যেসব হাদিস আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় তাই হাদিসে কুদসি। হাদিসে কুদসিকে হাদিসে ইলাহি, অথবা হাদিসুর রাব্বানি ইত্যাদি বলা হয়। কারণ, এসব হাদিসের সর্বশেষ স্তর আল্লাহ তা‘আলা। লেখক এ প্রকার বর্ণনা করেননি, সম্পূরক হিসেবে আমরা তার আলোচনা করছি।

قُدُس শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র। تقديس শব্দের অর্থ আল্লাহর পবিত্রতা। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ ٣٠ ﴾ [البقرة: ٣٠]

“আমরা আপনার প্রশংসার তসবিহ পাঠ করি ও আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি”। আল্লাহর এক নামقُدُّوس অর্থ পবিত্র অথবা বরকতময় অথবা তিনি পবিত্র বৈপরীত্য, সমকক্ষ ও সৃষ্টিজীবের সাদৃশ্য থেকে। البيت المقدَّس অর্থ ‘শির্ক থেকে পবিত্র ঘর’। হাদিসে কুদসি যেহেতু মহান আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বার সাথে সম্পৃক্ত, তাই এ প্রকার হাদিসকে الحـديث القُـــدُسي বলা হয়।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনুল কারিম ব্যতীত যে হাদিস তার রবের পক্ষ থেকে সরাসরি বর্ণনা করেন, অথবা জিবরীলের মাধ্যমে তার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন তাই হাদিসে কুদসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সংবাদ দিচ্ছেন, তাই এ প্রকারকে হাদিস বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় হিসেবে কুদসি বলা হয়।

হাদিসে কুদসির ভাবার্থ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এতে কারো দ্বিমত নেই, তবে তার শব্দ প্রসঙ্গে ইখতিলাফ রয়েছে:

একদল আলেম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ইলহাম[1] অথবা ঘুম অথবা জিবরীল ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে হাদিসে কুদসির ভাবার্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অহি করেন, তবে তার শব্দ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে। শুধু কুরআনুল কারিম শব্দসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, যার তিলাওয়াত করে আমরা তার ইবাদত আঞ্জাম দেই।

অপরদল আলেম বলেন, হাদীসে কুদসির ভাবার্থ ও শব্দ সবই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন ব্যতীতও কথা বলেন। তবে এটি মু‘জিয বা অপারগকারী হিসেবে আল্লাহ নাযিল করেন নি, কিংবা এর মত আনার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জও দেন নি। তাছাড়া এর তেলাওয়াতের মাধ্যমে সালাত আদায়ের বিষয়টিও নেই। এ অভিমতই বিশুদ্ধ।

[1] প্রত্যাদেশ।
কুরআনুল কারিম ও হাদিসে কুদসির পার্থক্য

১. কুরআনুল কারিমের শব্দ ও অর্থ জিবরীলের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে জাগ্রত অবস্থায় নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٩٢ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤ بِلِسَانٍ عَرَبِيّٖ مُّبِينٖ ١٩٥ ﴾ [الشعراء : ١٩٢،١٩٥]

“আর নিশ্চয় এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়”।[1] তাই কুরআনুল কারিমের ভাবার্থ বর্ণনা করা বৈধ নয়, তার শব্দ মুজিযা, হ্রাস ও বৃদ্ধি থেকে সুরক্ষিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

“নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাজতকারী”।[2] অন্যত্র ইরশাদ করেন:

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বল, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’।[3] হাদিসে কুদসির এসব বৈশিষ্ট্য নেই, হাদিসে কুদসির ভাবার্থ বর্ণনা করা বৈধ।

২. সালাতে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা ফরয, সক্ষম ব্যক্তির কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত ব্যতীত সালাত শুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে হাদিসে কুদসি সালাতে পড়া নিষেধ, কুরআনের পরিবর্তে তার দ্বারা সালাত শুদ্ধ হবে না।

৩. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা ইবাদত। প্রত্যেক শব্দের দশগুণ সাওয়াব। জমহুর আলেমের নিকট নাপাক ব্যক্তির জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়, যেমন তিলাওয়াত বৈধ নয়। পক্ষান্তরে হাদিসে কুদসি তিলাওয়াত করে ইবাদত আঞ্জাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তার সাওয়াব কুরআনের সমপরিমাণ নয় এবং নাপাক ব্যক্তির পক্ষে হাদিসে কুদসি স্পর্শ করা কিংবা তিলাওয়াত করা হারাম নয়।

৪. কুরআনুল কারিমের শব্দ, বাক্য ও ক্রম বিন্যাস আমাদের নিকট মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে পৌঁছেছে। কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং সূরা ফাতেহা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত দুই মলাটের মাঝে সংরক্ষিত। কুরআন অস্বীকারকারী কাফের, তার তিলাওয়াত ও শিক্ষার জন্য সনদ প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে হাদিসে কুদসি আমাদের নিকট পৌঁছেছে কখনও একক সংবাদের ভিত্তিতে আবার কখনও মুতাওয়াতির হিসেবে। মুতাওয়াতির না হলে প্রমাণিত নয় মনে করার কারণে তার অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যায় না। তার শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতার জন্য সনদ দেখা প্রয়োজন। তবে হাদীসে কুদসির বিশুদ্ধ প্রমাণিত হলে সেটা অস্বীকারকারীও কাফের হয়ে যাবে।

৫. আল্লাহ ব্যতীত কারো সাথে কুরআন সম্পৃক্ত করা বৈধ নয়। কুরআনের একটি বাক্য কিংবা বাক্যাংশকে আয়াত বলা হয়। কয়েকটি আয়াতের সমষ্টিকে সূরা বলা হয়, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্ধারিত। পক্ষান্তরে হাদিসে কুদসি এরূপ নয়, বরং হাদিসে কুদসিকে: হাদিসে কুদসি, হাদিসে ইলাহি ও হাদিসে রাব্বানি বলা হয়। হাদিসে কুদসিকে কখনো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়, কারণ তিনি স্বীয় রবের পক্ষ থেকে তা বলেছেন, তাই মুহাদ্দিসগণ হাদিসে কুদসিকে হাদিসে নববির অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

[1] সূরা শু‘আরা: (১৯২-১৯৫)

[2] সূরা হিজর: (৯)

[3] সূরা আল-ইসরা: (৮৮)
হাদিসে কুদসি ও হাদিসে নববির পার্থক্য

১. হাদিসে কুদসি আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট অহি: স্পষ্ট অহি, যেমন জিবরীলের মাধ্যমে প্রাপ্ত হাদিস; অস্পষ্ট অহি, যেমন ঘুম বা প্রত্যাদেশ যোগে প্রাপ্ত হাদিস। পক্ষান্তরে হাদিসে নববি কতক অহি ও কতক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইজতিহাদ, তার ইজতিহাদ অহি। কারণ, তার ইজতিহাদ ভুল হলে আল্লাহ সংশোধন করে দেন, ভুলের উপর তাকে স্থির রাখেন না।

২. হাদিসে কুদসি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে বলেন, কিন্তু হাদিসে নববি তিনি নিজের পক্ষ থেকে সরাসরি বলেন।

৩. হাদিসে কুদসিতে সাধারণত আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা, গুণগান, কুদরত, রহমত, মাগফেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, ইবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি ও পাপ থেকে সতর্ককারী বিষয়ের আধিক্য থাকে। পক্ষান্তরে হাদিসে নববিতে অধিকহারে মুসলিমের দীনি ও দুনিয়াবি বিষয়ের বর্ণনা থাকে।

১. রাবি বর্ণনা করার সময় বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যেমন ইমাম আহমদ ও নাসায়ি সহি সনদে বর্ণনা করেন:

عَنْ ‏ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهم‏ ‏عَنْ النَّبِيِّ ‏صلى الله عليه وسلم‏فِيمَا ‏يَحْكِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ: «‏‏أَيُّمَا عَبْدٍ مِنْ عِبَادِي خَرَجَ مُجَاهِدًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ضَمِنْتُ لَهُ أَنْ أَرْجِعَهُ إِنْ أَرْجَعْتُهُ بِمَا أَصَابَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ، وَإِنْ قَبَضْتُهُ غَفَرْتُ لَهُ وَرَحِمْتُهُ».

ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন[1], আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আমার বান্দাদের থেকে যে আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ হিসেবে বের হয়, আমি তার জিম্মাদার। যদি আমি তাকে ফিরিয়ে দেই, প্রতিদান অথবা গণিমতসহ ফিরিয়ে দেব। আর আমি যদি তাকে গ্রহণ করি, তাকে ক্ষমা করে দিব ও তার উপর রহম করব”।[2]

২. রাবি বর্ণনা করার সময় বলবেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ..., অথবা রাবি বলবেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের রব বলেছেন: ..., যেমন ইমাম বুখারি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন:

‏أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ‏ صلى الله عليه وسلم ‏‏قَالَ: «قَالَ اللَّهُ:‏‏ إِذَا أَحَبَّ عَبْدِي لِقَائِي أَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ، وَإِذَا كَرِهَ لِقَائِي كَرِهْتُ لِقَاءَهُ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: আমার বান্দা যখন আমার সাক্ষাত পছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত পছন্দ করি। আর যখন সে আমার সাক্ষাত অপছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত অপছন্দ করি”।[3]

৩. কখনো রাবি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন’, অতঃপর হাদিসে কুদসি উল্লেখ করেন, কিন্তু আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করেন না, যেমন বুখারি বর্ণনা করেন:

عَنْ ‏ ‏أَبِي هُرَيْرَةَ ‏رضي الله عنه عَنْ النَّبِيِّ ‏صلى الله عليه وسلم‏‏قَالَ ‏: «‏لَا يَأْتِ ابْنَ ‏آدَمَ ‏النَّذْرُ بِشَيْءٍ لَمْ يَكُنْ قَدْ قَدَّرْتُهُ، وَلَكِنْ يُلْقِيهِ الْقَدَرُ وَقَدْ قَدَّرْتُهُ لَهُ، أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنْ الْبَخِيلِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “বনু আদমের নিকট মান্নত এমন কিছু নিয়ে আসে না যা আমি তার জন্য নির্ধারণ করিনি। বস্তুত আমি তার জন্য তা নির্ধারণ করে রেখেছি, আর তকদীর তার সাথে সাক্ষাত করে। আমি মান্নত দ্বারা কৃপণ থেকে বের করি”।[4]

৪. কখনো কখনো হাদিসে কুদসিকে হাদিসে নববির অংশ হিসেবে বর্ণিত হয়, যদিও হাদিসে কুদসির অংশ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথক করেন না, তবে অগ্র-পশ্চাৎ থেকে আল্লাহর কথা স্পষ্ট হয়, যেমন ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

عن أَبَي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه ‏عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏‏قَالَ: «انْتَدَبَ‏‏ اللَّهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ. وَلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي ‏مَا قَعَدْتُ ‏‏خَلْفَ ‏سَرِيَّةٍ،‏ ‏وَلَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাকে দ্রুত প্রতিদান প্রদান করেন, যে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে, যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত কোন বস্তু বের করেনি। আমি অবশ্যই তাকে প্রত্যাবর্তন করাব তার প্রাপ্ত সাওয়াব অথবা গণিমতসহ, অথবা আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি এমন না হত যে, আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন করে ফেলব, কোনো যুদ্ধ থেকে আমি পশ্চাতে থাকতাম না। আমি অবশ্যই চাই যে, আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হোক, অতঃপর আমি শহীদ হই, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হোক, অতঃপর আমি শহীদ হই”। এ হাদিসে:

«لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ»

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়, বরং আল্লাহ তা‘আলার বাণী। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও পৃথক করে বলেননি, তবে অর্থ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট।

মোদ্দাকথা: একটি হাদিস কখনো সম্পূর্ণ রূপে হাদিসে কুদসি হয়, কখনো আংশিক হাদিসে কুদসি হয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো হাদিসে কুদসি স্পষ্ট বলেন, কখনো স্পষ্ট বলেন না, বরং বাক্য থেকে বুঝা যায়।

হাদিসে কুদসির হুকুম: হাদিসে কুদসি হাদিসে নববির ন্যায় সহি, হাসান ও দুর্বল বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়। অতএব হাদিসে কুদসি বলা কিংবা তার উপর আমল করার পূর্বে শুদ্ধাশুদ্ধ যাচাই করা জরুরি।

>
[1] عَنْ ‏ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهم‏ ‏عَنْ النَّبِيِّ ‏صلى الله عليه وسلم  ‏فِيمَا ‏يَحْكِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ

উপরে এ বাক্যের ভাবার্থ করা হয়েছে, শাব্দিক অর্থ এরূপ: ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি তার রবের পক্ষ থেকে যা বর্ণনা করেন, তাতে রয়েছে; আল্লাহ্‌ বলেছেন:

[2] আহমদ: (২/৫৯৪১), নাসায়ি: (৬/১৮)

[3] বুখারি: (১৩/৪৬৬), হাদিস নং: (৭৫০৪)

[4] বুখারি: (১১/৪৯৯), হাদিস নং: (৬৬০৯)
হাদিসে কুদসির উপর লিখিত গ্রন্থসমূহ

হাদিস রচনার স্বর্ণযুগে স্বতন্ত্রভাবে কেউ হাদিসে কুদসি লিপিবদ্ধ করেননি। তারা হাদিসের উপর লিখিত গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন অধ্যায়ের অধীন হাদিসে কুদসি লিপিবদ্ধ করেছেন। পরবর্তী যুগে কতক আলেম হাদিসে কুদসি স্বতন্ত্র কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন, যেমন:

১. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্‌ন আলি ইব্‌ন আল-আরাবি আত-ত্বায়ি (মৃ.৬৩৮হি.), তার রচিত গ্রন্থের নাম: مشكاة الأنوار فيما روي عن الله سبحانه من الأخبار

২. আল্লামা নুরুদ্দিন আলি ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন সুলতান (মৃ.১০১৪হি.), যিনি ‘মোল্লা আলি আল-কারি’ নামে প্রসিদ্ধ, তিনি হাদিসের ছয় কিতাব থেকে চল্লিশটি হাদিসে কুদসি একসাথে জমা করেছেন এবং প্রত্যেক হাদিসের সূত্র উল্লেখ করেছেন। তার রচিত কিতাবের নাম: الأحاديث القدسية الأربعينية

৩. শায়খ মুহাম্মদ ইব্‌ন সালেহ আল-মাদানি (মৃ.১২০০হি.) হাদিসে কুদসির উপর সর্ববৃহৎ কিতাব লিখেন, তার কিতাবের নাম: الإتحافات السنية في الأحاديث القدسية

এতে তিনি (৮৬৪)টি হাদিসে কুদসি জমা করেন, যার অধিকাংশ তিনি ইমাম সূয়ূতি রচিত جمع الجوامع গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছেন।

৪. لجنة القرآن الكريم والحديث بالمجلس الأعلى للشؤون الإسلامية بمصر

কর্তৃক নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে একদল লেখক হাদিসের ছয় কিতাব ও মুয়াত্তা ইমাম মালিক থেকে (৪০০)টি হাদিসে কুদসি বাছাই করেন, তাতে টিকা সংযোজন করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা যুক্ত করেন, তাদের রচিত কিতাবের নাম: الأحاديث القدسية

৫. শায়খ মুস্তফা আদাবি (১৮৫)টি সহি ও হাসান হাদিসে কুদসি জমা করেন, তার কিতাবের নাম: الصحيح المسند من الأحاديث القدسية

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে