(১৭) অশিক্ষিত ও আদর্শহীন ব্যক্তিদের দ্বারা মসজিদের কমিটি গঠন করা:
অধিকাংশ মসজিদে শিরক বিদ‘আত চালু থাকার অন্যতম কারণ হল, অযোগ্য লোকদের দ্বারা মসজিদ পরিচালিত হওয়া। এমনকি সূদখোর, ঘুষখোর, নিয়মিত ছালাত আদায় করে না এমন ব্যক্তিও মসজিদ কমিটির সদস্য হয়। এ সমস্ত নির্লজ্জ ব্যক্তিরাই আবার এই পদের জন্য বেশী লালায়িত। অথচ তারা নিজেদের পরিবারকে চৌকি দিতে পারে না। তাদের মুখে দাড়ি পর্যন্ত থাকে না। অনেকে বিড়ি, সিগারেট ও মদখোরও আছে। তারা যা ইচ্ছা তাই করে। ইমামের প্রতি চোখ রাঙ্গিয়ে হক কথা বলতে দেয় না। আপোসহীন বক্তব্য পেশ করলে এবং তাদের বিরুদ্ধে গেলে তাৎক্ষণিক ইমামকে চাকরিচ্যুত করে। তারাই বড় আলেমের ভাব দেখায়। শরী‘আতে না থাকলেও তাদের মন যা চায়, তাই শরী‘আত মনে করে চালিয়ে দেয়। রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় এরাই মূর্খ পন্ডিত, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।[1] তাদের দাপটেই মসজিদগুলো বর্তমানে প্রচলিত নোংরা রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সমাজের লোকদের কাছে এ সমস্ত দুর্নীতিবাজ ও ক্রিমিনালদের কোন মর্যাদা নেই। তাদের ডাকে মানুষ সাড়াও দেয় না। ফলে তারা মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, জানাযা, ইসলামী সম্মেলনকেই প্রধান মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে। এ সমস্ত সমাজ নেতারা চিরদিনই এলাহী বিধানের ঘোর বিরোধী ও বাতিলের প্রতিনিধিত্বকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِىْ قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيْرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُوْنَ.
‘অনুরূপ আপনার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন ভয়প্রদর্শকারী পাঠিয়েছি, তখনই সমৃদ্ধশালী সমাজপতিরা বলেছে, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে একটি আদর্শের উপর পেয়েছি। আর আমরা তাদেরই অনুসরণ করব’ (যুখরুফ ২৩)।
এ ধরনের ব্যক্তিদেরই বেশী শাস্তি হবে। কারণ আল্লাহর পবিত্র ঘর নিয়ে খেলা করতে তাদের বুক কাঁপে না। চিরদিন একশ্রেণীর সমাজ নেতা আল্লাহর বিধানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি। অবশ্য তারা কোনদিন সফলও হয়নি। তারা উপলব্ধি করে না যে, নমরূদ, আযর, ফেরাউন, হামান, কারূণ, আবু জাহল, আবু লাহাব সমাজে টিকতে পারেনি, সবাই ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। ইবরাহীমের বিরোধিতা করার কারণে আযরকে হাশরের ময়দানে পশু আকৃতির করে চার পা বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[2] সেদিন কারো কিছু করার থাকবে না। অতএব সাবধান! হে সমাজের প্রতাপশালীরা!
মসজিদ যারা পরিচালনা করবে তাদের গুণাবলী কী হবে তা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলে দিয়েছেন।
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ.
‘মূলত তারাই আল্লাহর মসজিদ সমূহে আবাদ করবে, যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং ছালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। বস্ত্ততঃ তারাই সত্বর হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (তওবাহ ১৮)।
যিনি বা যারা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করবেন তারা মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও মর্যাদার ব্যাপারে কড়া নযর রাখবেন। তারা মুতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করবেন। সেটা যেন বিদ‘আতীদের বাসা ও দুর্নীতিবাজদের আড্ডায় পরিণত না হয়। তবে মুতাওয়াল্লী যেন স্বেচ্ছাচারী ও রক্ষকের নামে ভক্ষকে পরিণত না হন। তিনি খাদেম হবেন, খাদক নন। কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রচার কেন্দ্র হিসাবে পরিচালনা করবেন।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৫০, ১/৪৭৩ পৃঃ, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/৫৫৩৮, পৃঃ ৪৮৩, ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়, ‘বাশীতে ফুঁক দেওয়া’ অনুচ্ছেদ।