সালাম দেওয়ার পর তার সাথে মুসাফাহাহ করুন

কোন মুসলিম ভায়ের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হলে তাকে হাসি মুখে দেখা করুন। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘প্রত্যেক কল্যাণমূলক কর্মই হল সদকাহ (করার সমতুল্য)। আর তোমার ভায়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির সাহায্যে (কুয়ো থেকে পানি তুলে) তোমার ভায়ের পাত্র (কলসী ইত্যাদি) ভরে দেওয়াও কল্যাণমূলক (সৎ)কর্মের পর্যায়ভুক্ত।’’[1]

তিনি আরো বলেন, ‘‘কল্যাণমূলক কোন কর্মকেই অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভায়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করেও হয়।’’[2]

সালাম দেওয়ার পর তার সাথে মুসাফাহাহ করুন। যেহেতু এই মুসাফাহার বড় মাহাত্ম্য রয়েছে ইসলামে। মুসাফাহার ফলে গোনাহ ঝরে যায় মুসলিমের। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন,

مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ، فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا

‘‘যখনই কোন দুই মু’মিন ব্যক্তি সাক্ষাৎ করে আপোসে মুসাফাহাহ করে, (কেবল আল্লাহর ওয়াস্তে একে অন্যের হাত ধরে) তখনই তাদের পৃথক হয়ে প্রস্থান করার পূর্বেই উভয়কেই ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’’[3]

প্রকাশ থাকে যে, মুসাফাহাহর সাথে সাথে আল্লাহর প্রশংসা ও ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আ করার হাদীস সহীহ নয়।[4] সহীহ নয় অন্য কোন দু‘আ ও দরূদও। অবশ্য কোন কোন সহীহ বর্ণনায় কেবল আল্লাহর প্রশংসা করার কথা পাওয়া যায়।[5] অল্লাহু আ’লাম।

বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, ‘পরিপূর্ণ অভিবাদন হল তোমার ভায়ের সাথে তোমার মুসাফাহাহ করা।’[6]

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘মুসাফাহাহ সর্বপ্রথম ইয়ামানের লোকেরা চালু করে।’[7] আসলে মুখে সালাম (শান্তির দু‘আ) দেওয়ার পর মুসাফাহাহ তারই সত্যায়ন করে। মুসলিমের হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের, মুখের সাথে মুখের এবং কাজের সাথে কাজের মিল একত্রিত হয়। সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধনের এটিই হল রশির প্রথম খি (আল)।

[1]. আহমাদ, তিরমিযী, হাকেম

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬২৬

[3]. তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/২৭২৭, সহীহ আবু দাঊদ হা/৫২১২, সহীহ।

[4]. যয়ীফ আবূ দাঊদ হা/১১১৩, সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/২৩৪৪

[5]. সহীহুল জা’মে হা/২৭৪১

[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৬৭

[7]. আহমাদ ৩/১৫৫, ২২৩, আবূ দাঊদ হা/৫২১৩, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫২৭
মুসাফাহাহ হল সাক্ষাৎ ও বিদায়ের সময় বিধেয়

মুসাফাহাহ হল সাক্ষাৎ ও বিদায়ের সময় বিধেয়। অবশ্য মুসাফাহা সাক্ষাতের সময় সুন্নাত এবং বিদায়ের সময় মুস্তাহাব।[1]

এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ নিজ বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার জন্য কি প্রণত হবে?’ আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘না।’’ লোকটি বলল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে (ধরে মুআনাকা) করবে এবং চুম্বন করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ লোকটি বলল, ‘তাহলে কি মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, (ইচ্ছা করলে) মুসাফাহাহ করবে।’’[2]

সুতরাং সাক্ষাৎ (ও বিদায়) ছাড়া অন্য সময়ে তা বিধেয় নয়; বিদআত। যেমন ফরয নামাযের সালাম ফিরার পর পর ইমাম সাহেব অথবা ডান ও বাম পাশের নামাযীর সাথে মুসাফাহাহ করা বিদআত।[3]

