কবর আখিরাতের জীবনের প্রথম ঘাঁটি। এ ঘাটিই আমাদের সকল মানুষের প্রথম বাড়ি। এ কবরকে সংরক্ষণের জন্যে এর চারপাশে দেয়াল দ্বারা সুন্দরভাবে পরিবেষ্টিত রাখা আবশ্যক। এমন কিছু কাজ আছে যা কবরের পাশে করা একেবারেই নিষিদ্ধ অর্থাৎ হারাম যেগুলো আমাদের কারোরই অজানা থাকা উচিত নয়। সেগুলো হলো

১. কবরের পাশে বা মাযারে গরু-ছাগল জবাই করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“ইসলামে (কবরের পাশে) কোন জবাই নেই ।..... জাহেলী যুগের লোকেরা কবরের কাছে গাভী বা ছাগল জবাই করতো।” (আবু দাউদ: ৩২২২)। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, কবরের কাছে রুটি ও অন্যান্য জিনিস সদাকাহও একই কথা (অর্থাৎ হারাম) -- সিরাতিল মুস্তাকিম, পৃ. ১৮২। মুহাদ্দেস আলবানী (রহঃ) বলেন, মাযারে পশু জবাই একটা ঘৃণিত কাজ, যদিও পশুটি আল্লাহর নামে জবাই করা হয়। আর যদি কবরস্থ অলির নামে জবাই করা হয় তাহলে তা শির্ক।

২. অন্যখান থেকে মাটি এনে কবর বেশি করে উঁচু করা।
৩. চুনকাম করা।
৪. কবরের উপর নাম-ঠিকানা লিখা।
৫. কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা।
৬. কবরের উপর বসা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“তোমাদের কেউ কবরের উপর বসবে, এর চেয়ে উত্তম হলো একটা আগুনের টুকরার উপর বসা। আর এ আগুন যেন তার কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।” (মুসলিম: ৯৭১)।

৭. কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা। এটি হারাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  “তোমরা কবরের দিকে (মুখ করে) সালাত আদায় করবে না এবং তার উপর বসবেও না। ”(মুসলিম: ৯৭২)।

৮. কাবামুখী হয়ে পড়লেও কবরের পাশে নামায আদায় হারাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“পুরো পৃথিবীই মসজিদ (সিজদার জায়গা), শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া।” (তিরমিযী: ৩১৭) এ হাদীসে কবরস্থান এবং গোসলখানায় সালাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, কোন কবরস্থানের পাশে মসজিদ বানানো উচিত নয় এবং মসজিদের পাশেও কোন কবর দেওয়া জায়েয নেই। এ জন্য সৌদি আরবে মসজিদের পাশে কবর এবং কবরের পাশে মসজিদ দেখা যায় না।

৯. কবরস্থানকে উৎসবের জায়গা বানানো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না। (আবু দাউদ: ২০৪২)

১০. মাযার যিয়ারতের জন্য লম্বা সফর করা। মসজিদুল হারাম, মসজিদুন নববী ও মসজিদুল আকসা ছাড়া অন্য কোন জায়গায় (ইবাদতের নিয়তে) সফর করতে রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। (মুসলিম: ১৩৯৭) তবে ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও অন্যান্য শিক্ষা লাভ, ইসলাম প্রচার, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাত, বা ব্যবসা করার জন্য লম্বা সফর এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।

১১. কবরে বাতি জ্বালানো।

১২. আরো যেসব কাজ বৈধ নয়: সেগুলো হলো- কবরের উপর দিয়ে হাঁটা-চলা করা ও রাস্তা তৈরি করা, কবরে ময়লা ফেলা, সেখানে ফসল উৎপাদন ও খেলা-ধুলা করা, কবর স্পর্শ করা, কবর স্পর্শ করে সে হাত গায়ে বুলানো, কবর চুম্বন করা, কবরকে পিঠ দিয়ে না হাঁটা ও উল্টা পায়ে কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসা, কবরের মাটিতে রোগের শেফা আছে মনে করা, কবরের পাশে দুআ করলে নেক ব্যক্তির উসিলায় কবুল হবে বলে বিশ্বাস করা, কবরের সামনে ঝুঁকা ও সিজদা করা, নামাযের মতো দুই হাত বুকে বেধে বিনয়ের সাথে কবরের সামনে খাড়া হওয়া, কবরবাসীর নামে সূরা ফাতিহা পড়া, কবরস্থ ব্যক্তি আল্লাহর অলি মনে করে তার কাছে সাহায্য চাওয়া, চিরকুটে আবেদন লিখে কবরের পাশে রেখে আসা, কোন কোন কবর যিয়ারতে হজ্জের সমান নেকী হবে বলে মনে করা, কোন অলির যিয়ারতকে গরীবের হজ্জ বলে ধারণা করা, কবরে ফুল দেওয়া ও চাদর মোড়ানো, সেখানে আতর-গোলাপ ছড়ানো ও মিষ্টি বিতরণ, কবরের পাশে মসজিদ বানানো ও উরস করা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো ও নাচ-গান করা, মোমবাতি জ্বালানো ও ধূপ দেওয়া এবং নযর-নিয়ায ও মান্নত করা ইত্যাদি। এগুলোর কোনটি বিদআত, আবার কোনটি শির্ক যা ঈমানদারের ঈমান নষ্ট করে দেয়, করে দেয় চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
নাউযুবিল্লাহ!