْ طَرِيقِكُمْ فَحَدَّ لَهُمْ ذَاتَ عِرْقٍ.

‘তোমরা তোমাদের পথে কারনুল মানাযিল বরাবর ইহরাম বাঁধার স্থান দেখ, এরপর তিনি ‘যাতু ইরক’ কে তাদের মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করে দিলেন।’[3]

৫. যখন কোন হজ বা উমরাকারী বিমান বা জাহাজে সফর করবেন, তখন নিকটতম মীকাতের বরাবর হওয়ার সাথে সাথে তার ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যারা বিমান আরোহী। কারণ বিমানের গতি অনেক বেশি।

৬. যদি কোন মুহরিম স্থানবিষয়ক মীকাতে আসার পূর্বেই ইহরাম বাঁধে, তাহলে তার ইহরাম সহীহ হবে, তবে তা হবে সুন্নত পরিপন্থী। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম করেননি। উম্মতকেও এরকম শিক্ষা দেননি। এ থেকে বুঝা যায়, মীকাতে আগমনের পূর্বেই ইহরাম বাঁধা কোন সওয়াব বা ফযীলতের কাজ নয়।

৭. যে ব্যক্তি মীকাত না চিনেই জেদ্দায় পৌঁছে এদিকে তার পক্ষে আবার মীকাতে ফিরে আসাও সম্ভব নয়, তার জন্য জেদ্দাতেই ইহরাম বেঁধে নেয়া যথেষ্ট হবে।

৮. হজ ও উমরা পালন করবে না- এমন ব্যক্তি যদি ইহরাম বাঁধা ছাড়াই মীকাত অতিক্রম করে, তবে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হজ ও উমরা পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্যই মীকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম বাঁধা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে ওই পথে আসে তাদের জন্য।’[4]

৯. যদি কোন হাজী মুআল্লিমের কথা অনুযায়ী প্রথমে মদীনা যাওয়ার ইচ্ছা করেন, কিন্তু জেদ্দায় অবতরণের পর তার কাছে প্রতীয়মান হয়, হজের আগে তার পক্ষে মদীনায় যাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে তিনি জেদ্দা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবেন। এ কারণে তাকে দম দিতে হবে না।

১০. যাদের আবাস মীকাতের সীমারেখার ভেতর, যেমন ‘বাহরাহ’ ও ‘শারায়ে’ এর অধিবাসীগণ, তারা নিজ নিজ আবাসস্থল থেকেই হজ ও উমরার ইহরাম বাঁধবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّهُ مِنْ أَهْلِهِ.»

‘যে ব্যক্তি মীকাতসমূহের ভেতরে থাকে তার আবাসস্থলই তার ইহরামের স্থান।’[5]

১১. যিনি মক্কায় অবস্থান করছেন, তিনি হজ করতে ইচ্ছে করলে মক্কা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবেন। চাই তিনি মক্কার অধিবাসী হোন বা না হোন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«حَتَّى إِنَّ أَهْلَ مَكَّةَ يُهِلُّونَ مِنْهَا».

‘এমনকি মক্কাবাসীরা মক্কা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবে।’[6]

তাছাড়া ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের সময় তাঁর সাথে আসা সাহাবায়ে কিরাম রা. কে তাঁদের অবস্থানস্থল ‘আবতাহ’ থেকেই ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’[7] তাঁরা তামাত্তু হজ করেছিলেন। উমরার জন্য তাঁরা বাইরে থেকে ইহরাম বাঁধলেও হজের জন্য মক্কায় তাঁদের আবাসস্থল থেকে ইহরাম বেঁধেছেন।

১২. মক্কায় অবস্থানকারী কোন ব্যক্তির জন্য হারামের সীমারেখার ভেতর থেকে উমরার ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না। তাকে হারামের সীমানার বাইরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. যখন উমরা করতে চাইলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর ভাই আবদুর রহমানকে বললেন,

«اخْرُجْ بِأُخْتِكَ مِنَ الْحَرَمِ فَلْتُهِلَّ بِعُمْرَةٍ».

