(১) মসজিদের ফযীলত সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ যঈফ হাদীছ

(أ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  صَلاَةُ الرَّجُلِ فِىْ بَيْتِهِ بِصَلَاةٍ وَصَلاَتُهُ فِىْ مَسْجِدِ الْقَبَائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِيْنَ صَلَاةً وَصَلَاتُهُ فِى الْمَسْجِدِ الَّذِىْ يُجَمَّعُ فِيْهِ بِخَمْسِ مِائَةِ صَلَاةٍ وَصَلاَتُهُ فِى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى بِخَمْسِيْنَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَتُهُ فِىْ مَسْجِدِىْ بِخَمْسِيْنَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ.

(ক) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার বাড়ীতে ছালাত আদায় করার নেকী এক ছালাতের সমান, মহললার মসজিদে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা পঁচিশ ছালাতের সমান, জুম‘আ মসজিদের ছালাত পাঁচশ ছালাতের সমান, মসজিদে আক্বছায় এক ছালাত আদায় করা ৫০ হাযার ছালাতের সমান, আমার এই মসজিদেও এক ছালাত ৫০ হাযার ছালাতের সমান, আর মসজিদুল হারামে এক ছালাত এক লক্ষ ছালাতের সমান।[1]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আবুল খাত্ত্বাব দিমাষ্কী ও যুরাইক্ব নামে দুই জন অপরিচিত রাবী আছে। যাদের দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নয়।[2] তবে নিম্নোক্ত হাদীছটি ছহীহ।

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ صَلَاةٌ فِىْ مَسْجِدِىْ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে ছালাত আদায় করা মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাযার ছালাতের চেয়েও উত্তম। আর মসজিদে হারামে ছালাত আদায় করার ছওয়াব অন্যান্য মসজিদের চেয়ে ১ লক্ষ গুণ বেশী’।[3] অন্য হাদীছে এসেছে, মসজিদে কূবাতে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে একটি ওমরার ছওয়াব পাওয়া যায়।[4]

(ب) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  عُرِضَتْ عَلَيَّ أُجُوْرُ أُمَّتِىْ حَتَّى الْقَذَاةُ يُخْرِجُهَا الرَّجُلُ مِنْ الْمَسْجِدِ وَعُرِضَتْ عَلَيَّ ذُنُوْبُ أُمَّتِىْ فَلَمْ أَرَ ذَنْبًا أَعْظَمَ مِنْ سُوْرَةٍ مِنْ الْقُرْآنِ أَوْ آيَةٍ أُوْتِيَهَا رَجُلٌ ثُمَّ نَسِيَهَا.

(খ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার নিকট আমার উম্মতের ছওয়াব সমূহ পেশ করা হল, এমনকি খড়-কুটার ছওয়াবও, যা কেউ মসজিদ হতে বাইরে ফেলে দেয়। এভাবে আমার নিকট পেশ করা হল আমার উম্মতের গুনাহ সমূহ, তখন আমি এই গুনাহ অপেক্ষা বড় কোন গুনাহ দেখিনি যে, কোন ব্যক্তিকে কুরআনের একটি সূরা অথবা একটি আয়াত দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর সে তা ভুলে গেছে।[5]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[6] উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুরাইজ নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছে।[7] আলী ইবনুল মাদ্বীনী এই বর্ণনাকে মুনকার বলেছেন।[8] উল্লেখ্য যে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়া এবং মসজিদ থেকে থুথু মিটিয়ে দেয়া সংক্রান্ত হাদীছটি ছহীহ।[9]

(ج) عَن أبىْ أُمَامَة قَالَ إِنَّ حَبْرًا مِنَ الْيَهُوْدِ سَأَلَ النَّبِيَّ  أَيُّ الْبِقَاعِ خَيْرٌ؟ فَسَكَتَ عَنْهُ وَقَالَ أَسْكُتُ حَتَّى يَجِيءَ جِبْرِيْلُ فَسَكَتَ وَجَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَسَأَلَ فَقَالَ مَا الْمَسْؤُوْلْ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَلَكِنْ أَسْأَلُ رَبِّيَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ثُمَّ قَالَ جِبْرِيْلُ يَا مُحَمَّدُ إِنِّىْ دَنَوْتُ مِنَ اللهِ دُنُوًّا مَا دَنَوْتُ مِنْهُ قطّ قَالَ وَكَيْفَ كَانَ ياَجِبْرِيْلُ؟ قَالَ كَانَ بَيْنِىْ وَبَيْنَهُ سَبْعُوْنَ أَلْفَ حِجَابٍ مِنْ نُوْرٍ فَقَالَ شَرُّ الْبِقَاعِ أَسْوَاقُهَا وَخَيْرُ الْبِقَاعِ مَسَاجِدُهَا.

(গ) আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, ইয়াহুদীদের একজন আলেম নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, যমীনের মধ্যে উত্তম স্থান কোন্টি? রাসূল (ছাঃ) নীরব থাকলেন এবং বললেন, তুমি নীরব থাক যতক্ষণ জিবরীল (আঃ) না আসেন। অতঃপর সে নীরব থাকল এবং জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আঃ) উত্তরে বললেন, জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞেস করব। অতঃপর জিবরীল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আমি আল্লাহর এত নিকটে হয়েছিলাম, যত নিকটে ইতিপূর্বে হইনি। রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে হয়েছিলেন? তিনি বললেন, তখন আমার মধ্যে ও তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাযার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, যমীনের নিকৃষ্টতর স্থান বাজারসমূহ এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদ সমূহ’।[10]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[11] উক্ত বর্ণনার সনদে ওছমান ইবনু আব্দুল্লাহ নামে একজন রাবী আছে। সে জাল হাদীছ বর্ণনা করত।[12] তবে এ প্রসঙ্গে নিম্নের হাদীছটি ছহীহ-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদ সমূহ আর সর্বনিকৃষ্ট স্থান হল বাজার সমূহ’।[13]

(د) عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ  قَالَ الصَّلاةُ فِي الْمَسْجِدِ الْجَامِعِ تَعْدِلُ الْفَرِيْضَةَ حَجَّةً مَبْرُوْرَةً وَالنَّافِلَةَ كَحَجَّةٍ مُتَقَبَّلَةٍ وَفُضِّلَتِ الصَّلاةُ فِي الْمَسْجِدِ الْجَامِعِ عَلَى مَا سِوَاهُ مِنَ الْمَسَاجِدِ بِخَمْسِمِائَةِ صَلاةٍ.

(ঘ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, জুম‘আ মসজিদে ফরয ছালাত আদায় করা শ্রেষ্ঠ হজ্জের সমপরিমাণ ছওয়াব। আর নফল ছালাত আদায় করা কবুল হজ্জের সমপরিমাণ ছওয়াব। আর অন্যান্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাঁচশ ছালাতের সমান করা হয়েছে।[14]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। এর সনদে ইউসুফ ইবনু যিয়াদ নামে যঈফ রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন এবং ইমাম দারাকুৎনী তাকে বাতিলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[15]

(5) عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  تَذْهَبُ الْأَرْضُوْنَ كُلُّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلاَ المْسَاجِدَ فَإِنَّهَا تَنْضُمُّ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ.

(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মসজিদগুলো ব্যতীত সমগ্র যমীন ধ্বংস হয়ে যাবে। সেগুলো একটি আরেকটির সাথে জোটবদ্ধ থাকবে।[16] উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার সাথে যোগ করে বিভিন্ন বক্তারা বলে থাকেন, মসজিদের মুছল্লীরা যতক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ না করবে, ততক্ষণ তারাও জান্নাতে যাবে না বা ধ্বংস হবে না। উক্ত বক্তব্য বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আল-হামদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[17]

(و) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ فَارْتَعُوْا قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا رِيَاضُ الْجَنَّةِ قَالَ الْمَسَاجِدُ قُلْتُ وَمَا الرَّتْعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ.

(চ) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যখন জান্নাতের বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখন ফল খাবে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, মসজিদ সমূহ। আমি আবার বললাম, ফল কী? তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।[18]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে হামীদ ইবনু আলক্বামা নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে। সে দুর্বল।[19]

(ز) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالََ نهَى رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ يُصَلَّى فِي سَبْعَةِ مَوَاطِنَ فِي الْمَزْبَلَةِ وَالْمَجْزَرَةِ وَالْمَقْبَرَةِ وَقَارِعَةِ الطَّرِيقِ وَفِي الْحَمَّامِ وَفِي مَعَاطِنِ الْإِبِلِ وَفَوْقَ ظَهْرِ بَيْتِ اللهِ.

(ছ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সাত স্থানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন- আবর্জনা ফেলার স্থানে, যবেহখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উটশালায় এবং বায়তুল্লাহর ছাদে।[20]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে যায়েদ ইবনু জুবাইরাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[21] ইবনু মাজাহর সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু ছালেহ রয়েছে। সেও যঈফ।[22] উল্লেখ্য যে, কবরস্থানে ও গোসলখানায় ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[23]

(ح) عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ النَّبِيَّ  كَانَ يَسْتَحِبُّ الصَّلَاةَ فِي الْحِيْطَانِ قَالَ بَعْضُ رُوَاتِهِ يَعْنِى الْبَسَاتِيٍن.

(জ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ‘হীতান’-এ ছালাত আদায় করতে ভালবাসতেন। রাবীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘হীতান’ অর্থ বাগান।[24]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে হাসান ইবনু আবী জা‘ফর নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম তিরমিযী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে দুর্বল বলেছেন।[25]

[1]. ইবনু মাজাহ হা/১৪১৩, পৃঃ ১০২; মিশকাত হা/৭৫২, পৃঃ ৭২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৯৬, ২/২৩৫ পৃঃ।

[2]. আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৫৮০।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬, পৃঃ ১০২, সনদ ছহীহ; ছহীহ বুখারী হা/১১৯০, ১/১৫৯ পৃঃ (ইফাবা হা/১১১৭, ২/৩২৭ পৃঃ); মিশকাত হা/৬৯২, পৃঃ ৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৪০, ২/২১৪ পৃঃ।

[4]. ইবনু মাজাহ হা/১৪১১, পৃঃ ১০১।

[5]. তিরমিযী হা/২৯১৬, ২/১১৯, ‘কুরআনের ফযীলত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯; আবুদাঊদ হা/৪৬১; মিশকাত হা/৭২০, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬৭, ২/২২২ পৃঃ; মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ হা/১৪৩, ১/৭৪ পৃঃ।

[6]. যঈফ তিরমিযী হা/২৯১৬; যঈফ আবুদাউদ হা/৪৬১।

[7]. আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ, পৃঃ ১১৭, হা/১৫৮।

[8]. তুহফাতুল আশরাফ ৩/৩১৭ পৃঃ।

[9]. ছহীহ মুসলিম হা/১২৬১; মিশকাত হা/৭০৯।

[10]. ইবনু হিববান হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/৭৪১, পৃঃ ৭১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮৫, ২/২২৯ পৃঃ।

[11]. ইবনু হিববান হা/১৫৯৯; যঈফ আত-তারগীব হা/২০১।

[12]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫০০।

[13]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬০, ১/২৩৬ পৃঃ (ইফাবা হা/১৪০০), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ;-৫৩; মিশকাত হা/৬৯৬, পৃঃ ৬৮।

[14]. ত্বাবারাণী কাবীর ১১/১৪৭ পৃঃ; ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৭১।

[15]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০৬, ৮/২৭৭।

[16]. ত্বাবারাণী আওসাত হা/৪০০৯।

[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৬৫, ২/১৮৫ পৃঃ।

[18]. তিরমিযী হা/৩৫০৯, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭২৯, পৃঃ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৭৪।

[19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৭১০, ৬/২৩৩ পৃঃ ও হা/৩৬৫০।

[20]. তিরমিযী হা/৩৪৬, ১/৮১ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৬; মিশকাত হা/৭৩৮, পৃঃ ৭১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮২, ২/২২৮ পৃঃ।

[21]. যঈফ তিরমিযী হা/৩৪৬; যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৭৪৬; ইরওয়া হা/২৮৭, ১/৩১৯।

[22]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৭৩৮, ১/২২৯ পৃঃ।

[23]. তিরমিযী হা/৩১৭, ১/৭৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৭৩৭, পৃঃ ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮১, ২/২২৮ পৃঃ।

[24]. তিরমিযী হা/৩৩৪, ১/৭৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৭৫১, পৃঃ ৭২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৯৫, ২/২৩৫।

[25]. যঈফ তিরমিযী হা/৩৩৪; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪২৭০, ৯/২৬৮ পৃঃ।
(২) তিন মসজিদ ব্যতীত অধিক নেকীর আশায় অন্য কোন মসজিদে সফর করা

অধিক ছওয়াবের আশায় অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন মসজিদে ভ্রমণ করে থাকে। মসজিদে বরকত বা মৃত ব্যক্তির ফয়েয পাওয়ার আশায় এমনটি করে থাকে। অথচ হাদীছে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ  قَالَ لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُوْلِ  وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিনটি মসজিদ ছাড়া ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। মসজিদুল হারাম, মসজিদে রাসূল (ছাঃ) এবং মসজিদুল আক্বছা।[1]

অতএব বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে বরকতের আশায় বেশী নেকী অর্জনের জন্য উক্ত তিন মসজিদ ছাড়া পৃথিবীর কোন মসজিদে যাওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে যাওয়ার প্রবণতা বর্তমানে বেশী দেখা যাচ্ছে। অথচ রাসূল (ছাঃ) দেড় হাযার বছর পূর্বেই এই অভ্যাসের বিরুদ্ধে বলে গেছেন।

[1]. ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯, ১/১৫৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১৬, ২/৩২৭ পৃঃ); মিশকাত হা/৬৯৩, পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৪১, ২/২১৪ পৃঃ।
(৩) কবরস্থানে মসজিদ তৈরি করা এবং সেখানে ছালাত আদায় করা

বিভিন্ন দেশে করবস্থানকে লক্ষ্য করে অসংখ্য মসজিদ গড়ে উঠেছে। হাযার কিংবা শত বছর পূর্বে মারা গেছেন এমন কোন খ্যাতনামা আলেম বা পরহেযগার ব্যক্তির কবরকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল পাকা করে তার উপরে সৌধ নির্মাণ করেছে এবং সেখানে মসজিদ তৈরি করেছে। এভাবে যুগের পর যুগ বিনাপূজির বিশাল ব্যবসা চলছে। এই সমস্ত স্থানে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে কোটি কোটি মানুষ ছালাত আদায় করছে। কখনো কবরকে সামনে করে, কখনো ডানে কিংবা কখনো বামে করে। আবার কখনো পিছনে করে। অথচ এটা কবরস্থান। এ ধরনের স্থানে কস্মিনকালেও ছালাত হবে না।

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  الْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدٌ إِلَّا الْمَقْبَرَةَ وَالْحَمَّامَ.

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পৃথিবীর পুরোটাই মসজিদ। তবে কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।[1]

উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেন, কবর ক্বিবলার সামনে থাক কিংবা ডানে থাক, বামে থাক বা পিছনে থাক সে স্থানে ছালাত হবে না।[2] কারণ কবরস্থান তাকেই বলা হয়, যেখানে মানুষ দাফন করা হয়।[3] তাছাড়া কবরের মাঝে ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  عَنِ الصَّلاَةِ بَيْنَ القُبُوْرِ.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কবরের মাঝে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।[4]

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উপমহাদেশে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মাযার তৈরি হয়েছে। আর সেগুলোতে একাধিক মসজিদও আছে। যা মৃত পীরকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাকে লক্ষ্য করে প্রত্যেক বছর উরস করা হয়। লাখ লাখ মানুষের ভীড় জমে। এই আনন্দ অনুষ্ঠান করে তাকে মূর্তিতে পরিণত করা হয়েছে। আর এই তীর্থস্থানেই মানুষ কোটি কোটি টাকা, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি নযর-নেওয়ায করছে। যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মৃত পীরকে খুশি করা। উক্ত স্থান সমূহে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ছালাত আদায় করা পরিষ্কার হারাম।

عَنْ جُنْدُبٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ  أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوْا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.

জুনদুব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদে পরিণত করো না। নিশ্চয় আমি তোমদেরকে এটা থেকে নিষেধ করছি।[5]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا وَلاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِىْ حَيْثُ كُنْتُمْ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর। তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।[6]

অন্য হাদীছে এসেছে, لَا تَتَّخِذُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا ‘তোমরা আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না’।[7]

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ اللهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.

আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ইবাদত করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন গযব বর্ষণ করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে’।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  اللهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُصَلًّى لًهُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.

যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ছালাত আদায় করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন শাস্তি বর্ষণ করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।[9]

عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং এর উপর সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।[10]

عَنْ أَبِىْ مَرْثَدِ الْغَنَوِىِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُوْلُ لاَ تُصَلُّوْا إِلَى الْقُبُوْرِ وَلاَ تَجْلِسُوْا عَلَيْهَا.

আবু মারছাদ গানাবী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কবরের দিকে ছালাত আদায় কর না এবং তার উপর বস না।[11]

বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, তিনি তাঁর কবরস্থানকে উরস বা আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দানের জন্য আল্লাহর নিকট বদ দু‘আ করেছেন। তাহলে সাধারণ লোকদের কবরকে কিভাবে মসজিদের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে? তাদের কবরস্থানে কিভাবে উরস করা যাবে?

এ সমস্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মাযার-খানকা তৈরি হয়েছে? সেখানে মসজিদ তৈরি করে কেন কোটি কোটি মানুষের ঈমান হরণ করা হচ্ছে? কবরকে সিজদা করে, সেখানে মাথা ঠুকে আল্লাহর তাওহীদী চেতনাকে কেন নস্যাৎ করা হচ্ছে? তাদের কর্ণকুহরে এই সমস্ত বাণী কেন প্রবেশ করে না? কারণ হল, প্রতিনিয়ত তাদেরকে নগ্ন জিন শয়তান মূর্তিপূজা করতে উৎসাহিত করছে। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’।[12] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِنْ يَدْعُوْنَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَرِيْدًا ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা কেবল নারীদের আহবান করে। বরং তারা বিদ্রোহী শয়তানকে আহবান করে’ (নিসা ১১৭)। নিম্নের হাদীছে আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে-

عَنْ أَبِى الطُّفَيْلِ قَالَ لَمَّا فَتَحَ رَسُوْلُ اللهِ  مَكَّةَ بَعَثَ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ إِلَى نَخْلَةٍ وَكَانَتْ بِهَا الْعُزَّى فَأَتَاهَا خَالِدٌ وَكاَنَتْ عَلَى ثَلاَثَ سَمَرَاتٍ فَقَطَعَ السَّمَرَاتِ وَهَدَمَ الْبَيْتَ الَّذِىْ كَانَ عَلَيْهَا ثُمَّ أَتَى النَّبِىَّ  فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ ارْجِعْ فَإِنَّكَ لَمْ تَصْنَعْ شَيْئًا فَرَجَعَ خَالِدٌ فَلَمَّا أَبْصَرَتْ بِهِ السَّدْنَةُ وَهُمْ حَجَبَتْهَا أَمْعَنُوْا فِى الْجَبَلِ وَهُمْ يَقُوْلُوْنَ يَا عُزَّى فَأَتَاهَا خَالِدٌ فَإِذَا هِىَ اِمْرَأَةٌ عُرْيَانَةٌ نَاشِرَةٌ شَعْرَهَا تَحْتَفِنُ التُّرَابَ عَلَى رَأْسِهَا فَعَمَّمَهَا بِالسَّيْفِ حَتَّى قَتَلَهَا ثُمَّ رَجَعَ إِلَى النَّبِىِّ  فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ تِلْكَ الْعُزَّى.

আবু তোফাইল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-কে একটি খেজুর গাছের নিকট পাঠালেন। সেখানে উযযা নামক মূর্তি ছিল। খালিদ (রাঃ) সেখানে আসলেন। মূর্তিটি তিনটি বাবলা গাছের উপর ছিল। তিনি সেগুলো কেটে ফেললেন এবং তার উপরে তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে এসে খবর দিলেন। তিনি বললেন, ফিরে যাও, তুমি কোন অপরাধ করোনি। অতঃপর খালিদ (রাঃ) ফিরে গেলেন। যখন খালিদ (রাঃ)-কে পাহারাদাররা দেখল তখন তারা ঐ মূর্তিকে পাহাড়ের মধ্যে রক্ষা করার জন্য বেষ্টন করে ঘিরে ফেলল এবং হে উযযা! বলে ডাকতে লাগল। খালিদ (রাঃ) কাছে এসে বিস্তৃত চুল বিশিষ্ট এক নগ্ন মহিলাকে দেখতে পেলেন, যার মাথা কাদায় ল্যাপ্টানো। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন এবং হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে খবর দিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটাই সেই উযযা।[13] উল্লেখ্য যে, শয়তানের পরামর্শেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে।[14]

শয়তান জিনের রূপ ধারণ করে প্রত্যেক মূর্তির মাঝে অবস্থান করে এবং মানুষকে এভাবেই পথভ্রষ্ট করে। এজন্যই কা‘বার চতুর্পাশ্বে স্থাপিত ৩৬০ মূর্তিকে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ) মুহূর্তের মধ্যে নিজ হাতে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলেন।[15] পিতা ইবরাহীম (আঃ) যেমন মূর্তি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন (আম্বিয়া ৫৭-৫৮) যোগ্য সন্তান হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও তাই করলেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করার জন্য এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেন তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা হয়।[16] আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন, لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ ‘তুমি কোন মূর্তি না ভাঙ্গা পর্যন্ত ছাড়বে না এবং ছাড়বে না কোন উঁচু কবর যতক্ষণ না তা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে।[17] উক্ত নির্দেশের কারণে ছাহাবায়ে কেরামও শিরকের আস্তানাকে এক মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। শিরকের শিখন্ডী উপড়ে ফেলেছেন।

عَنْ نَافِعٍ قَالَ بَلَغَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَنَّ أُنَاسًا يَأْتُوْنَ الشَّجَرَةَ الَّتِيْ بُوْيِعَ تَحْتَهَا قَالَ فَأَمَرَ بِهَا فَقُطِعَتْ

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) এ মর্মে জানতে পারলেন যে, যে গাছের নীচে রাসূল (ছাঃ) বায়‘আত নিয়েছিলেন ঐ গাছের কাছে মানুষ ভীড় করছে। তখন তিনি নির্দেশ দান করলে কেটে ফেলা হয়।[18]

অতএব মসজিদের নামে যেভাবে মূর্তি ও কবরপূজা চলছে তা প্রাচীন যুগের শিরকের ঘাটির শামিল। মুসলিম উম্মাহকে সচেতনভাবে সেগুলো ত্যাগ করতে হবে। কা‘বা চত্তর থেকে রাসূল (ছাঃ) যেভাবে মূর্তি অপসারণ করেছিলেন সেভাবে তা অপসারণ করতে হবে। ছালাতের স্থানগুলোকে যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত করতে হবে।

[1]. তিরমিযী হা/৩১৭, ১/৭৩ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৭, পৃঃ ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮১, ২/২২৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘মসজিদ সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[2]. আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২১৪; আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৩৫৭- وسواء في ذلك أ كان القبر قبلته أو عن يمينه أو عن يساره و خلفه لكن استقباله بالصلاة أشد لقوله صلى الله عليه وسلم لعنة الله على اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد ।

[3]. আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৩৫৭- المقبرة وهي الموضع الذي دفن فيه إنسان واحد فأكثر لقوله عليه الصلاة والسلام الأرض كلها مسجد إلا المقبرة الحمام ।

[4]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৩১৩, সনদ ছহীহ।

[5]. ছহীহ মুসলিম হা/১২১৬, ১/২০১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৬৯), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/৭১৩, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬০, ২/২২০ পৃঃ।

[6]. আবুদাঊদ হা/২০৪২, ১/২৭৯ পৃঃ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০০; নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬, পৃঃ ৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৬৫, ২/৩১১ পৃঃ।

[7]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪২; আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ১১৩।

[8]. মালেক মুওয়াত্ত্ব হা/৫৯৩, সনদ ছহীহ।

[9]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ।

[10]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৯, ১/৩১২ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২ (ইফাবা হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৬, ৪/৭৩ পৃঃ।

[11]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৯৫, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১২০); মিশকাত হা/১৬৯৮, পৃঃ ১৪৮।

[12]. আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ হা/১১৫৭।

[13]. নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৯০২, সনদ ছহীহ।

[14]. সূরা নূহ ২৩; ছহীহ বুখারী হা/৪৯২০, ২/৭৩২ পৃঃ, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, সূরা নূহ।

[15]. বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ, ‘মাযালেম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; মুসলিম হা/৪৭২৫- باب إِزَالَةِ الأَصْنَامِ مِنْ حَوْلِ الْكَعْبَةِ।

[16]. ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০০), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫২- أَرْسَلَنِىْ بِصِلَةِ الأَرْحَامِ وَكَسْرِ الأَوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَىْءٌ।

[17]. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৭, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১১২); মিশকাত হা/১৬৯৬, পৃঃ ১৪৮।

[18]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৫; তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ৮৩।
(৪) মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া

(৪) মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া :

মৃত ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান ও ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পায়, এমন ধারণা করে সাধারণতঃ এটা করা হয়। অনেকে এ জন্য অছিয়তও করে যান। অথচ এগুলো ভ্রান্ত আক্বীদা মাত্র। এভাবে অনেক মসজিদকে কবরস্থানে পরিণত করা হয়েছে। মূলতঃ মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে কবর দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। না জেনে কবর দেওয়া হলে সেই কবরকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে।[1] আর যদি সেই কবর পুরাতন হয় তাহলে মাটির সাথে সমান করে দিতে হবে এবং ঐ জায়গা সাধারণ জায়গার মত ব্যবহার করতে হবে।[2] অন্যথা সেখানে ছালাত হবে না। এছাড়া মসজিদের পার্শ্বে পৃথক জমিতে কবর থাকলে অবশ্যই প্রাচীর দিয়ে মসজিদকে আলাদা করে নিতে হবে। মূলকথা মসজিদকে কবরের ধরাছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।

[1]. ছহীহ বুখারী হা/১৩৫১, ১/১৮০ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬৯, ২/৪০৮ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭ ও হা/৪২৮, ১/৬১ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮।

[2]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১ পৃঃ; তালখীছু আহকামিল জানাইয, পৃঃ ৯১।
(৫) মসজিদের দেওয়ালে ‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ লেখা, কা‘বা ও মসজিদে নববীর নকশা আকা বা ছবি স্থাপন করা কিংবা চাঁদ, তারা ও যোগ চিহ্ন সহ বিভিন্ন রকমের নকশা করা

(৫) মসজিদের দেওয়ালে ‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ লেখা, কা‘বা ও মসজিদে নববীর নকশা আকা বা ছবি স্থাপন করা কিংবা চাঁদ, তারা ও যোগ চিহ্ন সহ বিভিন্ন রকমের নকশা করা :

‘আল্লাহু’ ও ‘মুহাম্মাদ’ লেখা প্রায় মসজিদে দেখা যায়। এটা শিরকী আক্বীদার কারণে সমাজে চালু আছে। এর দ্বারা আল্লাহ ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সমমর্যাদার অধিকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। পথভ্রষ্ট পীর-ফকীরদের আক্বীদা হল, ‘আহাদ হয়ে যিনি আরশে ছিলেন তিনিই আহমাদ হয়ে মদ্বীনায় অবতরণ করেন’। কারণ যিনি আহমাদ তিনিই আহাদ। শুধু মাঝের মীমের পার্থক্য (নাঊযুবিল্লাহ)। তাছাড়া আরবীতে ‘আল্লাহ মুহাম্মাদ’ এক সংগে লিখলে অর্থ হয়- আল্লাহই মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদই আল্লাহ। যা পরিষ্কার শিরক। অতএব এ সমস্ত বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। বহু মসজিদের চারপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম লেখা আছে, কোন মসজিদে ‘আয়াতুল কুরসী’, সূরা ইয়াসীন ইত্যাদি লেখা থাকে। এগুলো সবই বাড়াবাড়ি এবং লৌকিকতার শামিল।

عَنْ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لاَ تُطْرُوْنِىْ كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ .

ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রীস্টানরা ঈসা ইবনু মারইয়ামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। আমি কেবল তাঁর বান্দা। সুতরাং তোমরা বলো, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)’।[1]

কা‘বা কিংবা মসজিদে নববীর নকশা অাঁকা বা ছবি স্থাপন করা কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী কাজ। মুছল্লী সিজদা করে আল্লাহকে কা‘বা ঘরের পাথরকে নয়। কা‘বা শুধু মুসলিমদের ক্বিবলা। পূর্বের অনেক মসজিদে বিভিন্ন প্রাণীরও নকশা দেখা যায়। এগুলো ছালাতের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এমন সব ক্যালেন্ডার ঝুলানো হচ্ছে, যেখানে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে মাছ বা কোন জীবের ক্যলিগ্রাফী তৈরি করা হয়েছে, যা মানুষ সহজে বুঝতে পারে না। এগুলো সবই ছালাতের একাগ্রতা বিনষ্ট করে।

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى فِىْ خَمِيْصَةٍ لَهَا أَعْلاَمٌ فَنَظَرَ إِلَى أَعْلاَمِهَا نَظْرَةً فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ اذْهَبُوْا بِخَمِيْصَتِىْ هَذِهِ إِلَى أَبِى جَهْمٍ وَائْتُوْنِىْ بِأَنْبِجَانِيَّةِ أَبِى جَهْمٍ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِىْ آنِفًا عَنْ صَلاَتِىْ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা একটি চাদরে ছালাত আদায় করেন, যাতে নকশা ছিল। তিনি উক্ত নকশার দিকে একবার দৃষ্টি দেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বললেন, তোমরা আমার এই চাদরটি আবু জাহামের নিকট নিয়ে যাও এবং আম্বেজানিয়াহ কাপড়টি নিয়ে এসো। কারণ এটা এখনই আমাকে আমার ছালাত থেকে বিরত রেখেছিল। অন্য বর্ণনায় এসেছে, كُنْتُ أَنْظُرُ إِلَى عَلَمِهَا وَأَنَا فِى الصَّلاَةِ فَأَخَافُ أَنْ تَفْتِنَنِىْ ‘আমি ছালাত অবস্থায় এর নকশার দিকে তাকাচ্ছিলাম। কারণ উহা আমাকে ফেৎনার মধ্যে ফেলে দিবে বলে আশংকা করছিলাম’।[2] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِىُّ أَمِيْطِىْ عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ تَصَاوِيْرُهُ تَعْرِضُ فِى صَلاَتِىْ.

আনাস (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর একটি পর্দা ছিল। তিনি সেটা দ্বারা তার ঘরের এক পার্শ্ব ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) তাকে বলেন, আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দাটা সরিয়ে নাও। কারণ ছালাতের মধ্যে এই ছবিগুলো আমার সামনে বারবার আসছে।[3]

নকশা দেখে রাসূল (ছাঃ) যদি ফেতনার আশংকা করেন, তাহলে আমাদের ছালাতের অবস্থা কী হবে? আমরা কি তাঁর চেয়ে বেশী তাক্বওয়াশীল? বিভিন্ন বস্ত্তকে যদি সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া জায়েয হত, তবে সবচেয়ে সম্মানের অধিকারী হত হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথর। কিন্তু ওমর (রাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

عَنْ عَابِسِ بْنِ رَبِيْعَةَ عَنْ عُمَرَ أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الْحَجَرِ الأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ فَقَالَ إِنِّىْ أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ وَلَوْلاَ أَنِّىْ رَأَيْتُ النَّبِىَّ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ .

‘আবেস ইবনু রাবী‘আহ ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদা কালো পাথরের (হাজরে আসওয়াদ) নিকট আসেন এবং তাকে চুম্বন করেন। অতঃপর বলেন, নিশ্চয়ই আমি জানি তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি কোন ক্ষতিও করতে পারো না কোন উপকারও করতে পারো না। আমি যদি রাসূল (ছাঃ)-কে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’।[4]

চাঁদ-তারাকে ইসলামের নিশান মনে করে মসজিদের দেওয়ালে খোদাই করা হয়। অথচ উক্ত ধারণা সঠিক নয়। এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং আল্লাহকেই ভক্তি করতে হবে এবং তাঁর প্রশংসা করতে হবে। কোন কোন মসজিদে যোগ চিহ্ন দেওয়া থাকে নিদর্শন স্বরূপ। অথচ এটা খ্রীস্টানদের প্রতীক।[5] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلَّهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ.

‘আর রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র তাঁর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না। বরং তোমরা সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে থাকো’ (হামীম সাজদাহ/ফুচ্সালাত ৩৭)। সুতরাং চন্দ্র-সূর্য ও তারকা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়। এর দ্বারা নকশা করে মসজিদকে অতিরঞ্জিত করার পক্ষে শরী‘আতের অনুমোদ নেই।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أُمِرْتُ بِتَشْيِيْدِ الْمَسَاجِدِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَتُزَخْرِفُنَّهَا كَمَا زَخْرَفَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মসজিদ সমূহকে উচ্চ ও চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, অবশ্যই তোমরা মসজিদগুলোকে চাকচিক্যময় করবে যেভাবে ইহুদী-খ্রীস্টানরা (গীর্জাকে) চাকচিক্যময় করেছে’।[6]

বর্তমানে মানুষ মসজিদের নকশা করতে অহংকারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অথচ এটাকে রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের আলামত হিসাবে অভিহিত করেছেন।

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِىَّ قَالَ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَتَبَاهَى النَّاسُ فِى الْمَسَاجِدِ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মসজিদ নিয়ে পরস্পরে গর্ব প্রকাশ করা ক্বিয়ামতের আলামত’।[7]

রাসূল (ছাঃ) ছালাতের স্থানকে যাবতীয় ত্রুটিমুক্ত রাখতে কা‘বা চত্বর থেকে সমস্ত মূর্তি ও ছবি অপসারণ করেছিলেন।[8] মুসলিম উম্মাহর দুর্ভাগ্য হল, তারা আজ সেই ছালাতের স্থানকে বিভিন্নরূপে সাজিয়ে ছালাতের অনুপোযোগী করে তুলছে। পূর্বের মসজিদগুলো ছিল কাঁচা কিন্তু মানুষের ঈমান ছিল পাকা, হৃদয় ছিল তাক্বওয়ায় পরিপূর্ণ। বর্তমানে মসজিদগুলো অত্যাধুনিক টাইলস, গ্লাস, এসি, দামী পাথর দ্বারা সজ্জিত করা হচ্ছে, মুছল্লীর পোশাক ও জায়নামায হচ্ছে ঝকঝকে উজ্জ্বল। কিন্তু দেহের শ্রেষ্ঠ অংশ অন্তরটা কলুষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাক্বওয়া ও ঈমানের পরিচর্যা না হয়ে চলছে কেবল বস্ত্তর পরিচর্যা এবং লৌকিকতার প্রতিযোগিতা। অতএব সর্বাগ্রে নিজের হৃদয়কে ঈমান ও তাক্বওয়ার টাইলস দ্বারা উজ্জ্বল করতে হবে, একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতার মাধ্যমে স্বচ্ছ ও সুন্দর করতে হবে।

[1]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৩৪৪৫, ১/৪৯০ পৃঃ, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮; মিশকাত হা/৪৮৯৭, পৃঃ ৪১৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬৮০, ৯/১০৭ পৃঃ।

[2]. ছহীহ বুখারী হা/৩৭৩, ১/৫৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৬৬, ২/২১৩ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪; ছহীহ মুসলিম হা/১২৬৭; মিশকাত হা/৭৫৭, পৃঃ ৭২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০১, ২/২৩৮, ‘সতর ঢাকা’ অনুচ্ছেদ।

[3]. ছহীহ বুখারী হা/৩৭৪, ১/৫৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৬৭, ২/২১৩ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪; মিশকাত হা/৭৫৮, পৃঃ ৭২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০২, ২/২৩৮, ‘সতর ঢাকা’ অনুচ্ছেদ।।

[4]. ছহীহ বুখারী হা/১৫৯৭, ১/২১৭ পৃঃ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫০; ছহীহ মুসলিম হা/৩১২৬; মিশকাত হা/২৫৮৯, পৃঃ ২২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৪৭৩, ৫/২১৪ পৃঃ।

[5]. ছহীহ মুসলিম হা/৪০৮, ১/৮৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৮৬ ও ২৮৭), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৩; মিশকাত হা/৫৫০৬।

[6]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪৪৮, ১/৬৫ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৭১৮, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬৫, ২/২২২।

[7]. আবুদাঊদ হা/৪৪৯, ১/৬৫ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৮৯; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৭১৯, পৃঃ ৬৯।

[8]. ছহীহ বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ, ‘মাযালেম’ অধ্যায়; ছহীহ মুসলিম হা/৪৭২৫, ২/১০৩ পৃঃ, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২।
(৬) ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস দ্বারা মিম্বর তৈরি করা ও তিন স্তরের বেশী স্তর বানানো

(৬) ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস দ্বারা মিম্বর তৈরি করা ও তিন স্তরের বেশী স্তর বানানো :

অধিকাংশ মসজিদে মূল্যবান পাথর বা টাইলস দ্বারা মিম্বার তৈরি করা হয়েছে। অথচ সুন্নাত হল কাঠ দ্বারা মিম্বার তৈরী করা এবং মিম্বারের তিনটি স্তর হওয়া। যেমন হাদীছে এসেছে,

أَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ إِلَى فُلَانَةَ امْرَأَةٍ مِنْ الْأَنْصَارِ قَدْ سَمَّاهَا سَهْلٌ مُرِي غُلَامَكِ النَّجَّارَ أَنْ يَعْمَلَ لِي أَعْوَادًا أَجْلِسُ عَلَيْهِنَّ إِذَا كَلَّمْتُ النَّاسَ فَأَمَرَتْهُ فَعَمِلَهَا مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ ثُمَّ جَاءَ بِهَا فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ  فَأَمَرَ بِهَا فَوُضِعَتْ هَا هُنَا.

‘রাসূল (ছাঃ) জনৈক আনছারী মহিলার নিকট লোক পাঠান। তার নাম সাহল। এই মর্মে যে, তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রী গোলামকে নির্দেশ দাও। সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের আসন তৈরি করে। যার উপর বসে আমি জনগণের সাথে কথা বলব। ঐ মহিলা তার গোলামকে উক্ত মর্মে নির্দেশ দিলে সে গাবার ঝাউ কাঠ দিয়ে তা তৈরি করে নিয়ে আসে। অতঃপর মহিলা তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেয়। রাসূল (ছাঃ) তাকে এই স্থানে স্থাপন করার নির্দেশ দেন।[1]

উক্ত হাদীছ ইবনু খুযায়মাতে ছহীহ সনদে এসেছে, فَعَمِلَ هَذِهِ الثَّلاَثَ الدَّرَجَاتِ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ অতঃপর সে গাবার ঝাউ গাছ থেকে তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বর তৈরি করেছিল।[2] ত্বাবারাণীতে এসেছে, তিন স্তর বিশিষ্ট করার জন্য রাসূল (ছাঃ)-ই নির্দেশ দিয়েছিলেন।[3] এছাড়া রাসূল (ছাঃ) একদা মিম্বরের তিন স্তরে উঠে তিনবার ‘আমীন’ বলেছিলেন মর্মেও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[4]

অতএব মিম্বর তিন স্তরের বেশী করা সুন্নাতের বরখেলাফ।[5] অনুরূপ ইট, পাথর ও টাইলস দ্বারা তৈরি মিম্বারও সুন্নাতের পরিপন্থী। রাসূল (ছাঃ) কাঠ দ্বারা মিম্বার তৈরি করার জন্য বলেছিলেন। ইমাম বুখারীও সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।[6] তাই ঐ সমস্ত আধুনিক মিম্বার ত্যাগ করে তিনস্তর বিশিষ্ট কাঠের মিম্বর তৈরি করে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ।

[1]. ছহীহ বুখারী হা/৯১৭, ১/১২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৭১, ২/১৮৪ পৃঃ), ‘জুম‘আ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১১১৩, পৃঃ ৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৪৫, ৩/৬৫, ‘কাতারে দাঁড়ানো’ অনুচ্ছেদ।

[2]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫২১; ইবনু মাজাহ হা/১৪১৪, পৃঃ ১০২; মুসনাদে আহমাদ হা/২২৯২২; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬; সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮।

[3]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৫৭৪৮; সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮।

[4]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬; সনদ ছহীহ।

[5]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ।

[6]. বুখারী হা/৪৪৮, ১/৬৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৩৫, ১/২৪৬ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬৪।

(৭) পিলার বা দেওয়ালের মাঝে কাতার করা :

সমাজে বহু মসজিদ আছে এবং বর্তমানেও অনেক মসজিদ তৈরি হচ্ছে, যেগুলোতে কাতারের মাঝে পিলার দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন মসজিদে কাতারের মাঝে ওয়াল রয়েছে এবং অপর পার্শ্ব থেকে কাতার করা হয়। অথচ জামা‘আতে ছালাত আদায় করার সময় কাতারের মাঝে পিলার বা ওয়াল দেওয়া নিষিদ্ধ।

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كُنَّا نُنْهَى أَنْ نَصُفَّ بَيْنَ السَّوَارِىْ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ .

মু‘আবিয়াহ ইবনু কুর্রা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে আমাদেরকে নিষেধ করা হ’ত আমরা যেন খুঁটির মাঝে ছালাতের কাতার না করি’।[1] আলবানী (রহঃ) বলেন,

وَ هَذَا الْحَدِيْثُ نَصٌّ صَرِيْحٌ فِيْ تَرْكِ الصَّفِّ بَيْنَ السَّوَارِىْ وَ أَنَّ الْوَاجِبَ أَنْ يَّتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ .

‘এই হাদীছ দুই খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী না হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল। তাই ওয়াজিব হল খুঁটি থেকে সামনে কিংবা পিছনে দাঁড়ানো।[2] উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝে দাঁড়িয়ে একাকী ছালাত আদায় করা যাবে।[3]

[1]. ইবনু মাজাহ হা/১০০২, পৃঃ ৭০, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ।

[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ।

[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৪ ও ৫০৫, ১/৭২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৮০ ও ৪৮১, ১/২৬৯ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৬।

(৮) মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি বসে পড়া :

এই অভ্যাস সুন্নাতের সরাসরি বিরোধী এবং মসজিদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার শামিল। রাসূল (ছাঃ) এটাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ السُّلَمِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ.

আবু ক্বাতাদা সুলামী থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে’।[1]

عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ.

আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন না বসে, যতক্ষণ দুই রাক‘আত ছালাত না পড়বে’।[2] মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা কত গুরুত্বপূর্ণ নিম্নের হাদীছটি লক্ষণীয় :

عَنْ أَبِى قَتَادَةَ قَالَ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ بَيْنَ ظَهْرَانَىِ النَّاسِ قَالَ فَجَلَسْتُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ تَجْلِسَ قَالَ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ رَأَيْتُكَ جَالِسًا وَالنَّاسُ جُلُوْسٌ قَالَ فَإِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِ.

আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি একদা মসজিদের প্রবেশ করলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) লোকদের মাঝে বসেছিলেন। আমি গিয়ে বসে গেলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, বসার আগে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? আমি বললাম, আপনাকে এবং জনগণকে বসে থাকতে দেখলাম তাই। তখন তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন যেন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় না করা পর্যন্ত না বসে।[3]

এমনকি জুম‘আর দিনে খুৎবা অবস্থায় যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তবুও তাকে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে বসতে হবে।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ يَخْطُبُ فَقَالَ أَصَلَّيْتَ قَالَ لَا قَالَ قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ.

জাবের (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি ছালাত আদায় করেছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, তুমি দাঁড়াও দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর’।[4]

[1]. ছহীহ বুখারী হা/৪৪৪, ১/৬৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৩১, ১/২৪৪ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম হা/১৬৮৭; মিশকাত হা/৭০৪, পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৫২, ২/২১৭ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[2]. ছহীহ বুখারী হা/১১৬৩, ১/১৫৬ পৃঃ, ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত’ অনুচ্ছেদ-২৫।

[3]. ছহীহ মুসলিম হা/১৬৮৮, ১/২৪৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫২৫), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১।

[4]. ছহীহ বুখারী হা/৯৩০ ও ৯৩১, ১/১২৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৮৩ ও ৮৮৪, ২/১৯০ ও ১৯১ পৃঃ), ‘জুম‘আর ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; ছহীহ মুসলিম হা/২০৫৫ ও ২০৫৬, ১/২৮৭ পৃঃ, ‘জুম‘আ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫।
(৯) সর্বদা মসজিদে নির্দিষ্ট স্থানে ছালাত আদায় করা

(৯) সর্বদা মসজিদে নির্দিষ্ট স্থানে ছালাত আদায় করা :

অনেকের মাঝে এই অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়। এটা ইসলামে নিষিদ্ধ।

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِبْلٍ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ ثَلَاثٍ عَنْ نَقْرَةِ الْغُرَابِ وَعَنْ فِرْشَةِ السَّبُعِ وَأَنْ يُوَطِّنَ الرَّجُلُ الْمَكَانَ الَّذِي يُصَلِّي فِيْهِ كَمَا يُوَطِّنُ الْبَعِيْرُ.

আব্দুর রহমান ইবনু শিবল বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন : (১) ছালাতের মধ্যে কাকের মত ঠোকাতে (২) চতুষ্পদ জন্তুর মত হাত বিছিয়ে দিতে এবং (৩) ছালাত আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে, যেমন উট তার স্থান নির্ধারণ করে’।[1] মুছল্লী ফরয ছালাত যেখানে আদায় করবে, সেখান থেকে ডানে বা বামে, সামনে বা পিছনে সরে গিয়ে সুন্নাত ছালাত আদায় করার নির্দেশ হাদীছে এসেছে।[2] এমনকি ইমামকেও তার স্থানে সুন্নাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।[3]

[1]. ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/১৪২৯, পঃ ১০৩; আবুদাঊদ হা/৮৬২।

[2]. ইবনু মাজাহ হা/১৪২৭, পৃঃ ১০৩; আবুদাঊদ হা/১০০৬, ১/১৪৪ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সুন্নাত ছালাত ফরয ছালাতের স্থান থেকে সরে গিয়ে পড়া’ অনুচ্ছেদ।

[3]. আবুদাঊদ হা/৬১৬, ১/৯১; ইবনু মাজাহ হা/১৪২৮, পৃঃ ১০৩।
(১০) বেশী নেকীর আশায় বড় মসজিদে গমন করা

(১০) বেশী নেকীর আশায় বড় মসজিদে গমন করা :

অনেকে বাড়ীর পার্শ্বে ছোট মসজিদ রেখে বেশী নেকীর আশায় বড় মসজিদে গমন করেন। এটি শরী‘আত বিরোধী আক্বীদা। এই আক্বীদা সঠিক হলে বড় মসজিদ ছাড়া ছোট মসজিদ তৈরি করা নাজায়েয হয়ে যেত। উল্লেখ্য, ওয়াক্তিয়া মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে ৫০০ গুণ নেকী বেশী হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ছহীহ নয়, যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে।[1] তাই তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে বেশী নেকীর আশায় যাওয়া যাবে না। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আক্বছা।[2]

[1]. ইবনু মাজাহ হা/১৪১৩, পৃঃ ১০২; মিশকাত হা/৭৫২, পৃঃ ৭২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৯৬, ২/২৩৫ পৃঃ; আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৫৮০।

[2]. ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯, ১/১৫৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১৬, ২/৩২৭ পৃঃ); মিশকাত হা/৬৯৩, পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৪১, ২/২১৪ পৃঃ।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »