ثامنا: الاستسقاء بالأنواء - অষ্টমত: তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা

তারকা উদিত হওয়া কিংবা অস্ত যাওয়ার দিকে বৃষ্টি বর্ষণের সম্বন্ধ করাকে, الاستسقاء بالأنواء বলা হয়। অন্ধকার যুগের মুশরিকরা বিশ্বাস করতো যে, তারকা উদিত হওয়া কিংবা অদৃশ্য হওয়ার কারণে বৃষ্টি হয়। তারা বলতো, ‘অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। نوء শব্দের মাধ্যমে তারা তারকা উদ্দেশ্য করতো। তারকাকে তারা نوء দ্বারা ব্যাখ্যা করতো। মূলত এর অর্থ হলো তারকা উদিত হওয়া। যেমন বলা হয় ناء ينوء উদিত হলো। এ কথা ঠিক ঐ সময় বলা হয়, যখন উঠে দাঁড়ায় এবং ছুটে যায়। তারা বলতো, যখন অমুক তারকা উদিত হবে, তখন বৃষ্টি হবে।

আরবরা أنواء দ্বারা চন্দ্রের ২৮টি মঞ্জিল উদ্দেশ্য করতো। প্রত্যেক তের রাতে ফজরের সময় একটি করে মঞ্জিল লোপ পায় এবং তার বদলে আরেকটি উদিত হয়। চন্দ্র বছরের শেষে সবগুলো নিঃশেষ হয়ে যায়। জাহেলী যুগে আরবরা ধারণা করতো ফজরের সময় যখন একটি উদিত হয় এবং অন্য একটি অস্ত যায়, তখনই বৃষ্টি হয়। একেই তারা বলতো, তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। এর অর্থ হলো তারা বৃষ্টিকে এসব উদীয়মান তারকার প্রতি সম্বন্ধ করতো। এটি ছিল জাহেলী যুগের আরবদের বিশ্বাস। ইসলাম এসে এ বিশ্বাসকে বাতিল করে দিয়েছে এবং তা থেকে নিষেধ করেছে। কেননা বৃষ্টি অবতীর্ণ হওয়া কিংবা না হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা, নির্ধারণ ও হিকমতের উপর নির্ভরশীল। এতে তারকা উদয়ের কোনো প্রভাব নেই।

আল্লাহ তা‘আলা আয়াতগুলো নাযিল করেন,

﴿فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ (৭৫) وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ إِنَّهُ لَقُرْآَنٌ كَرِيمٌ (৭৭) فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ (৭৮) لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ (৭৯) تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ (৮০) أَفَبِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ (৮১) وَتَجْعَلُونَ رِزْقَكُمْ أَنَّكُمْ تُكَذِّبُونَ﴾

‘‘অতএব, আমি তারকারাজির ভ্রমণ পথের শপথ করছি, নিশ্চয় এটি বড় শপথ যদি তোমরা জানতে পারো। নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। পবিত্রগণ ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করতে পারে না। এটি বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। তবুও কি তোমরা এ বাণীর প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শন করছো? এ নিয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ এই রেখেছো যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো। (সূরা ওয়াকিয়া: ৭৫-৮২)

আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘‘এ নেয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ এ রেখেছো যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো’’ -এর অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ বৃষ্টির সম্বন্ধ তারকার দিকে এভাবে করা যে, مطرنا بنوء كذا وكذا আমরা অমুক অমুক তারকার কারণে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। এটি সর্ববৃহৎ মিথ্যা ও অপবাদের অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, তিরমিযী হাসান সূত্রে, ইবনে জারীর, আবু হাতিম এবং ইমাম যিয়াউদ্দীন মাকদেসী স্বীয় কিতাব মুখতারায় আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর বাণী,تجعلون رزقكم তোমাদের নিয়ামতের অংশকে অর্থাৎ আল্লাহর শুকরিয়াকে তোমরা এই করেছ যে, তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করছো। তোমরা বলে থাক যে, অমুক অমুক তারকার কারণে আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি।

শাইখ আব্দুর রাহমান ইবনে হাসান রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে, তাই সর্বোত্তম ব্যাখ্যা। আলী, ইবনে আব্বাস, কাতাদাহ, যাহ্হাক, আতা আল-খোরাসানী এবং অন্যান্য আলেম থেকে উপরোক্ত ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। এটিই অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতো। শাইখ আব্দুর রাহমান ইবনে হাসানের কথা এখানেই শেষ।

আবু মালেক আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَرْبَعٌ فِى أُمَّتِى مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لاَ يَتْرُكُونَهُنَّ الْفَخْرُ فِى الأَحْسَابِ وَالطَّعْنُ فِى الأَنْسَابِ وَالاِسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ وَالنِّيَاحَةُ وَقَالَ النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ

 ‘‘জাহেলী যুগের চারটি কু-স্বভাব আমার উম্মতের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, যা তারা পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে পারবে না। (এক) আভিজাত্যের অহংকার করা। (দুই) বংশের বদনাম করা। (তিন) নক্ষত্ররাজির মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা এবং (চার) মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা। তিনি আরও বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপকারিনী মৃত্যুর পূর্বে যদি তাওবা না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে এমন অবস্থায় উঠানো হবে যে, তার পরনে থাকবে আলকাতরার প্রলেপযুক্ত লম্বা পায়জামা এবং খোস-পাঁচড়াযুক্ত কোর্তা।[1]

জাহেলী যুগ বলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বের যুগ উদ্দেশ্য। তার আনীত দীনের পরিপন্থী প্রত্যেক বিষয়ই জাহেলীয়াতের অন্তর্ভুক্ত।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রহিমাহুল্লাহ এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, মানুষ জাহেলীয়াতের কতক স্বভাব ছাড়তে পারবে না। যারা তা ছাড়তে পারবে না, তাদের নিন্দাবাদ বর্ণনা করতে গিয়েই তিনি এ কথা বলেছেন। হাদীছের দাবি হলো, জাহেলীয়াতের প্রত্যেক কথা ও কাজই দীন ইসলামের মধ্যে নিন্দিত। তা না হলে এগুলোকে জাহেলীয়াতের দিকে সম্বন্ধ করে নিন্দা করা হতোনা। সুতরাং জানা গেলো, নিন্দা করণার্থেই উপরোক্ত কাজগুলোর সম্বন্ধ জাহেলীয়াতের দিকে করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى﴾

 ‘‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে। মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না’’। (সূরা আল আহযাব: ৩৩)

এখানে জাহেলী যামানার নারীদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করে বের হওয়ার নিন্দা করা হয়েছে এবং জাহেলী যুগের লোকদেরও নিন্দা করা হয়েছে। এ নিন্দার দাবী হচ্ছে জাহেলী যুগের লোকদের সাদৃশ্য করা নিষিদ্ধ। শাইখুল ইসলামের বক্তব্য এখানেই শেষ।

  الاستسقاء بالأنواء তারকাজির মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা: এর অর্থ হলো তারকার দিকে বৃষ্টির সম্বন্ধ করা। نوء অর্থ হলো তারকা অস্তমিত হওয়া। যেমন কোনো মানুষ বললো, আমরা অমুক অমুক তারকা অস্তমিত হওয়ার মাধ্যমে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি।  

الاستسقاء بالأنواء তারকাজির মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করার হুকুম: যদি বিশ্বাস করা হয় যে, বৃষ্টি বর্ষণে নক্ষত্রের প্রভাব রয়েছে তাহলে এমন বিশ্বাস কুফুরী ও বড় শিরক। জাহেলী যামানার মুশরিকরা এ বিশ্বাসই করতো। আর যদি বিশ্বাস করা হয় যে, বৃষ্টি বর্ষণে তারকার নিজস্ব কোনো প্রভাব নেই; বরং আল্লাহই একমাত্র বৃষ্টি বর্ষণকারী, তবে আল্লাহ তা‘আলা একটি নিয়ম করেছেন যে, অমুক তারকা অস্তমিত হবার সময় বৃষ্টি হবেই তাহলে এ বিশ্বাস বড় শিরক পর্যন্ত পৌঁছবে না। কিন্তু ছোট শিরকের পর্যায়ে পড়বে। কেননা তারকার দিকে বৃষ্টি বর্ষণের সম্বন্ধ করা হারাম। শিরকের দরজা বন্ধ করণার্থে রূপকার্থেও এটি নিষিদ্ধ।

ইমাম বুখারী ও মুসলিম যায়েদ ইবনে খালেদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,

صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلَةِ  فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَال্َর هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ  قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ  قَال্َর أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِى مُؤْمِنٌ بِى وَكَافِرٌ فَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِى وَكَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِى وَمُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ

‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়াতে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন। সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সালাত শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের প্রভু আজ রাতে কী বলেছেন? লোকেরা বললো আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহ বলেছেন, আজ সকালে আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি ঈমানদার হয়েছে আবার কেউ কাফের হয়েছে। যে ব্যক্তি বলেছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে বৃষ্টি হয়েছে, সে আমার প্রতি ঈমান এনেছে আর বৃষ্টি বর্ষণে নক্ষত্রের প্রভাবকে অস্বীকার করেছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলেছে, ‘অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমাকে অস্বীকার করেছে আর নক্ষত্রের প্রতি ঈমান এনেছে’’।[2]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি, আল্লাহ বলেছেন, আজ সকালে আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি ঈমানদার হয়েছে আবার কেউ কাফের হয়েছে। এখানে মুমিনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বৃষ্টি বর্ষণকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের দিকে সম্বন্ধ করে, সে মুমিন। আর যে বৃষ্টিকে তারকার দিকে সম্বন্ধ করে তাকে কাফের হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহর কাজকে অন্যের দিকে সম্বন্ধ করা জায়েয নয়। এটি নিঃসন্দেহে কুফুরী। মানুষ যদি বিশ্বাস করে, বৃষ্টি বর্ষণে তারকার প্রভাব রয়েছে, তাহলে এটি বড় কুফুরী। কেননা এতে আল্লাহর রুবুবীয়াতে শিরক করা হয়। মুশরিকও কাফেরের অন্তর্ভুক্ত।

আর যদি বিশ্বাস করা হয় যে, বৃষ্টি বর্ষণে তারকার কোনো প্রভাব ও ক্ষমতা নেই, বৃষ্টিকে তারকার দিকে কেবল রূপকার্থে সম্বন্ধ করা হয়েছে, তাহলে এটিও হারাম হবে এবং ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা সে আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের সম্বন্ধ অন্যের দিকে করেছে।

ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, পূর্বাকাশে যখন একটি তারকা উদিত হতো এবং পশ্চিমাকাশে অন্য একটি তারকা অস্তমিত হতো, তখন বৃষ্টিপাত হলে কিংবা বাতাস প্রবাহিত হলে প্রাচীন আরবদের কেউ কেউ উদিত তারকার দিকে আবার কেউ কেউ অস্তমিত তারকার দিকে বৃষ্টিপাতের সম্বন্ধ করতো। এভাবে সম্বন্ধ করতো যে, এগুলোই বৃষ্টি তৈরী, উদ্ভাবন ও বর্ষণ করে। তারা হাদীছে উল্লেখিত কথাটি ব্যবহার করে থাকে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত বাক্য প্রয়োগ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে করে কেউ জাহেলী যুগের লোকদের অনুরূপ আকীদা পোষণ না করে এবং কথা-বার্তায় তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ না করে। ইমাম কুরতুবীর বক্তব্য এখানেই শেষ।

ইমাম মুসলিম আল্লাহ তা‘আলার বাণী উল্লেখ করে বলেন:

 ﴿فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ (৭৫) وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ إِنَّهُ لَقُرْآَنٌ كَرِيمٌ (৭৭) فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ (৭৮) لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ (৭৯) تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ (৮০) أَفَبِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ (৮১) وَتَجْعَلُونَ رِزْقَكُمْ أَنَّكُمْ تُكَذِّبُونَ﴾

‘‘অতএব, আমি তারকারাজির ভ্রমণ পথের শপথ করছি, নিশ্চয় এটি বড় শপথ যদি তোমরা জানতে পারো। নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। পবিত্রগণ ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করতে পারে না। এটি বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। তবুও কি তোমরা এই বাণীর প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শন করছো? এ নেয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ এ রেখেছো যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো। (সূরা ওয়াকিয়া: ৭৫-৮২)

এ আয়াতগুলোর শানে নুযুল সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাসের বরাত দিয়ে বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, অমুক অমুক তারকার প্রভাব সত্য হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত আয়াতগুলো নাযিল করেন।

সুতরাং বৃষ্টি বর্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাজ, তার শক্তি ও ক্ষমতাধীন। এতে কোনো সৃষ্টির প্রভাব নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ أَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنزِلُونَ﴾

‘‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা চিন্তা করেছো কি? তোমরা কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি?’’ (সূরা ওয়াকিয়া: ৬৮-৬৯)

সুতরাং যে ব্যক্তি তারকাসমূহ কিংবা প্রাকৃতিক কারণ যেমন পৃথিবীর পরিবেশগত কারণ ও বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি হয় বলে ধারণা করে তারা মিথ্যা বলে এবং অপবাদ রটায়। এসব ধারণা বড় শিরক। আর যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই বৃষ্টি বর্ষণকারী, কিন্তু রূপকার্থে বৃষ্টির সম্বন্ধ এগুলোর প্রতি করে, তাহলে এটিও হারাম এবং ছোট কুফুরী। কেননা এতেও আল্লাহ ছাড়া অন্যের দিকে নিয়ামতের সম্বন্ধ করা হয়। যেমন কেউ কেউ বলে থাকে অমুক অমুক তারকার মাধ্যমে আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি।

এ বিষয়ে কতক সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের যথেষ্ট  শৈথিল্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। মুসলিমদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দানকারী।


[1]. সহীহ মুসলিম ৯৩৪, অধ্যায়: বিলাপ করার ভয়াবহতা।

[2]. সহীহ বুখারী ৮৪৬, অধ্যায়: হুদায়বিয়ার যুদ্ধ।