‘তুমি তোমার বোনকে হারামের বাইরে নিয়ে যাও, যাতে সে উমরার ইহরাম বাঁধতে পারে।’[8]

১৩. বাইরের লোক যদি হজ করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় বা ভুলক্রমে ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে তারা মীকাতের ভেতরে ঢুকে ‘তান‘ঈমে’ অবস্থিত মসজিদে আয়েশায় গিয়ে হজের ইহরাম বাঁধলে চলবে না। কেননা মসজিদে আয়েশা হারাম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত। বাইরের লোকদের জন্য হজের মীকাত নয়।

১৪. ইহরাম বাঁধার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। তাই হায়েয ও নিফাসবতী মহিলা বা অনুরূপ যে কেউ অপবিত্র অবস্থায় থাকলেও নির্দ্বিধায় হজ বা উমরার ইহরাম বাঁধতে পারবেন।

[1]. মুআত্তা মালেক : ১/৪১৯; দারা কুতনী : ২/২৪৪; বাইহাকী : ৫/১৫২।

[2]. বুখারী : ১৫২৪; মুসলিম : ১১৮১।

[3]. বুখারী : ১৫৩১।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. বুখারী : ১৫২৬; মুসলিম : ১১৮১।

[6]. প্রাগুক্ত।

[7]. মুসলিম : ১২১৪।

[8]. বুখারী : ১৫৬০, ১২১১।

ইহরাম বাঁধার পূর্বে নিচের বিষয়গুলি সুন্নত :

১. নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, বগল ও নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা। রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْفِطْرَةُ خَمْسٌ : الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَقَصُّ الشَّارِبِ».

‘পাঁচটি জিনিস ফিতরাতের অংশ : খাতনা করা, ক্ষৌরকার্য করা, বগলের চুল উপড়ানো, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা।’ ফিকহবিদগণ বলেছেন, এই আমলগুলো ইবাদতের মনোরম পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক। আনাস রা. বলেন,

وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ وَنَتْفِ الإِبْطِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْمًا.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ও বগলের চুল উপড়ানোর সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা যেন চল্লিশ দিনের বেশি এসব কাজ ফেলে না রাখি।’[1]

মাথার চুল ছোট না করে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম ইহরামের পূর্বে মাথার চুল কেটেছেন বা মাথা মুণ্ডন করেছেন বলে কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, ইহরামের আগে বা পরে কখনো দাড়ি কামানো যাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ».

‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচারণ করো। দাড়ি লম্বা করো এবং গোঁফ ছোট করো।’[2]

২. গোসল করা। যায়েদ ইবন সাবিত রা. থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ رَأَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم تَجَرَّدَ لإِهْلاَلِهِ وَاغْتَسَلَ».

‘তিনি দেখেছেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পাল্টিয়েছেন এবং গোসল করেছেন।’[3]

এই গোসল পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য, এমনকি নিফাস ও হায়েযবতীর জন্যও সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা বিন্ত উমাইস রা. কে যুল-হুলায়ফায় সন্তান প্রসবের পর বলেন,

«اغْتَسِلِى وَاسْتَثْفِرِى بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِى».

‘তুমি গোসল কর, কাপড় দিয়ে পট্টি বাঁধ এবং ইহরাম বাঁধো।’[4]

গোসল করা সম্ভব না হলে উযু করা। উযু-গোসল কোনটাই যদি করার সুযোগ না থাকে তাহলেও কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা গোসলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও দুর্গন্ধমুক্ত হওয়া। তায়াম্মুম দ্বারা এই উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।

৩. ইহরাম বাঁধার পূর্বে শরীরে, মাথায় ও দাড়িতে উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। আয়েশা রা. এর হাদীসে এসেছে,

كُنْتُ أُطَيِّبُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ وَيَوْمَ النَّحْرِ قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ بِطِيبٍ فِيهِ مِسْكٌ.

‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং কুরবানীর দিন বাইতুল্লাহ্‌র তাওয়াফের পূর্বে মিশকযুক্ত সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।’[5]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুগন্ধি তাঁর মাথা ও দাড়িতে অবশিষ্ট থাকত, যেমনটি অনুমিত হয় আয়েশা রা.-এর উক্তি থেকে। তিনি বলেন,

كُنْتُ أُطَيِّبُ رسول الله صلى الله عليه وسلم بِأَطْيَبِ مَا يَجِدُ حَتَّى أَجِدَ وَبِيصَ الطِّيب فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ».

‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর কাছে থাকা উত্তম সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম এমনকি আমি তাঁর মাথা ও দাড়িতে সুগন্ধির চকচকে ভাব দেখতে পেতাম।’ তিনি আরো বলেন,

«كَأَنِّي أَنْظُرُ إلَى وَبِيصِ الْمِسْكِ فِي مَفْرِقِ رَسُولِ اللَّهِ وَهُوَ مُحْرِمٌ» .

‘আমি যেন মুহরিম অবস্থায় রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিঁথিতে মিশকযুক্ত সুগন্ধির চকচকে ভাব লক্ষ্য করছি।’[6]

লক্ষণীয়, ইহরাম বাঁধার পর শরীরের কোন অংশে সুগন্ধির প্রভাব রয়ে গেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা কোনভাবেই জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমকে সুগন্ধিযুক্ত কাপড় পরিধান পরিহার করতে বলেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘ইহরাম অবস্থায় কাপড় পরতে আমাদের কী করণীয়? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তোমরা জাফরান এবং ওয়ারস (এক প্রকার সুগন্ধি) লাগানো কাপড় পরিধান করো না।’[7]

৪. সেলাইবিহীন সাদা লুঙ্গি ও সাদা চাদর পরা এবং এক জোড়া জুতো বা স্যান্ডেল পায়ে দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَلْيُحْرِمْ أَحَدُكُمْ فِي إِزَارٍ ، وَرِدَاءٍ ، وَنَعْلَيْنِ».

‘তোমাদের প্রত্যেকে যেন একটি লুঙ্গি, একটি চাদর এবং এক জোড়া চপ্পল পরিধান করে ইহরাম বাঁধে।’[8]

সাদা কাপড় পুরুষের সর্বোত্তম পোশাক। তাই পুরুষের ইহরামের জন্য সাদা কাপড়ের কথা বলা হয়েছে। ইহরামের ক্ষেত্রে মহিলার আলাদা কোন পোশাক নেই। শালীন ও ঢিলে-ঢালা, পর্দা বজায় থাকে এ ধরনের যেকোনো পোশাক পরে মহিলা ইহরাম বাঁধতে পারে। ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা ও মাথা আবৃত করা পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হলেও মহিলার জন্য নিষিদ্ধ নয়।[9]

তবে ইহরাম অবস্থায় নিকাব বা অনুরূপ কোন পোশাক দিয়ে সর্বক্ষণ চেহারা ঢেকে রাখা বৈধ নয়। হাদীসে এসেছে, ‘মহিলা যেন নেকাব না লাগায় ও হাতমোজা না পরে।’[10] তবে এর অর্থ এ নয় যে, বেগানা পুরুষের সামনেও মহিলা তার চেহারা খোলা রাখবে। এ ক্ষেত্রে আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মাথার ওপর থেকে চাদর ঝুলিয়ে দিয়ে চেহারা ঢেকে মহিলাগণ বেগানা পুরুষ থেকে পর্দা করবে।[11]

৫. সালাতের পর ইহরাম বাঁধা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর ইহরাম বেঁধেছেন। জাবির রা.বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে সালাত আদায় করে উটের পিঠে আরোহণ করলেন এবং তাওহীদের বাণী : لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক) বলে ইহরাম বাঁধলেন।’[12]

ইবন উমর রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফাতে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর উটটি যখন তাঁকে নিয়ে যুল-হুলাইফার মসজিদের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তখন তিনি সেই কালেমাগুলো উচ্চারণ করে ইহরাম বাঁধলেন।’[13]

উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীক উপত্যকায় বলতে শুনেছি,

«أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتٍ مِنْ رَبِّي فَقَالَ صَلِّ فِي هَذَا الْوَادِي الْمُبَارَكِ وَقُلْ عُمْرَةً فِي حَجَّةٍ».

‘আমার রবের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক রাতের বেলায় আমার কাছে এসে বলল, এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন এবং বলুন, একটি হজের মধ্যে একটি উমরা।’[14]

এসব হাদীসের আলোকে একদল আলিম বলেন, ইহরাম বাঁধার পূর্বে দুই রাক‘আত ইহরামের সালাত আদায় করা সুন্নত। আরেকদল আলেমের মতে ইহরামের জন্য কোন বিশেষ সালাত নেই। তারা বলেছেন, ইহরাম বাঁধার সময় যদি ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত আদায়ের পর ইহরাম বাঁধা উত্তম। অন্যথায় সালাত ছাড়াই ইহরাম বাঁধবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতের পর ইহরাম বেঁধেছিলেন। আর তাঁর সালাতে এমন কোন লক্ষণ ছিল না, যা ইহরামের বিশেষ সালাতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

তবে সঠিক কথা হচ্ছে, ইহরামের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন সালাত নেই। তাই ইহরাম বাঁধার সময় যদি ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে ফরয সালাত আদায়ের পর ইহরাম বাঁধবে। অন্যথায় সম্ভব হলে তাহিয়্যাতুল উযু হিসেবে দুই রাক‘আত সালাত পড়ে ইহরামে প্রবেশ করবে।[15]

৬. তালবিয়ার শব্দগুলো বেশি বেশি উচ্চারণ করা। কেননা তালবিয়া হজের শ্লোগান। তালবিয়া যত বেশি পাঠ করা যাবে, তত বেশি সওয়াব অর্জিত হবে।

[1]. নাসাঈ : ১৪; তিরমিযী : ২৯৮৪।

[2]. বুখারী : ৫৮৯২; মুসলিম : ২৯৫।

[3]. তিরমিযী : ৮৩০।

[4]. মুসলিম : ১২১৮।

[5]. মুসলিম : ১১৯১। কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করার আগেই হাজীগণ হালাল হয়ে সাধারণ পবিত্র পোশাক পরে থাকেন। এ সময় ইহরাম অবশিষ্ট থাকে না বিধায় সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। স্মর্তব্য যে, ইহরাম থাকা অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

[6]. বুখারী : ১৫৩৮; মুসলিম : ১১৯০।

[7]. বুখারী : ১৮৩৮; মুসলিম : ১১৭৭।

[8]. মুসনাদ : ৪৮৯৯; ইবন খুযাইমা : ২৬০১।

[9]. এ ব্যাপারে ইমাম ইবনুল মুনযির ও ইবন আবদিল বার ইমামদের ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন। আল ইজমা : ১৮, আত-তামহীদ, ১৫/১০৪।

[10]. বুখারী : ১৮৩৮।

[11]. আত-তামহীদ : ১৫/১০৮।

[12]. মুসলিম : ১২১৮।

[13]. বুখারী : ১৫৪৯; মুসলিম : ১১৮৪।

[14]. বুখারী : ১৫৩৪।

[15]. ইবন বায, ফাতাওয়া মুহিম্মাহ তাতাআল্লাকু বিল হাজ্জি ওয়াল উমরা : পৃ. ৭; ইবন তাইমিয়া, মাজমু‘ ফাতাওয়া : ২৬/১০৮; শারহু উমদাতুল ফিকহ : ১/৪১৭; ইবন উসাইমিন, আল-মানহাজ লিমুরীদিল উমরাতি ওয়াল হাজ্জ : পৃ. ২৩।

তালবিয়া হল,

«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك».

(লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক)।

‘আমি হাযির, হে আল্লাহ, আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোন শরীক নেই।’[1]

উপর্যুক্ত তালবিয়াটিই ইবন উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ-শব্দমালায় আর কিছু যোগ করতেন না।’[2]

পক্ষান্তরে, আবূ হুরায়রা রা. এর বর্ণনা মতে, তালবিয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন لَبَّيْكَ إِلهَ اْلَحقِّ لَبَّيْكَ (লাব্বাইকা ইলাহাল হক্কি লাব্বাইক) ‘আমি হাযির, সত্য ইলাহ! আমি হাযির’।[3] বিদায় হজে কোনো কোনো সাহাবী উপর্যুক্ত তালবিয়ার পরে لَبَّيْكَ ذَا الْمَعَارِجِ (লাব্বাইকা যাল মা‘আরিজ) বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে কিছু বলেননি।[4] আবার ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন,[5]

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ.

(লাব্বাইক আল্লহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইক, ওয়াল খইরু বিইয়াদাইক, লাব্বাইকা ওয়ার রগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমল।)

‘আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির। আমি হাযির একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টিকল্পে। কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’

উপরোক্ত তালবিয়াগুলি পাঠ করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে যাওয়া যাবে না।

[1]. বুখারী : ৫৪৬০।

[2]. বুখারী : ৫৯১৫।

[3]. ইবন মাজাহ্‌ : ২৯২০।

[4]. মুসনাদে আহমাদ : ১৪৪৪০।

[5]. মুসলিম : ১১৮৪।

পুরুষগণ ইহরাম বাঁধার সময় ও পরে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَتَانِى جِبْرِيلُ فَأَمَرَنِى أَنْ آمُرَ أَصْحَابِى وَمَنْ مَعِى أَنْ يَرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ بِالإِهْلاَلِ - أَوْ قَالَ - بِالتَّلْبِيَةِ».

‘আমার নিকট জিবরীল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম[1] এসে আদেশ দিলেন। আমি যেন আমার সাথিদেরকে তালবিয়া দ্বারা তাদের কণ্ঠস্বর উচুঁ করতে নির্দেশ দেই।’[2]

পুরুষ-মহিলা সকলের ক্ষেত্রেই তালবিয়া পাঠ ও অন্যান্য যিক্‌রসমূহের গুরুত্ব সমান। পার্থক্য এতটুকু যে, মহিলারা পুরুষের মত উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। নিজে শুনতে পারে এতটুকু আওয়াযে মহিলারা তালবিয়া পাঠ ও অন্যান্য যিক্‌রসমূহ করবে। ইবন আবদুল বার বলেন, আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর উঁচু না করাই সুন্নত। মহিলারা এমনভাবে তালবিয়া পাঠ করবেন যেন তারা শুধু নিজেরাই শুনতে পান। তাদের আওয়াযে ফেতনার আশঙ্কা আছে বিধায় তাদের স্বর উচুঁ করাকে অপছন্দ করা হয়েছে। এ কারণে তাদের জন্য আযান ও ইকামাত সুন্নত নয়। নামাজে ভুল শুধরে দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সুন্নত হল তাছফীক তথা মৃদু তালি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা।[3] অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে, তাসবীহ বা সুবহানাল্লাহ্ বলে ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ইবন আব্বাস রা. বলেন, মহিলারা স্বর উচ্চ করে তালবিয়া পাঠ করবে না।[4]

উমরাকারী ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহূর্তে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে। আর হজ পালনকারিগণ ব্যক্তি কুরবানীর দিন জামরাতুল ‘আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্তে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে। ফযল ইবন আব্বাস রা. বলেন,

«لَمْ يَزَلِ رسول الله صلى الله عليه وسلم يُلَبِّي حَتَّى رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ».

