(২) যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত :

সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে যাওয়ার সাথে সাথে যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। আর কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে শেষ হয়। কিন্তু যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করার কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-

(১) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا كَانَ الْفَيْء ذِرَاعًا وَنِصْفًا إِلَى ذِرَاعَيْنِ فَصَلُّوْا الظُّهَْرَ.

(১) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন ছায়া দেড় হাত থেকে দুই হাত হয়, তখন তোমরা যোহরের ছালাত আদায় কর।[1] অনেকে উক্ত বর্ণনা পেশ করে যোহরের ছালাত দেরীতে আদায় করার দাবী করেন।

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব নামে একজন রাবী আছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, হায়ছামীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[2] ইমাম হায়ছামী বলেন, ‘এর সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আছে, সে মিথ্যুক’।[3]

(২) عَنْ عَبْدِ الْعَزِيْزِ بْنِ رَفِيْعٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ عَجِّلُوْا صلَاةَ النَّهَرِ فِىْ يَوْمِ غَيْمٍ وَأخِّرُوْا الْمَغْرِبَ.

(১) আব্দুল আযীয ইবনু রাফী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মেঘলা দিনে দিনের ছালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর এবং মাগরিব দেরীতে আদায় কর।[4]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি দুর্বল। আব্দুল আযীয ইবনু রাফী মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছে।[5]

যোহরের ছালাতের সঠিক সময় :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُوْلِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ ..

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে যাবে। কোন ব্যক্তির ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ আছরের সময় হওয়া পর্যন্ত...।[6]

عَنْ أَبِىْ بَرْزَةَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّى الظُّهْرَ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَيُصَلِّى الْعَصْرَ وَإِنَّ أَحَدَنَا لَيَذْهَبُ إِلَى أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَيَرْجِعُ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ...

আবু বারযাহ (রাঃ) বলেন, যখন সূর্য ঢুলে পড়ত তখন রাসূল (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন। আর আছর ছালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ ছালাত আদায় করে মদ্বীনার দূর প্রান্তে চলে যেত এবং ফিরে আসত অথচ সূর্য উজ্জ্বল থাকত।[7]

জ্ঞাতব্য : যোহরের ছালাত সূর্য ঢুলে পড়ার পর আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করাই শরী‘আতের নির্দেশ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে যোহরের ছালাত একটু দেরী করে আদায় করতে বলা হয়েছে। সেই হাদীছকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুছল্লী দেরী করে আদায় করে থাকে। এটা মূলতঃ মাযহাবী গোঁড়ামী। কারণ সারা বছর দেরী করতে বলা হয়নি।

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ.

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ।[8]

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ الْغِفَارِىِّ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ فِىْ سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِىُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَىْءَ التُّلُوْلِ فَقَالَ النَّبِىُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوْا بِالصَّلاَةِ.

আবু যার গেফারী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। মুওয়াযযিন যোহরের আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ঠান্ডা কর। অতঃপর যখন আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন আবার বললেন, তালূল দেখা পর্যন্ত দেরী কর। অতঃপর তিনি বললেন, গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। সুতরাং যখন গরম বেশী হবে তখন তোমরা ছালাত দেরী করে পড়।[9]

সুধী পাঠক! হাদীছের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সারা বছর এদেশে যোহরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এটা সুন্নাতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার শামিল। রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসারী হিসাবে একজন মুছল্লীর পক্ষে এভাবে যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করা কি উচিৎ? গ্রীষ্মকালের হাদীছের আলোকে সে কি সারা বছর দেরী করে আদায় করবে? কখনোই নয়।

[1]. ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ১/১৮৩; উকাইলী, আয-যু‘আফা ১/১১৮; ইবনু আদী ১/৪৩৫।

[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯৭; যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৪; মিশকাত হা/৫৮৫; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৪।

[3]. فيه أصرم بن حوشب وهو كذاب -মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩০৬; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফী আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৩৫।

[4]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬২৮৮; আবুদাঊদ, আল-মারাসীল হা/১৩।

[5]. আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮৫৬, ৮/৩১৭ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৪।

[6]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[7]. আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ; বুখারী হা/৫৪১ ও ৭৭১।

[8]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৮, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫১১, ২/১০ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; মিশকাত হা/৫৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৩, ২/১৭৪ পৃঃ।

[9]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৯, ১/৭৬ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৩১।