সালাত আদায় স্রষ্টার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এমন এক ইবাদত যা বালেগ-বালেগা সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। এ সালাত আদায়ে আখেরাতের অফুরন্ত কল্যাণের পাশাপাশি দুনিয়াবী নগদ কল্যাণও আছে।
(ক) কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
(১) “নামাযীরা পাবে জান্নাতে সম্মানজনক আসন যারা নিজেদের সালাত হেফাযত করে, (পরকালে) তারা (অতীব) মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতে অবস্থান করবে।” (সূরা ৭০; মা'আরিজ ৩৪৩৫)।
(২) সালাতের কারণে অপরাধ থেকে আল্লাহ নিজেই তাদেরকে হেফাযতে রাখেন। “নিঃসন্দেহে সালাত (মানুষকে) অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা ২৯; আনকাবুত ৪৫)
(৩) সালাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে ফেলেছে, “ঐসব মুমিন বান্দারা নিশ্চিত সফলতা লাভ করে ফেলেছে, যারা তাদের সালাতে (খুশু-খুযূ ও) বিনয়াবনত থাকে” (সূরা ২৩; মুমিনূন ১-২)। এখানের আয়াতে ‘ফালাহ' শব্দের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের কল্যাণ বুঝানো হয়েছে।
(৪) সালাত হলো এক উত্তম যিকির।আর এর মধ্যে রয়েছে আত্মার প্রশান্তি। “যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং যাদের অন্তকরণ আল্লাহর যিকিরে প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, একমাত্র আল্লাহর যিকিরই (মানুষের) অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে।” (সূরা ১৩; রা’দ ২৮)
(৫) ইহ ও পরকালের কাজকর্মের সহায়ক হলো সালাত। এ জন্য আল্লাহ তাআলা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সহায়তা চাইতে বলেছেন, “(হে ঈমানদার ব্যক্তিরা!) তোমরা সবর ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর) কাছে সাহায্য চাও।” (সূরা ২; বাকারা ৪৫)। এ জন্য যখন কোন সমস্যা আসতো বা বড় বড় কাজ আসতো তখন রাসূলুল্লাহ (স) সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর এরই মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
(৬) এ আমলের মধ্যে রুযী-রোজগারেরও প্রশস্ততা রয়েছে, যে প্রাপ্তি একেবারেই নগদ । “তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের আদেশ দাও এবং তুমি (নিজেও) তার ওপর অবিচল থেকো।” (সূরা ২০; ত্বা-হা ১৩২)
(৭) ঈমান ও কাজকর্মে দৃঢ়তা এনে দেয় সালাত।
“(আসলে) মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ভীরু জীব হিসেবে, যখন তার ওপর কোন বিপদ আসে তখন সে ঘাবড়ে যায়, (আবার) যখন তার সচ্ছলতা ফিরে আসে তখন সে কার্পণ্য করতে আরম্ভ করে। কিন্তু সেসব লোকদের কথা আলাদা যারা সালাত আদায় করে। যারা নিজেদের সালাতে সার্বক্ষণিকভাবে কায়েম থাকে।” (সূরা ৭০; মাআরিজ ১৯-২৩)
(খ) হাদীস শরীফে আছে,
(১) প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করলে যেমন কোন ময়লা থাকে না, তেমনই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে তার সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন।(বুখারী: ৫২৮)
(২) কবীরা গুনাহ না করলে প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমুআবারের জুমুআ আদায়-এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া পাপরাশি এমনিতেই মুছে যায়। (মুসলিম: ২৩৩)
(৩) কোন মুসলিম যখন ভালো করে ওযু করে পাঁচ বেলা সালাত আদায় করে। তার পাপরাশিগুলো এমনভাবে ঝরে যায়, যেমনভাবে শুষ্ক ডালা থেকে এর পাতাগুলো ঝরে যায়। (সহীহ তারগীব: ৩৫৬
(৪) যার সালাত সুন্দর হবে তার অন্যান্য আমলগুলোও শুদ্ধ ও সঠিক হয়ে যাবে।বিপরীতে যার সালাত শুদ্ধ নয়, তার অন্য আমলও শুদ্ধ হবে না। (সহীহ তারগীব: ৩৬৯)।
(৫) রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তুমি বেশি বেশি আল্লাহকে সিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই একটা সিজদা কর তখনই এর বিনিময়ে জান্নাতে (আল্লাহ) তোমার একটা মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং একটা গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম: ৪৮৮)।
(৬) সাহাবী বারীরা বিন কা'ব (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে আমি আপনার সাহচর্যে থাকতে চাই। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, “তাহলে বেশি বেশি সিজদা কর (অর্থাৎ নফল সালাত বেশি বেশি পড়)। (মুসলিম: ৪৮৯)।
(৭) যে লোক সুন্দর করে ওযু করে শুধু সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে যায় তার প্রতি পদক্ষেপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী: ৬৪৭)।
(৮) জামাআতে নামায পড়লে এক নামাযে এর প্রতিদান পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় (বুখারী: ৬৪৭)। আরেক হাদীসে আছে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব হয়। (বুখারী)
(৯) নবী (স) তার সাহাবী বুরাইদা (রা)-কে বললেন, যে ব্যক্তি রাতের আঁধারে (সালাতের জন্য) মসজিদে আসা-যাওয়া করে তাকে কিয়ামতের দিনের নূরের সুসংবাদ দাও। (সহীহ তারগীব: ৩১০) (১০) যে ব্যক্তি তার দুই নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে কোন বেহুদা (কথা ও) কার্যকলাপ না করে তাহলে তার নাম ইল্লিয়্যিনে লেখা হয়। (সহীহ তারগীব: ৩১৫)
(১১) যে লোক এক নামাযের পর অপর নামাযের অপেক্ষায় থাকে যেন তার কলব মসজিদের সাথে ঝুলে আছে, এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা হাশরের মাঠে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা দেবেন। (বুখারী: ৬৬০)
(১২) মসজিদ হলো প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ লোকের ঘর। যে ব্যক্তির ঘর হবে মসজিদ, সেই ব্যক্তির জন্য রয়েছে আরাম, দয়া, সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের পথে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে পুলসিরাত পার করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন (সহীহ তারগীব: ৩২৫)।
(১৩) ফজরের দু'রাকাআত সুন্নতের ফযীলত দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম (মুসলিম)। তাহলে ভেবে দেখুন, ফজরের ২ রাকআত ফরজের ফযীলত কত হতে পারে!
(১৪) যেসব লোককে জান্নাতে নেবেন বলে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নামাযীরা তাদের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়।(আবু দাউদ)
(১৫) সালাত কিয়ামতের দিন বান্দার ঈমানের দলীল হয়ে যাবে। বান্দা তখন তার সামনে নূর ও জ্যোতি দেখতে পাবে।
(১৬) সালাতে সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং আল্লাহর একদম কাছে চলে যায়।(মুসলিম)।
(১৭) সালাত হলো বান্দার মন্দ কাজের কাফফারা যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। (মুসলিম)
(১৮) সালাত আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম আমল হিসেবে গৃহীত।(বুখারী)
(১৯) সালাত হলো নয়ন জুড়ানো ও চক্ষু শীতলকারী ইবাদত। (নাসাঈ)
(২০) সালাত হলো আত্মার যাকাত, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা (সূরা আনকাবুত ৪৫), যা মানুষকে অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে বিরত রাখে।
(২১) সালাত ইহকালীন জীবনে এবং পরকালের জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তাদানকারী ইবাদাত। (মুসলিম)। [বাকি ফযীলত দেখুন, জামাআতে সালাত (২.১২ নং) পরিচ্ছেদে ।
সৌদি আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের খ্যাতনামা আলেম ড. সালেহ বিন ফাউযান আল ফাউযান রচিত নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত গ্রন্থে বর্ণিত সালফে সালেহীনদের কয়েকটি ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো:
(১) সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (র) চল্লিশ বছর পর্যন্ত তার ফজরের নামাযের কোন দিন জামাআত ছুটেনি।
(২) ওয়াকী ইবনে জাররাহ বলেন, আমাদের বয়স যখন প্রায় সত্তর বছর, তখনও তার সালাতে কখনো তাকবীরে উলা’ ছুটেনি। তাকবীরে উলা’ হলো জামাআতে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব ‘প্রথম যে তাকবীরটি’ দেয়।
(৩) আলী ইবনে হুসাইন বিন যাইনুল আবেদীন যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন তার শরীরে কম্পন শুরু হয়ে যেত। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তোমরা কি জান না যে, আমি কার সম্মুখে দণ্ডায়মান হই? এবং কার সাথে কথােপকথন করি? আরেকবার তাঁর নামাযে সিজদারত অবস্থায় তার বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। এমন সময় সিজদা থেকে মাথা উঠালেন যখন আগুন নিভে গিয়েছিল। বিষয়টি তাকে বলা হলে তিনি বলেন, আরেকটি আগুন আমাকে এ আগুন থেকে বিমুখ করে রেখেছিল।
(৪) মুসলিম ইবনে ইয়াসার আল-বাসারী যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন মনে হতো এক খণ্ড কাঠ দাঁড়ানো আছে। সামান্যতম কোন নড়াচড়া ছিল না। নামায শুরুর সময় তার পরিবারের লোকদেরকে বলতেন তোমরা তোমাদের কথাবার্তা বল। আমি এখন তোমাদের কথা শুনি। কেননা, নামাযে তিনি তখন আল্লাহর সাথে কথাবার্তায় মগ্ন।
(৫) আমাশ বলেন, ‘ইবরাহীম আত্-তাইমী যখন সিজদা করতেন তখন মনে হতো তিনি যেন একটা দেয়ালের অংশ। এ অবস্থায় চড়ুইপাখি তার পিঠে এসে বসে যেতো।
(৬) ইয়াকুব ইবনে ইয়াজীদ বাসরীর নামাযরত অবস্থায় একবার তার কাঁধ থেকে চাদর চুরি হয়ে যায় এবং পরে আবার তাকে তা ফেরতও দেওয়া হয়। কিন্তু নামাযে গভীর মনোযোগ থাকার কারণে তিনি তা টের করতে পারেননি।
(৭) মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন নাসের মারওয়াবীকে তার নামাযরত অবস্থায় দেখেছি, তার কানে মাছি বসেছে, আর রক্ত বয়ে যাচ্ছে। তবুও তিনি মাছি সরাতেন না। এমন খুশূ-খুযূ ও মনোযোগ ছিল তাদের নামাযে। সুবহানাল্লাহ!
মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে আমরা এমন অনেকেই আছি যারা শুধু মনে করি নামায পড়া ভালো কাজ। কিন্তু আমরা জানি না ইসলামী জীবনব্যবস্থায় নামাযের গুরুত্ব ও মর্যাদা কতটুকু? এটাও জানি না যে, নামায পরিত্যাগের মধ্যে একজন বনী আদমের জন্য কত ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আবার কেউ কেউ শুধু এতটুকু জানি যে, বে-নামাযীর গুনাহটা হবে শুধু পরকালে। অতএব, অন্তত: এখনতো ভালোই আছি। কেউ আবার ভাবি, বয়সতো তেমন হয়নি।সময় হোক...। অর্থাৎ নামায যেন বুড়াকালের আমল।
আবার কেউ কেউ বলি, নামায শুরু করবো। তবে কাল থেকে...। শয়তানের প্ররোচনায় সময় হারিয়ে এভাবে যারা দিন পার করে দিচ্ছে তারা আগামীকালের খোঁজ আর পায় না। বরফের মতো সময় তাদের গলে যাচ্ছে। এমনই অবস্থায় হঠাৎ করে মৃত্যু এসে একদিন তাকে ঘেরাও করে ফেলে। অতঃপর তার পরিণতি কী হয়, তার প্রায়শ্চিত্ত কত করুণ, এ বিষয়ে এখানে ক্ষুদ্র আলোচনা। শুরুতেই আল্লাহ তাআলার বাণী, এরপর রাসূলুল্লাহ (স)-এর কথা এবং সর্বশেষে উলামায়ে কিয়ামের ফাতাওয়া:
ক. প্রথমত:
১. আল কুরআনে বলা হয়েছে,
“অতঃপর এমন এক সময় আসল যখন লোকেরা নামায ছেড়ে দিল, আর লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে গেল।ফলে তারা শীঘ্রই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়ে যাবে। তবে কিছু লোক এ থেকে রেহাই পাবে, যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে।” (সূরা ১৯; মারইয়াম ৫৯-৬০)।
২. আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
“(পরকালে জান্নাতবাসীরা ঠাট্টার ভাষায় দোযখবাসীদের জিজ্ঞেস করবে) কী অপরাধ তোমাদেরকে আজ আগুনে ঢুকিয়েছে? উত্তরে তারা বলবে-আমরা নামায পড়তাম না, আর মিসকীনকে খাবার দিতাম না।” (সূরা ৭৪; মুদ্দাসছির ৪২-৪৪)
৩. আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
“তারা ঈমান আনেনি, নামাযও পড়েনি। বরং উল্টো তারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং (ঈমান থেকে) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।অহংকারের সাথে বাড়ি ফিরে গিয়েছে, পরিবারপরিজনের কাছে।(অতএব, হে বেঈমান, হে বে-নামাযী!) তোমার জন্য দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ!
আবারও বলছি, তোমার জন্য দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ! মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, কোন প্রকার হিসাব-নিকাশ ছাড়া) এমনিই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে?” (সূরা ৭৫; কিয়ামাহ ৩১-৩৬)
৪. আল্লাহ তাআলা বলেন,
“(কিয়ামতের) দিন হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মুক্ত করা হবে, আর (বেনামাযীদেরকে ডাকা হবে তাদের রবকে সিজদা করার জন্য। কিন্তু সেদিন তারা তা (শত চেষ্টা করলেও) পারবে না। তাদের দৃষ্টি থাকবে ভীত বিহ্বল এবং অবস্থা হবে অত্যন্ত অপমানজনক। (দুনিয়ার জীবনে যখন) তাদেরকে (নামাযের) সিজদার জন্য ডাকা হতো (তখন তা তারা করেনি)। অথচ তারা তখন ছিল সুস্থ (ও সক্ষম)। (সূরা ৬৮; কলম ৪২-৪৩) উল্লেখ্য যে, এ বিষয়ে ইমাম বুখারী (র) একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তা হলো, আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, মহানবী (স) বলেছেন, আমাদের রব তাঁর পায়ের গোছা উন্মুক্ত করবেন। তখন প্রত্যেক মুমিন নর-নারী তাকে সিজদা করবে।(কিন্তু বেনামাযীরা সেদিন তা পারবে না।)
৫. আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যখন তাদের বলা হতো রুকু কর (অর্থাৎ নামায পড়) তখন তারা রুকু করত না (অর্থাৎ নামায পড়তো না) সত্যকে যারা মিথ্যা বলতো ঐসব লোকদের জন্য ধ্বংস।” (সূরা ৭৭; মুরসালাত ৪৮)। যারা এ যিকির (সালাত আদায় করবে না তাদের জীবন হবে সংকুচিত (কঠিন) এবং কিয়ামতের দিন হাশরে উঠবে তারা অন্ধ অবস্থায়।
“(হ্যা,) যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জন্যে (জীবনে) বাঁচার সামগ্রী সংকুচিত হয়ে যাবে, (সর্বোপরি) তাকে আমি কিয়ামতের দিন অন্ধ বানিয়ে হাজির করবো।” (সূরা ২০; ত্বা-হা ১২৪)
খ. দ্বিতীয়ত: বে-নামাযীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স)-এর হুঁশিয়ারী:
তাদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে:
৬. রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “একজন মুসলমান ও শির্ক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায পরিত্যাগ করা। (অর্থাৎ নামায যে কেউ ছেড়ে দেয়, সে লোক আর কাফের মুশরিকের মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকে না) (মুসলিম)
৭. অপর এক হাদীসে তিনি আরো বলেছেন, “আমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি হলো নামায নিয়ে। যে ব্যক্তি এ নামায ছেড়ে দিল সে কুফরী করল (বা কাফের হয়ে গেল)।” (আহমাদ ও আবু দাউদ)
৮. “যে ব্যক্তি তার সালাত হেফাযত করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য থাকবে নূর, প্রমাণ ও নাজাত। আর যে ব্যক্তি তার সালাতের হেফাযত করবে না তার জন্য কোন নূর নেই, নাজাত নেই, মুক্তির জন্য তার পক্ষে কোন দলীল থাকবে না এবং কিয়ামতের দিন কারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফ (এসব কাফির মুশরিকদের) সাথে তার হাশর হবে।” (মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ ইবনে হিব্বান) অর্থাৎ, হাশরের মাঠে মুসলমানদের কাতারে সে দাঁড়াতে পারবে না। নাউযুবিল্লাহ!
গ. তৃতীয়ত: সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীনদের উক্তি
৯. দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করল ইসলামে তার জন্য আর কোন কিছুই রইল না।”
১০. তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক বলেন, “নবী (স)-এর সাহাবাগণ একমাত্র নামায তরক করা ছাড়া অন্য কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে উল্লেখ করেননি।” (তিরমিযী) অর্থাৎ নামাযই একমাত্র ইবাদত যা পরিত্যাগ করাকে তারা কুফরী বলে বর্ণনা করেছেন।
ঘ. চতুর্থত: মাযহাবের ইমাম ও বিজ্ঞ ফকীহগণের মতামত
সার্বক্ষণিকভাবে নামায তরক করে চলছে এমন সব বেনামাযীদের সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নায় আরো যেসব হুঁশিয়ারি এসেছে এসবের আলোকে বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের ফাতাওয়া আরবী ও বাংলা গ্রন্থাবলিতে রয়েছে। এর মধ্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়া নিম্নে তুলে ধরা হলো, যদিও এ মাসআলাগুলোতে ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু মতবিরোধ রয়েছে, এগুলো হলো:
১১. বেনামাযীর শেষ নিঃশ্বাস: বেনামাযীর মৃত্যুকালে ফেরেশতারা তার মুখমণ্ডল ও নিতম্বে প্রহার করতে থাকবে (সূরা ৮; আনফাল ৫০-৫১)। এজন্য বেনামাযীদের কারো কারো চেহারা কালোবর্ণ ধারণ করে থাকে।
১২. জানাযা: বেনামাযীর জানাযা পড়াও জায়েয নেই। যেহেতু নামায না পড়া কুফরী কাজ। আর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। অপর একদল আলেমের মতে, তার জানাযা পড়া যেতে পারে। কারণ, সে মুসলিম পরিবারের সন্তান। তবে আলেমরা তার জানাযা পড়বে না। পড়বে সাধারণ কিছু লোক।
১৩. কবর দেওয়া: মুসলমানের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কবর হবে দূরদূরান্তে আলাদা কোন জায়গায়। যেহেতু বেনামাযীর জন্য বিভীষিকাময় শাস্তির হুঁশিয়ারি রয়েছে সেহেতু এ আযাব যেন কোন মুসলমানের কবরের পাশে না হয়। সেজন্য তার কবর হবে ভিন্ন জায়গায়। কবরের আযাবের ভয়ে বেনামাযী ও পাপিষ্ঠ লোকদের লাশ দাফনের আগেই চিৎকার করতে থাকে। এত বিকট আওয়াজে এ লাশ চিৎকার করে যে, পশুপক্ষী ও প্রাণীকূলের সকলেই এ আওয়াজ শুনতে পায়। শুধু শুনে না মানুষ ও জ্বিন জাতি। যদি তাদের মধ্যে কেউ লাশের কান্নার এ বিকট আওয়াজ শুনতে পেত তাহলে ভয়ে ভীতবিহ্বল হয়ে জীবিত লোকেরাও হুঁশ হারিয়ে ফেলত।
১৪. কবরের অবস্থা: তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হবে। লোহার লম্বা হাতলবিশিষ্ট ভারী হাতুড়ি নিয়ে একজন ফেরেশতা প্রস্তুত থাকবে। এ ফেরেশতা তাকে এমন জোরে আঘাত করতে থাকবে যার ফলে তার দেহটা মাটিতে মিশে যাবে।
১৫. হাশর পরকাল: কারূন, ফেরাউন ও হামানের সাথে তার হাশর হবে। চেষ্টা করেও মুসলমানদের কাতারে এসে বেনামাযীরা দাঁড়াতে পারবে না। দোযখের আগুন হবে তাদের। চিরস্থায়ী আবাস।
১৬. বিবাহ বন্ধন: কোন কোন ফকীহর মতে স্ত্রী নামাযী হলে বেনামাযী স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।(তবে যদি বিপরীতে স্ত্রী বেনামাযী হয় আর স্বামী নামাযী হয় সেক্ষেত্রে বিবাহ চলতে পারে ।)।
১৭. সম্পদ প্রাপ্তি: কোন বেনামাযী তার রক্ত সম্পর্কের লোকদের কাছ থেকে ওয়ারিশসূত্রে কোন সম্পদ পাবে না। আর যদি মৃত ব্যক্তিটি বেনামাযী হয় তাহলে তার সম্পদও তার নিকটাত্মীয়রা পাবে না। উক্ত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
১৮. সাহচর্য কোন বেনামাযীরই সঙ্গী সাথী হওয়া জায়েয নেই। তার কাছ থেকে দূরে থাকা ও তাকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। তবে দাওয়াতী কাজের জন্য, তাকে সদুপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য তার সঙ্গী হওয়াতে কোন বাধা নেই।
১৯. পশু জবাই: তার জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া জায়েয নেই।
২০. মক্কায় প্রবেশ: মক্কা ও হারামের সীমানার মধ্যে বেনামাযীর প্রবেশ নিষিদ্ধ।
২১. জাগতিক অবস্থা: তার জীবন হবে কষ্টদায়ক, সংকীর্ণ ও যন্ত্রণাদায়ক। অতএব, আপনি যদি নামাযী হয়ে থাকেন তাহলে সত্যিই আপনি বুদ্ধিমান ও ভাগ্যবান। আর তা না হলে নিজেই ভেবে দেখুন আপনি মুসলমান আছেন কিনা?
(তথ্যসূত্র: সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান / শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ), সৌদি আরব]
প্রথমত: আযান
আযান ও ইকামাত দেওয়া সুন্নাত। আযান দেওয়া অতীব সাওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,
(ক) “আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে দাড়িয়ে সালাত আদায় করার ফযীলত কত, লোকেরা যদি তা জানত তাহলে এর জন্য লটারি করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না” (বুখারী: ৬১৫)।
(খ) “কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনের গর্দান হবে লম্বা” (মুসলিম)। তার এ উঁচু দেহ হবে তার জন্য সম্মানের কারণ।
(গ) “মুয়াযিনের আযান যে কোন মানুষ, জিন বা অন্যেরা শুনতে পাবে তারা সকলেই কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনের জন্য (তার পক্ষে) সাক্ষ্য দেবে” (বুখারী: ৬০৯)।
(ঘ) “আযান দেওয়ার সাথে সাথে শয়তান দূরে গিয়ে পালায়” (মুসলিম)।
(ঙ) “মুয়াযযিনকে তার আওয়াজের দূরত্ব পরিমাণ (গুনাহ) ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং শুকনো ও ভিজা যত কিছু (মুয়াযযিনের) শব্দ শুনে, তারা সবাই তাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দেয়। আর তার সাথে সালাত আদায়কারীদের সমপরিমাণ পুরস্কার তাকে দেওয়া হয়। (মুসলিম: ৬৪৬)।
(চ) রাসূল (স) এভাবে তাদের জন্য দু'আ করেছেন, “হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন কর এবং মুয়াযযিনদেরকে ক্ষমা করে দাও” (আবু দাউদ: ৫১৭)।
(ছ) আযানদাতাকে আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু।দাউদ: ১২০৩)
আযান যেভাবে দেবে:
(১) মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে আযান দেবে। আর ইকামত দেবে মসজিদের ভেতরে দাঁড়িয়ে।
(২) যার গলার আওয়াজ ভালো এবং আযানের জন্য কোন বিনিময় চান না, মুয়াযযিন হওয়ার জন্য তারই অগ্রাধিকার।
(৩) আযানের পূর্বে ওযু করে নেওয়া সুন্নাত (তিরমিযী)। তবে ওযু ছাড়াও আযান দেওয়া জায়েয।
(৪) অতঃপর কাবা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়াবে।(তিরমিযী)
(৫) দুই আঙুল দুই কানের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে নেবে। তবে কোন আঙুল ঢুকাবে তা হাদীসে উল্লেখ নেই। অতএব যেকোন আঙুল ঢুকানো যায়।
(৬) প্রতিবারই ‘হাইয়্যা আলাস-সালাহ’ বলার সময় মুখমণ্ডল ডান দিকে এবং ‘হাইয়্যা আলফালাহ' বলার সময় মুখমণ্ডল বামদিকে ঘুরাবে, তবে দেহ ঘুরাবে না।(আবু দাউদ: ৫২০)।
(৭) উঁচু স্থানে (বা মিনারায়) দাঁড়িয়ে আযান দেওয়া উত্তম। (আবু দাউদ)
(৮) আউয়াল ওয়াক্তে আযান দেবে, দেরি করবে না।
(৯) অতঃপর সাধ্যমতো উচ্চৈঃস্বরে জোরালো কণ্ঠে ধীর ও শান্তভাবে নিম্নবর্ণিত শব্দে আযান দেবে:
আযানের আরবী শব্দ | সংখ্যা | |
الله اكبر - الله اكبر | الله اكبر - الله اكبر | ৪ বার |
اشهد ان لا اله الا الله | اشهد ان لا اله الا الله | ২ বার |
اشهد ان محمد الرسول الله | اشهد ان محمد الرسول الله | ২ বার |
حي على الصلاة | حي على الصلاة | ২ বার |
حي على الفلاح | حي على الفلاح | ২ বার |
الله اكبر - الله اكبر | ২ বার | |
لا اله الا الله | ১ বার |
(মুসলিম: ৭২৮)
আযানের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
আরবী শব্দ | উচ্চারণ (ও অর্থ) |
الله اكبر | আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে মহান) |
اشهد ان لا اله الا الله | আশহাদু আল্ লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ। (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) |
اشهد ان محمد الرسول الله | আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল)। |
حي على الصلاة | হাইয়্যা আলাস্ সলা-হ (এসো নামাযের জন্য) |
حي على الفلاح | হাইয়্যা আলাল ফালা-হ (এসো মুক্তির জন্য)। |
الله اكبر | আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে মহান)। |
لا اله الا الله | লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা'বুদ নেই)। |
الصلاة خير من النوم | আস্-সলা-তু খাইরুম মিনান নাওম্ [শুধু ফজরের সালাতে] (ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম) |
ক. আযানের পর দরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত। (মুসলিম: ৭৩৫)।
“হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (স) এবং তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করো, যেমন রহমত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (স) এবং তাঁর বংশধরের ওপর বরকত নাযিল করো, যেমন বরকত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (বুখারী: ৩৩৭০)
(খ) অতঃপর এ দু'আটি পড়বে।
এটাকে বলা হয় অসীলার দু'আ। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, আযান শুনে যে ব্যক্তি এ দু'আ পড়ে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী: ৬১৪)
“এসব পরিপূর্ণ দু'আ ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের প্রভু হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (স)-কে জান্নাতের ওয়াসীলা নামক মনযিলটি ও সম্মান দান কর এবং তুমি তাকে সেই (মাকামে মাহমূদ অর্থাৎ) প্রশংসিত জায়গায় পৌছে দিও যা তাঁকে দেওয়ার জন্য তুমি ওয়াদা করেছ।” (বুখারী: ৬১৪) রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এ দু'আ পড়বে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।(বুখারী: ৬১৪)। তবে সাবধান! কেউ কেউ আযানের দু'আর সাথে কিছু বাড়তি শব্দ যোগ করে। যেমন‘ওয়াদ্দারাজাতা রাফী'আহ্, বা অবযুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমা কিয়ামাহ্’ বা ‘ইন্নাকা লাতুখলিফুল মীয়াদ’ - যা ঠিক নয়। কেননা, এসব বাক্য বলার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই। অতএব, হাদীসে যেভাবে আছে সেভাবেই আমল করুন।
১) তার কণ্ঠস্বর উঁচু থাকা, (২) আওয়াজ সুস্পষ্ট থাকা, (৩) সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জ্ঞান থাকা, (৪) বিশ্বস্ত ব্যক্তি হওয়া, (৫) সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়া।
আযানের জবাব রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি খালেছ দিলে আযানের জবাব দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম: ৭৩৬)।
মুয়াযযিন যা বলে শ্রোতা তাই বলবে, শুধু ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলালফালাহ' বলার সময় বলবে, ‘লা-হাউলা অলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্। (মুসলিম: ৭৩৬)। ফজরের সালাত ‘আস্-সালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাউম বললে অনেকেই এর জবাবে বলে সদাক্তা অবারাতা’। অথচ একথা হাদীসে নেই। অতএব, শুদ্ধ হলো ‘আস্-সালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাউম্'- এটাই বলা। ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’-র জবাবে কেউ কেউ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে। এটিও ঠিক নয়। কারণ নবী (স) বলেছেন, মুয়াযযিন যা বলে তোমরা শুধু তাই বলবে (বুখারী)। তবে অন্য সময় রাসূলের নাম শুনলে দরূদ পড়বে (তিরমিযী: ৩৫৪৫)। উল্লেখ্য যে, আযান শুরুর আগে কেউ কেউ মাইক্রোফোনে দুরূদ পড়ে। এটি ঠিক নয়।
(১) যৌক্তিক কারণে মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সালাত আদায় করলে সেখানেও আযান এবং ইকামত দেবে। আর সংখ্যায় মাত্র একজন হলে আযান ওয়াজিব না হলেও সুন্নাত।
(২) সফরে থাকলেও আযান-ইকামাত দেওয়া সুন্নাত (বুখারী)। সাহাবাগণ মাঠে-ময়দানে থাকলেও আযান দিয়ে নামায পড়তেন।
(৩) যখন কোন ব্যক্তি গাছ-পালা ও পানিবিহীন কোন প্রান্তরে থাকে, আর সে সময় সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায় তখন সে যেন ওযু করে। আর পানি না পেলে যেন তায়াম্মুম করে। অতঃপর সে যদি শুধু ইকামাত দিয়ে সালাত আদায় করে তাহলে তার সাথে তার সঙ্গী দুই ফেরেশতা সালাত আদায় করে। আর যদি লোকটি আযানও দেয় এবং পরে ইকামাত দিয়ে সালাত আদায় করে তাহলে তার পিছনে এতো (অধিক) সংখ্যক ফেরেশতা সালাত আদায় করে যাদের দুই প্রান্তের শেষাংশ নযরে আসে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ২৪১)
সুবহানাল্লাহ! আযান ও ইকামতের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কত বড় পুরস্কার রেখেছেন।
(৪) জামাআতে বা একাকী উভয় অবস্থায় আযান ও ইকামাত দেওয়া সুন্নাত।
(৫) আযানের সময় পার হয়ে গেলেও সালাতের সময় থাকলে আযান দেওয়া আবশ্যক।
(৬) তাহাজ্জুদ এবং সাহরীর জন্যও আযান দেওয়া বৈধ। বেলাল (রা) ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই আযান দিতেন (বুখারী)। এ হাদীসের অনুকরণে মক্কায় কাবা ঘরে ও মসজিদে নববীতে বারো মাসই তাহাজ্জুদের আযান হয়।
(৭) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে পুত্র ও কন্যা উভয় শিশুর জন্য আযান দেওয়া সুন্নাত।
(১) আযানের বাক্যগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, উলটপালট না করা, (২) সময় হলেই আযান দেওয়া (বুখারী: ৬২৮), (৩) এমন স্বরে আযান না দেওয়া, যাতে আযানের শব্দের অর্থের বিকৃতি ঘটে, (৪) সম্ভাব্য উচ্চৈঃস্বরে আযান দেওয়া, (৫) মুয়াযযিন মুসলিম ও বোধজ্ঞানসম্পন্ন হওয়া অর্থাৎ কমপক্ষে ৭ বছরের নিচে না হওয়া, (৬) বিবেকসম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ বিকৃত মস্তিষ্কের না হওয়া, (৭) পুরুষ হওয়া ।
ইকামাত হলো দ্বিতীয় আযান বা দ্বিতীয় আহ্বান। আর এ আহ্বান হলো জামাআতে দাঁড়ানোর আহ্বান।