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল ‘আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।’[5]

[1]. এখানে হাদীসে জিবরীল নামের পরে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে।

[2]. আবূ দাউদ : ১৮১৪।

[3]. বুখারী : ৬৮৪।

[4]. সাঈদ আবদুল কাদির : প্রাগুক্ত, পৃ.৮৭।

[5]. বুখারী : ১৫৪৪; মুসলিম : ১২৮১।

১. তালবিয়া পাঠ হজ-উমরার শ্লোগান। কেননা তালবিয়া পাঠের মধ্য দিয়ে হজ ও উমরায় প্রবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَمَرَنِيْ جِبْرِيْلُ بِرَفْعِ الصَّوْتِ فِي الإهْلاَلِ، فَإِنَّهُ مِنْ شِعَارُ الْحَجِّ».

‘তালবিয়াতে স্বর উঁচু করার জন্য জিবরীল আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এটি হজের বিশেষ শ্লোগান।’[1]

যায়েদ ইবন খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ لِيْ : إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَأْمُرَ أَصْحَابَكَ أَنْ يَّرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ بَالتَّلْبِيَّةِ فَإِنَّهَا مِنْ شِعَارِالْحَجِّ».

‘জিবরীল আমার নিকট আসলেন অতপর বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন আপনি আপনার সাথীদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তারা যেন তালবিয়া দ্বারা স্বর উঁচু করে। কারণ এটি হজের শ্লোগানভুক্ত।’[2]

২. তালবিয়া পাঠ হজ-উমরার শোভা বৃদ্ধি করে। ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَعَنَ اللهُ فُلاَنًا عَمَدُوْا إِلَى أَعْظَمَ أَيَّامِ الْحَجِّ فَمَحَوْا زِيْنَتَهُ وَإِنَّمَا زِيْنَةُ الْحَجِّ التَّلْبِيَّةُ»

‘অমুকের ওপর আল্লাহর অভিশাপ! তারা হজের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ দিনের ইচ্ছা করে তার শোভা মিটিয়ে দিল। আর নিশ্চয় হজের শোভা হল তালবিয়া।’[3]

৩. যে হজে উচ্চস্বরে তালবিয়া করা হয় সেটি সর্বোত্তম হজ। আবূ বকর রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন হজটি সবচে’ উত্তম? অন্য বর্ণনায় এসেছে, জিজ্ঞেস করা হল,

أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : «الْعَجُّ ، وَالثَّجُّ».

‘হজের মধ্যে কোন আমলটি সবচে’ উত্তম ? তিনি বললেন, উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং পশুর রক্ত প্রবাহিত করা।’[4]

৪. তালবিয়া পাঠকারির সাথে পৃথিবীর জড় বস্তুগুলোও তালবিয়া পড়তে থাকে। সাহল ইবন সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُلَبِّي إِلاَّ لَبَّى مَا عَنْ يَمِينِهِ ، وَعَنْ شِمَالِهِ ، مِنْ شَجَرٍ وَحَجَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الأَرْضُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا ، عَنْ يَمِينِهِ ، وَعَنْ شِمَالِهِ».

‘প্রত্যেক মু‘মিন ব্যক্তি যে তালবিয়া পড়ে তার সাথে তার ডান-বামের গাছ-পাথর থেকে নিয়ে সবকিছুই তালবিয়া পড়তে থাকে। যতক্ষণ না ভূপৃষ্ঠ এদিক থেকে ওদিক থেকে অর্থাৎ ডান থেকে এবং বাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’[5]

[1]. ইবন খুযাইমাহ : ২৬৩০।

[2]. তাবরানী : ৫১৭২।

[3]. মুসনাদ আহমদ : ১/২১৭ ।

[4]. তিরমিযী : ২৯২৪।

[5]. তিরমিযী : ১৬৫৬।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »