বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
২৪. কিয়ামতের দিন কোন নবী-ওলী অথবা কোন পীর-বুযুর্গ কাউকে আল্লাহ্ তা’আলার কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে এমন মনে করার শির্ক

কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা যাকে চান শাস্তি দিবেন। কোন নবী বা ওলী তাকে আল্লাহ্ তা’আলার হাত থেকে কোনভাবেই রক্ষা করতে পারবে না।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا امْرَأَةَ نُوْحٍ وَّامْرَأَةَ لُوْطٍ، كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ، فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا، وَقِيْلَ ادْخُلاَ النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা কাফিরদের জন্য নূহ্ (আ.) ও লূত্ (আ.) এর স্ত্রীদ্বয়ের দৃষ্টান্ত পেশ করেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা ছিলো আমার বান্দাহদের দু’ নেককার বান্দাহ্’র অধীন। কিন্তু তারা তাদের স্বামীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে নূহ্ (আ.) ও লূত্ (আ.) তাদেরকে আল্লাহ্’র শাস্তি থেকে কোনভাবেই রক্ষা করতে পারলোনা। বরং তাদেরকে বলা হলো: জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো’’। (তাহরীম : ১০)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ أَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ:

«وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ»

قَالَ: يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ! اشْتَرُوْا أَنْفُسَكُمْ، لاَ أُغْنِيْ عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا، يَا بَنِيْ عَبْدِ مَنَافٍ! لاَ أُغْنِيْ عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا، يَا عَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ! لاَ أُغْنِيْ عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا، وَيَا صَفِيَّةُ عَمَّةَ رَسُوْلِ اللهِ! لاَ أُغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا، وَيَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ! سَلِيْنِيْ مَا شِئْتِ مِنْ مَالِيْ، لاَ أُغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا

‘‘যখন আল্লাহ্ তা’আলা নিম্নোক্ত কোর’আনের আয়াত নাযিল করেন যার অর্থ: আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে (আখিরাতের ব্যাপারে) সতর্ক করে দিন। তখন রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে বললেন: হে ক্বুরাইশ্ বংশ! তোমরা নিজেদেরকে বাঁচাও। আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারবো না। হে আব্দে মুনাফের সন্তানরা! আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারবো না। হে ’আব্বাস বিন্ ’আব্দুল মুত্তালিব! আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারবোনা। হে সাফিয়্যাহ্! (রাসূল (সা.) এর ফুফু) আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারবোনা। হে ফাতিমাহ্! (রাসূল (সা.) এর ছোট মেয়ে) তুমি আমার সম্পদ থেকে যা চাও চাইতে পারো। কিন্তু আমি আখিরাতে তোমার জন্য কিছুই করতে পারবো না’’। [শু’আরা : ২১৪ (বুখারী, হাদীস ২৭৫৩, ৪৭৭১ মুসলিম, হাদীস ২০৬]

এমনকি আল্লাহ্ তা’আলার রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্ তা’আলার সর্বপ্রিয় বান্দাহ্ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা পরকালে কি ব্যবহার করবেন তা নিয়ে তিনি সর্বদা শঙ্কিত ছিলেন।

উম্মুল্ ’আলা’ আনসারী (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

اقْتُسِمَ الْـمُهَاجِرُوْنَ قُرْعَةً، فَطَارَ لَنَا عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُوْنٍ، فَأَنْزَلْنَاهُ فِيْ أَبْيَاتِنَا، فَوَجِعَ وَجَعَهُ الَّذِيْ تُوُفِّيَ فِيْهِ، فَلَمَّا تُوُفِّيَ وَغُسِّلَ وَكُفِّنَ فِيْ أَثْوَابِهِ، دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَقُلْتُ: رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ! فَشَهَادَتِيْ عَلَيْكَ: لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: وَمَا يُدْرِيْكِ أَنَّ اللهَ قَدْ أَكْرَمَهُ؟ فَقُلْتُ: بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَمَنْ يُكْرِمُهُ اللهُ؟ فَقَالَ: أَمَّا هُوَ فَقَدْ جَاءَهُ الْيَقِيْنُ، وَاللهِ إِنِّيْ لَأَرْجُوْ لَهُ الْـخَيْرَ، وَاللهِ مَا أَدْرِيْ وَأَنَا رَسُوْلُ اللهِ مَا يُفْعَلُ بِيْ وَلاَ بِكُمْ، قَالَتْ: فَوَ اللهِ لاَ أُزَكِّيْ أَحَدًا بَعْدَهُ أَبَدًا

‘‘মুহাজিরদেরকে লটারির মাধ্যমে বন্টন করা হয়েছিলো। আর আমাদের বন্টনে এসেছিলো ’উসমান বিন্ মায্’ঊন (রা.)। অতএব আমরা তাকে আমাদের ঘরে নিয়ে আসলাম। একদা তার এমন ব্যথা শুরু হলো যে, তাতেই তার মৃত্যু হয়ে গেলো। মৃত্যুর পর তাকে গোসল ও কাফন দেয়া হলে রাসূল (সা.) আমাদের ঘরে আসলেন। তখন আমি মৃতকে উদ্দেশ্য করে বললাম: হে আবুস্ সা-য়িব! তোমার উপর আল্লাহ্’র রহমত বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন রাসূল (সা.) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমাকে কে জানালো যে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে নিশ্চিতভাবে সম্মানিত করেছেন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল (সা.)! আমার পিতা আপনার উপর কুরবান হোক! আল্লাহ্ তা’আলা একে সম্মানিত না করলে তিনি আর কাকে সম্মানিত করবেন? রাসূল (সা.) বললেন: এর মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ্’র কসম! আমি নিশ্চয়ই তার কল্যাণই কামনা করবো। তুমি জেনে রেখো, আমি আল্লাহ্ তা’আলার কসম খেয়ে বলছি: আমি জানিনা অথচ আমি আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত রাসূল আমি ও তোমাদের সঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন কেমন আচরণ করবেন। বর্ণনাকারী উম্মুল্ ’আলা’ আন্সারী বললেন: তখনই আমি পণ করলাম যে, আল্লাহ্’র কসম! এরপর আমি কখনো কারো সম্পর্কে সাফাই গাইবোনা’’। (বুখারী, হাদীস ১২৪৩, ২৬৮৭, ৭০০৩, ৭০১৮)