ইমাম আহমাদ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
لاَ تُقَلِّدْنِيْ وَلاَ تُقَلِّدَنَّ مَالِكًا، وَلاَ الشَّافِعِيَّ، وَلاَ الْأَوْزَاعِيَّ، وَلاَ الثَّوْرِيَّ، وَخُذْ مِنْ حَيْثُ أَخَذُوْا
‘‘তুমি আমি আহমাদ্, ইমাম মালিক, শাফি’য়ী, আওযা’য়ী, সাওরী এমনকি কারোর অন্ধ অনুসরণ করো না। বরং তুমি ওখান থেকেই জ্ঞান আহরণ করো যেখান থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন এ সকল ইমামরা’’।
(ইক্ব্দুল্ জীদ্, ইবনুল্ জাওযী/মানাক্বিবুল্ ইমামি আহমাদ্ : ১৯২ ঈক্বাযুল্ হিমাম ১১৩ আল্ ইয়াওয়াক্বীতু ওয়াল্ জাওয়াহির ২/৯৬ দিরাসাতুল্ লাবীব : ৯৩ সাবীলুর্ রাসূল : ১০০)
তিনি আরো বলেন:
لَيْسَ لِأَحَدٍ مَعَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ كَلاَمٌ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা.) এর কথার পাশাপাশি আর কারোর কথা বলার কোন অধিকার থাকে না’’।
(ইক্ব্দুল্ জীদ্, আল্ ইয়াওয়াক্বীতু ওয়াল্ জাওয়াহির ২/৯৬ সাবীলুর্ রাসূল : ১০০)
তিনি আরো বলেন:
لاَ تُقَلِّدْ دِيْنَكَ أَحَدًا مِنْ هَؤُلاَءِ، مَا جَاءَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ فَخُذْ بِهِ، ثُمَّ التَّابِعِيْنَ بَعْدُ، الرَّجُلُ فِيْهِ مُخَيَّرٌ
‘‘তোমার গুরুত্বপূর্ণ ধর্মকে এদের (ইমামদের) কারোর হাতে সোপর্দ করো না। বরং তুমি রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবাদের কথানুযায়ী চলবে। তবে তাবি’য়ীনদের কথা মানার ব্যাপারে তুমি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন’’।
(ই’লামুল্ মুওয়াক্বক্বি’য়ীন, সাবীলুর্ রাসূল : ১০০)
তিনি আরো বলেন:
عَجِبْتُ لِقَوْمٍ عَرَفُوْا الإِسْنَادَ وَصِحَّتَهُ يَذْهَبُوْنَ إِلَى رَأْيِ سُفْيَانَ وَاللهُ تَعَالَى يَقُوْلُ:
«فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»
‘‘আশ্চর্য হয় ওদের জন্য যারা হাদীসের বর্ণনধারার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত। এতদসত্ত্বেও তারা তা না মেনে সুফ্ইয়ান (সাওরী) (রাহিমাহুল্লাহ) এর একান্ত ব্যক্তিগত মতামত গ্রহণ করে। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ রাসূল (সা.) এর আদেশ অমান্যকারীদের এ মর্মে সতর্ক থাকা উচিত যে, তাদের উপর নেমে আসবে বিপর্যয় বা আপতিত হবে কঠিন শাস্তি’’। (আল্ ইর্শাদ্ : ৯৭ তাইসীর : ৪৬১)
ইমাম আহমাদ্ (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন:
وَمَا الْفِتْنَةُ إِلاَّ الشِّرْكُ، لَعَلَّهُ إِذَا رَدَّ بَعْضَ قَوْلِهِ أَنْ يَّقَعَ فِيْ قَلْبِهِ شَيْءٌ مِّنَ الزَّيْغِ فَيَزِيْغُ قَلْبُهُ فَيُهْلِكُهُ
‘‘উক্ত আয়াতে ফিৎনাহ্ বলতে শির্ককেই বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত এটাই বুঝানো হচ্ছে যে, যখন কোন ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর কোন কথা প্রত্যাখ্যান করে তখন তার অন্তরে কিছুটা বক্রতা সৃষ্টি হয়। এমনকি ধীরে ধীরে তার অন্তর সম্পূর্ণরূপে বক্র হয়ে যায়। এতেই তার ধ্বংস অনিবার্য’’।
(তাইসীরুল্ ’আযীযিল্ হামীদ : ৪৬২)
তিনি উক্ত আয়াতের দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় আরো বলেন:
أَتَدْرِيْ مَا الْفِتْنَةُ؟ الْفِتْنَةُ الْكُفْرُ، قَالَ اللهُ تَعَالَى: «وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ»
‘‘তুমি জানো কি? উক্ত আয়াতে ফিৎনাহ্ বলতে কি বুঝানো হয়েছে। তিনি বলেন: উক্ত আয়াতে ফিৎনাহ্ বলতে কুফরীকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ ফিৎনাহ্ (কুফরী) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর’’। (বাক্বারাহ্ : ২১৭) (তাইসীরুল্ ’আযীযিল্ হামীদ: ৪৬২)
ইমাম আহমাদ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) ওদের প্রতি কটাক্ষ করেছেন যারা হাদীসকে বিশুদ্ধ জেনেও সুফ্ইয়ান (সাওরী) (রাহিমাহুল্লাহ্) বা অন্যান্য ইমামগণের অন্ধ অনুসরণ করে।
তারা কখনো কখনো এ বলে হাদীস মানতে অক্ষমতা প্রকাশ করে যে, হাদীস মানা না মানা গবেষণা সংক্রান্ত ব্যাপার। আর গবেষণার দরোজা বহু পূর্বেই বন্ধ হয়ে গেছে অথবা আমার ইমাম আমার চাইতে এ সম্পর্কে ভাল জানেন। তিনি জেনে শুনেই এ হাদীস গ্রহণ করেননি। সুতরাং এ ব্যাপারে ভাবনা বা গবেষণার কোন প্রয়োজন নেই অথবা গবেষণার দরোজা এখনো বন্ধ হয়নি। তবে গবেষণার জন্য এমন অনেকগুলো শর্ত রয়েছে যা এ যুগে কারোরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছেনা। যেমন: গবেষক কোর’আন ও হাদীসে বিশেষজ্ঞ হওয়া এবং উহার নাসিখ (রহিতকারী) মান্সূখ (রহিত) সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত হওয়া ; হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধ জানা ; শব্দ ও বাক্যের ইঙ্গিত, অভিব্যক্তি ও বাচনভঙ্গি সম্পর্কে সুপন্ডিত হওয়া ; আরবী ভাষা, নাহু (ব্যাকরণ), উসূল (ফিকাহ্ শাস্ত্রের মৌলিক প্রমাণ সংক্রান্ত জ্ঞান) ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখা। আরো এমন অনেকগুলো শর্ত বলা হয় যা যা আবু বকর ও ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এর মধ্যে পাওয়া যাওয়াও হয়তো বা অসম্ভব।
উক্ত শর্তসমূহ সঠিক বলে মেনে নিলেও তা শুধু ইমাম আবু হানীফা, মালিক, শাফি’য়ী ও আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহু) এর মতো প্রথম পর্যায়ের বা মহা গবেষকদের ক্ষেত্রে মেনে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু ওগুলোকে সরাসরি কোর’আন ও হাদীস মোতাবেক আমল করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে শর্ত হিসেবে মেনে নেয়া হলে তা হবে সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা’আলা, তদীয় রাসূল ও ইমামগণের উপর মারাত্মক অপবাদ। বরং একজন মু’মিন হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তির উপর ফরয এই যে, যখনই কোর’আনের কোন আয়াত অথবা রাসূল (সা.) এর বিশুদ্ধ কোন হাদীস তার কর্ণকুহরে পৌঁছুবে এবং সে তা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে তখনই সে তা নিঃসঙ্কোচে মেনে নিবে। তা যে কোন বিষয়েই হোকনা কেন এবং উহার বিপরীতে যে কেউই মত ব্যক্ত করুকনা কেন। ইহাই মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা এবং তদীয় রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) এর একান্ত নির্দেশ এবং সকল আলিম এ ব্যাপারে একমত।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«اتَّبِعُوْا مَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَآءَ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ»
‘‘তোমরা নিজ প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধানের অনুসরণ করো। তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে অনুসরণীয় বন্ধু বা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না। তবে তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো’’। (আ’রাফ : ৩)
সকল হিদায়াত একমাত্র রাসূল (সা.) এর আনুগত্যে। অন্য কারোর আনুগত্যে নয়। সে যত বড়ই হোক না কেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَإِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْا، وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ إِلاَّ الْبَلاَغُ الْـمُبِيْنُ»
‘‘যদি তোমরা তাঁর (আল্লাহ্) রাসূলের আনুগত্য করো তাহলে তোমরা সত্যিকারার্থে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। রাসূলের কর্তব্যই তো হচ্ছে সকলের নিকট আল্লাহ্ তা’আলার সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া’’। (নূর : ৫৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূলের আনুগত্যে হিদায়াত রয়েছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু মাযহাবীরা তাতে হিদায়াত দেখতে পাচ্ছে না। বরং তাদের অধিকাংশের ধারণা, রাসূল (সা.) এর হাদীস সরাসরি অবলম্বনে সমূহ গোমরাহির নিশ্চিত সম্ভাবনা এবং একান্তভাবে মাযহাব অনুসরণে সার্বিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাইতো তারা নির্দিষ্ট কোন মাযহাব পরিত্যাগ করাকে মারাত্মক অপরাধ ও চরম গোমরাহির কারণ বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
ইমাম আহমাদ্ (রাহিমাহুল্লাহ) এর উপরোল্লিখিত বাণীতে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, কারোর নিকট রাসূল (সা.) এর সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছা পর্যন্ত ততক্ষণ কোন ইমামের অন্ধ অনুসরণ (তাক্বলীদ) সত্যিকারার্থে দোষনীয় নয়। বরং দোষনীয় হচ্ছে কারোর নিকট রাসূল (সা.) এর সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছার পরও পূর্ব ভুল সিদ্ধান্তের উপর অটল ও অবিচল থাকা। দোষনীয় হচ্ছে ফিকাহ্’র কিতাবসমূহ জীবন চালনার জন্যে সম্পূর্ণরূপে যথেষ্ট মনে করে কোর’আন ও হাদীসের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোর’আন ও হাদীস অধ্যয়ন করা হলেও তা একমাত্র বরকত হাসিল অথবা মাযহাবী অপতৎপরতা দৃঢ়তর করা তথা কোর’আন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দেয়ার উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। একান্ত শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়। শুধুমাত্র চাকুরির জন্যে। শরীয়ত শেখার জন্যে নয়। তাদের সর্বপ্রথম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া উচিৎ যে, নিম্নোক্ত আয়াতগুলোর অন্তর্ভুক্ত তারাইতো নয়? না অন্য কেউ।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَقَدْ آتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا، مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا، خَالِدِيْنَ فِيْهِ وَسَآءَ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلًا»
‘‘আমি আমার পক্ষ থেকে আপনাকে কোর’আন মাজীদ দিয়েছি উপদেশ স্বরূপ। যে ব্যক্তি তা হতে বিমুখ হবে সে কিয়ামতের দিন গুনাহ্’র মহা বোঝা বহন করবে। এমনকি সে স্থায়ী শাস্তির সম্মুখীনও হবে এবং এ বোঝা তার জন্য দুঃখ ও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে’’। (ত্বা-হা: ৯৯-১০১)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى، قَالَ رَبِّ لِـمَ حَشَرْتَنِيْ أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا، قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى، وَكَذَلِكَ نَجْزِيْ مَنْ أَسْرَفَ وَلَـمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى»
‘‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন-যাপন হবে কঠিন ও সংকুচিত এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ রূপে। তখন সে বলবে: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে কেন অন্ধ করে উঠালেন? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন: এ ভাবেই। কারণ, দুনিয়াতে তোমার নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী এসেছিলো তখন তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। সে ভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হলো। এ ভাবেই আমি হঠকারী ও প্রভুর নিদর্শনে অবিশ্বাসীকে শাস্তি দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই পরকালের শাস্তি কঠিন ও চিরস্থায়ী’’। (ত্বা-হা : ১২৪-১২৭)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কেই বলেন:
يُوْشِكُ أَنْ تَنْزِلَ عَلَيْكُمْ حِجَارَةٌ مِّنَ السَّمَاءِ! أَقُوْلُ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ! وَتَقُوْلُوْنَ: قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ
’’অচিরেই তোমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে। আমি বলছি: রাসূল (সা.) বলেছেন। অথচ তোমরা বলছো: আবু বক্র (রা.) বলেছেন, ’উমর (রা.) বলেছেন’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৯৭)
শায়েখ আব্দুর রহমান বিন্ হাসান (রাহিমাহুল্লাহ) প্রতিটি মুসলমানের সঠিক কর্তব্য সম্পর্কে বলেন:
الْوَاجِبُ عَلَى كُلِّ مُكَلَّفٍ إِذَا بَلَغَهُ الدَّلِيْلُ مِنْ كِتَابِ اللهِ وَسُنَّةِ رَسُوْلِهِ وَفَهِمَ مَعْنَى ذَلِكَ أَنْ يَنْتَهِيَ إِلَيْهِ وَيَعْمَلَ بِهِ، وَإِنْ خَالَفَهُ مَنْ خَالَفَهُ
‘‘প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য এই যে, যখন তার নিকট কোর’আন ও হাদীসের সঠিক প্রমাণ পৌঁছুবে এবং সে তা বুঝতে সক্ষম হবে তখন সে আর সামনে পা বাড়াবেনা বরং তা নিঃসঙ্কোচে মেনে নিবে। এর বিরোধিতায় যে কোন ব্যক্তিই মত পোষণ করুকনা কেন’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৯৭)
তিনি আরো বলেন:
يَجِبُ عَلَى مَنْ نَصَحَ نَفْسَهُ إِذَا قَرَأَ كُتُبَ الْعُلَمَاءِ وَنَظَرَ فِيْهَا وَعَرَفَ أَقْوَالَـهُمْ أَنْ يَعْرِضَهَا عَلَى مَا فِيْ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ ؛ فَإِنَّ كُلَّ مُجْتَهِدٍ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَمَنْ تَبِعَهُ وَانْتَسَبَ إِلَيْهِ يَذْكُرُ دَلِيْلَهُ، وَالْـحَقُّ فِيْ الْـمَسْأَلَةِ وَاحِدٌ، وَالأَئِمَّةُ مُثَابُوْنَ عَلَى اجْتِهَادِهِمْ ؛ فَالْـمُنْصِفُ يَجْعَلُ النَّظْرَ فِيْ كَلاَمِهِمْ وَتَأَمُّلَهُ طَرِيْقًا إِلَى مَعْرِفَةِ الْـمَسَائِلِ وَاسْتِحْضَارِهَا، وَتَمْيِيْزِ الصَّوَابِ مِنَ الْـخَطَأِ بِالأَدِلَّةِ الَّتِيْ يَذْكُرُهَا الْـمُسْتَدِلُّوْنَ، وَيَعْرِفُ بِذَلِكَ مَنْ هُوَ أَسْعَدُ بِالدَّلِيْلِ مِنَ الْعُلَمَاءِ فَيَتَّبِعُهُ
‘‘প্রত্যেক নিজ হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কর্তব্য এই যে, যখন সে কিতাব পড়ে কোন আলিমের মতামত জানবে তখন তা কোর’আন ও হাদীসের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিবে। কারণ, যে কোন গবেষক বা তার অনুসারীরা যখনই কোন মাস্আলা উল্লেখ করেন সাথে সাথে তার প্রমাণও উল্লেখ করে থাকেন। সুতরাং আমাদের সক্ষমদের কর্তব্য, প্রতিটি মাস্আলার সঠিক দৃষ্টিকোণ জেনে নেয়া। কারণ, যে কোন মাস্আলার সঠিক দৃষ্টিকোণ সবেমাত্র একটি। দু’টো বা ততোধিক নয়। তবে ইমামগণ সর্বাবস্থায় গবেষণার সাওয়াবের অধিকারী হবেন। চাই তিনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হোন বা নাই হোন। অতএব, ইনসাফ অন্বেষী ব্যক্তি সে, যে গবেষকদের মতামতে গভীর দৃষ্টি আরোপ করে কোর’আন ও হাদীস সম্মত সঠিক মত জেনে নিবে এবং জানবে কোন্ আলিমের মত নিখুঁত প্রমাণভিত্তিক তাহলে সে তা মেনে নিবে। এভাবেই ক্ষণকালের মধ্যে তার নিকট পরীক্ষিত এক ধর্মীয় জ্ঞানভান্ডার সঞ্চিত হবে’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৯৭)
আব্দুর রহমান বিন্ হাসান (রাহিমাহুল্লাহ) আল্লাহ্’র বাণী:
«وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَـمُشْرِكُوْنَ»
‘‘তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে মুশ্রিক হয়ে যাবে’’। (আন্’আম : ১২১)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন:
وَهَذَا وَقَعَ فِيْهِ كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ مَعَ مَنْ قَلَّدُوْهُمْ لِعَدَمِ اِعْتِبَارِهِمِ الدَّلِيْلَ إِذَا خَالَفَ الْـمُقَلَّدَ، وَهُوَ مِنْ هَذَا الشِّرْكِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَّغْلُوْ فِيْ ذَلِكَ وَيَعْتَقِدُ أَنَّ الأَخْذَ بِالدَّلِيْلِ وَالْـحَالُ هَذِهِ يُكْرَهُ أَوْ يَحْرُمُ فَعَظُمَتِ الْفِتْنَةُ! وَيَقُوْلُ: هُوَ أَعْلَمُ مِنَّا بِالأَدِلَّةِ
‘‘এ জাতীয় শির্কে মায্হাব অনুসারীদের অনেকেই লিপ্ত। কারণ, তারা নিজ ইমামের মত পরিপন্থী কোন প্রমাণ গ্রহণ করেনা যতই তা বিশুদ্ধ প্রমাণিত হোকনা কেন। তাদের কট্টরপন্থীরাতো এমনও বিশ্বাস করে যে, ইমাম সাহেবের মত পরিপন্থী কোন প্রমাণ গ্রহণ করা মাকরূহ বা হারাম। এমতাবস্থায় বিপর্যয় আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তারা এমনও বলে থাকে যে, ইমাম সাহেব দলীল সম্পর্কে আমাদের চাইতে কম অবগত ছিলেন না’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৯৭-৯৮)
শায়েখ মোহাম্মদ বিন্ আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
الْـمَسْأَلَةُ الْـخَامِسَةُ: تَغَيُّرُ الأَحْوَالِ إِلَى هَذِهِ الْغَايَةِ، حَتَّى صَارَ عِنْدَ الأَكْثَرِ عِبَادَةُ الرُّهْبَانِ هِيَ أَفْضَلُ الأَعْمَالِ، وَتُسَمَّى الْوِلاَيَةَ، وَعِبَادَةُ الأَحْبَارِ هِيَ الْعِلْمُ وَالْفِقْهُ، ثُمَّ تَغَيَّرَتِ الْـحَالُ إِلَى أَنْ عُبِدَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَيْسَ مِنَ الصَّالِـحِيْنَ، وَعُبِدَ بِالْـمَعْنَى الثَّانِيْ مَنْ هُوَ مِنَ الْـجَاهِلِيْنَ
‘‘পঞ্চম মাস্আলা এই যে, অবস্থার পরিবর্তন এতটুকু পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, অনেকেই বুযুর্গদের উপাসনাকে উৎকৃষ্ট আমল বলে মনে করছে। এমনকি উহাকে বিলায়াত (বুযুর্গী) বলতে এতটুকুও সঙ্কোচ করছেনা। অনুরূপভাবে আলিমদের উপাসনাকে ইল্ম তথা ফিক্হ বলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে অবস্থার এতখানি অবনতি ঘটেছে যে, বুযুর্গ নামধারী ভন্ডদের এবং আলিম নামধারী মূর্খদের পূজা শুরু হয়েছে’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৯৮)
অতএব মৃত ব্যক্তিদের ওয়াসীলা গ্রহণ, যে কোন সমস্যার সমাধান কল্পে তাদেরকে আহবান, সূফীদের পথ ও মত অনুসরণ, জন্মোৎসব উদ্যাপন এ জাতীয় সকল ভ্রষ্টতা, বিদ্’আত ও কুসংস্কারের ক্ষেত্রে ভ্রষ্ট আলিমদের অনুসরণ তাদেরকে প্রভু মানার শামিল। ভ্রষ্ট আলিমরা ইসলাম ধর্মে এমন কিছু কর্মকান্ড আবিষ্কার করেছে যার লেশমাত্রও কোর’আন বা হাদীসে খুঁজে পাওয়া যায়না। পরিশেষে ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিদ্’আতকে ধর্ম পালনের মূল মানদন্ড বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। যা পালন না করলে সে ব্যক্তিকে ধর্ম ত্যাগী বা আলিম-বুযুর্গদের চরম শত্রু ভাবা হচ্ছে।
গবেষক ইমামদের ভুল গবেষণা মানা যদি নাজায়েয হয়ে থাকে অথচ তারা অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য একটি সাওয়াব পাচ্ছেন তাহলে আক্বীদার বিষয়ে (যাতে গবেষণার সামান্যটুকুও অবকাশ নেই) ভ্রষ্ট আলিমদের অনুসরণ কিভাবে জায়েয হতে পারে। মূলতঃ ব্যাপারটি এমন যেমনটি আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هَذَا الْقُرْآنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ، وَلَئِنْ جِئْتَهُمْ بِآيَةٍ لَيَقُوْلَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنْ أَنْتُمْ إِلاَّ مُبْطِلُوْنَ، كَذَلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلَى قُلُوْبِ الَّذِيْنَ لاَ يَعْلَمُوْنَ، فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَلاَ يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لاَ يُوْقِنُوْنَ»
‘‘আমি মানুষকে বুঝানোর জন্যে এ কোর’আন মাজীদে সর্ব প্রকারের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি। আপনি যদি তাদের সম্মুখে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন তখন কাফিররা নিশ্চয়ই বলবে: তোমরা অবশ্যই মিথ্যাশ্রয়ী। এভাবেই আল্লাহ্ তা’আলা মূর্খদের অন্তরে মোহর মেরে দেন। অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলার প্রতিশ্রুতি সত্য। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন যে, অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে’’। (রূম : ৫৮-৬০)
সর্ব বিষয়ে আলিমদের কট্টর অন্ধ অনুসারীদের পাশাপাশি আরেকটি দল রয়েছে যারা সবার উপর গবেষণা ওয়াজিব বলে মনে করে। যদিও সে গন্ডমূর্খ হোকনা কেন। তারা ফিক্হের কিতাব পড়া হারাম মনে করে। তারা চায় মূর্খরাও যেন কোর’আন ও হাদীস থেকে মাস্আলা বের করে নেয়। এটি চরম কট্টরতা বৈ কি? ভয়ঙ্করতার বিবেচনায় এরাও প্রথমোক্তদের চাইতে কম নয়। অতএব, এ ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অনুসরণ করাই সর্বোত্তম। অর্থাৎ আমরা গবেষকদের অন্ধ অনুসরণও করবোনা আবার তাদের কোর’আন-হাদীস সম্মত জ্ঞানগর্ব আলোচনাও প্রত্যাখ্যান করবোনা। বরং আমরা তাদের গবেষণা গভীরভাবে অধ্যয়ন করে কোর’আন ও হাদীস বুঝার সঠিক পথ খুঁজে পেতে পারি।