বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

মানতের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন কিছু মানত করাকে বুঝানো হয়।

যে কোন উদ্দেশ্য সফলের জন্য কোন কিছু মানত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।

আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নেক বান্দাহদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

«يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ»

‘‘তাদের বৈশিষ্ট্য হলো: তারা তাদের মানত পূরা করে’’। (ইন্সান/দাহর : ৭)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَلْيُوْفُوْا نُذُوْرَهُمْ»

‘‘তারা যেন তাদের মানত পুরা করে নেয়’’। (হাজ্জ : ২৯)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَمَآ أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذْرٍ فَإِنَّ اللهَ يَعْلَمُهُ»

‘‘তোমরা যা ব্যয় করো বা মানত করো তা অবশ্যই আল্লাহ্ তা’আলা জানেন’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭০)

উক্ত আয়াতসমূহের প্রথম আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মানত পুরা করার কারণে তাঁর নেক বান্দাহ্দের প্রশংসা করেছেন। আর কারোর প্রশংসা শুধুমাত্র আবশ্যকীয় বা পছন্দনীয় কাজ সম্পাদন অথবা নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের কারণেই হয়ে থাকে। দ্বিতীয় আয়াতে মানত পুরা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা বা তদীয় রাসূল (সা.) এর আদেশ মান্য করার নামই তো হচ্ছে ইবাদাত। তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মানত সম্পর্কে অবগত আছেন এবং উহার প্রতিদান দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। ইহা যে কোন মানত ইবাদাত হওয়াই প্রমাণ করে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইবাদাত বলতেই তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই হতে হবে। অন্য কারোর জন্য নয়। অন্য কারোর জন্য সামান্যটুকু ইবাদাত ব্যয় করার নামই তো শির্ক। অতএব কারোর জন্য কোন কিছু মানত করা সত্যিই শির্ক। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

বর্তমান যুগে যারা ওলী-বুযুর্গদের কবরের জন্য নিয়ত বা মানত করে যাচ্ছে তাদের ও মক্কার মুশ্রিকদের মধ্যে সামান্যটুকুও ব্যবধান নেই।

আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন:

«وَجَعَلُوْا لِلهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْـحَرْثِ وَالأَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هَذَا لِلهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَذَا لِشُرَكَآئِنَا، فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمْ فَلاَ يَصِلُ إِلَى اللهِ وَمَا كَانَ لِلهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَى شُرَكَآئِهِمْ، سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ»

‘‘মুশ্রিকরা আল্লাহ্ তা’আলার দেয়া শস্য ও পশু সম্পদের একাংশ তাঁর জন্যই নির্ধারিত করছে এবং তাদের ধারণানুযায়ী বলছে: এ অংশ আল্লাহ্ তা’আলার জন্য আর এ অংশ আমাদের শরীকদের। তবে তাদের শরীকদের অংশ কখনো আল্লাহ্ তা’আলার নিকট পৌঁছেনা। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তা’আলার অংশ তাদের শরীকদের নিকট পৌঁছে যায়। এদের ফায়সালা কতোই না নিকৃষ্ট’’। (আন্’আম : ১৩৬)

মূলতঃ মানত দু’ প্রকার: কোন উদ্দেশ্য হাসিলের শর্ত ছাড়াই এমনিতেই আল্লাহ্ তা’আলার জন্য কোন ইবাদাত মানত করা। আর অন্যটি হচ্ছে কোন উদ্দেশ্য হাসিলের শর্তে আল্লাহ্ তা’আলার জন্য কোন কিছু মানত করা। এ দু’য়ের মধ্যে প্রথমটিই প্রশংসনীয়। আর এ ধরনের মানত পুরা করাই নেককারদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয়টি নয়। বরং তা খুবই নিন্দনীয়। তাই তো রাসূল (সা.) এ জাতীয় মানত করতে নিষেধ করেছেন। তবে এরপরও কেউ এ ধরনের মানত করে ফেললে সে তা পুরা করতে অবশ্যই বাধ্য।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَنْذُرُوْا، فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِيْ مِنَ الْقَدْرِ شَيْئًا، وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيْلِ

‘‘তোমরা মানত করো না। কারণ, মানত কারোর ভাগ্যলিপিকে এতটুকুও পরিবর্তন করতে পারে না। বরং মানতের মাধ্যমে কৃপণের পকেট থেকে কিছু বের করে নেয়া হয়। (যা সে এমনিতেই আদায় করতো না’’।) (মুসলিম, হাদীস ১৬৪০)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: لاَ يَأْتِيْ النَّذْرُ عَلَى ابْنِ آدَمَ بِشَيْءٍ لَمْ أُقَدِّرْهُ عَلَيْهِ، وَلَكِنَّهُ شَيْءٌ أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيْلِ، يُؤْتِيْنِيْ عَلَيْهِ مَا لاَ يُؤْتِيْنِيْ عَلَى الْبُخْلِ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: মানতের মাধ্যমে আদম সন্তান এমন কিছু অর্জন করতে পারে না যা আমি তার জন্য ইতিপূর্বে বরাদ্দ করিনি। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণের পকেট থেকে কিছু বের করে আনা হয়। কারণ, সে মানতের মাধ্যমেই আমাকে এমন কিছু দেয় যা সে কার্পণ্যের কারণে ইতিপূর্বে আমাকে দেয়নি’’। (আহমাদ্ ২/২৪২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

النَّذْرُ نَذْرَانِ: فَمَا كَانَ لِلهِ فَكَفَّارَتُهُ الْوَفَاءُ، وَمَا كَانَ لِلشَّيْطَانِ فَلاَ وَفَاءَ فِيْهِ، وَعَلَيْهِ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ

‘‘মানত দু’ প্রকার। তার মধ্যে যা হবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য তার কাফ্ফারা হবে শুধু তা পুরা করা। আর যা হবে শয়তানের জন্য তথা শরীয়ত বিরোধী তা কখনোই পুরা করতে হবে না। তবে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কসমের কাফফারা দিতে হবে’’।

(ইবনুল জারূদ্/মুন্তাক্বা, হাদীস ৯৩৫ বায়হাক্বী ১০/৭২)