যেমন ঈদের নামাযের পর (খাস ঈদের জন্য) মুসাফাহাহ ও মুআনাকা বিদআত।[4]

অবশ্য কেউ নামাযে শামিল হওয়ার পূর্বে সালাম-মুসাফাহাহ করার সুযোগ না পেয়ে যদি নামাযের পর তা করে, তাহলে তা প্রথম সাক্ষাতের সালাম-মুসাফাহাহ, বিধায় তা বিদআত নয়।[5]

[1]. সিলসিলাহ সহীহাহ ১/১/৫৩পৃঃ

[2]. আহমাদ ৩/১৯৮, তিরমিযী হা/২৭২৮, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৭০২, বাইহাক্বী ৭/১০০

[3]. শারহুল আদাবিল মুফরাদ ২/৪৩০-৪৩১

[4]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৪২৭, আউনুল মা’বূদ ১৪/৮২

[5]. সিলসিলাহ সহীহাহ ১/৫৩

শিশুর সাথেও মুসাফাহাহ করুন এবং সেই সাথে তার মাথায় হাত বুলান। বিশেষ করে এতীমের মাথায় হাত বুলালে হৃদয়ের কঠোরতা দূর হয়ে যায়।

কোন এমন (বেগানা) কিশোরী বা মহিলার সাথে মুসাফাহাহ বৈধনয়, যার সাথে কোনও কালে আপনার বিবাহ বৈধ। ছোট থেকে যাদেরকে হয়তো আপনি কোলে-পিঠে মানুষও করেছেন এবং খালি গায়েও দেখেছেন তারা বড় হওয়ার পর ইসলামী বিধানে আপনার নিকট থেকে দূর হয়ে যাবে। যেমন চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো বোন, শালী ইত্যাদির সাথেও মুসাফাহাহ হারাম। আপনার শ্রদ্ধেয়া, আপনার চেয়ে অনেক বড় হলেও, আপনি তাকে মায়ের তুল্য মনে করলেও নিয়ত ভালো রেখেও ইসলামী বিধানে তার সাথেও দেখা-সাক্ষাৎ ও মুসাফাহাহ বৈধ নয়। আসলে কেবল মনে করে নেওয়ার ফলে কেউ কারো বোন বা মা হয়ে যায় না। যেমন কেবল মনে করার ফলে কেউ কারো স্ত্রী হতে পারে না। অর্থাৎ, যেমন কোন মহিলাকে স্ত্রী জ্ঞান করে তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার করা যাবে না, ঠিক তেমনিই কাউকে আপন মা মেয়ে, বা বোন জ্ঞান করে মা, মেয়ে বা বোনের মত ব্যবহার ও দেখা-সাক্ষাৎ, উঠা-বসা ও সালাম-মুসাফাহাহ বৈধ হতে পারে না। অতএব ভাবী, চাচী, মামী, স্ত্রীর বড় বোন ইত্যাদিদেরকে আপনি আপন মা বা বোন ভাবুন। কিন্তু সেই ভাবাতে তাদের সাথে আপনার মুসাফাহাহ বৈধ হবে না। আপনার শিষ্য বা ছাত্রীকে নিজের মেয়ে ভাবুন, কিন্তু সে জন্য তার সাথে আপনার মুসাফাহাহ বৈধ নয়।

অনুরূপ কোন মহিলাও পারে না কোন বেগানা পুরুষ বা কিশোরের সাথে মুসাফাহাহ করতে। যদিও সে তাকে আপন বাপ, ছেলে বা ভাই মনে করে।

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বায়আত করার সময়ও কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেননি। প্রত্যেক (বেগানা) মহিলার সাথে তিনি কথা দ্বারা বায়আত করেছেন।[1] তিনি বলেছেন, ‘‘আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহাহ করি না।’’[2]

রাসুল (ﷺ) কাপড়ের উপর থেকে মহিলাদের সাথে মুসাফাহাহ করতেন বলে যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা সহীহ নয়।[3] অতএব শাড়ি, ওড়না, দস্তানা বা হ্যা-কভারের পর্দার উপর থেকেও কোন বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহাহ বৈধ নয়। বৈধ নয় কোন বুড়ির সাথেও মুসাফাহাহ করা।

[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫২৮৮

[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৬৪৬৬, তিরমিযী হা/১৫৯৭, নাসাঈ হা/ ৪১৮১, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৮৭৪, মালেক ১৮৪২

[3]. সিলসিলাহ সহীহাহ ২/৫৩
মুসাফাহাহ করার সময় সাথীর হাত ছাড়িয়ে না নেওয়া

মুসাফাহাহ করার সময় সাথীর হাত থেকে আপনি আগে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কুশলাদি জিজ্ঞাসা করার সাথে লম্বা সময় ধরে হাতে হাত দিয়ে রাখুন। যখন সাথী হাত ছেড়ে দেবে, তখন আপনিও ছেড়ে দিন। রাসুল (ﷺ) এরূপই করতেন।[1] অবশ্য এই সুন্নাত পালন করতে আগ্রহী উভয়েই যদি হাত না ছাড়তে চায়, তাহলে সময় বেশী লম্বা হলে আপনি না ছাড়লে আর করবেনই বা কি?

[1]. তিরমিযী হা/২৪৯০, ইবনে ৩৭১৬, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৪৮৫

মুসাফাহাহ মানে হল, দুইজনের মুখোমুখী হয়ে নিজ নিজ ডান হাতের (করতলের) সাথে হাত (করতল) মিলিয়ে ধারণ করা।

মুসাফাহাহ মানে করমর্দন নয়। করমর্দন হল, দুইজনের প্রীতিসম্ভাষণার্থ পরস্পরের হাতঝাঁকুনি, যাকে ইংরেজীতে হ্যান্ডশেইক বলা হয়। আর ইসলামী মুসাফাহাতে হাতের ঝাঁকুনি নেই, মর্দন, দলন বা পেষণ নেই।

মুসাফাহাহ এক হাতে এবং কেবল ডান হাতে

আরবী অভিধানে বলা হয়েছে, মুসাফাহাহ হল অপরের হাত ধরা।[1] একটি লোকের সাথে অপর লোকের মুসাফাহাহ করার অর্থ হল, একজনের করতলকে অপরের করতলে রাখা। সাক্ষাতের সময় মুসাফাহাহ হল, দুইজনের মুখোমুখী হয়ে নিজ নিজ হাতের (করতলের) সাথে হাত (করতল) মিলিয়ে ধারণ করা।[2]

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যখনই দুইজন মুসলিম পরস্পর সাক্ষাৎ করে ওদের মধ্যে একজন অপরজনকে সালাম দিয়ে তার হস্ত ধারণ করে (মুসাফাহাহ করে), আর তার হস্ত ধারণ কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়, তখনই তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বে তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’’[3]

[1]. আল-কামূসুল মুহীত্ব ১/২৯২

[2]. লিসানুল আরাব ২/৫১৫

[3]. আহমাদ, সহীহুল জা’মে হা/৫৭৭৮ ‍

আগন্তুকের তা’যীমে উঠে খাড়া হওয়া বিধেয় নয়।

আবূ উমামাহ বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) একটি লাঠির উপর ভর দিয়ে আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখে আমরা উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা দাঁড়ায়ো না; যেমন অনারব (পারস্যের) লোক তাদের বড়দের তা’যীমে উঠে দাঁড়ায়।’’[1]

আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, ‘‘ওঁদের (সাহাবাদের) নিকট রাসুল (ﷺ) অপেক্ষা অন্য কেউ অধিক প্রিয় (ও শ্রদ্ধেয়) ছিল না। কিন্তু ওঁরা যখন তাঁকে দেখতেন তখন তাঁর জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। কারণ এতে তাঁর অপছন্দনীয়তার কথা তাঁরা জানতেন।’’[2]

প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, লোক তার জন্য দণ্ডায়মান হোক, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে ক’রে নেয়।’’[3]

অবশ্য প্রয়োজনে আগন্তুককে সাহায্য করতে, তার সাথে মুআনাকা করতে, তাকে নিজের জায়গায় বসাতে উঠে দাঁড়ানো বৈধ।

রাসুল (ﷺ)-এর কন্যা ফাতেমা তাঁর নিকট এলে তিনি তাঁর প্রতি উঠে গিয়ে তাঁর হাত ধরতেন (মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমা দিতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাতেন। তদনুরূপ তিনি ফাতেমার নিকট এলে তিনিও পিতার প্রতি উঠে গিয়ে তাঁর হাত ধরতেন (মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমা দিতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাতেন।[4]

(খন্দকের যুদ্ধ শেষে) সা’দ (রাঃ) আহত ছিলেন। ইয়াহুদীদের ব্যাপারে বিচার করার উদ্দেশ্যে রাসুল (ﷺ) তাঁকে আহূত করেন। তাই তিনি এক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করে যখন তাঁর নিকট পৌঁছলেন তখন রাসুল (ﷺ) আনসারকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘‘তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ এবং ওঁকে নামাও।’’ সুতরাং (কিছু) সাহাবা উঠে গিয়ে তাঁকে গর্দভ থেকে নামালেন।[5]

এই দণ্ডায়মান আনসারের সর্দার সা’দ (রাঃ)-এর সাহায্যার্থে বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ তিনি গর্দভের পৃষ্ঠে আহতাবস্থায় বসে ছিলেন; যাতে (নামতে গিয়ে) পড়ে না যান। পক্ষান্তরে রাসুল (ﷺ) এবং অবশিষ্ট সাহাবাবৃন্দ উঠে দণ্ডায়মান হননি।

সাহাবী কা’ব বিন মালেক যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন তখন সাহাবাগণ উপবিষ্ট ছিলেন। জিহাদে অংশ গ্রহণ না করার পর তাঁর তওবা কবুল হওয়ার শুভসংবাদ নিয়ে তালহা তাঁর প্রতি উঠে ছুটে পৌঁঁছলেন।[6]

সুতরাং কোন দুঃখিত ব্যক্তির অন্তরে আনন্দ আনয়ন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তার তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ দান করার উদ্দেশ্যে উঠে দণ্ডায়মান হয়ে তার নিকট যাওয়া বৈধ ছিল।

প্রকাশ থাকে যে, মুসাফাহার পর বুকে হাত বুলানো বা মুখে নিয়ে চুমা দেওয়া বিদআত। যেমন কোন গুরুজনের সাক্ষাতে পায়ের জুতা খোলাও অতিরঞ্জিত বিদআত।

[1]. আবূ দাঊদ হা/৫২৩০, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৮৩৬, হাদীসটির সনদ যয়ীফ; কিন্তু অর্থ সহীহ, দেখুনঃ সিলসিলাহ যয়ীফাহ৩৪৬, অবশ্য সহীহ হাদীসে নামাযের ভিতরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

[2]. সহীহ, আহ্মদ ও তিরমিযী

[3]. সহীহ, মুসনাদে আহমদ

[4]. আবূ দাঊদ হা/৫২১৭, তিরমিযী হা/৩৮৭২

[5]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৬৭

[6]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৩৪৫৬, বুখারী, মুসলিম প্রমুখ
সফর থেকে ফিরে সাক্ষাতের সময় পরস্পরকে মুআনাকা করা বিধেয়

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল (ﷺ)-এর সাহাবাগণ যখন আপোসে সাক্ষাৎ করতেন, তখন মুসাফাহাহ করতেন এবং যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মুআনাকা করতেন।’[1]

ইমাম শা’বী বলেন, ‘রাসুল (ﷺ)-এর সাহাবাগণ যখন আপোসে সাক্ষাৎ করতেন, তখন মুসাফাহাহ করতেন এবং যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন একে অপরের সাথে মুআনাকা করতেন।’[2]

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে খবর এল যে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট থেকে একটি হাদীস শুনেছে। সুতরাং আমি একটি উট ক্রয় করে সফরের সামান বেঁধে এক মাস যাবৎ রাস্তা চলে তার নিকট শাম দেশে পৌঁছলাম! দেখলাম সে লোক ছিল আব্দুল্লাহ বিন উনাইস। আমি দারোয়ানকে বললাম, ওঁকে বল, দরজায় জাবের অপেক্ষা করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনে আব্দুল্লাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি পরনের কাপড় পায়ে দলতে দলতেই বের হয়ে এসে আমার সাথে মুআনাকা করলেন, আমিও তাঁর সাথে মুআনাকা করলাম।[3]

রাসুল (ﷺ) ইবনে তাইয়িহানের কাছে এলে ইবনে তাইয়িহান মহানবী (ﷺ) এর সাথে মুআনাকা করেছিলেন।[4]

অবশ্য এই মুআনাকা সফর থেকে ফিরে এসে না হলেও অতিরিক্ত সাক্ষাৎ-আকাঙক্ষার কারণে করেছিলেন। তাছাড়া প্রত্যেক সাক্ষাতের সময় মুআনাকা করতে খোদ আল্লাহর রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন।[5]

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, ঈদের নামাযের পর (খাস ঈদের জন্য) মুসাফাহাহ ও মুআনাকা বিদআত।[6]

[1]. ত্বাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৩৬

[2]. বাইহাক্বী ৭/১০০

[3]. আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৭০, আহমাদ ৩/৪৯৫

[4]. মুখতাসার শামায়েল ১১৩

[5]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৬০, মুখতাসার শামায়েল ৭৯পৃঃ, টীকা

[6]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৪২৭, আউনুল মাবূদ ১৪/৮২

মুআনাকা হল, অপরের উনুক (গর্দানের) সাথে উনুক (গর্দান) লাগিয়ে জড়িয়ে ধরা।[1] বুকে বুক লাগাবার কথা নেই। অবশ্য কোন কোন অভিধানে গর্দানের সাথে গর্দান লাগিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরার কথাও রয়েছে। [2]কোন কোন অভিধানে রয়েছে, অপরের গর্দানে দুই হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নেওয়া।[3]

সুতরাং বুঝা যায় যে, এই আদবের মূল হল, গর্দানের সাথে গর্দান মিলানো। অবশ্য অত্যন্ত ভালোবাসার আকর্ষণে বুকে জড়িয়ে ধরা দোষাবহ নয়। তবে গর্দান পরিবর্তন করার কথা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ডানে-বামে পরিবর্তন করে তিনবার গলাগলি করা নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত নয় তথা তা দলীল-সাপেক্ষ্য।

মুআনাকার অর্থে বাংলাতে কোলাকুলি ব্যবহার করা হয়। আর সে ক্ষেত্রে বুকে বুক ও পেটে পেট লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকে অনেকে মহববতের আকর্ষণে। আর সেই জন্য অনেকে এটাকে আশ্লেষ বা আলিঙ্গনও বলে থাকে।

তবে এ শব্দ কেবল স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহার্য। কারণ, এর গভীর অর্থ হল, লিঙ্গ পর্যন্ত কোলাকুলি করা বা বুকে জড়িয়ে ধরা। অতএব অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ঐ শব্দ ব্যবহার করা বৈধ নয়।

[1]. লিসানুল আরাব ১০/২৭২

[2]. আল-মু’জামুল অসীত্ব ৬৩২পৃঃ

[3]. মুখতারুস সিহাহ ১৯২পৃঃ
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »