আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ একই ছালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই স্থানে একই ছালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে। কোন স্থানে একাধিক মসজিদ থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না; বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতে ছালাত আদায় করার যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা একেবারে ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা। উল্লেখ্য যে, অনেক মসজিদে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই আযান দেয়া হয়। এটা অতিরিক্ত পরহেযগারিতা ও বাড়াবাড়ি। উক্ত অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
(১) ফজর ছালাতের ওয়াক্ত :
ছুবহে ছাদিকের পর হতে ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়।[1] সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।[2] আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম হিসাবে[3] রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ দলীল নেই। মূলতঃ ছহীহ হাদীছের মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে দেরী করে ছালাত আদায় করা হয়। অনেক মসজিদে ফর্সা হলে ছালাত শুরু করা হয় এবং বিদ্যুৎ বা আলো বন্ধ করে কৃত্রিম অন্ধকার তৈরি করে ছালাত আদায় করা হয়। এটা শরী‘আতের সাথে প্রতারণা করার শামিল। নিম্নের জাল বর্ণনাটি লক্ষণীয়-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ بَعَثَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ يَا مُعَاذُ إِذَا كَانَ فِى الشِّتَاءِ فَغَلِّسْ بِالْفَجْرِ وَأَطِلِ الْقِرَاءَةَ قَدْرَ مَا يُطِيْقُ النَّاسُ وَلا تُمِلَّهُمْ وَإِذَا كَانَ الصَّيْفُ فَأَسْفِرْ بِالْفَجْرِ فَإِنَّ اللَّيْلَ قَصِيْرٌ وَالنَّاسُ يَنَامُوْنَ فَأَمْهِلْهُمْ حَتَّى يُدْرِكُوْا.
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি বলে দিলেন, হে মু‘আয! যখন শীতকাল আসবে তখন ফজর ছালাত অন্ধকারে পড়বে এবং মানুষের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে ক্বিরাআত লম্বা করবে। তাদের উপর কঠিন করো না। আর যখন গ্রীষ্মকাল আসবে, তখন ফজরের ছালাত ফর্সা করবে। তখনকার রাত যেহেতু ছোট, আর মানুষ যেহেতু ঘুমায় সেহেতু তাদেরকে অবকাশ দিবে, যেন তারা ছালাত পায়।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে মিনহাল ইবনুল জার্রাহ নামক একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম বলেছেন, সে অস্বীকৃত রাবী। ইবনু হিববান বলেছেন, সে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করত এবং মদ পান করত।[5] অতএব উক্ত হাদীছের আলোকে ফজরের ছালাত দেরী করে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু বর্ণনাটি জাল।
ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা :
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ.
‘রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর। কারণ নেকীর জন্য উহা সর্বাধিক উত্তম।[6] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কিছু যঈফ হাদীছও আছে।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন,
أَسْفِرْ بِصَلاَةِ الصُّبْحِ حَتىَّ يَرَىَ الْقَوْمُ مَوَاقِعَ نَبْلِهِمْ.
‘তুমি ফজর ছালাতের মাধ্যমে ফর্সা কর। যতক্ষণে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দেখতে পায়’।[8] উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেন, وَهَذَا إِسْنَادٌ صَحِيْحٌ إِنْ شَاءَ اللهُ ‘ইনশাআল্লাহ এই হাদীছের সনদ ছহীহ’।[9]
উক্ত হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে। কারণ এটাই সর্বোত্তম। ‘হেদায়া’ কিতাবে প্রথম আলোচনায় সঠিক সময় উল্লেখ করা হয়েছে।[10] কিন্তু পরে পৃথক আলোচনায় বলা হয়েছে, وَيَسْتَحِبُّ الْإِسْفَارُ بِالْفَجْرِ‘ফর্সা করে ফজর ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব’।[11] অথচ উক্ত ব্যাখ্যা চরম বিভ্রান্তিকর এবং ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধী। কারণ-
(ক) ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন,
قَالَ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ مَعْنَى الْإِسْفَارِ أَنْ يَّضِحَ الْفَجْرُ فَلَا يُشَكَّ فِيْهِ وَلَمْ يَرَوْا أَنَّ مَعْنَى الْإِسْفَارِ تَأْخِيْرُ الصَّلَاةِ.
‘ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব বলেন, ‘ইসফার’ হল, ফজর প্রকাশিত হওয়া, যাতে কোন সন্দেহ না থাকে। তারা কেউ বর্ণনা করেননি যে, ইসফার অর্থ ছালাত দেরী করে পড়া।[12]
(খ) ইমাম ত্বাহাবী (২৩৯-৩২১ হিঃ) বলেন,
يَنْبَغِى الدُّخُوْلُ فِي الْفَجْرِ فِىْ وَقْتِ التَّغْلِيْسِ وَالْخُرُوْجُ مِنْهَا فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ عَلَى مُوَافَقَةِ مَا رَوَيْنَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ وَأَصْحَابِهِ وَهُوَ قَوْلُ أَبِىْ حَنِيْفَةَ وَأَبِىْ يُوْسُفَ وَمُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى.
‘(উক্ত হাদীছের অর্থ হল) অন্ধকারে ফজরের ছালাত শুরু করা এবং ফর্সা হলে শেষ করা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেছি। আর সেটাই আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কথা’। তিনি আরো বলেন,
أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ أَيْ أَطِيْلُوا الْقِرَاءَةَ فِيْهَا لَيْسَ ذَلِكَ عَلَي أَنْ يَّدْخُلُوْا فِيْهَا فِىْ آخِرِ وَقْتِ الْإِسْفَارِ وَلَكِنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَا فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ.
‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর’ অর্থাৎ ফজরের ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা কর। এর অর্থ এটা নয় যে, তারা যেন ফর্সা হওয়ার সময় ছালাতে প্রবেশ করে। বরং ফর্সা হওয়ার সময় তারা ছালাত থেকে বের হবে’।[13]
(গ) আলবানী বলেন,
بَلِ الْمَعْنىَ الْذِىْ يَدُلُّ عَلَيْهِ مَجْمُوْعُ أَلْفَاظِ الْحَدِيْثِ إِطَالَةَ الْقِرَاءَةِ فِي الصَّلاَةِ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْهَا فِي الْإِسْفَارِ وَمَهْمَا أَسْفَرَ فَهُوَ أَفْضَلُ وَأَعْظَمُ لِلْأَجْرِ كَمَا هُوَ صَرِيْحُ بَعْضِ الْأَلْفَاظِ الْمُتَقَدَّمَةِ فَلَيْسَ مَعْنىَ الْإِسْفَارِ إِذَنْ هُوَ الدُّخُوْلُ فِي الصَّلاَةِ فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ كَمَا هُوَ الْمَشْهُوْرُ عَنِ الْحَنَفِيَّةِ.
‘হাদীছের শব্দ সমূহ একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এর অর্থ হবে- ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ছালাতের ক্বিরাআত লম্বা করা। আর এভাবে ফর্সা করাই সর্বোত্তম এবং নেকীর দিক থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। যেমনটি পূর্বের শব্দগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ‘ইসফার’ অর্থ এটা নয় যে, ফর্সা করে ছালাত শুরু করতে হবে, যেমনটি হানাফীদের মাঝে প্রচলিত আছে’।[14]
অতএব ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দেরীতে ফজর ছালাত আদায় করা মহা অন্যায়। ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ (রহঃ)ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলীয় কারণে কুরআন-হাদীছের অর্থ বিকৃতি করা আরো বড় অপরাধ। তাছাড়া ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতে ৬০-১০০ আয়াত পাঠ করতেন।[15] যদি ফর্সা হওয়ার পর ছালাত শুরু করা হয়, আর ৬০ থেকে ১০০ টি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সূর্য উঠতে কতক্ষণ বাকী থাকবে?
ফজর ছালাতের সঠিক সময় :
রাসূল (ছাঃ) কোন্ সময় ফজরের ছালাত আদায় করতেন, তা নিম্নের হাদীছগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
(1) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُصَلِّي الصُّبْحَ فَيَنْصَرِفُ النِّسَاءُ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوْطِهِنَّ مَا يُعْرَفْنَ مِنْ الْغَلَسِ.
(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মহিলারা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।[16]
(2) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّي الصُّبْحَ بِغَلَسٍ فَيَنْصَرِفْنَ نِسَاءُ الْمُؤْمِنِيْنَ لَا يُعْرَفْنَ مِنْ الْغَلَسِ أَوْ لَا يَعْرِفُ بَعْضُهُنَّ بَعْضًا.
(২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ছাঃ) অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুমিন মহিলারা ছালাত শেষ করে চলে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না অথবা পরস্পরকে তারা চিনতে পারত না।[17]
(3) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنَّ نِسَاءُ الْمُؤْمِنَاتِ يَشْهَدْنَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَاةَ الْفَجْرِ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوْطِهِنَّ ثُمَّ يَنْقَلِبْنَ إِلَى بُيُوْتِهِنَّ حِيْنَ يَقْضِيْنَ الصَّلَاةَ لَا يَعْرِفُهُنَّ أَحَدٌ مِنْ الْغَلَسِ.
(৩) আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুমিন মহিলারা চাদর আবৃত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাতে উপস্থিত হত। অতঃপর যখন ছালাত শেষ হত, তখন তারা তাদের বাড়ীতে ফিরে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।[18]
(4) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا زَالَتْ الشَّمْسُ وَالْعَصْرَ بَيْنَ صَلَاتَيْكُمْ هَاتَيْنِ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتْ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ وَالصُّبْحَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ إِلَى أَنْ يَنْفَسِحَ الْبَصَرُ.
(৪) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢুলে যেত। আর আছরের ছালাত আদায় করতেন এই দুই সময়ের মাঝখানে। যখন সূর্য ডুবে যেত তখন মাগরিবের ছালাত আদায় করতেন। আর শাফাক্ব ডুবে গেলে এশার ছালাত আদায় করতেন। ফজরের ছালাত আদায় করতেন যখন ফজর উদিত হত তখন থেকে দৃষ্টি প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত।[19]
(5) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ سَأَلْنَا جَابِرًا عَنْ وَقْتِ صَلاَةِ النَّبِىِّ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّى الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوْا أَخَّرَ وَالصُّبْحَ بِغَلَسٍ.
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমরা একদা জাবের (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি দুপুরে যোহরের ছালাত পড়তেন, আছর পড়তেন যখন সূর্য পরিষ্কার থাকত, সূর্য ডুবে গেলে মাগরিব পড়তেন। আর এশা পড়তেন যখন মানুষ বেশী হত তখন তাড়াতাড়ি পড়তেন এবং লোক কম হলে দেরীতে পড়তেন। আর ফজর ছালাত আদায় করতেন অন্ধকারে।[20] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
(6) وَكَانَ يُصَلِّى الصُّبْحَ وَمَا يَعْرِفُ أَحَدُنَا جَلِيْسَهُ الَّذِىْ كَانَ يَعْرِفُهُ وَكَانَ يَقْرَأُ فِيْهَا مِنَ السِّتِّيْنَ إِلَى الْمِائَةِ.
(৬) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত এমন সময় পড়তেন, যখন আমাদের কেউ পার্শ্বে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত না, যাকে সে আগে থেকেই চিনে। তিনি ফজর ছালাতে ৬০ থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করতেন।[21] অন্য হাদীছে এসেছে,
(7) وَصَلَّى الصُّبْحَ مَرَّةً بِغَلَسٍ ثُمَّ صَلَّى مَرَّةً أُخْرَى فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ كَانَتْ صَلاَتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ التَّغْلِيْسَ حَتَّى مَاتَ وَلَمْ يَعُدْ إِلَى أَنْ يُسْفِرَ.
(৭) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত একবার অন্ধকারে পড়েছিলেন। অতঃপর একবার পড়তে পড়তে ফর্সা করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত ছিল অন্ধকারে। তিনি আর ফর্সা করতেন না।[22] অর্থাৎ তিনি ছালাত অধিক লম্বা করতেন না।
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, একবার তিনি দীর্ঘ ক্বিরাআত করে ফর্সা করেছিলেন। যা সর্বাধিক উত্তম। এরপর থেকে অন্ধকার থাকতেই ছালাত শেষ করতেন।
সুধী পাঠক! উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ফজরের ছালাত অন্ধকারেই আদায় করতে হবে। তাই ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করা সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করা ছাড়া কিছু নয়। জানা আবশ্যক যে, ফজরের ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ছালাত। এই ছালাত সঠিক সময়ে আদায় করা প্রত্যেকের জন্যই অপরিহার্য। তাই আপনি একজন মুছল্লী হিসাবে আপনার করণীয় নির্ধারণ করুন। আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার প্রস্ত্ততি আপনিই গ্রহণ করুন।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৯, ২/১৮ পৃঃ) ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১, পৃঃ ৬১।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬, ১/৬১ পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭, পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৯, ২/১৭৯ পৃঃ।
[4]. শারহুস সুন্নাহ ১/৯৫ পৃঃ।
[5]. يكذب في الحديث ويشرب الخمر সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫৫, ২/৩৭১ এবং হা/৫৪৪০, ১১/৭৪৬ পৃঃ।
[6]. তিরমিযী হা/১৫৪, ১/৪০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৪২৪, ১/৬১ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৭০; মিশকাত হা/৬১৪, পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬৫, ২/১৮১ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯৪ ও ৩৭৬৮।
[8]. মুসনাদে ত্বায়ালীসী হা/৯১, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[9]. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[10]. হেদায়া ১/৮০ পৃঃ।
[11]. হেদায়া ১/৮২ পৃঃ।
[12]. তিরমিযী হা/১৫৪-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৪০ পৃঃ।
[13]. ত্বাহাবী হা/১০০৬।
[14]. ইরওয়াউল গালীল ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৬।
[15]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭ পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯, ১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৮৬৭, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮২৫, ২/১৬১ পৃঃ); মুসলিম হা/১৪৮৯ ও ১৪৯১, ১/২৩০ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৯৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫০, ২/১৭৬ পৃঃ।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/৮৭২, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩০, ২/১৬৩ পৃঃ)।
[18]. ছহীহ বুখারী হা/৫৭৮, ১/৮২ পৃঃ, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘ফজরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ-২৭, (ইফাবা হা/৫৫১, ২/২৮ পৃঃ)।
[19]. নাসাঈ হা/৫৫২, ১/৬৫ পৃঃ, ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৩৩ ও ১২৭৪৬।
[20]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৭, ১/৫৮ পৃঃ।
[21]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭ পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯, ১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ।
[22]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৪, ১/৫৮ পৃঃ।