আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ একই ছালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই স্থানে একই ছালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে। কোন স্থানে একাধিক মসজিদ থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না; বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতে ছালাত আদায় করার যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা একেবারে ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা। উল্লেখ্য যে, অনেক মসজিদে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই আযান দেয়া হয়। এটা অতিরিক্ত পরহেযগারিতা ও বাড়াবাড়ি। উক্ত অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
(১) ফজর ছালাতের ওয়াক্ত :
ছুবহে ছাদিকের পর হতে ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়।[1] সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।[2] আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম হিসাবে[3] রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ দলীল নেই। মূলতঃ ছহীহ হাদীছের মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে দেরী করে ছালাত আদায় করা হয়। অনেক মসজিদে ফর্সা হলে ছালাত শুরু করা হয় এবং বিদ্যুৎ বা আলো বন্ধ করে কৃত্রিম অন্ধকার তৈরি করে ছালাত আদায় করা হয়। এটা শরী‘আতের সাথে প্রতারণা করার শামিল। নিম্নের জাল বর্ণনাটি লক্ষণীয়-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ بَعَثَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ يَا مُعَاذُ إِذَا كَانَ فِى الشِّتَاءِ فَغَلِّسْ بِالْفَجْرِ وَأَطِلِ الْقِرَاءَةَ قَدْرَ مَا يُطِيْقُ النَّاسُ وَلا تُمِلَّهُمْ وَإِذَا كَانَ الصَّيْفُ فَأَسْفِرْ بِالْفَجْرِ فَإِنَّ اللَّيْلَ قَصِيْرٌ وَالنَّاسُ يَنَامُوْنَ فَأَمْهِلْهُمْ حَتَّى يُدْرِكُوْا.
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি বলে দিলেন, হে মু‘আয! যখন শীতকাল আসবে তখন ফজর ছালাত অন্ধকারে পড়বে এবং মানুষের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে ক্বিরাআত লম্বা করবে। তাদের উপর কঠিন করো না। আর যখন গ্রীষ্মকাল আসবে, তখন ফজরের ছালাত ফর্সা করবে। তখনকার রাত যেহেতু ছোট, আর মানুষ যেহেতু ঘুমায় সেহেতু তাদেরকে অবকাশ দিবে, যেন তারা ছালাত পায়।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে মিনহাল ইবনুল জার্রাহ নামক একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম বলেছেন, সে অস্বীকৃত রাবী। ইবনু হিববান বলেছেন, সে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করত এবং মদ পান করত।[5] অতএব উক্ত হাদীছের আলোকে ফজরের ছালাত দেরী করে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু বর্ণনাটি জাল।
ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা :
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ.
‘রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর। কারণ নেকীর জন্য উহা সর্বাধিক উত্তম।[6] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কিছু যঈফ হাদীছও আছে।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন,
أَسْفِرْ بِصَلاَةِ الصُّبْحِ حَتىَّ يَرَىَ الْقَوْمُ مَوَاقِعَ نَبْلِهِمْ.
‘তুমি ফজর ছালাতের মাধ্যমে ফর্সা কর। যতক্ষণে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দেখতে পায়’।[8] উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেন, وَهَذَا إِسْنَادٌ صَحِيْحٌ إِنْ شَاءَ اللهُ ‘ইনশাআল্লাহ এই হাদীছের সনদ ছহীহ’।[9]
উক্ত হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে। কারণ এটাই সর্বোত্তম। ‘হেদায়া’ কিতাবে প্রথম আলোচনায় সঠিক সময় উল্লেখ করা হয়েছে।[10] কিন্তু পরে পৃথক আলোচনায় বলা হয়েছে, وَيَسْتَحِبُّ الْإِسْفَارُ بِالْفَجْرِ‘ফর্সা করে ফজর ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব’।[11] অথচ উক্ত ব্যাখ্যা চরম বিভ্রান্তিকর এবং ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধী। কারণ-
(ক) ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন,
قَالَ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ مَعْنَى الْإِسْفَارِ أَنْ يَّضِحَ الْفَجْرُ فَلَا يُشَكَّ فِيْهِ وَلَمْ يَرَوْا أَنَّ مَعْنَى الْإِسْفَارِ تَأْخِيْرُ الصَّلَاةِ.
‘ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব বলেন, ‘ইসফার’ হল, ফজর প্রকাশিত হওয়া, যাতে কোন সন্দেহ না থাকে। তারা কেউ বর্ণনা করেননি যে, ইসফার অর্থ ছালাত দেরী করে পড়া।[12]
(খ) ইমাম ত্বাহাবী (২৩৯-৩২১ হিঃ) বলেন,
يَنْبَغِى الدُّخُوْلُ فِي الْفَجْرِ فِىْ وَقْتِ التَّغْلِيْسِ وَالْخُرُوْجُ مِنْهَا فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ عَلَى مُوَافَقَةِ مَا رَوَيْنَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ وَأَصْحَابِهِ وَهُوَ قَوْلُ أَبِىْ حَنِيْفَةَ وَأَبِىْ يُوْسُفَ وَمُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى.
‘(উক্ত হাদীছের অর্থ হল) অন্ধকারে ফজরের ছালাত শুরু করা এবং ফর্সা হলে শেষ করা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেছি। আর সেটাই আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কথা’। তিনি আরো বলেন,
أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ أَيْ أَطِيْلُوا الْقِرَاءَةَ فِيْهَا لَيْسَ ذَلِكَ عَلَي أَنْ يَّدْخُلُوْا فِيْهَا فِىْ آخِرِ وَقْتِ الْإِسْفَارِ وَلَكِنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَا فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ.
‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর’ অর্থাৎ ফজরের ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা কর। এর অর্থ এটা নয় যে, তারা যেন ফর্সা হওয়ার সময় ছালাতে প্রবেশ করে। বরং ফর্সা হওয়ার সময় তারা ছালাত থেকে বের হবে’।[13]
(গ) আলবানী বলেন,
بَلِ الْمَعْنىَ الْذِىْ يَدُلُّ عَلَيْهِ مَجْمُوْعُ أَلْفَاظِ الْحَدِيْثِ إِطَالَةَ الْقِرَاءَةِ فِي الصَّلاَةِ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْهَا فِي الْإِسْفَارِ وَمَهْمَا أَسْفَرَ فَهُوَ أَفْضَلُ وَأَعْظَمُ لِلْأَجْرِ كَمَا هُوَ صَرِيْحُ بَعْضِ الْأَلْفَاظِ الْمُتَقَدَّمَةِ فَلَيْسَ مَعْنىَ الْإِسْفَارِ إِذَنْ هُوَ الدُّخُوْلُ فِي الصَّلاَةِ فِىْ وَقْتِ الْإِسْفَارِ كَمَا هُوَ الْمَشْهُوْرُ عَنِ الْحَنَفِيَّةِ.
‘হাদীছের শব্দ সমূহ একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এর অর্থ হবে- ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ছালাতের ক্বিরাআত লম্বা করা। আর এভাবে ফর্সা করাই সর্বোত্তম এবং নেকীর দিক থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। যেমনটি পূর্বের শব্দগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ‘ইসফার’ অর্থ এটা নয় যে, ফর্সা করে ছালাত শুরু করতে হবে, যেমনটি হানাফীদের মাঝে প্রচলিত আছে’।[14]
অতএব ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দেরীতে ফজর ছালাত আদায় করা মহা অন্যায়। ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ (রহঃ)ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলীয় কারণে কুরআন-হাদীছের অর্থ বিকৃতি করা আরো বড় অপরাধ। তাছাড়া ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতে ৬০-১০০ আয়াত পাঠ করতেন।[15] যদি ফর্সা হওয়ার পর ছালাত শুরু করা হয়, আর ৬০ থেকে ১০০ টি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সূর্য উঠতে কতক্ষণ বাকী থাকবে?
ফজর ছালাতের সঠিক সময় :
রাসূল (ছাঃ) কোন্ সময় ফজরের ছালাত আদায় করতেন, তা নিম্নের হাদীছগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
(1) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُصَلِّي الصُّبْحَ فَيَنْصَرِفُ النِّسَاءُ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوْطِهِنَّ مَا يُعْرَفْنَ مِنْ الْغَلَسِ.
(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মহিলারা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।[16]
(2) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّي الصُّبْحَ بِغَلَسٍ فَيَنْصَرِفْنَ نِسَاءُ الْمُؤْمِنِيْنَ لَا يُعْرَفْنَ مِنْ الْغَلَسِ أَوْ لَا يَعْرِفُ بَعْضُهُنَّ بَعْضًا.
(২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ছাঃ) অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুমিন মহিলারা ছালাত শেষ করে চলে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না অথবা পরস্পরকে তারা চিনতে পারত না।[17]
(3) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنَّ نِسَاءُ الْمُؤْمِنَاتِ يَشْهَدْنَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَاةَ الْفَجْرِ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوْطِهِنَّ ثُمَّ يَنْقَلِبْنَ إِلَى بُيُوْتِهِنَّ حِيْنَ يَقْضِيْنَ الصَّلَاةَ لَا يَعْرِفُهُنَّ أَحَدٌ مِنْ الْغَلَسِ.
(৩) আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুমিন মহিলারা চাদর আবৃত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাতে উপস্থিত হত। অতঃপর যখন ছালাত শেষ হত, তখন তারা তাদের বাড়ীতে ফিরে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।[18]
(4) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا زَالَتْ الشَّمْسُ وَالْعَصْرَ بَيْنَ صَلَاتَيْكُمْ هَاتَيْنِ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتْ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ وَالصُّبْحَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ إِلَى أَنْ يَنْفَسِحَ الْبَصَرُ.
(৪) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢুলে যেত। আর আছরের ছালাত আদায় করতেন এই দুই সময়ের মাঝখানে। যখন সূর্য ডুবে যেত তখন মাগরিবের ছালাত আদায় করতেন। আর শাফাক্ব ডুবে গেলে এশার ছালাত আদায় করতেন। ফজরের ছালাত আদায় করতেন যখন ফজর উদিত হত তখন থেকে দৃষ্টি প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত।[19]
(5) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ سَأَلْنَا جَابِرًا عَنْ وَقْتِ صَلاَةِ النَّبِىِّ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّى الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوْا أَخَّرَ وَالصُّبْحَ بِغَلَسٍ.
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমরা একদা জাবের (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি দুপুরে যোহরের ছালাত পড়তেন, আছর পড়তেন যখন সূর্য পরিষ্কার থাকত, সূর্য ডুবে গেলে মাগরিব পড়তেন। আর এশা পড়তেন যখন মানুষ বেশী হত তখন তাড়াতাড়ি পড়তেন এবং লোক কম হলে দেরীতে পড়তেন। আর ফজর ছালাত আদায় করতেন অন্ধকারে।[20] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
(6) وَكَانَ يُصَلِّى الصُّبْحَ وَمَا يَعْرِفُ أَحَدُنَا جَلِيْسَهُ الَّذِىْ كَانَ يَعْرِفُهُ وَكَانَ يَقْرَأُ فِيْهَا مِنَ السِّتِّيْنَ إِلَى الْمِائَةِ.
(৬) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত এমন সময় পড়তেন, যখন আমাদের কেউ পার্শ্বে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত না, যাকে সে আগে থেকেই চিনে। তিনি ফজর ছালাতে ৬০ থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করতেন।[21] অন্য হাদীছে এসেছে,
(7) وَصَلَّى الصُّبْحَ مَرَّةً بِغَلَسٍ ثُمَّ صَلَّى مَرَّةً أُخْرَى فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ كَانَتْ صَلاَتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ التَّغْلِيْسَ حَتَّى مَاتَ وَلَمْ يَعُدْ إِلَى أَنْ يُسْفِرَ.
(৭) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত একবার অন্ধকারে পড়েছিলেন। অতঃপর একবার পড়তে পড়তে ফর্সা করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত ছিল অন্ধকারে। তিনি আর ফর্সা করতেন না।[22] অর্থাৎ তিনি ছালাত অধিক লম্বা করতেন না।
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, একবার তিনি দীর্ঘ ক্বিরাআত করে ফর্সা করেছিলেন। যা সর্বাধিক উত্তম। এরপর থেকে অন্ধকার থাকতেই ছালাত শেষ করতেন।
সুধী পাঠক! উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ফজরের ছালাত অন্ধকারেই আদায় করতে হবে। তাই ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করা সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করা ছাড়া কিছু নয়। জানা আবশ্যক যে, ফজরের ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ছালাত। এই ছালাত সঠিক সময়ে আদায় করা প্রত্যেকের জন্যই অপরিহার্য। তাই আপনি একজন মুছল্লী হিসাবে আপনার করণীয় নির্ধারণ করুন। আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার প্রস্ত্ততি আপনিই গ্রহণ করুন।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৯, ২/১৮ পৃঃ) ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১, পৃঃ ৬১।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬, ১/৬১ পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭, পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৯, ২/১৭৯ পৃঃ।
[4]. শারহুস সুন্নাহ ১/৯৫ পৃঃ।
[5]. يكذب في الحديث ويشرب الخمر সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫৫, ২/৩৭১ এবং হা/৫৪৪০, ১১/৭৪৬ পৃঃ।
[6]. তিরমিযী হা/১৫৪, ১/৪০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৪২৪, ১/৬১ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৭০; মিশকাত হা/৬১৪, পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬৫, ২/১৮১ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯৪ ও ৩৭৬৮।
[8]. মুসনাদে ত্বায়ালীসী হা/৯১, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[9]. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[10]. হেদায়া ১/৮০ পৃঃ।
[11]. হেদায়া ১/৮২ পৃঃ।
[12]. তিরমিযী হা/১৫৪-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৪০ পৃঃ।
[13]. ত্বাহাবী হা/১০০৬।
[14]. ইরওয়াউল গালীল ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৬।
[15]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭ পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯, ১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৮৬৭, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮২৫, ২/১৬১ পৃঃ); মুসলিম হা/১৪৮৯ ও ১৪৯১, ১/২৩০ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৯৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫০, ২/১৭৬ পৃঃ।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/৮৭২, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩০, ২/১৬৩ পৃঃ)।
[18]. ছহীহ বুখারী হা/৫৭৮, ১/৮২ পৃঃ, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘ফজরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ-২৭, (ইফাবা হা/৫৫১, ২/২৮ পৃঃ)।
[19]. নাসাঈ হা/৫৫২, ১/৬৫ পৃঃ, ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৩৩ ও ১২৭৪৬।
[20]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৭, ১/৫৮ পৃঃ।
[21]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭ পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯, ১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ।
[22]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৪, ১/৫৮ পৃঃ।
(২) যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত :
সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে যাওয়ার সাথে সাথে যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। আর কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে শেষ হয়। কিন্তু যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করার কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-
(১) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا كَانَ الْفَيْء ذِرَاعًا وَنِصْفًا إِلَى ذِرَاعَيْنِ فَصَلُّوْا الظُّهَْرَ.
(১) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন ছায়া দেড় হাত থেকে দুই হাত হয়, তখন তোমরা যোহরের ছালাত আদায় কর।[1] অনেকে উক্ত বর্ণনা পেশ করে যোহরের ছালাত দেরীতে আদায় করার দাবী করেন।
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব নামে একজন রাবী আছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, হায়ছামীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[2] ইমাম হায়ছামী বলেন, ‘এর সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আছে, সে মিথ্যুক’।[3]
(২) عَنْ عَبْدِ الْعَزِيْزِ بْنِ رَفِيْعٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ عَجِّلُوْا صلَاةَ النَّهَرِ فِىْ يَوْمِ غَيْمٍ وَأخِّرُوْا الْمَغْرِبَ.
(১) আব্দুল আযীয ইবনু রাফী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মেঘলা দিনে দিনের ছালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর এবং মাগরিব দেরীতে আদায় কর।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি দুর্বল। আব্দুল আযীয ইবনু রাফী মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছে।[5]
যোহরের ছালাতের সঠিক সময় :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُوْلِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ ..
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে যাবে। কোন ব্যক্তির ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ আছরের সময় হওয়া পর্যন্ত...।[6]
عَنْ أَبِىْ بَرْزَةَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّى الظُّهْرَ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَيُصَلِّى الْعَصْرَ وَإِنَّ أَحَدَنَا لَيَذْهَبُ إِلَى أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَيَرْجِعُ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ...
আবু বারযাহ (রাঃ) বলেন, যখন সূর্য ঢুলে পড়ত তখন রাসূল (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন। আর আছর ছালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ ছালাত আদায় করে মদ্বীনার দূর প্রান্তে চলে যেত এবং ফিরে আসত অথচ সূর্য উজ্জ্বল থাকত।[7]
জ্ঞাতব্য : যোহরের ছালাত সূর্য ঢুলে পড়ার পর আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করাই শরী‘আতের নির্দেশ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে যোহরের ছালাত একটু দেরী করে আদায় করতে বলা হয়েছে। সেই হাদীছকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুছল্লী দেরী করে আদায় করে থাকে। এটা মূলতঃ মাযহাবী গোঁড়ামী। কারণ সারা বছর দেরী করতে বলা হয়নি।
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ.
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ।[8]
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ الْغِفَارِىِّ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ فِىْ سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِىُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَىْءَ التُّلُوْلِ فَقَالَ النَّبِىُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوْا بِالصَّلاَةِ.
আবু যার গেফারী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। মুওয়াযযিন যোহরের আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ঠান্ডা কর। অতঃপর যখন আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন আবার বললেন, তালূল দেখা পর্যন্ত দেরী কর। অতঃপর তিনি বললেন, গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। সুতরাং যখন গরম বেশী হবে তখন তোমরা ছালাত দেরী করে পড়।[9]
সুধী পাঠক! হাদীছের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সারা বছর এদেশে যোহরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এটা সুন্নাতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার শামিল। রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসারী হিসাবে একজন মুছল্লীর পক্ষে এভাবে যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করা কি উচিৎ? গ্রীষ্মকালের হাদীছের আলোকে সে কি সারা বছর দেরী করে আদায় করবে? কখনোই নয়।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯৭; যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৪; মিশকাত হা/৫৮৫; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৪।
[3]. فيه أصرم بن حوشب وهو كذاب -মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩০৬; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফী আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৩৫।
[4]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬২৮৮; আবুদাঊদ, আল-মারাসীল হা/১৩।
[5]. আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮৫৬, ৮/৩১৭ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৪।
[6]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[7]. আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ; বুখারী হা/৫৪১ ও ৭৭১।
[8]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৮, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫১১, ২/১০ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; মিশকাত হা/৫৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৩, ২/১৭৪ পৃঃ।
[9]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৯, ১/৭৬ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৩১।
(৩) আছরের ছালাতের ওয়াক্ত :
আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তার ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে সেগুলো সবই যঈফ ও জাল।
(أ) عَنْ عَبْدِ الْوَاحِدِ بْنِ نَافِعٍ قَالَ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَأذَّنَ مُؤَذّنُ بِالعَصْرِ قَالَ وَشَيْخٌ جَالِسٌ فَلَامَهُ وَقَالَ إنَّ أَبِىْ أَخْبَرَنِىْ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ كاَنَ يَأْمُرُ بِتَأْخِيْرِ هَذِهِ الصَّلاَةِ.
(ক) আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু রাফে‘ বলেন, আমি একদা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন মুওয়াযযিন আছরের আযান দিল। রাবী বলেন, তখন এক বৃদ্ধ মসজিদে বসেছিলেন। তাই মুয়াযযিন তার নিকটে আসল। তখন তিনি বললেন, আমার আব্বা আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার নির্দেশ দিতেন।[1]
তহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[2] ইমাম দারাকুৎনী বলেন, এর সনদে আব্দুল্লাহ বিন রাফে‘ বিন খাদীজ বিন রাফে‘ নামে একজন রাবী আছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়।[3] অন্যত্র তিনি বলেন, এই হাদীছের সনদ যঈফ। ... রাফে‘ সহ অন্য কোন ছাহাবী থেকে এই হাদীছ ছহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি।[4]
(ب) عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَتَبَ إِلَى عُمَّالِهِ إِنَّ أَهَمَّ أَمْرِكُمْ عِنْدِى الصَّلاَةُ مَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَفِظَ دِيْنَهُ وَمَنْ ضَيَّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ ثُمَّ كَتَبَ أَنْ صَلُّوا الظُّهْرَ إِنْ كَانَ الْفَىْءُ ذِرَاعًا إِلَى أَنْ يَكُوْنَ ظِلُّ أَحَدِكُمْ مِثْلَهُ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ قَدْرَ مَا يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فَرْسَخَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَابَتِ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ فَمَنْ نَامَ فَلاَ نَامَتْ عَيْنُهُ فَمَنْ نَامَ فَلاَ نَامَتْ عَيْنُهُ فَمَنْ نَامَ فَلاَ نَامَتْ عَيْنُهُ وَالصُّبْحَ وَالنُّجُومُ بَادِيَةٌ مُشْتَبِكَةٌ.
(খ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একদা প্রশাসকদের নিকট পত্র লিখলেন যে, আমার নিকট আপনাদের সমস্ত কাজের মধ্যে ছালাতই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি তার হেফাযত করে এবং যথাযথভাবে তার উপর অটল থাকে, সে তার দ্বীনকে রক্ষা করে। আর যে তাকে বিনষ্ট করে সে তা ব্যতীত অন্যগুলোকে আরো অধিক বিনষ্টকারী। অতঃপর তিনি লিখলেন, যোহর আদায় করবে যখন ছায়া এক হাত হবে, তোমাদের প্রত্যেকের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত। আছর আদায় করবে যখন সূর্য উচ্চে পরিষ্কার সাদা অবস্থায় থাকবে, যাতে একজন ভ্রমণকারী ব্যক্তি সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দুই বা তিন মাইল অতিক্রম করতে পারে। যখনই সূর্য ডুবে যাবে তখনই মাগরিব আদায় করবে। যখন লালিমা ডুবে যাবে তখন এশা আদায় করবে, রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। এর পূর্বে যে ঘুমাবে তার চক্ষু না ঘুমাক। এ কথা তিনি তিনবার লিখেছিলেন। আর ফজর আদায় করবে যখন তারকারাজি পরিষ্কার হয় এবং চমকে।[5] মূলতঃ উক্ত হাদীছে যোহর, আছর ও মাগরিবের ছালাতের সময়কে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হিসাবে পেশ করা হয়েছে। বিশষ করে আছরের সময়। কারণ ছহীহ হাদীছে চার মাইলের কথা এসেছে।[6]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদ বিচ্ছিন্ন। কারণ নাফে‘ ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি।[7]
(ج) عَنْ زِيَادِ بْنِ عَبْدِ اللهِ النَّخَعِىِّ قَالَ كُنَّا جُلُوْسًا مَعَ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فِى الْمَسْجِدِ الأَعْظَمِ وَالْكُوْفَةُ يَوْمَئِذٍ أَخْصَاصٌ فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَالَ الصَّلاَةُ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ لِلْعَصْرِ فَقَالَ اجْلِسْ فَجَلَسَ ثُمَّ عَادَ فَقَالَ ذَلِكَ فَقَالَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ هَذَا الْكَلْبُ يُعَلِّمُنَا بِالسُّنَّةِ فَقَامَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَصَلَّى بِنَا الْعَصْرَ ثُمَّ انْصَرَفْنَا فَرَجَعْنَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِى كُنَّا فِيهِ جُلُوسًا فَجَثَوْنَا لِلرُّكَبِ لِنُزُولِ الشَّمْسِ.
(গ) যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ বলেন, আমরা একদা আলী (রাঃ)-এর সাথে বড় মসজিদে বসেছিলাম। কূফাতে সে সময় অনেক কুঁড়ে ঘর ছিল। অতঃপর মুওয়াযযিন এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আছরের ছালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, তুমি বস। তাই সে বসল। মুয়াযযিন পুনরায় ফিরে এসে একই কথা বলল। তখন আলী (রাঃ) বললেন, এই কুকুরটি আমাদেরকে সুন্নাত শিক্ষা দিতে চাচ্ছে! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং আমাদেরকে নিয়ে আছরের ছালাত আদায় করলেন। তারপর ছালাত থেকে ফিরে ঐ স্থানে ফিরে আসলাম যেখানে আমরা বসেছিলাম। অতঃপর সূর্য ডুবে যাওয়ার কারণে আমরা সওয়ারীর উপর হাঁটু গেড়ে বসে গেলাম।[8]
তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। হাকেম একে ছহীহ বলে উল্লেখ করলেও তা যঈফ।[9] ইমাম দারাকুৎনী এর ত্রুটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ অপরিচিত। আব্বাস বিন যুরাইহ ছাড়া অন্য কেউ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি।[10] মূলতঃ আলী (রাঃ)-এর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করে আছরের ছালাত বিলম্ব করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়।
(د) عَن اِبْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَهُ كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ.
(ঘ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আছরের ছালাত দেরী করে আদায় করতেন।[11]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। সে আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ থেকে সঠিকভাবে হাদীছ বর্ণনা করেনি।[12]
(ح) عَنْ يَزِيْدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ شَيْبَانَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ عَلِىِّ بْنِ شَيْبَانَ قَالَ قَدِمْنَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الْمَدِيْنَةَ فَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ مَا دَامَتِ الشَّمْسُ بَيْضَاءَ نَقِيَّةً.
(ঙ) ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা মদ্বীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি সূর্য উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকা পর্যন্ত আছরের ছালাত দেরী করতেন।[13]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম নববী বলেন, বাতিল হাদীছ।[14]
(و) قَالَ أَبُو عَمْرٍو يَعْنِى الأَوْزَاعِىَّ وَذَلِكَ أَنْ تَرَى مَا عَلَى الأَرْضِ مِنَ الشَّمْسِ صَفْرَاءَ.
(চ) আবু আমর বলেন, ঐ সময়টা হল, যখন সূর্যের আলো যমীনে হলুদ আকারে পড়বে।[15]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ওয়ালীদ বিন মুসলিম নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছে, তার শ্রবণশক্তি ভাল ছিল না।[16]
আছরের ছালাতের সঠিক সময় :
কোন বস্ত্তর ছায়া যখন মূল ছায়ার সমপরিমাণ হবে তখন আছরের ছালাতের সময় শুরু হবে। আর দ্বিগুণ হলে শেষ হবে। তবে কোন সমস্যাজনিত কারণে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে।[17]
(أ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ فَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِيْهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ وَبَعْضُ الْعَوَالِىْ مِنْ الْمَدِيْنَةِ عَلَى أَرْبَعَةِ أَمْيَالٍ أَوْ نَحْوِهِ.
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আছরের ছালাত তখন পড়তেন, যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। অতঃপর কেউ আওয়ালী বা উঁচু স্থানগুলোর দিকে যেত এবং পুনরায় তাদের নিকট ফিরে আসত, তখনও সূর্য উপরেই থাকত। আর আওয়ালীর কোন কোন স্থান মদ্বীনা হতে চার মাইল বা অনুরূপ দূরে অবস্থিত।[18]
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ فِىْ حُجْرَتِهَا لَمْ يَظْهَرِ الْفَىْءُ مِنْ حُجْرَتِهَا.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন সূর্য তার ঘরের মধ্যে থাকত তখন রাসূল (ছাঃ) আছর পড়তেন। তখনো ছায়া ঘর থেকে বের হয়ে যায়নি।[19]
(ب) عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ الْعَصْرَ فَنَنْحَرُ جَزُوْرًا فَتُقْسَمُ عَشْرَ قِسَمٍ فَنَأْكُلُ لَحْمًا نَضِيْجًا قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ.
(খ) রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে আছরের ছালাত আদায় করতাম। অতঃপর একটি উট যবহে করতাম। তারপর তাকে দশ ভাগে ভাগ করতাম। অতঃপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই আমরা তার পাক করা মাংস খেতাম ।[20]
(ج) عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِىْ دَارِهِ بِالْبَصْرَةِ حِيْنَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهُ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ أَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهُ إِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا أَرْبَعًا لاَ يَذْكُرُ اللهَ فِيْهَا إِلاَّ قَلِيْلاً.
(গ) আলা ইবনু আব্দুর রহমান বছরাতে একদিন যোহরের ছালাত আদায় করে ফেরার সময় আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-এর বাড়ীতে গেলেন। আর মসজিদের পার্শ্বেই তার বাড়ী ছিল। রাবী বলেন, আমরা যখন তার কাছে গেলাম, তখন তিনি বললেন, তোমরা কি আছরের ছালাত আদায় করেছ? আমরা বললাম, এই মাত্র আমরা যোহরের ছালাত আদায় করে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা আছরের ছালাত আদায় করে নাও। অতঃপর আমরা চলে গেলাম এবং ছালাত আদায় করলাম। আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন তিনি বললেন, এটা হল মুনাফিকের ছালাত। সে বসে বসে অপেক্ষায় থাকে। যখন সূর্য লাল হতে থাকে এমনকি শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে যায়, তখন সে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে। সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।[21]
(د) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَمَّنِىْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى بِىَ الظُّهْرَ حِيْنَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَتْ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَصَلَّى بِىَ الْعَصْرَ حِيْنَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِىَ يَعْنِى الْمَغْرِبَ حِيْنَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِىَ الْعِشَاءَ حِيْنَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلَّى بِىَ الْفَجْرَ حِيْنَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ صَلَّى بِىَ الظُّهْرَ حِيْنَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِىَ الْعَصْرَ حِيْنَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَيْهِ وَصَلَّى بِىَ الْمَغْرِبَ حِيْنَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِىَ الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلَّى بِىَ الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَىَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ.
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জিবরীল (আঃ) কা‘বার নিকট দুইবার আমার ইমামতি করেছেন। একবার তিনি আমাকে যোহর পড়ালেন যখন সূর্য ঢুলে পড়ল। আর তা ছিল জুতার দোয়ালির পরিমাণ। আছর পড়ালেন, যখন প্রত্যেক বস্ত্তর ছায়া তার একগুণ হল। মাগরিব পড়ালেন যখন ছায়েম ইফতার করে। আর এশা পড়ালেন যখন লালিমা দূর হল। ফজর পড়ালেন যখন ছায়েম ব্যক্তির উপর খানাপিনা হারাম হয় (সাহারীর সময়ের পর)।
পরের দিন তিনি আমাকে যোহর পড়ালেন, যখন প্রত্যেক বস্ত্তর ছায়া তার একগুণ হল। আর আছর পড়ালেন যখন প্রত্যেক বস্ত্তর ছায়া তার দ্বিগুণ হল। মাগরিব পড়ালেন যখন ছায়েম ব্যক্তি ইফতার করে। এশা পড়ালেন যখন রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হল। অবশেষে ফজর পড়ালেন এবং খুব ফর্সা করে ফেললেন। অতঃপর তিনি আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! ইহা আপনার পূর্বের নবীগণের সময়। ছালাতের সময় আসলে এই দুই সময়ের মাঝের সময়’।[22] অন্য হাদীছে এসেছে, সর্বোত্তম আমল হল, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।[23]
জ্ঞাতব্য : জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে ছালাতের আউয়াল ও আখের দুইটি ওয়াক্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে, বস্ত্তর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে আছরের ছালাতের শেষ ওয়াক্ত চলে আসে। অথচ অধিকাংশ মুছল্লী এই শেষ ওয়াক্তে আছরের ছালাত আদায় করে থাকে, যা রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় গর্হিত অন্যায়।
সুধী পাঠক! উপরে ত্রুটিপূর্ণ হাদীছ এবং ছহীহ হাদীছ দুই ধরনের হাদীছই পেশ করা হল। নিঃসন্দেহে মুছল্লীর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আছর ছালাত সে কোন্ ওয়াক্তে আদায় করবে। বিশেষ করে ছাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন উদাহরণ, পদ্ধতি ও জায়গা উল্লেখ করে আছরের ছালাতের সময়টা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। অথচ কতিপয় যঈফ ও জাল হাদীছের কারণে উক্ত গুরুত্ব মূল্যহীন হয়ে গেছে। এরপরও যদি সে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে গ্রহণ না করে, তবে কবরে ও ক্বিয়ামতের মাঠে টিকতে পারবে কি? মনে রাখা আবশ্যক যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের পর পূর্বের কোন নবী-রাসূলের আনুগত্য করলেও সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপস্থিতিতে যদি পূর্বে কোন নাযিলকৃত কিতাবের অনুসরণ করা হয় তবুও সে রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বেরিয়ে যাবে।[24] অতএব পীর-ফকীর, ইমাম-খতীব এবং তাদের রচিত মনগড়া কল্পিত ধর্মের অনুসরণ করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।
[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪২০ পৃঃ, হা/১৫৯; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৫।
[3]. দারাকুৎনী ১/২৫১ পৃঃ عبد الله بن رافع بن خديج بن رافع هذا ليس بقوي।
[4].هذا حديث ضعيف الإسناد.. ولايصح هذا الحديث عن رافع ولا عن غيره من الصحابة..। -তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৫।
[5]. মালেক হা/৯; মিশকাত হা/৫৮৫, পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮, ২/১৭১ পৃঃ।
[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫৫০, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪, ২/১৬ পৃঃ); মিশকাত হা/৫৯২, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৪, ২/১৭৪ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৮৫, ১/১৮৬ পৃঃ।
[8]. দারাকুৎনী ১/২৫১; হাকেম হা/৬৯০, ১/১৯২।
[9]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬।
[10]. زِيَادُ بْنُ عَبْدِ اللهِ النَّخَعِىُّ مَجْهُوْلٌ لَمْ يَرْوِ عَنْهُ غَيْرُ الْعَبَّاسِ بْنِ ذَرِيحٍ দারাকুৎনী ১/২৫১।
[11]. আব্দুর রাযযাক হা/২০৮৯; ত্বাবারাণী কাবীর ৯/২৯৬।
[12]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪১৮ পৃঃ, হা/১৫৯।
[13]. আবুদাঊদ হা/৪০৮, ১/৫৯ পৃঃ।
[14]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৪০৮।
[15]. আবুদাঊদ হা/৪১৫, ১/৬০ পৃঃ।
[16]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৬৪।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯ পৃঃ ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১।
[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫৫০, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪, ২/১৬ পৃঃ); মিশকাত হা/৫৯২, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৪, ২/১৭৪ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[19]. বুখারী হা/৫৪৫, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫১৮, ২/১৩ পৃঃ)।
[20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/২৪৮৫, ১/৩৩৮ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৪৬, ১/২২৫ পৃঃ (ইফাবা হা/১২৮৯); মিশকাত হা/৬১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬৬।
[21]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪৪৩, ১/২২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৮৬) ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়-৬, ‘জলদি করে আছর পড়া’ অনুচ্ছেদ-৩৫; মিশকাত হা/৫৯৩, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫, ২/১৭৫ পৃঃ।
[22]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৩, ১/৫৬ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহ তিরমিযী হা/১৪৯, ১/৩৮ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৮৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৬, ২/১৬৯ পৃঃ।
[23]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬, ১/৬১ পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৯, ২/১৭৯ পৃঃ।
[24]. আহমাদ হা/১৫১৯৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৭৪; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৭৭ ও ১৯৪, পৃঃ ৩০ ও ৩২, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯, ৬/৩৪ পৃঃ।
(৪) মাগরিবের ওয়াক্ত :
মাগরিবের ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কেও কিছু যঈফ ও জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(১) أَوَّلُ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِيْنَ تَغْرِبُ الشَّمْسُ وَآخِرُ حِيْنَ يَغِيْبُ الشَّفَقُ.
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাগরিবের প্রথম সময় হল যখন সূর্য ডুবে যায়। আর শেষ সময় যখন শাফাক্ব ডুবে যায়।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[2] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, ‘এটি গরীব। অর্থাৎ ভিত্তিহীন।[3]
(২) رُوِىَ عَنِ النَّبِىِّ أَنَّهُ قَالَ آَخِرُ وَقْتِ الْمَغْرِبِ إِذَا أَسُوْدَ الْأَفَقِ.
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মাগরিবের শেষ সময় হল, দিগন্তে যখন কালো রেখা দেখা যাবে।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[5] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’।[6]
(3) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الشَّفَقُ الْحُمْرَةُ فَإِذَا غَابَ الشَّفَقُ وَجَبَتِ الصَّلاَةُ.
(৩) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, শাফাক্ব হল, লালিমা। যখন লালিমা দূরীভূত হবে তখন ছালাত ওয়াজিব হবে।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আতীক্ব ইবনু ইয়াকুব নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[8] তাছাড়া উক্ত বর্ণনা এশার ছালাতের জন্য প্রযোজ্য, মাগরিবের জন্য নয়। মূলতঃ লালিমা দূর হওয়ার পর মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে না। কিন্তু উক্ত বর্ণনাগুলোতে দাবী করা হয়েছে।
(৪) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الشَّفَقُ الْحُمْرَةُ.
(৪) ইবনু ওমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, শাফাক্ব হল লালিমা।[9]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[10]
মাগরিব ছালাতের সঠিক সময় :
সূর্য ডুবার পরেই মাগরিবের ছালাতের সময় শুরু হয়। আর সূর্যের লালিমা থাকা পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে।[11]
[2]. তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭।
[3]. আদ-দিরায়াহ ১/১০২।
[4]. নাছবুর রায়াহ ১/২৩৪ পৃঃ; ইবনু হাজার আদ-দিরায়াহ ১/১০৩।
[5]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৭।
[6]. আদ-দিরায়াহ ১/১০৩ পৃঃ।
[7]. বায়হাক্বী হা/১৮১৬; দারাকুৎনী ১/২৬৯।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯।
[9]. দারাকুৎনী ১/২৬১; বায়হাক্বী ১/৩৭৩।
[10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৬।
[11]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
(৫) এশার ওয়াক্ত :
ফিক্বহী গ্রন্থ সমূহে এশার ছালাতের সময় সম্পর্কেও কিছু জাল ও যঈফ হাদীছ প্রচলিত আছে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ آخِرُ وَقْتِ الْعِشَاءِ حِيْنَ طَلَعَ الْفَجْرُ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এশার ছালাতের শেষ সময় হল ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।[1]
তাহক্বীক্ব : যাকারিয়া বিন গোলাম কাদের এবং শায়খ আলবানী বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।[2] ‘হেদায়া’র ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম বলেন, ছালাতের ওয়াক্ত সংক্রান্ত হাদীছের মধ্যে কোথাও এটা পাওয়া যায় না।[3] আল্লামা যায়লাঈ বলেন, গরীব বা ভিত্তিহীন।[4] ইবনু হাজার আসক্বালানীও অনুরূপ বলেছেন।[5] কিন্তু ইমাম তাহাবী মাযহাবী মোহে এর পক্ষে মত দিয়েছেন, যা কাম্য নয়।[6] মূলতঃ মধ্য রাত পর্যন্ত এশার ছালাতের সময় থাকে।[7] ফজর পর্যন্ত নয়।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ لِلصَّلَاةِ أَوَّلًا وَآخِرًا وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلَاةِ الظُّهْرِ حِيْنَ تَزُوْلُ الشَّمْسُ وَآخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلَاةِ الْعَصْرِ حِيْنَ يَدْخُلُ وَقْتُهَا وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِيْنَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ يَغِيْبُ الْأُفُقُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ حِيْنَ يَغِيْبُ الْأُفُقُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ يَنْتَصِفُ اللَّيْلُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْفَجْرِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ছালাতের প্রথম ও শেষ সময় আছে। যোহরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে যাবে আর তার শেষ ওয়াক্ত হল, যখন আছরের ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আছরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন উহা তার ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন সূর্য হলুদ রং ধারণ করবে। মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত হল যখন সূর্য ডুবে যাবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে। এশার প্রথম ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে আর এর শেষ সময় হল রাত্রির মধ্যভাগ। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন ফজর উদিত হবে। আর শেষ সময় হল সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,
سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ الْأَعْمَشِ عَنْ مُجَاهِدٍ فِي الْمَوَاقِيْتِ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ مُحَمَّدِ بْنِ فُضَيْلٍ عَنْ الْأَعْمَشِ وَحَدِيْثُ مُحَمَّدِ بْنِ فُضَيْلٍ خَطَأٌ أَخْطَأَ فِيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ.
‘আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি যে, ছালাতের সময়ের ব্যাপারে মুজাহিদ থেকে আ‘মাশের বর্ণিত হাদীছ মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের হাদীছের চেয়ে অধিকতর ছহীহ। মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের হাদীছ ভুল। সে হাদীছ বর্ণনায় ভুল করেছে।[9]
এশার ছালাতের সঠিক সময় :
মাগরিবের ছালাতের সময়ের পর থেকে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সমাস্যজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন। তাই মাগরিবের পরপরই এশার ছালাত পড়া উচিৎ নয়, যা এদেশে চালু আছে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُوْلِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلاَةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوْعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلاَةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন সূর্য ঢুলে যায়, তখন যোহরের সময় শুরু হয়। কোন ব্যক্তির ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত উক্ত সময় থাকে। অর্থাৎ আছরের সময় উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত। আছরের সময় বস্ত্তর মূল ছায়ার সমপরিমাণ হওয়া থেকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সময় (সূর্যাস্ত হতে) লালিমা দূর হওয়া পর্যন্ত। আর এশার সময় রাত্রির মধ্য ভাগ পর্যন্ত। আর ফজর ছালাতের সময় ঊষার উদয় হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। যখন সূর্য উঠবে, তখন ছালাত থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্যোদয় হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে।[10]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ أَعْتَمَ النَّبِىُّ ذَاتَ لَيْلَةٍ حَتَّى ذَهَبَ عَامَّةُ اللَّيْلِ وَحَتَّى نَامَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى فَقَالَ إِنَّهُ لَوَقْتُهَا لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِىْ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) একদা রাত্রির অর্ধেক পর্যন্ত ছালাত দেরী করলেন। এমনকি মসজিদের মুছল্লীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হল। অতঃপর তিনি বের হয়ে ছালাত আদায় করেন। তারপর বললেন, আমি যদি আমার উম্মতের উপর ভারী না মনে করতাম, তবে এই সময়টাই এশার ছালাতের সময় হত।[11]
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫৬১, ১৪/১৩৮ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭।
[3]. ঐ, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/১৯৬ পৃঃ।
[4]. নাছবুর রাইয়াহ ১/২৩৪।
[5]. আদ-দিরায়াহ ১/১০৩।
[6]. তাহাবী হা/৮৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪৩০ পৃঃ।
[7]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২২ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ।
[8]. তিরমিযী হা/১৫১, ১/৩৯ পৃঃ; আহমাদ ২/২৩২; তাহাবী ১/১৪৯-১৫০।
[9]. তিরমিযী হা/১৫১, ১/৩৯ পৃঃ।
[10]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২২, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ।
[11]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪৭৭, ১/২২৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩১৮)।
ছালাতের সময় সম্পর্কে অন্যান্য যঈফ ও জাল হাদীছ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْوَقْتُ الْأَوَّلُ مِنْ الصَّلَاةِ رِضْوَانُ اللهِ وَالْوَقْتُ الْآخِرُ عَفْوُ اللهِ.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি আর শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর ক্ষমা।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[2] এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[3]
عَنْ إِبْرَاهِيْمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَوَّلُ الْوَقْتِ رِضْوَانُ اللهِ وَوَسَطُ الْوَقْتِ رَحْمَةُ اللهِ وَآخِرُ الْوَقْتِ عَفْوُ اللهِ.
ইবরাহীম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি, মধ্যম ওয়াক্ত আল্লাহর রহমত এবং শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর ক্ষমা।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[5] এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[6]
[2]. যঈফ তিরমিযী হা/১৭২; ইরওয়াউল গালীল হা/২৫৯; মিশকাত হা/৬০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৮, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭৯।
[3]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৬০৬-এর টীকা দ্রঃ, ১/১৯২ পৃঃ।
[4]. দারাকুৎনী হা/২২।
[5]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০; যঈফুল জামে‘ হা/২১৩১।
[6]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০, ১/২৮৮ পৃঃ- هذا حديث يعرف بيعقوب بن الوليد المدني وهو منكر الحديث ضعفه يحيى بن معين وكذبه أحمد وسائر الحفاظ
আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব :
আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন, إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا ‘নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (নিসা ১০৩)।
عَنْ أُمِّ فَرْوَةَ قَالَتْ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ الصَّلاَةُ فِىْ أَوَّلِ وَقْتِهَا.
উম্মু ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন্ আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।[1]
عَنِ أَبِىْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اللهُ تَعَالَى إِنِّىْ فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خَمْسَ صَلَوَاتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِىْ عَهْدًا أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ فَلاَ عَهْدَ لَهُ عِنْدِىْ.
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছি, আর একটি অঙ্গীকার করেছি যে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি সেগুলোকে ওয়াক্ত অনুযায়ী যথাযথভাবে আদায় করে উপস্থিত হবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে না, তার জন্য আমার কোন অঙ্গীকার নেই।[2] উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ উপমহাদেশীয় ছাপা আবুদাঊদে নেই।
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةً يَعْنِى الْبَدْرَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَا تُضَامُّوْنَ فِىْ رُؤْيَتِهِ فَإِنْ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوْا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلٍَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا فَافْعَلُوْا ثُمَّ قَرَأَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوْبِ.
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে না। সুতরাং সূর্যোদয়ের পূর্বের ছালাত ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের ছালাতের প্রতি যত্নশীল হও। অতঃপর তিনি এই আয়াত পড়েন, ‘সুতরাং তোমরা প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্য ডুবার পরে’।[3]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ فَضَالَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ عَلَّمَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ فَكَانَ فِيْمَا عَلَّمَنِىْ وَحَافِظْ عَلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ قَالَ قُلْتُ إِنَّ هَذِهِ سَاعَاتٌ لِىْ فِيْهَا أَشْغَالٌ فَمُرْنِىْ بِأَمْرٍ جَامِعٍ إِذَا أَنَا فَعَلْتُهُ أَجْزَأَ عَنِّىْ فَقَالَ حَافِظْ عَلَى الْعَصْرَيْنِ وَمَا كَانَتْ مِنْ لُغَتِنَا فَقُلْتُ وَمَا الْعَصْرَانِ فَقَالَ صَلاَةٌ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَصَلاَةٌ قَبْلَ غُرُوْبِهَا.
আব্দুল্লাহ ইবনু ফাযালা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা আমাকে কিছু বিষয় শিক্ষা দান করেন। তার মধ্যে রয়েছে, তুমি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের ব্যাপারে যত্নবান হও। আমি বললাম, এই সময়গুলো আমার জন্য খুব ব্যস্ততার। সুতরাং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে নির্দেশ দিন। যখন আমি তা পালন করব, তখন যেন আমার জন্য তা যথেষ্ট হয়। তিনি বললেন, তুমি দুই আছরকে যথাযথভাবে আদায় কর। এই ভাষা আমার জানা ছিল না। আমি বললাম, দুই আছর কী? তিনি বললেন, সূর্য উঠার পূর্বের ছালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের ছালাত।[4]
[2]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪৩০, সনদ হাসান।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৪, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৭, ২/১৭ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়-১৩, ‘আছরের ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[4]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৮, ১/৬১ পৃঃ।
জামা‘আতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্ত বেশী গুরুত্বপূর্ণ :
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُوْنَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيْتُوْنَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا قَالَ قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِىْ قَالَ صَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ.
আবুযার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেছেন, আমীরগণ যখন ছালাতের ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে ছালাত দেরী করে পড়বে বা ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ছালাতের সময়েই ছালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সাথে যদি আদায় করতে পার, তাহলে আদায় কর। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে।[1]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ يَعْجَبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِى غَنَمٍ فِىْ رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ يُؤَذِّنُ بِالصَّلاَةِ وَيُصَلِّىْ فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا إِلَى عَبْدِىْ هَذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ الصَّلاَةَ يَخَافُ مِنِّىْ فَقَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِىْ وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ.
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একা পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর! সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং ছালাত আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।[2]
সুধী পাঠক! উক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ সমূহের মাধ্যমে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনকি জামা‘আতে ছালাত আদায়ের চেয়ে ওয়াক্তকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ত অনুযায়ী ছালাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকী ছালাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। অতএব দেরী করে নয়, বরং ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ছালাত আদায় করা অপরিহার্য। বিশেষ করে রাসূল (ছাঃ) ফজর ও আছর ছালাতের ব্যাপারে খুব কঠোরতা আরোপ করেছেন। অথচ ফজর ও আছর ছালাতের ক্ষেত্রেই বেশী অবহেলা করা হয়। এত ছহীহ হাদীছ থাকতে অধিকাংশ মুছল্লী কেন জাল ও যঈফ হাদীছের আলোকে ছালাত আদায় করছে? এটা কি কোন অদৃশ্যের চক্রান্ত? মুসলিম উম্মাহকে কোনদিন ঐক্যবদ্ধ হতে দিবে না- এটাই তার নীল নকশা। আমরা মুসলিম হিসাবে মাযহাবী গোঁড়ামীকে অগ্রাধিকার দেব, না রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে অগ্রাধিকার দেব এখন সেটাই দেখার বিষয়।
নোটঃ জমহুর আলেমদের মত অনুসারে জামাতের গুরুত্ব বেশি তবে তা অবশ্যই ওয়াক্তের বাইরে গিয়ে নয় - বাংলা হাদিস
[2]. আবুদাঊদ হা/১২০৩, ১/১৭০ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৬৬, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬৬৫, পৃঃ ৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪, ২/২০২ পৃঃ।