الأصل الرابع: الإيمان بالرسل - চতুর্থ মূলনীতি: রসূলগণের প্রতি ঈমান

রসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। কেননা আসমানী বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে তারা আল্লাহ তা‘আলা ও মানুষের মাঝে মাধ্যম স্বরূপ এবং তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির উপর দলীল-প্রমাণ কায়েম করেছেন।

রসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হলো তাদের রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাদের নবুওয়াতের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করা। আরো বিশ্বাস করা যে, নবী-রসূলগণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে যা কিছু বলেছেন, তাতে তারা সত্যবাদী। তারা তাদের রিসালাতের দায়-দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন এবং মানুষের জন্য যা অজ্ঞ থাকা মোটেই উচিত নয়, তা তারা বর্ণনা করেছেন।

নবী-রসূলদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হওয়ার অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ﴾

‘‘তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত করার মধ্যে কোনো ছাওয়াব নেই; বরং পূণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’’। (সূরা বাকারা: ১৭৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ﴾

 ‘‘রসূল তার রবের পক্ষ থেকে তার উপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহকে, তার ফেরেশতাদেরকে, তার কিতাবসমূহকে ও তার রসূলদেরকে বিশ্বাস করেছে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ‘‘আমরা আল্লাহর রসূলদের একজনকে অন্যজন থেকে আলাদা করিনা’’। (সূরা আল বাকারা: ২৮৫)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا أُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا﴾

‘‘যারা আল্লাহ ও তার রসূলদের সাথে কুফুরী করে, আল্লাহ ও তার রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করবো ও কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করবোনা। আর তারা কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়, তারা সবাই প্রকৃত কাফের’’। (সূরা আন নিসা: ১৫০)

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা রসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নকে তার প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি এবং কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে যারা আল্লাহর প্রতি এবং রসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে পার্থক্য করবে এবং কারো প্রতি ঈমান আনবে ও কারো প্রতি কুফুরী করবে, তাদেরকে কাফের বলে উল্লেখ করেছেন।

মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নবী-রসূল পাঠানো একটি বিরাট নিয়ামত। কেননা রসূলদের প্রতি মানুষের বিরাট প্রয়োজন রয়েছে। নবী-রসূলগণ ব্যতীত তাদের অবস্থা সুশৃঙ্খল ও সঠিক থাকা মোটেই সম্ভব নয়। রসূলদের প্রতি তাদের প্রয়োজন পানাহারের প্রয়োজনের চেয়েও অধিক। কেননা মানুষের সামনে আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় তুলে ধরা, তাদের জন্য উপকারী বিষয়গুলো বর্ণনা করা এবং ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে সাবধান করার ক্ষেত্রে তার মাঝে এবং তার সৃষ্টির মাঝে নবী-রসূলগণই একমাত্র মাধ্যম। সেই সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত, হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ ও বৈধ বিষয়াদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা এবং তিনি যা ভালোবাসেন ও যা ঘৃণা করেন, তা বর্ণনা করার মাধ্যম একমাত্র তারাই। সুতরাং রসূলদের মাধ্যম ছাড়া এগুলো জানার কোনো উপায় নেই। কেননা মানুষের বিবেক-বুদ্ধি এগুলো বিস্তারিতভাবে জানতে ও সন্ধান পেতে সক্ষম নয়। যদিও তারা মোটামুটি সংক্ষিপ্তভাবে এগুলোর প্রয়োজন অনুভব করতে সক্ষম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ﴾

‘‘প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। তাদের মধ্যে যখন মতভেদ শুরু হলো তখন আল্লাহ নবীদেরকে পাঠালেন। তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য পথ অবলম্বনের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়’’। (সূরা আল বাকারা: ২১৩)       

রোগীর শরীর সুস্থ করার জন্য যেমন ডাক্তারের প্রয়োজন নবী-রসূলদের শিক্ষার প্রতি মানুষের প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি। কেননা ডাক্তার পাওয়া না গেলে রোগীর শরীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। কিন্তু নবী-রসূলদের শিক্ষার অভাবে মানুষের অন্তর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অন্তরের ক্ষতি শরীরের ক্ষতির চেয়ে অধিক ভয়াবহ। ঐদিকে যমীনবাসীর মধ্যে যতদিন রিসালাতের প্রভাব বিদ্যমান থাকবে, পৃথিবী কেবল ততদিন বিদ্যমান থাকবে। যমীন থেকে নবী-রসূলদের রিসালাতের প্রভাব উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা যেসব রসূলের নাম উল্লেখ করেছেন, নির্দিষ্টভাবে তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। তাদের সংখ্যা মোট ২৫জন। তাদের মধ্য থেকে ১৮ জনের নাম একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَىٰ قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَارُونَ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطًا وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ﴾

‘‘ইবরাহীমকে তার জাতির মোকাবিলায় আমি এ যুক্তি-প্রমাণ প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে চাই উন্নত মর্যাদা দান করি। তোমার রব প্রজ্ঞাময় ও মহাজ্ঞানী। তারপর আমি ইবরাহীমকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকূবকে এবং সবাইকে সত্য পথ দেখিয়েছি, ইতিপূর্বে নূহকেও আমি সঠিক পথ দেখিয়েছি। আর তারই বংশধরদের থেকে দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুণকে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে বদলা দিয়ে থাকি। তার সন্তানদের থেকে যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা ও ইলিয়াসকেও সঠিক পথ দেখিয়েছি। তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন সৎকর্মশীল। ইসমাঈল, আল ইয়াসা, ইউনুস ও লূতকে আমি সৎপথ প্রদর্শন করেছি। তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেককে আমি সমস্ত দুনিয়াবাসীর উপর মর্যাদাসম্পন্ন করেছি’’। (সূরা আন-আম: ৮৩-৮৬) বাকী সাতজনের কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

 আর যেসব নবীর নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি, তাদের প্রতি সংক্ষিপ্তভাবে ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ﴾

‘‘তোমার আগে আমি বহু রসূল পাঠিয়েছি। আমি তাদের অনেকের কাহিনী তোমাকে বলেছি আবার অনেকের কাহিনী তোমাকে বলিনি’’। (সূরা মুমিন: ৭৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا﴾  

‘‘এর পূর্বে যেসব নবীর কথা তোমাকে বলেছি তাদের কাছেও আমি অহী পাঠিয়েছি এবং যেসব নবীর কথা তোমাকে বলিনি তাদের কাছেও। আমি মূসার সাথে কথা বলেছি ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়’’। (সূরা আন নিসা: ১৬৪)