ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
হজ উমরা ও যিয়ারত তৃতীয় অধ্যায় : ইহরাম, হজ-উমরার শুরু ইসলামহাউজ.কম
স্থানবিষয়ক মীকাত সম্পর্কে কিছু বিধান ও সতর্কিকরণ

১. হজ ও উমরা আদায়কারির জন্য ইহরামের নিয়ত না করে মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। যদি কেউ ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ভেতরে চলে আসে তার উচিত হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরামের নিয়ত করা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। যদি সে মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে ইহরামের নিয়ত করে, তাহলে তার হজ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে তার ওপর ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। কেননা সে অন্তরে হজ বা উমরা অথবা উভয়টার ইচ্ছা রেখেই মীকাত অতিক্রম করেছে। ইবন আব্বাস রা. বলেন,

مَنْ نَسِىَ مِنْ نُسُكِهِ شَيْئًا أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقْ دَمًا

‘কেউ যদি তার হজের কোন আমল ভুলে যায় বা ছেড়ে দেয় সে যেন পশু যবেহ করে।’[1]

২. মীকাত থেকে ইহরামের নিয়ত করার বিধান মীকাত অতিক্রমকারী সবার জন্য প্রযোজ্য। তারা সেখানকার অধিবাসী হোক বা না হোক। কেননা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ»

‘এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য।’[2]

৩. যদি কারো পথে দুটি মীকাত পড়ে, তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তিনি দ্বিতীয় মীকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে মদীনা হয়ে মক্কায় গমনকারী হাজীগণ এই মাসআলার আওতায় পড়েন। তারা জেদ্দা বিমান বন্দরের পূর্বে যে মীকাত আসে সেখান থেকে ইহরাম না বেঁধে মদীনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে যে মীকাত পড়ে (যুল হুলায়ফা) সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে থাকেন।

৪. যদি কোন ব্যক্তি এমন পথ দিয়ে যায় যেখানে কোন মীকাত নেই, তবে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী মীকাত বরাবর পৌঁছলে তার ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। বসরা ও কুফা জয় লাভের পর এই দুই শহরের অধিবাসীরা উমর রা. এর নিকট এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিলকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু এটা আমাদের পথ থেকে অনেক দূরে। যদি আমরা সেখানে যেতে চাই তবে আমাদের অনেক কষ্ট হবে। উমর রা. বললেন,

فَانْظُرُوا حَذْوَهَا مِنْ طَرِيقِكُمْ فَحَدَّ لَهُمْ ذَاتَ عِرْقٍ.

‘তোমরা তোমাদের পথে কারনুল মানাযিল বরাবর ইহরাম বাঁধার স্থান দেখ, এরপর তিনি ‘যাতু ইরক’ কে তাদের মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করে দিলেন।’[3]

৫. যখন কোন হজ বা উমরাকারী বিমান বা জাহাজে সফর করবেন, তখন নিকটতম মীকাতের বরাবর হওয়ার সাথে সাথে তার ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যারা বিমান আরোহী। কারণ বিমানের গতি অনেক বেশি।

৬. যদি কোন মুহরিম স্থানবিষয়ক মীকাতে আসার পূর্বেই ইহরাম বাঁধে, তাহলে তার ইহরাম সহীহ হবে, তবে তা হবে সুন্নত পরিপন্থী। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম করেননি। উম্মতকেও এরকম শিক্ষা দেননি। এ থেকে বুঝা যায়, মীকাতে আগমনের পূর্বেই ইহরাম বাঁধা কোন সওয়াব বা ফযীলতের কাজ নয়।

৭. যে ব্যক্তি মীকাত না চিনেই জেদ্দায় পৌঁছে এদিকে তার পক্ষে আবার মীকাতে ফিরে আসাও সম্ভব নয়, তার জন্য জেদ্দাতেই ইহরাম বেঁধে নেয়া যথেষ্ট হবে।

৮. হজ ও উমরা পালন করবে না- এমন ব্যক্তি যদি ইহরাম বাঁধা ছাড়াই মীকাত অতিক্রম করে, তবে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হজ ও উমরা পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্যই মীকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম বাঁধা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে ওই পথে আসে তাদের জন্য।’[4]

৯. যদি কোন হাজী মুআল্লিমের কথা অনুযায়ী প্রথমে মদীনা যাওয়ার ইচ্ছা করেন, কিন্তু জেদ্দায় অবতরণের পর তার কাছে প্রতীয়মান হয়, হজের আগে তার পক্ষে মদীনায় যাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে তিনি জেদ্দা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবেন। এ কারণে তাকে দম দিতে হবে না।

১০. যাদের আবাস মীকাতের সীমারেখার ভেতর, যেমন ‘বাহরাহ’ ও ‘শারায়ে’ এর অধিবাসীগণ, তারা নিজ নিজ আবাসস্থল থেকেই হজ ও উমরার ইহরাম বাঁধবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّهُ مِنْ أَهْلِهِ.»

‘যে ব্যক্তি মীকাতসমূহের ভেতরে থাকে তার আবাসস্থলই তার ইহরামের স্থান।’[5]

১১. যিনি মক্কায় অবস্থান করছেন, তিনি হজ করতে ইচ্ছে করলে মক্কা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবেন। চাই তিনি মক্কার অধিবাসী হোন বা না হোন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«حَتَّى إِنَّ أَهْلَ مَكَّةَ يُهِلُّونَ مِنْهَا».

‘এমনকি মক্কাবাসীরা মক্কা থেকেই হজের ইহরাম বাঁধবে।’[6]

তাছাড়া ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের সময় তাঁর সাথে আসা সাহাবায়ে কিরাম রা. কে তাঁদের অবস্থানস্থল ‘আবতাহ’ থেকেই ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’[7] তাঁরা তামাত্তু হজ করেছিলেন। উমরার জন্য তাঁরা বাইরে থেকে ইহরাম বাঁধলেও হজের জন্য মক্কায় তাঁদের আবাসস্থল থেকে ইহরাম বেঁধেছেন।

১২. মক্কায় অবস্থানকারী কোন ব্যক্তির জন্য হারামের সীমারেখার ভেতর থেকে উমরার ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না। তাকে হারামের সীমানার বাইরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. যখন উমরা করতে চাইলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর ভাই আবদুর রহমানকে বললেন,

«اخْرُجْ بِأُخْتِكَ مِنَ الْحَرَمِ فَلْتُهِلَّ بِعُمْرَةٍ».

‘তুমি তোমার বোনকে হারামের বাইরে নিয়ে যাও, যাতে সে উমরার ইহরাম বাঁধতে পারে।’[8]

১৩. বাইরের লোক যদি হজ করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় বা ভুলক্রমে ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে তারা মীকাতের ভেতরে ঢুকে ‘তান‘ঈমে’ অবস্থিত মসজিদে আয়েশায় গিয়ে হজের ইহরাম বাঁধলে চলবে না। কেননা মসজিদে আয়েশা হারাম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত। বাইরের লোকদের জন্য হজের মীকাত নয়।

১৪. ইহরাম বাঁধার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। তাই হায়েয ও নিফাসবতী মহিলা বা অনুরূপ যে কেউ অপবিত্র অবস্থায় থাকলেও নির্দ্বিধায় হজ বা উমরার ইহরাম বাঁধতে পারবেন।

[1]. মুআত্তা মালেক : ১/৪১৯; দারা কুতনী : ২/২৪৪; বাইহাকী : ৫/১৫২।

[2]. বুখারী : ১৫২৪; মুসলিম : ১১৮১।

[3]. বুখারী : ১৫৩১।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. বুখারী : ১৫২৬; মুসলিম : ১১৮১।

[6]. প্রাগুক্ত।

[7]. মুসলিম : ১২১৪।

[8]. বুখারী : ১৫৬০, ১২১১।