أدلة عذاب القبر من السنة النبوية - সুন্নাত থেকে কবরের আযাবের দলীল

প্রিয় পাঠক! আপনি যখন কবরের আযাব কিংবা নিয়ামত সংক্রান্ত হাদীছগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবেন, তখন দেখবেন, এগুলো উক্ত বিষয়ে কুরআনের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ স্বরূপ এসেছে। কবরের আযাব সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করছি,

(১) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,

«أن النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِقبرين فَقال إنهما يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أما أَحَدُهُمَا فكان لا يَسْتَبرئ مِنْ البَوْلِ، وَأما الآخَرُ فكان يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ». ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فشقها ْنصفين فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا نصفين فقَالَ: لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا». (بخارى:216)

‘‘একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা অথবা মদীনার কোনো একটি বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দু’টি কবরের নিকট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন দু’জন মানুষের আওয়াজ শুনলেন। তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ কবর দু’টির অধিবাসীদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে। আযাবের কারণ খুব বড় নয়। তাদের একজন নিজেকে পেশাব থেকে পবিত্র রাখত না। অন্য জন ছিল চোগলখোর। সে একজনের কথা অন্যজনের নিকট বলে বেড়াতো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি খেজুরের ডাল আনতে বললেন। ডাল আনয়নের পর সেটাকে দু’ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক কবরের উপর এক অংশ গেড়ে দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হতে পারে ডালগুলো না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব হালকা করা হবে’’।

(২) সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবনে ছাবেত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী নাজ্জার গোত্রের কোনো একটি বাগানে খচ্চরের উপর আরোহনরত ছিলেন। আমরা তার সাথেই ছিলাম। এমন সময় খচ্চরটি তাকে নিয়ে ছুটাছুটি শুরু করলো। তিনি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। তখন সেখানে পাঁচ-ছয়টি বা চারটি কবর দেখা গেলো। তিনি বললেন, এসব কবরবাসীদের কে চিনে? তখন এক ব্যক্তি বললো, আমি তাদেরকে চিনি। তিনি বললেন, এরা কখন মারা গেছে? লোকটি বললো, জাহেলী যুগে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন,

«إِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ تُبْتَلَى فِى قُبُورِهَا فَلَوْلاَ أَنْ لاَ تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِى أَسْمَعُ مِنْهُ»

‘‘এ উম্মতকে কবরের ফিতনায় ফেলা হয়। কবরের আযাব শুনালে আমার যদি এ আশঙ্কা না হতো যে, তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে দাফন করা বর্জন করবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করতাম, তিনি যেন কবরের আযাব থেকে তোমাদেরকেও কিছু শুনান, যা আমি শুনতে পাই’’।[1]

(৩) সহীহ মুসলিম এবং সুনানগ্রন্থসমূহে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শেষ তাশাহুদ পাঠ করবে তখন যেন আল্লাহর কাছে চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সে যেন বলে,

«اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جهنم و من عذاب الْقَبْرِ وفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ الْمَمَاتِ ومِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»

‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবণ ও মরণকালীন ফিতনা হতে এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে’’।[2]

(৪) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু আইয়্যুব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ঘর থেকে বের হলেন। এ সময় তিনি একটি শব্দ শুনে বললেন, একজন ইয়াহূদীকে তার কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আর এটি হচ্ছে সেই আযাবের শব্দ।

(৫) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, একদা মদীনার ইয়াহূদীদের মধ্য থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা আমার ঘরে প্রবেশ করলো। মহিলাটি বললো, কবরবাসীদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে। আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি তার কথাকে মিথ্যা মনে করলাম এবং তাকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। অতঃপর সে বের হয়ে যাওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি আমার কাছে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! মদীনার জনৈক ইয়াহূদী বৃদ্ধ মহিলা আমার কাছে প্রবেশ করে বললো যে, কবরবাসীদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সে সত্য বলেছে। কবরবাসীদেরকে কবরে এমন শাস্তি দেয়া হয়, যার আওয়াজ সমস্ত চতুষ্পদ জন্তুই শুনতে পায়। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর থেকে তাকে প্রত্যেক নামাযেই কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।


[1]. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ২৮৬৭।

[2]. সহীহ মুসলিম ৫৮৮।