ইসলামী জীবন-ধারা মহিলার সাজ-সজ্জা আবদুল হামীদ ফাইযী ২০ টি

মহিলার লেবাসের শর্ত অনুসারে আমরা বুঝতে পারি যে টাইট্ফিট আটষাট (চুশ) পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য কোন এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার উচিত নয়।[1]

যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।[2]

যে লেবাস বা অলঙ্কারে ছয় কোণবিশিষ্ট তারকা, ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোন বিজাতীয় ধর্মীয় প»তীক (অথবা হারাম বাদ্য-যন্ত্র) চিত্রিত থাকে মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।[3]

সোনা, রূপা বা অন্য কোন ধাতুর অলংকারে কুরআনের আয়াত অথবা আল্লাহর নাম অঙ্কিত করে তা দেহে ব্যবহার করা বৈধ নয়।[4] বৈধ নয় কোন শির্কী কথা অঙ্কিত করে মঙ্গল আনয়ন এবং অমঙ্গল দূরীকরণের ব্যবস্থা।

নিউ মোডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোন হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ হবে না।[5]

স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা উচিত; যাতে গলা থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম।[6]

প্যান্ট্-শার্ট মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পুরুষদের জন্য পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইটফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের বেশধারিণী নারী অভিশপ্তা।[7]

[1]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৫

[2]. আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উষা­ইমীন ৪০পৃঃ

[3]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৭পৃঃ

[4]. ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/৪৫৮

[5]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ

[6]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ

[7]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ

মহিলার মাথার কেশ একটি প্রকৃতিগত সৌন্দর্য। সুকেশিনী নারী মুগ্ধ করে তার স্বামীর চক্ষু ও মন। সুতরাং সেই সৌন্দর্যেরও আদব রয়েছে ইসলামে। কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক সাইডে সিঁথি করতে পারে না।[1] সাধারণতঃ বাঁকা সিঁথির এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামবাসী হবে যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। তন্মধ্যে প্রথম শ্রেণী হল সেই লোক, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক; যার দ্বারা তারা লোকেদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই মহিলাদল, যারা কাপড় পরা সত্ত্বেও যেন উলঙ্গ থাকবে, (যারা পাতলা অথবা খোলা লেবাস পরিধান করবে।) এরা (পর পুরুষকে নিজের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (তার প্রতি) আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের কুজের মত। তারা জান্নাত প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ এত-এত দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।’’[2]

উক্ত হাদীসে ‘মাইলাত’ (আকৃষ্টা)র ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, যারা মাথার একপাশে বাঁকা সিঁথি কাটে। যা সাধারণতঃ বেশ্যাদের অভ্যাস।[3]

বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে -একথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম।[4]

অনুরূপ কারণে বৈধ নয় গাডার বা ক্লিপ দিয়ে সমস্ত চুলকে পিছন দিকে টাইট করে গোড়ায় বেঁধে ঘোড়ার লেজের মত উঁচু করে ছেড়ে রাখা।

প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি) তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্না; যাদের মাথা কৃশ উটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’[5] এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে যাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিত।[6] মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। মহিলারা পাকা চুলে খেযাব বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে তাতে যেন কোন হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়।[7]

সতর্কতার বিষয় যে, এক প্রকার মোটা কলপ চুলে দিলে, গোসলের সময় চুলে পানি পৌঁছে না। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ফরয গোসল শুদ্ধ হবে না।

সিঁথিতে সিঁদুর দিতে এই জন্য পারে না যে, সালাফ মহিলাগণ সিঁথিতে রঙ ব্যবহার করেননি। তাছাড়া তাতে বিজাতির অনুকরণ হবে। যেহেতু কোন কোন ধর্মের মহিলাদের ধর্মীয় অভ্যাস ছিল যে, বিবাহের পর সতীত্ব প্রমাণের জন্য প্রথম রমণে সতীচ্ছদ ছিন্ন হওয়ার ফলে ক্ষরিত রক্ত কপালে লাগিয়ে দেখাতো। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রক্তের বদলে সিঁদুর প্রচলিত হয়ে যায়। অতএব মুসলিম মহিলার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ নয়।

ইসলামে বিবাহিতা-অবিবাহিতা চেনার কোন উপায় নেই। তা চিনে কোন ফায়দাও নেই। তাছাড়া সে তো অচেনাদের কাছে পর্দার অন্তরালে অবস্থান করবে। অতএব সে সব চিহ্ন দেখার সুযোগই কোথায়?

মহিলাদের মাথার চুল নেড়া করা হারাম। অবশ্য সৌন্দর্যের জন্য সামনের বা পিছনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে তা কোন হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে ‘ডিয়ানা-কাট’, ‘লায়ন-কাট’, ‘র‌্যাট-কাট’, ‘সাধনা-কাট’, ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি অবৈধ।[8]

তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না করাই উত্তম।[9]

স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে - অর্থের অপচয় না হলে - মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থাক্থাক্ করা বৈধ।[10] তবে তা কোন পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ।[11]

কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা পরচুলা (টেসেল) অথবা বস্ত্রখন্ড বা তুলোর বল আদি ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।’’[12]

হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি মুআবিয়া (রাঃ) এর হজ্জের বছরে মিম্বরের উপর তাঁকে বলতে শুনেছেন। তিনি এক প্রহরীর হাত থেকে এক গোছা পরচুলা নিয়ে বললেন, ‘হে মদীনাবাসী! কোথায় তোমাদের উলামাগণ? আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর মুখে শুনেছি, তিনি এ জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হল যখনই তাদের মেয়েরা এই (পরচুলা) ব্যবহার শুরু করল।’’[13]

ইবনুল মুসাইয়িব (রাঃ) কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত মুআবিয়া মদীনায় এসে আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন। আর (তারই মাঝে) এক গোছা পরচুলা বের করে বললেন, ‘ইয়াহুদীরা ছাড়া অন্য কোন (মুসলিম) ব্যক্তি এ জিনিস ব্যবহার করে বলে আমার ধারণা ছিল না। আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট এই (পরচুলা ব্যবহারের) খবর পৌঁছলে তিনি এর নাম দিয়েছিলেন, ‘জালিয়াতি!’[14]

যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল (ﷺ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।[15]

একজন মহিলা রাসুল (ﷺ) কে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মেয়ের হাম হয়েছিল। যার ফলে তার মাথার চুল (অনেক) ঝরে গেছে। আর তার বিয়েও দিয়েছি। অতএব তার মাথায় পরচুলা লাগাতে পারি কি?’ রসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘পরচুলা যে লাগিয়ে দেয় এবং যার লাগিয়ে দেওয়া হয় এমন উভয় মহিলাকেই আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, হযরত আসমা বলেন, ‘যে অপরের মাথায় পরচুলা বেঁধে দেয় এবং যে নিজের মাথায় তা বাঁধে, এমন উভয় মহিলাকেই রাসুল (ﷺ) অভিশাপ করেছেন।’[16]

অবশ্য কোন মহিলার মাথায় যদি আদৌ চুল না থাকে, তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ।[17]

[1]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৭

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১২৮

[3]. শারহুন নওবী দ্রঃ

[4]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ

[5]. আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৬৮৩

[6]. ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ

[7]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ৩০পৃঃ

[8]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ

[9]. ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫

[10]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৯

[11]. আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, রাখুঃ ১০৩পৃঃ

[12]. সহীহুল জা’মে হা/২৭০৫

[13]. মালেক, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৩৪৬৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১২৭, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ

[14]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৯৩৮

[15]. সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪

[16]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৯৪১, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১২২, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৯৮৮

[17]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ

মহিলার মাথার পোশাক হল ওড়না। অবশ্য তা পাতলা হবে না এবং তা দিয়ে মাথা সহ ঘাড় ও বক্ষঃস্থল ঢাকা যাবে। আর তার মাথার যাবতীয় অলঙ্কার; টায়রা, ক্লিপ, চুল-আঁটা, বেল্ট্ প্রভৃতি মহিলা, স্বামী ও মাহরাম আত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারবে না।

কান আল্লাহর দেওয়া একটি নিয়ামত। এই নিয়ামত সম্পর্কে কিয়ামতে সকলকে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব কানে তাই শোনা উচিত, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুমতি আছে। আল্লাহর দেওয়া এই কান দিয়ে গান-বাজনা, গীবত, চুগলী ইত্যাদি শোনা হারাম। হারাম কানাচি পেতে কারো গোপন কথা শোনা। কান ফুঁড়িয়ে অলঙ্কার ব্যবহার মহিলার জন্য বৈধ। কথিত আছে যে, সর্বপ্রথম বিবি হাজার (হাজেরা) কান ফুঁড়িয়েছিলেন।[1]

আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর যুগে মহিলারা কান ফুঁড়িয়ে তাতে অলঙ্কার ব্যবহার করতেন। একদা রসূল (ﷺ) ঈদের খুতবায় মহিলাদেরকে নসীহত করে সদকাহ করতে বললেন। তা শুনে মহিলারা নিজ নিজ কানের অলংকার ও হাতের আংটি সদকাহ করেছিলেন।[2]

[1]. আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ ১/১৫৪

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৯৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৭৯

চেহারা দেহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশীল ও দর্শনীয় অঙ্গ। সুন্দর-অসুন্দর বিবেচিত হয় এই অঙ্গেরই নিকষে। তাই তো বেগানার কাছে মর্যাদাসম্পন্না স্বাধীনা মহিলারা তাও গোপন করে থাকেন। তাই তো শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে যে, মহিলা আঘাতের উপযুক্তা হলেও তার চেহারায় যেন আঘাত না করা হয়।

চেহারার রঙ উজ্জ্বল করার জন্য কোন মেডিসিন দিয়ে চেহারার উপরিভাগের ছাল তুলে ফেলা বৈধ নয়। বৈধ নয় প্লাস্টিক সার্জারি করে নতুন রূপ আনয়ন করা। বৈধ নয় বৃদ্ধার ভাঁজ পড়া চেহারা থেকে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঁজ দূর করে যুবতীর নকল রূপ আনয়ন করা। যেহেতু এ কাজও আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যে রূপ দান করেছেন, মহিলাকে সেই রূপ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। অর্থ আছে বলে অর্থের অপচয় ঘটিয়ে ধার করা রূপ আনাতে ইসলামের সম্মতি নেই। অবশ্য বিকৃত মুখম-ল অথবা কোন অঙ্গ স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে ইসলাম অনুমতি দেয়।

দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই রসূল (ﷺ) অভিসম্পাত করেছেন।[1]

মহিলার চেহারায় যদি অস্বাভাবিক লোম গজিয়ে ওঠে; যেমন গালে, ঠোঁটে বা চিবুকে লোম দেখা দেয়, তাহলে তা যে কোন প্রকারে দূর করে স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে আনাতে কোন দোষ নেই।[2]

[1]. সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, তামবীহুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ

[2]. ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ ২১৭৭৮

ইসলামে মহিলাদের জন্য কপালে ব্যবহার্য কোন অলঙ্কার বা সাজ-সজ্জার বিধান নেই। সুতরাং সেখানে কোন রঙ (ফোঁটা, টিপ) বা অলঙ্কার ব্যবহার যদি অমুসলিম মহিলাদের অনুকরণ করে হয়ে থাকে তাহলে তা অবৈধ। বিশেষ করে লাল টিপ ও ফোঁটাতে ঐ ছিন্ন সতীচ্ছদের রক্তের রং ও রূপ রয়েছে। আর আল্লাহই অধিক জানেন।

ভ্রূর রূপ হল প্রকৃতিগত। তাতে আল্লাহর দেওয়া রূপ মানুষের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তা চেঁছে সরু চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রূ ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়; যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া রসূল (ﷺ) এমন মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন।[1] অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ।[2]

অনুরূপভাবে ভ্রূর লোমকে অথবা চামড়াকে কোন রঙ বা কেমিক্যাল দিয়ে রঙিয়ে রূপসী সাজাও বৈধ নয়।

[1]. সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, ফাতাওয়াউল মারআহ ৭২,৯৪পৃ.

[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৬৯২

মহিলার উচিত, প্রত্যেক হারাম জিনিস দেখা হতে চক্ষুকে অবনত ও সংযত করা। চোখের চাহনিকে বোরকার পর্দায় গোপন করা, আঁখির বাঁকা ছুরিকে কোন পরপুরুষের গলায় চালানো থেকে বিরত থাকা। চোখ ঠারা, চোখ মারা ও চোখের অবৈধ ইশারা থেকে দূরে থাকা। চোখের ব্যভিচার থেকে শত ক্রোশ দূরে থাকা।

সুর্মা সুরমার চোখে মনোরমা লাগে এবং তা ব্যবহার সুন্নাত। কাজলে চোখের কোন ক্ষতি না থাকলে তা ব্যবহার বৈধ, নচেৎ না। পলকের পালিশ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই বিধান। জেনে রাখা দরকার যে, ঐ সকল রঙ এমন কেমিক্যাল (রাসায়নিক পদার্থ) দিয়ে তৈরী থাকে যে, তা ব্যবহার করলে চোখের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এই জন্যই মহিলাদের উচিত, এমন পেন্ট্ লাগিয়ে সঙ বা হিরোইন সাজার চেষ্টা না করা।

চোখের পাতার উপর প্রকৃতিগতভাবে যে লোম থাকে, মহিলাকে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। সুনয়না সাজার জন্য নকল লোম ব্যবহার তার জন্য বৈধ নয়। যেহেতু তা নকল চুল (পরচুলা) ব্যবহার করারই অনুরূপ।

চিকিৎসার খাতিরে কন্ট্যাক্ট লেন্স্ (নেত্রপল্লবের ভিতরে স্থাপিত প্লাস্টিক-নির্মিত পরকলা) ব্যবহার বৈধ। কিন্তু সুন্দরী সাজার জন্য বিভিন্ন রঙের কসমেটিক লেন্স্ ব্যবহার বৈধ নয়।

চোখে চশমা যদি প্রয়োজনে হয়, তাহলে অবৈধ নয়। কিন্তু গগলস লাগিয়ে মস্তান সাজা কোন দ্বীনদার মহিলার কাজ নয়।

মহিলার জন্য বাজারে অসংখ্য (আসল ও নকল) গালের ক্রিম ও প্রসাধন পাওয়া যায়। এ সব ব্যবহার কেবল একটা ভিত্তিতে বৈধ এবং তা এই যে, তা ব্যবহারে মহিলার যেন উপকার থাকে এবং কোন প্রকার অপকার না থাকে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, মহিলা তা কোন ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার না করে এবং মাসে মাসে একটার পর আর একটা পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে করতে গালের ত্বকই নষ্ট করে ফেলে। অথচ নানা ক্রিম ও পাউডারের প্রলেপ হল গালে মেছেতা বা অন্য অবাঞ্ছিত দাগ পড়ার অন্যতম কারণ। সুতরাং এ ব্যাপারে মুসলিম মা-বোনদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

পূর্বেই বলা হয়েছে, মহিলার গালে বা ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-একটা বা ততোধিক অস্বাভাবিক চুল থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গে স্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে।[1]

অবশ্য অনেকের মতে আল্লাহর দেওয়া ঐ সুন্দর্য (শ্রী) নিয়ে মহিলাকে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যেহেতু মহান আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টিকেই সুন্দর আকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।[2] অল্লাহু আ’লাম।

[1]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়া মারআহ ৯৪পৃ.

[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৪০৯

নাক পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। আর তার জন্য রয়েছে ওযূর বিধান।

নাক ছিদ্র করার প্রথা রসূল (ﷺ) বা তাঁর সাহাবার যুগে ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে দেশের প্রথা হিসাবে মহিলা নাক ফুড়িয়ে তাতে কোন অলঙ্কার ব্যবহার করতে পারে।[1] ব্যবহার করতে পারে লাগামের মত নাকের নথ।[2]

[1]. ফাতাওয়া মারআহ ৮২পৃঃ

[2]. মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ৪/১৩৭
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »