মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘স্বর্গীয়’, ‘বেহেশতী’, বা ‘জান্নাতী’ লেখা বা বলা বৈধ কি?

নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। (ইবনে উসাইমিন) যেহেতু তা গায়েবী খবর, আর তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। অবশ্য যার শরীয়ত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত, তাঁদের কথা স্বতন্ত্র।

মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘মরহুম’ বা ‘ মগফুর’ লেখা বা বলা বৈধ কি?

নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। ওই ক্ষেত্রে নাম উল্লেখের পরে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বা ‘গাফারাল্লাহু লাহ’ বলা বা লিখা বিধেয়। (ইবনে বাজ)

মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘শহীদ’ লেখা বা বলা বৈধ কি?

নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। (ইবনে উসাইমিন) যেহেতু তা গায়েবী খবর, আর তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। অবশ্য যার শরীয়ত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত, তাঁদের কথা স্বতন্ত্র।

গোনাহের কাজে প্রতিবাদ করা হলে কারো ‘আমি স্বাধীন’ বলা বৈধ কি?

এই পৃথিবীর কোন মানুষই সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। প্রত্যেকেই কোন না কোন পরাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য। ব্যক্তি স্বাধীনতা, চিন্তা স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি লাগামহীন নয়। প্রত্যেক মুসলিম মহান আল্লাহর পরাধীন গোলাম। তার আদেশ নিষেধ পালন করার ব্যাপারে কেউই স্বাধীন নয়। তাঁদের যখন কেউ আল্লাহর গোলামী থেকে ছাড়া পেতে চায়, তখন সে শয়তান অথবা প্রবৃত্তির খেয়াল খুশির গোলামে পরিণত হয়ে যায়। (ইবনে উসাইমিন)

পাপ কাজে সতর্ক করলে অনেকে বলে, ‘আল্লাহ ক্ষমাশীল’। তাঁদের এমন আশাবাদীর কথা বলা বৈধ কি?

তাঁদের জন্য এমন আশাবাদীর কথা বলে পাপ নির্বিচল থাকা অবশ্যই বৈধ নয়। যেহেতু তাঁদের জানা দরকার যে, মহান আল্লাহর যেমন মহা ক্ষমাশীল, তেমন তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। তিনি বলেন,

“আমরা বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মম্ভেদ শাস্তি।’ ( হিজরঃ ৪৯-৫০)

“ তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (মায়িদাহঃ ৯৮)

সুতরাং তার একটা গুণবাচক দিকে ধরে থেকে অন্য দিকটা ভুলে যাওয়া আদৌ উচিৎ নয়। আশার সাথে ভয়ও থাকা উচিৎ। (ইবনে উসাইমিন)

পূর্ণ মু’মিনকে ‘মৌলবাদী’ বলে কটাক্ষ করা বৈধ কি?

যারা গৌণবাদী অথবা নকলবাদী তারাই সঠিক ইমানদারকে ‘মৌলবাদী’ বলে কটাক্ষ করে। তবে এ কটাক্ষতে মু’মিনদের গর্ব হওয়া উচিৎ। যেহেতু মৌলিক বিষয়সমুহ পালন না করলে কেউ মুক্তি পেতে পারবে না। (ইবনে উসাইমিন)।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আজ্ঞাবহ ধার্মিকদের প্রতি বিদ্রূপ হানার হুকুম কি?

আল্লাহ ও তদীয় রাসুলের আজ্ঞাবহ ধর্মভীরু মুসলিমকে ধর্মের যথার্থ অনুগত হওয়ার কারণে বিদ্রূপ করা হারাম এবং তা মানুষের জন্য বড় বিপদজনক আচরণ। কারণ এ কথার আশংকা থাকে যে, ধর্মভীরুদেরকে তাঁর ঐ অবজ্ঞা তাঁদের আল্লাহর দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকাকে অবজ্ঞা করার ফল হতে পারে। তখন তাদেরকে ঠাট্টা ব্যঙ্গ করার অর্থই হবে, তাঁদের সেই পথ ও তরিকাকে ঠাট্টা ব্যঙ্গ করা, যার উপর তারা প্রতিষ্ঠিত। যাতে তারা ঐ লোকেদের অনুরূপ হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

“এবং তুমি ওদেরকে প্রশ্ন করলে ওরা নিশ্চয় বলবে, আমরা তো আলাপ আলোচনা ও ক্রীড়া কৌতুক করেছিলাম। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও রাসুলকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন?’ দোষ স্খালনের চেষ্টা করো না, তোমরা তোমাদের ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গেছে।” (সূরা তাওবাহ ৬৫-৬৬ আয়াত)

উক্ত আয়াতটি মুনাফিকদের একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ করে অবতীর্ণ হয়। যারা রাসুল (সঃ) এবং তাঁর সাহাবাবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের ঐ কারিদলের মত আর কাউকে অধিক পেটুক , মিথ্যুক এবং রণভীরু দেখিনি।’ তখন আল্লাহ তাআলা তাঁদের জওয়াবে এই আয়াত কয়টি অবতীর্ণ করেছিলেন।

সুতরাং তাদেরকে সাবধান হওয়া উচিৎ, যারা হকপন্থীদেরকে নিয়ে- তারা ধর্মভীরু বলে- ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে থাকে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,

“দুষ্কৃতিকারীরা মুমিনদের উপহাস করত এবং যখন তাঁদের নিকট দিয়ে যেত, তখন বক্রদৃষ্টিতে ইশারা করত। ওরা যখন ওদের আপনজনের নিকট ফিরে আসত তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরত এবং যখন ওদের দেখত, তখন বলত, ‘নিশ্চয় ওরাই পথভ্রষ্ট ।’ ওদেরকে তো তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি। আজ বিশ্বাসী (মুমিন)গন উপহাস করেছে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) দলকে, সুসজ্জিত আসন হতে ওদেরকে অবলোকন করে। কাফেররা তাঁদের অকৃতকার্যের প্রতিফল পেল তো?” (সূরা মুত্বাফফিফিন/ ২৯-৩৬ আয়াত)

এক মহিলার অভ্যাস যে, সে তাঁর সন্তানদেরকে অভিশাপ ও গালিমন্দ করে থাকে। কখনো বা তাদেরকে প্রত্যেক ছোট বড় দোষে কথা দ্বারা, কখনো বা প্রহার করে কষ্ট দেয়। এই অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে আমি তাকে একাধিকবার উপদেশ দিয়েছি। কিন্তু সে উত্তরে বলেছে, ‘তুমিই ওদের স্পর্ধা বাড়ালে অথচ ওরা কত দুষ্ট।’ শেষ ফল এই দাঁড়াল যে, ছেলেরা তাকে অবজ্ঞা করে তাঁর কথা নেহাতই অগ্র্যাহ্য করতে লাগল। তাঁর বুঝে নীল যে, শেষ পরিণাম তো গালি ও প্রহার।
এই স্ত্রীর ব্যাপারে আমার ভূমিকা কি হতে পারে? এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে দ্বীনের নির্দেশ কি? যাতে সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দুরে সরে যাব এবং সন্তানরা তাঁর সঙ্গে থাকবে? অথবা আমি কি করব?

ছেলে মেয়েদেরকে অভিসম্পাত করা অন্যতম কবিরাহ গোনাহ; অনুরূপ অন্যান্যদেরকেও অভিশাপ করা, যারা এর উপযুক্ত নয়। নবী (সঃ) হতে শুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, তিনি বলেন, “মুমিনকে অভিশাপ করা তাকে হত্যা করার সমান।”

তিনি আরও বলেন, “অভিসম্পাতকারীরা কিয়ামতের দ্বীন সাক্ষী ও সুপারিশকারি হতে পারবে না।”

সুতরাং ঐ মহিলার তওবা করা ওয়াজেব এবং ছেলে মেয়েদেরকে গালি মন্দ করা থেকে তাঁর জিভকে হিফাজত করা আবশ্যিক। তাঁদের জন্য সৎপথ প্রাপ্তি ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে অধিক দুয়া করা তাঁর পক্ষে বিধেয়।

আর হে গৃহস্বামী! তোমার জন্য বিধেয়, স্ত্রীকে সর্বদা নসিহত করা ও সন্তারদেরকে অভিশাপ করা থেকে তাকে সাবধান করা। যদি নসিহত লাভদায়ক না হয়, তবে বিচ্ছিন্নতা (কথা না বলা, শয্যাত্যাগ করা ইত্যাদি) অবলম্বন করবে--- সেই বিচ্ছিন্নতা বড় ধৈর্যের সাথে ও সওয়াবের আশা রেখে অবলম্বন করবে; যা তাতে ফলদায়ক বলে বিশ্বাস করবে। আর তালাক দেওয়াতে অবশ্যই তাড়াহুড়া করবে না। (ইবনে বাজ)

কাউকে পাপকাজে বাধা দিতে গেলে তার কি ‘নিজের চরকায় তেল দাও’ বলা বৈধ?

কাউকে পাপকাজে বাধা দিতে গেলে বা তার অন্যায়ে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রতিবাদকারীদের ‘নিজের চরকায় তেল দাও’, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার’ ইত্যাদি বলে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। যেহেতু তার জবাবে বলা যায় যে, ‘আমরা পরের চরকায় তেল দিতেও আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে বাধা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এটা আমাদেরও ব্যক্তিগত ব্যাপারে।’ (ইবনে উসাইমিন)

‘পোড়া কপাল’, ‘কপালে লেখা’, ‘কপালে ছিল’, বা ‘কপাল খারাপ’ ইত্যাদি বলা বৈধ কি?

প্রত্যেকের ভাগ্য লেখা আছে ‘লাওহে মাহফুজ’- এ। সেটাই হল মুল ভাগ্যলিপি। মহান আল্লাহ বলেন,

“পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে, আমার তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে, নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ। (হাদিদঃ২২)

কিন্তু জীবনের তফসীলী ভাগ্য লেখা হয় মায়ের পেটে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের জন্য এক জন্যের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন যাবত বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপ ভাবে চল্লিশ দিনে জমাটবদ্ধ রক্তপিণ্ডের রূপ নেয়। পুনরায় তদ্রূপ চল্লিশ দিনে মাংসের টুকরায় রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর তার নিকট ফিরিশতা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে রূহ স্থাপন করা হয় চারটি কথা লেখার আদেশ দেয়া হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ঠ না পূর্ণবান হবে, তা লেখা হয়। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! (জন্মের পর) তোমাদের এক ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের মত কাজ কর্ম করতে থাকে এবং তার ও জান্নাতের মাঝে এক হাত মত তফাত থেকে যায়। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে; ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে এক হাত মত তফাত থাকে। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জান্নাতিদের মত ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করে; পরিণতিতে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” (বুখারি-মুসলিম)

কিন্তু লিখা হয় কোথায়? সে কথা অন্য বর্ণনায় পরিষ্কার করা হয়েছে। মহানবী (সঃ) বলেছেন,

“আল্লাহ যখন কোন মানব প্রাণ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, তখন মাতৃগর্ভে নিযুক্ত ফিরিশতা আরজ করেন, “হে প্রভু ! দুর্ভাগ্যবান, না সৌভাগ্যবান?’ সুতরাং আল্লাহ নিজ ফয়সালা বহাল করেন। অতঃপর তার দুই চোখের মাঝখানে তা লিখে দেন, যার সে সম্মুখীন হবে, এমনকি সেই মুসীবতও লিখে দেওয়া হয়, যা তাকে ক্লিষ্ট করবে।” (ইবনে হিব্বান ৬১৭৮, আবু য়্যা’লা ৫৭৭৫ নং, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৭/ ১১২)

বলা বাহুল্য, দুই চোখের মাঝখানে বা কপালে ভাগ্য লেখার কথা হাদিসে রয়েছে। তাই ‘কপালে ছিল’, ‘কপালের লেখা’ বা ‘কপাল খারাপ’ ইত্যাদি বলা দূষণীয় নয়। তবে ভাগ্য বা কপালকে গালি দেওয়া বৈধ নয়। যেমন ‘পোড়া কপাল’, ‘নিষ্ঠুর নিয়তি’ ইত্যাদি বলা বৈধ নয়।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »