بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৪৮/ আল-ফাতহ | Al-Fath | سورة الفتح আয়াতঃ ২৯ মাদানী
৪৮:১ اِنَّا فَتَحۡنَا لَكَ فَتۡحًا مُّبِیۡنًا ۙ﴿۱﴾
انا فتحنا لك فتحا مبینا ﴿۱﴾

নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি; আল-বায়ান

আমি তোমাকে দিয়েছি স্পষ্ট বিজয়। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have given you, [O Muhammad], a clear conquest Sahih International

১. নিশ্চয় আমরা আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়(১),

(১) অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদদের মতে সূরা ফাতহ ষষ্ঠ হিজরীতে অবতীর্ণ হয়, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে মক্কা মুকাররম তাশরীফ নিয়ে যান এবং হারাম শরীফের সন্নিকটে হুদাইবিয়া নামক স্থান পৌছে অবস্থান গ্ৰহণ করেন। হুদাইবিয়া মক্কার বাইরে হারামের সীমানার সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্থানের নাম। আজকাল এই স্থানটিকে সুমাইছী বলা হয়। ঘটনাটি এই স্থানেই ঘটে। এই ঘটনার এক অংশ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় স্বপ্ন দেখলেন তিনি সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কায় নিৰ্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ নিয়মানুযায়ী মাথা মুণ্ডন করেছেন, কেউ কেউ চুল কাটিয়েছেন এবং তিনি বায়তুল্লাহ প্রবেশ করেছেন ও বায়তুল্লাহর চাবি তার হস্তগত হয়েছে।

এটা সূরায় বর্ণিত ঘটনার একটি অংশ। নবীরাসূলগণের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। তাই স্বপ্নটি যে বাস্তবরূপ লাভ করবে, তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু স্বপ্নে এই ঘটনার কোন সন, তারিখ বা মাস নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্নটি মক্কা বিজয়ের সময় প্রতিফলিত হওয়ার ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনালেন, তখন তারা সবাই পরম আগ্রহের সাথে মক্কা যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। সাহাবায়ে কেরামের প্রস্তুতি দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ইচ্ছা করে ফেললেন। কেননা, স্বপ্নে কোন বিশেষ সাল অথবা মাস নির্দিষ্ট ছিল না। কাজেই এই মুহূর্তেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু মক্কার কাফেররা তাকে মক্কা প্রবেশে বাধা দান করে।

অতঃপর তারা এই শর্তে সন্ধি করতে সম্মত হয় যে, এ বছর তিনি মদীনায় ফিরে যাবেন এবং পরবর্তী বছর তিনি উমরা করতে আসবেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অনেকেই বিশেষত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ধরনের সন্ধি করতে অসম্মত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সন্ধিকে পরিণামে মুসলিমদের জন্যে সাফল্যের উপায় মনে করে গ্রহণ করে নেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উমরার এহরাম খুলে হুদাইবিয়া থেকে ফেরত রওয়ানা হলেন, তখন পথিমধ্যে এই পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বপ্ন সত্য এবং অবশ্যই বাস্তবরূপ লাভ করবে। কিন্তু তার সময় এখনও হয়নি। পরে মক্কা বিজয়ের সময় এই স্বপ্ন বাস্তবরূপ লাভ করে। এই সন্ধি প্রকৃতপক্ষে মক্কা বিজয়ের কারণ হয়েছিল। তাই একে প্রকাশ্য বিজয় বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও অপর কয়েকজন সাহাবী বলেনঃ তোমরা মক্কা বিজয়কে বিজয় বলে থাক; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই বিজয় মনে করি। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি হুদাইবিয়ার সন্ধিকে বিজয় মনে করি। বারা ইবনে আযেব বলেনঃ তোমরা মক্কা বিজয়কেই বিজয় মনে কর এবং নি:সন্দেহ তা বিজয়; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার ঘটনার বাইয়াতে রিদওয়ানকেই আসল বিজয় মনে করি। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বৃক্ষের নীচে উপস্থিত চৌদশত সাহাবীর কাছ থেকে জেহাদের শপথ নিয়েছিল। [বুখারী ৪২৮, মুসলিম ৭৯৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) নিশ্চয়ই (হে রসূল!) আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:২ لِّیَغۡفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنۡ ذَنۡۢبِكَ وَ مَا تَاَخَّرَ وَ یُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡكَ وَ یَهۡدِیَكَ صِرَاطًا مُّسۡتَقِیۡمًا ۙ﴿۲﴾
لیغفر لك الله ما تقدم من ذنبك و ما تاخر و یتم نعمتهٗ علیك و یهدیك صراطا مستقیما ﴿۲﴾

যেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন। আল-বায়ান

যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পিছের যাবতীয় ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নি‘মাত পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তাইসিরুল

যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। মুজিবুর রহমান

That Allah may forgive for you what preceded of your sin and what will follow and complete His favor upon you and guide you to a straight path Sahih International

২. যেন আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং আপনার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন। আর আপনাকে সরল পথের হেদায়াত দেন,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন[1] এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন[2] ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। [3]

[1] মহানবী (সাঃ)-এর ‘অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ’-এর অর্থ, এমন সব বিষয়াদি, যা ত্যাগ করাই উত্তম অথবা এমন সব জিনিস, যা তিনি (সাঃ) স্বীয় জ্ঞান, অনুমান ও প্রচেষ্টার আলোকে করেছেন, কিন্তু আল্লাহ তা পছন্দ করেননি। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) ইত্যাদির ঘটনা প্রভৃতি; যার উপর সূরা ‘আবাসা’ অবতীর্ণ হয়। অনুরূপ আচরণ ও বিষয়গুলি যদিও কোন পাপ এবং তাঁর নিষ্পাপ হওয়ার পরিপন্থী কাজ ছিল না, তবুও তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা হিসাবে এগুলোকেও ত্রুটি ও কমি গণ্য করা হয়েছে এবং এরই উপর ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। لِيَغْفِرَ তে ل ‘লাম’ অক্ষরটি কারণ বর্ণনার জন্য ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, সুস্পষ্ট এই বিজয় দানের তিনটি কারণ আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। এটা ত্রুটি মার্জনার কারণ এই জন্য যে, এই সন্ধির পর ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা বহু বেড়ে যায়। যার ফলে নবী করীম (সাঃ)-এর মহা পুণ্য ও সওয়াব খুব বর্ধিত হয়। আর পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মোচন করে দেয়।

[2] এই দ্বীনকে বিজয়ী করে, যার প্রতি তুমি মানুষকে দাওয়াত দাও। অথবা বিজয় ও সাফল্য দিয়ে। কেউ কেউ বলেছেন, ক্ষমা লাভ এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই হল নিয়ামতের পরিপূর্ণতা। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[3] অর্থাৎ, তার উপর অবিচল থাকার সৌভাগ্য দান করেন। হিদায়াতের উচ্চ থেকে উচ্চতর মর্যাদা দানে ধন্য করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৩ وَّ یَنۡصُرَكَ اللّٰهُ نَصۡرًا عَزِیۡزًا ﴿۳﴾
و ینصرك الله نصرا عزیزا ﴿۳﴾

এবং তোমাকে প্রবল সাহায্য দান করেন। আল-বায়ান

আর আল্লাহ তোমাকে প্রবল পরাক্রান্ত সাহায্য দান করেন। তাইসিরুল

এবং তোমাকে আল্লাহ বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন। মুজিবুর রহমান

And [that] Allah may aid you with a mighty victory. Sahih International

৩. এবং আল্লাহ আপনাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) এবং আল্লাহ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৪ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ السَّكِیۡنَۃَ فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ لِیَزۡدَادُوۡۤا اِیۡمَانًا مَّعَ اِیۡمَانِهِمۡ ؕ وَ لِلّٰهِ جُنُوۡدُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا ۙ﴿۴﴾
هو الذی انزل السكینۃ فی قلوب المؤمنین لیزدادوا ایمانا مع ایمانهم و لله جنود السموت و الارض و كان الله علیما حكیما ﴿۴﴾

তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি পায়; এবং আসমানসমূহ ও যমীনের বাহিনীগুলো আল্লাহরই; আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

তিনিই মু’মিনদের দিলে প্রশান্তি নাযিল করেন যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়। আসমান ও যমীনের যাবতীয় বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

তিনিই মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

It is He who sent down tranquillity into the hearts of the believers that they would increase in faith along with their [present] faith. And to Allah belong the soldiers of the heavens and the earth, and ever is Allah Knowing and Wise. Sahih International

৪. তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশাস্তি নাযিল করেছেন(১) যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়।(২) আর আসমানসমূহ ও যমীনের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হিকমতওয়ালা।

(১) سَكِيْنَةٌ আরবী ভাষায় স্থিরতা, প্রশান্তি ও দৃঢ় চিত্ততাকে বুঝায়। হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘কুরা গামীম’ নামক স্থানে পৌছেন, তখন আলোচ্য ‘সূরা ফাতহ’ অবতীর্ণ হয়। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে সূরাটি পাঠ করে শুনালেন। তাদের অন্তর পূর্বেই আহত ছিল। এমতাবস্থায় সূরায় একে প্রকাশ্য বিজয় আখ্যা দেয়ায় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবার প্রশ্ন করে বসলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কি বিজয়? তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, এটা প্ৰকাশ্য বিজয়। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪২০, আবু দাউদ: ২৭৩৬, ৩০১৫]

(২) তাদের যে ঈমান এ অভিযানের পূর্বে ছিল, তার সাথে আরো ঈমান তারা অর্জন করলো এ কারণে যে, এ অভিযান চলাকালে একের পর এক যত পরীক্ষা এসেছে তার প্রত্যেকটিতে তারা নিষ্ঠা, তাকওয়া ও আনুগত্যের নীতির ওপর দৃঢ়পদ থেকেছে। এ আয়াত ও অনুরূপ আরো কিছু আয়াত ও হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি আছে। আর এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা। [আদওয়াউল-বায়ান] ইমাম বুখারী তার গ্রন্থে এ আয়াত থেকে ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির উপর দলীল গ্রহণ করেছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) তিনিই বিশ্বাসীদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন, যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান (বিশ্বাস) বৃদ্ধি করে নেয়, [1] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই[2] এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ, সেই অস্থিরতা ও অশান্তির পর, যা হুদাইবিয়া সন্ধির শর্তাবলীর কারণে মুসলিমদের উপর এসেছিল। মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে প্রশান্তি প্রক্ষিপ্ত করেন। যার ফলে তাদের অন্তরে শান্তি, স্বস্তি ও ঈমান আরো বেড়ে যায়। এই আয়াতও প্রমাণ করে যে, ঈমান বাড়ে ও কমে।

[2] অর্থাৎ, আল্লাহ চাইলে তার যে কোন সৈন্যের (যেমন, ফিরিশতাগণ) দ্বারা কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তাঁর পূর্ণ কৌশলের ভিত্তিতে এ রকম না করে তার পরিবর্তে মু’মিনদেরকে যুদ্ধ ও জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই কারণেই পরে (আয়াতের শেষে) তাঁর সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় হওয়ার গুণ উল্লেখ করেছেন। অথবা অর্থ হল, আকাশ ও পৃথিবীর ফিরিশতাগণ, অনুরূপ অন্যান্য সমস্ত প্রতাপ ও বিক্রমশালী সেনাবাহিনী আল্লাহরই অধীনস্থ। তিনি যেভাবে চান তাদের দ্বারা কাজ নেন। বলার উদ্দেশ্য হল, হে মু’মিনগণ! মহান আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর রসূল এবং তাঁর দ্বীনের সাহায্যের কাজ যে কোন দল ও সৈন্য দিয়ে নিতে পারেন। (ইবনে কাসীর, আয়সারুত তাফাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৫ لِّیُدۡخِلَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا وَ یُكَفِّرَ عَنۡهُمۡ سَیِّاٰتِهِمۡ ؕ وَ كَانَ ذٰلِكَ عِنۡدَ اللّٰهِ فَوۡزًا عَظِیۡمًا ۙ﴿۵﴾
لیدخل المؤمنین و المؤمنت جنت تجری من تحتها الانهر خلدین فیها و یكفر عنهم سیاتهم و كان ذلك عند الله فوزا عظیما ﴿۵﴾

যেন তিনি মুমিন নারী ও পুরুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর তিনি তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন; আর এটি ছিল আল্লাহর নিকট এক মহাসাফল্য। আল-বায়ান

(তিনি এ কাজ করেন এজন্য) যাতে তিনি মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনা নারীকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করেন যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। তাতে তারা চিরকাল থাকবে। তিনি তাদের পাপ মোচন করে দিবেন। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই বিরাট সাফল্য। তাইসিরুল

এটা এ জন্য যে, তিনি মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন মহিলাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তিনি তাদের পাপ মোচন করবেন; এটাই আল্লাহর দৃষ্টিতে মহা সাফল্য। মুজিবুর রহমান

[And] that He may admit the believing men and the believing women to gardens beneath which rivers flow to abide therein eternally and remove from them their misdeeds - and ever is that, in the sight of Allah, a great attainment - Sahih International

৫. যাতে তিনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে প্রবেশ করান জান্নাতে, যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত, যেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তিনি তাদের পাপসমূহ মোচন করবেন; আর এটাই হলো আল্লাহর নিকট মহাসাফল্য।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) এটা এ জন্য যে, তিনি বিশ্বাসী পুরুষদেরকে ও বিশ্বাসী নারীদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে[1] যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত, যেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তিনি তাদের পাপরাশি মোচন করবেন; এটাই আল্লাহর নিকট মহা সাফল্য।

[1] হাদীসে এসেছে যে, মুসলিমরা যখন সূরা ফাত্হের প্রাথমিক অংশ শুনলেন, لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ তখন তাঁরা নবী করীম (সাঃ)-কে বললেন, আপনাকে মুবারকবাদ! আমাদের জন্য কি রয়েছে? এরই ভিত্তিতে আল্লাহ لِيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন। (বুখারী, হুদাইবিয়া যুদ্ধ পরিচ্ছেদ) কেউ কেউ বলেছেন, এটি لِيَزْدَادُوْا কিংবা يَنْصُرُكَ এর সাথে সম্পৃক্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৬ وَّ یُعَذِّبَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتِ وَ الۡمُشۡرِكِیۡنَ وَ الۡمُشۡرِكٰتِ الظَّآنِّیۡنَ بِاللّٰهِ ظَنَّ السَّوۡءِ ؕ عَلَیۡهِمۡ دَآئِرَۃُ السَّوۡءِ ۚ وَ غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیۡهِمۡ وَ لَعَنَهُمۡ وَ اَعَدَّ لَهُمۡ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا ﴿۶﴾
و یعذب المنفقین و المنفقت و المشركین و المشركت الظآنین بالله ظن السوء علیهم دآئرۃ السوء و غضب الله علیهم و لعنهم و اعد لهم جهنم و سآءت مصیرا ﴿۶﴾

আর যেন তিনি শাস্তি দিতে পারেন মুনাফিক নারী-পুরুষ ও মুশরিক নারী-পুরুষকে যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে; তাদের উপরই অনিষ্টতা আপতিত হয়। আর আল্লাহ তাদের উপর রাগ করেছেন এবং তাদেরকে লা‘নত করেছেন, আর তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জাহান্নাম; এবং গন্তব্য হিসেবে তা কতইনা নিকৃষ্ট! আল-বায়ান

আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিকা নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিকা নারীকে শাস্তি দিবেন যারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। তাদের জন্য আছে অশুভ চক্র। আল্লাহ তাদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন আর তাদেরকে লা‘নাত করেছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নাম। তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল! তাইসিরুল

এবং মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক মহিলা, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন। অমঙ্গল চক্র তাদের জন্য, আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন; ওটা কত নিকৃষ্ট আবাস! মুজিবুর রহমান

And [that] He may punish the hypocrite men and hypocrite women, and the polytheist men and polytheist women - those who assume about Allah an assumption of evil nature. Upon them is a misfortune of evil nature; and Allah has become angry with them and has cursed them and prepared for them Hell, and evil it is as a destination. Sahih International

৬. আর যাতে তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দেন। অমঙ্গল চক্ৰ তাদের উপরই(১) আপতিত হয়। আর আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে লা'নত করেছেন; আর তাদের জন্য জাহান্নাম প্ৰস্তুত রেখেছেন। আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!

(১) এ যাত্রায় মদীনার আশপাশের মুনাফিকদের ধারণা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথীগণ এ সফর থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারবেন না। তাছাড়া মক্কার মুশরিক এবং তাদের সহযোগী কাফেররা মনে করেছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সংগীগণকে উমরা আদায় করা থেকে বিরত রেখে তারা তাকে পরাজিত ও অপমানিত করতে সক্ষম হয়েছে। [দেখুন: কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) আর কপট (মুনাফেক) পুরুষ ও কপট নারী, অংশীবাদী (মুশরিক) পুরুষ ও অংশীবাদী নারী, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে,[1] তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। অমঙ্গল চক্র রয়েছে তাদের জন্য,[2] আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন, তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন; আর ওটা নিকৃষ্ট আবাস!

[1] অর্থাৎ, আল্লাহকে তাঁর বিচার-ফায়সালা বা তাঁর বিধানাদির উপর অভিযুক্ত ও দোষারোপ করে এবং রসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবা (রাঃ)-দের ব্যাপারে এই ধারণা পোষণ করে যে, এরা পরাজিত অথবা নিহত হবে; ফলে দ্বীন ইসলাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। (ইবনে কাসীর)

[2] অর্থাৎ, ওরা মুসলিমদের জন্য যে দুর্ভাগ্যের ও ধ্বংসের অপেক্ষা করছে, তা তো ওদের ভাগ্যেই জুটবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৭ وَ لِلّٰهِ جُنُوۡدُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیۡزًا حَكِیۡمًا ﴿۷﴾
و لله جنود السموت و الارض و كان الله عزیزا حكیما ﴿۷﴾

আর আল্লাহরই জন্য আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় সৈন্যবাহিনী; এবং আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

আসমান ও যমীনের যাবতীয় বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, মহা প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

আল্লাহরই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ এবং আল্লাহই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

And to Allah belong the soldiers of the heavens and the earth. And ever is Allah Exalted in Might and Wise. Sahih International

৭. আর আসমানসমূহ ও যমীনের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [1]

[1] এখানে মুনাফিক ও কাফেরদের আলোচনা প্রসঙ্গে উক্ত কথাটি পুনরায় ব্যক্ত করেছেন যে, মহান আল্লাহ তাঁর শত্রুদেরকে যে কোনভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম। এটা ভিন্ন কথা যে, তিনি তাঁর কৌশল ও ইচ্ছার ভিত্তিতে যতটা চান অবকাশ ও ঢিল দেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৮ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا ۙ﴿۸﴾
انا ارسلنك شاهدا و مبشرا و نذیرا ﴿۸﴾

নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে। আল-বায়ান

(হে রাসূল) আমি তোমাকে (সত্যের) সাক্ষ্যদাতা. (বিশ্বাসীদের জন্য) সুসংবাদদাতা ও (অবিশ্বাসীদের জন্য) সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি। তাইসিরুল

আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have sent you as a witness and a bringer of good tidings and a warner Sahih International

৮. নিশ্চয় আমরা আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।(১)

(১) আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করে তাঁর তিনটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথমে বলা হয়েছে যে, আমরা আপনাকে شَاهِد হিসেবে প্রেরণ করেছি। شَاهِد শব্দের অর্থ সাক্ষী। এর উদ্দেশ্য প্রত্যেক নবী তার উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন যে, তিনি আল্লাহর পয়গাম তাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। এরপর কেউ আনুগত্য করেছে এবং কেউ নাফরমানি করেছে। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার উম্মতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবেন। দ্বিতীয় যে গুণটি উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, مُبَشِّرٌ শব্দটির অর্থ সুসংবাদদাতা আর তৃতীয় গুণটি বলা হয়েছে نَذِير বা সতর্ককারী। উদ্দেশ্য এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের আনুগত্যশীল মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবেন এবং কাফের পাপাচারীদেরকে আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করবেন। [কুরতুবী, আয়সারুত তাফাসির]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:৯ لِّتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُعَزِّرُوۡهُ وَ تُوَقِّرُوۡهُ ؕ وَ تُسَبِّحُوۡهُ بُكۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا ﴿۹﴾
لتؤمنوا بالله و رسولهٖ و تعزروه و توقروه و تسبحوه بكرۃ و اصیلا ﴿۹﴾

যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আন, তাকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর। আল-বায়ান

যেন (ওহে মানুষেরা) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন, রসূলকে শক্তি যোগাও আর তাকে সম্মান কর, আর সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর। তাইসিরুল

যাতে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর; সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। মুজিবুর রহমান

That you [people] may believe in Allah and His Messenger and honor him and respect the Prophet and exalt Allah morning and afternoon. Sahih International

৯. যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তাঁর শক্তি যোগাও ও তাঁকে সম্মান কর; আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।(১)

(১) এ আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়নের পরে আরো তিনটি কাজ করার জন্য মুমিনদেরকে আদেশ করা হয়েছে। তবে এগুলোতে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে তার দ্বারা কাকে বোঝানো হয়েছে এ নিয়ে দুটি মত রয়েছে। এক. এখানে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’আলাকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহকে সাহায্য সহযোগিতা করবে তথা তাঁর দ্বীনকে সহযোগিতা করবে, তাঁকে সম্মান করবে, সকাল ও সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ করবে। দুই. কেউ কেউ প্রথমোক্ত দুই বাক্যের সর্বনাম দ্বারা রাসূলকে বুঝিয়ে এরূপ অৰ্থ করেন যে, রাসূলকে সাহায্য কর, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর এবং আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তাকে সাহায্য কর ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৮:১০ اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَكَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰهَ ؕ یَدُ اللّٰهِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ فَمَنۡ نَّكَثَ فَاِنَّمَا یَنۡكُثُ عَلٰی نَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰهَدَ عَلَیۡهُ اللّٰهَ فَسَیُؤۡتِیۡهِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۱۰﴾
ان الذین یبایعونك انما یبایعون الله ید الله فوق ایدیهم فمن نكث فانما ینكث علی نفسهٖ و من اوفی بما عهد علیه الله فسیؤتیه اجرا عظیما ﴿۱۰﴾

আর যারা তোমার কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর; অতঃপর যে কেউ ওয়াদা ভঙ্গ করলে তার ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম বর্তাবে তারই উপর। আর যে আল্লাহকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবে অচিরেই আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দেবেন। আল-বায়ান

যারা তোমার কাছে বাই‘আত (অর্থাৎ আনুগত্য করার শপথ) করে আসলে তারা আল্লাহর কাছে বাই‘আত করে। তাদের হাতের উপর আছে আল্লাহর হাত। এক্ষণে যে এ ও‘য়াদা ভঙ্গ করে, এ ও‘য়াদা ভঙ্গের কুফল তার নিজেরই উপর পড়বে। আর যে ও‘য়াদা পূর্ণ করবে- যা সে আল্লাহর সঙ্গে করেছে- তিনি অচিরেই তাকে মহা পুরস্কার দান করবেন। তাইসিরুল

যারা তোমার বাইআত গ্রহণ করে তারাতো আল্লাহরই বাইআত গ্রহণ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। সুতরাং যে ওটা ভঙ্গ করে, ওটা ভঙ্গ করার পরিনাম তারই এবং যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি তাকে মহা পুরস্কার দেন। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who pledge allegiance to you, [O Muhammad] - they are actually pledging allegiance to Allah. The hand of Allah is over their hands. So he who breaks his word only breaks it to the detriment of himself. And he who fulfills that which he has promised Allah - He will give him a great reward. Sahih International

১০. নিশ্চয় যারা আপনার কাছে বাই’আত করে(১) তারা তো আল্লাহরই হাতে বাই’আত করে। আল্লাহর হাত(২) তাদের হাতের উপর।(৩) তারপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম বর্তবে তারই উপর এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, তবে তিনি অবশ্যই তাকে মহাপুরস্কার দেন।

(১) পবিত্র মক্কা নগরীতে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহীদ হয়ে যাওয়ার খবর শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরাম থেকে হুদাইবিয়া নামক স্থানে গাছের নীচে যে বাইয়াত নিয়েছিলেন সেই বাইয়াতের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]

(২) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিশ্বাস হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা'আলার হাত রয়েছে। যেভাবে তাঁর হাত থাকা উপযোগী ঠিক সেভাবেই তাঁর হাত রয়েছে। এ হাতকে কোন প্রকার অপব্যাখ্যা করা অবৈধ। তবে এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, তাঁর হাত কোন সৃষ্টির হাতের মত নয়। তিনি যেমন তাঁর হাতও সে রকম। প্রত্যেক সত্ত্ব অনুসারে তার গুণাগুণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করব যে, আল্লাহ্ তা'আলার হাত রয়েছে। তবে তাঁর হাত আমাদের পরিচিত কারও হাতের মত নয়।

(৩) আল্লাহ বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে বাই’আত করেছে, তারা যেন স্বয়ং আল্লাহর হাতে বাই’আত করেছে। কারণ, এই বাই’আতের উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ পালন করা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। রাসূলের আনুগত্য যেমন আল্লাহর আনুগত্যেরই নামান্তর, তেমনিভাবে রাসূলের হাতে বাই’আত হওয়া আল্লাহর হাতে বাই’আত হওয়ারই নামান্তর। কাজেই তারা যখন রাসূলের হাতে হাত রেখে বাই’আত করল, তখন যেন আল্লাহর হাতেই বাই’আত করল। মহান আল্লাহ এ কথা বলে সাহাবীদের সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তাদের কথা শুনছিলেন, তাদের অবস্থান অবলোকন করছিলেন, তাদের বাহ্যিক অবস্থা ও মনের অবস্থা জেনে নিয়েছিলেন। সে সময় লোকেরা যে হাতে বাইয়াত করছিলো তা আল্লাহর প্রতিনিধি রাসূলের হাত ছিল এবং রাসূলের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথে এ বাইয়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) নিশ্চয় যারা তোমার বায়আত গ্রহণ করে, তারা তো আল্লাহরই বায়আত গ্রহণ করে।[1] আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর।[2] সুতরাং যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হবে[3] এবং যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে,[4] তিনি তাকে মহা পুরস্কার দেন।

[1] এই আয়াতে ঐ বায়আতে রিযওয়ানের কথাই বুঝানো হয়েছে, যে বায়আত নবী করীম (সাঃ) উসমান (রাঃ)-এর শহীদ হওয়ার খবর শুনে তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হুদাইবিয়ায় উপস্থিত ১৪ বা ১৫ শত মুসলিমদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন।

[2] অর্থাৎ, এই বাইয়াত (শপথ) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই। কেননা, তিনিই জিহাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর প্রতিদানও তিনিই দেবেন। যেমন, অন্যত্র বলেছেন, এরা নিজেদের জান ও মালের পরিবর্তে আল্লাহর নিকট জান্নাত ক্রয় করেছে। (সূরা তাওবাহ ১১১) আর এটা ঠিক এই ধরনের যেমন, {مَن يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ} অর্থাৎ, যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসা ৮০)

[3] نَكْثٌ (অঙ্গীকার ভঙ্গ করা) থেকে এখানে বাইয়াত ভঙ্গ করা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, শপথ অনুযায়ী যুদ্ধে শরীক না হওয়া। মানে যে ব্যক্তি এ রকম করবে, তার মন্দ পরিণাম তারই উপর আসবে।

[4] অর্থাৎ, যে আল্লাহর রসূলকে সাহায্য করে। তাঁর সাথে মিলে সেই পর্যন্ত যুদ্ধ করে, যে পর্যন্ত না মহান আল্লাহ মুসলিমদের বিজয় ও সাফল্য দান করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »