بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৩৪/ সাবা | Saba | سورة سبإ আয়াতঃ ৫৪ মাক্কী
৩৪:১ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ لَهُ الۡحَمۡدُ فِی الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ هُوَ الۡحَکِیۡمُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۱﴾
الحمد لله الذی لهٗ ما فی السموت و ما فی الارض و له الحمد فی الاخرۃ و هو الحکیم الخبیر ۱

সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক। আর আখিরাতেও সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবগত। আল-বায়ান

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আকাশ ও পৃথিবীতে যা আছে সব কিছুর মালিক। আখিরাতেও প্রশংসা তাঁরই; তিনি মহা প্রজ্ঞাশীল, সকল বিষয়ে অবহিত। তাইসিরুল

প্রশংসা আল্লাহর যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুরই মালিক এবং আখিরাতেও প্রশংসা তাঁরই। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্ব বিষয়ে অবহিত। মুজিবুর রহমান

[All] praise is [due] to Allah, to whom belongs whatever is in the heavens and whatever is in the earth, and to Him belongs [all] praise in the Hereafter. And He is the Wise, the Acquainted. Sahih International

১. সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক এবং আখিরাতেও সমস্ত প্ৰশংসা তারই। আর তিনি হিকমতওয়ালা, সম্যক অবহিত।(১)

(১) অৰ্থাৎ তিনি তাঁর যাবতীয় নির্দেশে প্রাজ্ঞ, তিনি তাঁর সৃষ্টিজগত সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত কিছুরই মালিক[1] এবং পরলোকেও সকল প্রশংসা তাঁরই।[2] তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে অবহিত।

[1] অর্থাৎ, তা তাঁরই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তাতে তাঁরই ইচ্ছা ও ফায়সালা চলে। মানুষ যে সকল নিয়ামত পেয়েছে, তার সব কিছু তাঁরই সৃষ্টি এবং তা তাঁরই অনুগ্রহ। যার ফলে আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তুর প্রশংসা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহরই ঐ নিয়ামতের উপর প্রশংসা; যা তিনি তাঁর সৃষ্টিকে প্রদান করেছেন।

[2] এ প্রশংসা কিয়ামতের দিন মু’মিন ব্যক্তিগণ করবে। যেমন, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন.......। (সূরা যুমার ৭৪ আয়াত) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই; যিনি আমাদেরকে এর পথ দেখিয়েছেন। (সূরা আ’রাফ ৪৩ আয়াত) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন। (সূরা ফাত্বির ৩৪ আয়াত) ইত্যাদি। তার পরেও দুনিয়াতে আল্লাহর হামদ্ ও প্রশংসা করা এক প্রকার ইবাদত; যা পালন করতে মানুষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আখেরাতে (বেহেশ্তে) তা মু’মিনদের রূহের খোরাক হবে, যাতে তারা আনন্দ ও খুশী উপভোগ করবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:২ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡهَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡهَا ؕ وَ هُوَ الرَّحِیۡمُ الۡغَفُوۡرُ ﴿۲﴾
یعلم ما یلج فی الارض و ما یخرج منها و ما ینزل من السماء و ما یعرج فیها و هو الرحیم الغفور ۲

তিনি জানেন যমীনে যা প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা বের হয়; আর আসমান থেকে যা নাযিল হয় এবং তাতে যা উঠে* । আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল। আল-বায়ান

ভূমিতে যা প্রবেশ করে আর তাত্থেকে যা বের হয়, আর আকাশ হতে যা অবতীর্ণ হয় আর তাতে যা উত্থিত হয় তা তিনি জানেন। তিনি পরম দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল। তাইসিরুল

তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে, তা হতে যা নির্গত হয় এবং যা আকাশ হতে বর্ষিত হয় ও যা কিছু আকাশে উত্থিত হয়। তিনিই পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল। মুজিবুর রহমান

He knows what penetrates into the earth and what emerges from it and what descends from the heaven and what ascends therein. And He is the Merciful, the Forgiving. Sahih International

২. তিনি জানেন যা যমীনে প্রবেশ করে(১) এবং যা তা থেকে নিৰ্গত হয়, আর যা আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু তাতে উত্থিত হয়।(২) আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।

(১) অর্থাৎ আসমান থেকে যে পানি নাযিল হয় সে পানির কতটুকু যমীনে প্রবেশ করে তা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। [আদওয়াউল বায়ান] যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন তারপর তা দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়।” [সূরা আয-যুমার: ২১]

(২) যমীন থেকে যা নিৰ্গত হয় যেমন, উদ্ভিদ, খনিজ সম্পদ, পানি। আর আসমান থেকে যা নাযিল হয়। যেমন, বৃষ্টির পানি, ফেরেশতা, কিতাবাদি। আকাশে যা উত্থিত হয় যেমন, ফেরেশতাগণ, মানুষের আমল। তিনি বান্দাদের প্রতি দয়াশীল বলেই তাদের অপরাধের কারণে তাদের উপর দ্রুত শাস্তি নাযিল করেন না। যারা তার কাছে তাওবা করবে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনি জানেন যা ভূগর্ভে প্রবেশ করে,[1] যা তা থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ হতে অবতরণ করে[2] ও যা কিছু আকাশে উত্থিত হয়। [3] তিনিই পরম দয়ালু, চরম ক্ষমাশীল।

[1] যেমন বৃষ্টি, প্রোথিত গুপ্তধন এবং খনিজ-সম্পদ ইত্যাদি।

[2] বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, মেঘগর্জন, বিদ্যুত ও আল্লাহর বরকত, ফিরিশতা এবং আসমানী কিতাব ইত্যাদি।

[3] অর্থাৎ, ফিরিশতা এবং বান্দাদের আমল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৩ وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَا تَاۡتِیۡنَا السَّاعَۃُ ؕ قُلۡ بَلٰی وَ رَبِّیۡ لَتَاۡتِیَنَّکُمۡ ۙ عٰلِمِ الۡغَیۡبِ ۚ لَا یَعۡزُبُ عَنۡهُ مِثۡقَالُ ذَرَّۃٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ وَ لَاۤ اَصۡغَرُ مِنۡ ذٰلِکَ وَ لَاۤ اَکۡبَرُ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ ٭ۙ﴿۳﴾
و قال الذین کفروا لا تاتینا الساعۃ قل بلی و ربی لتاتینکم ۙ علم الغیب ۚ لا یعزب عنه مثقال ذرۃ فی السموت و لا فی الارض و لا اصغر من ذلک و لا اکبر الا فی کتب مبین ٭ۙ۳

আর কাফিররা বলে, ‘কিয়ামত আমাদের কাছে আসবে না।’ বল, ‘অবশ্যই, আমার রবের কসম! যিনি গায়েব সম্পর্কে অবগত, তা তোমাদের কাছে আসবেই। আসমানসমূহ ও যমীনে অনু পরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা ছোট অথবা বড় কিছুই তাঁর অগোচরে নেই, বরং সবই সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে, আল-বায়ান

কাফিরগণ বলে- ক্বিয়ামত আমাদের নিকট আসবে না। বল, না, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমাদের নিকট তা অবশ্য অবশ্যই আসবে। তিনি যাবতীয় অদৃশ্যের জ্ঞানী। তাঁর থেকে লুক্কায়িত নেই আকাশ ও পৃথিবীতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুকণা, না তার থেকে ছোট আর না তার থেকে বড় (কোনটাই নেই লুক্কায়িত)। সবই আছে (লাওহে মাহফুয নামক) এক সুস্পষ্ট কিতাবে। তাইসিরুল

কাফিরেরা বলেঃ আমাদের উপর কিয়ামাত আসবেনা। বলঃ আসবেই, শপথ আমার রবের! নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট ওটা আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগোচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু; বরং ওর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। মুজিবুর রহমান

But those who disbelieve say, "The Hour will not come to us." Say, "Yes, by my Lord, it will surely come to you. [Allah is] the Knower of the unseen." Not absent from Him is an atom's weight within the heavens or within the earth or [what is] smaller than that or greater, except that it is in a clear register - Sahih International

৩. আর কাফিররা বলে, আমাদের কাছে কিয়ামত আসবে না। বলুন, অবশ্যই হ্যাঁ, শপথ আমার রবের, নিশ্চয় তোমাদের কাছে তা আসবে। তিনি গায়েব সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত; আসমানসমূহ ও যমীনে তাঁর অগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তার চেয়ে ছোট বা বড় কিছু; এর প্রত্যেকটিই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।(১)

(১) অর্থাৎ কোন কিছুই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সবকিছুই এক কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। সে কিতাব হচ্ছে, লাওহে মাহফুয। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) অবিশ্বাসীরা বলে, ‘আমরা কিয়ামতের সম্মুখীন হব না।’ বল, ‘অবশ্যই তোমাদেরকে তার সম্মুখীন হতেই হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ; যিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।[1] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তার থেকে ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু তাঁর অগোচর নয়; [2] ওর প্রত্যেকটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। [3]

[1] উক্ত বাক্যে মহান আল্লাহ শপথও করেছেন এবং তাকীদের শব্দও ব্যবহার করেছেন এবং তার উপর তাকীদের ‘লাম’ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ কিয়ামত কেন সংঘটিত হবে না? তা যে কোন অবস্থায় অবশ্য-অবশ্যই সংঘটিত হবে।

[2] لاَيَعْزُبُ অদৃশ্য, গুপ্ত ও দূর নয়। অর্থাৎ, যখন আকাশ ও পৃথিবীর অণু পরিমাণ কিছু তাঁর দৃষ্টিতে অদৃশ্য ও অগোচর নয়, তখন তোমাদের শরীরের বিক্ষিপ্ত অংশ যা মাটিতে মিশে গেছে তা একত্রিত করে পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা কেন সম্ভব হবে না?

[3] অর্থাৎ, তা লাওহে মাহ্ফূযে সংরক্ষিত ও লিপিবদ্ধ আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৪ لِّیَجۡزِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ رِزۡقٌ کَرِیۡمٌ ﴿۴﴾
لیجزی الذین امنوا و عملوا الصلحت اولىک لهم مغفرۃ و رزق کریم ۴

যাতে তিনি প্রতিদান দেন তাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। তাদেরই জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক। আল-বায়ান

যাতে তিনি প্রতিদান দিতে পারেন তাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, এদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক। তাইসিরুল

এটা এ জন্য যে, যারা মু’মিন ও সৎ কর্মপরায়ণ তিনি তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক। মুজিবুর রহমান

That He may reward those who believe and do righteous deeds. Those will have forgiveness and noble provision. Sahih International

৪. যাতে তিনি প্রতিদান দেন তাদের, যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।(১)

(১) কাতাদাহ বলেন, এর অর্থ, তাদের গোনাহের জন্য ক্ষমা ও জান্নাতে তাদের জন্য থাকবে সম্মানজনক রিযিক। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) এ এজন্য যে, যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ তিনি তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।[1] এদেরই জন্য ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রয়েছে।’

[1] এটা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কারণ। অর্থাৎ, কিয়ামত এই জন্য সংঘটিত হবে এবং সকল মানুষকে আল্লাহ তাআলা এই জন্য পুনর্জীবিত করবেন, যাতে তিনি নেককার ব্যক্তিদেরকে তাঁদের নেকীর বদলা দেন। কারণ প্রতিদান দেওয়ার জন্যই তিনি উক্ত দিবস নির্ধারিত রেখেছেন। প্রতিদান দিবস না হওয়ার অর্থই হচ্ছে নেককার ও বদকার সকলেই সমান। আর এই রকম হওয়া অবশ্যই ন্যায় ও ইনসাফের পরিপন্থী। তাতে বান্দাদের -- বিশেষ করে নেক বান্দাদের -- প্রতি যুলুম করা হবে। অথচ আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি কোন প্রকার যুলুম করেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৫ وَ الَّذِیۡنَ سَعَوۡ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا مُعٰجِزِیۡنَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مِّنۡ رِّجۡزٍ اَلِیۡمٌ ﴿۵﴾
و الذین سعو فی ایتنا معجزین اولىک لهم عذاب من رجز الیم ۵

আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়, তাদেরই জন্য রয়েছে কঠোর পীড়াদায়ক আযাব। আল-বায়ান

যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চালায় তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক ভয়াবহ শাস্তি। তাইসিরুল

যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর মর্মন্তুদ শাস্তি। মুজিবুর রহমান

But those who strive against Our verses [seeking] to cause failure - for them will be a painful punishment of foul nature. Sahih International

৫. আর যারা আমাদের আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে, তাদেরই জন্য রয়েছে ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) যারা আমার বাক্যসমূহকে ব্যর্থ করার অপচেষ্টা করে[1] তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।

[1] অর্থাৎ, আমার ঐ সকল আয়াতকে বাতিল ও মিথ্যা মনে করে, যা আমি আমার পয়গম্বরদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি। مُعَاجِزِيْنَ (ব্যর্থ করার অপচেষ্টা করে) এই ভেবে যে, আমি তাদেরকে পাকড়াও করতে অপারগ। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল যে, মৃত্যুর পর যখন আমরা মাটিতে মিশে যাব, তখন কিভাবে পুনরায় জীবিত হয়ে কারো সামনে আপন কর্মের জন্য আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে? তাদের এই মনোভাব এ কথারই ঘোষণা ছিল যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাকড়াও করতে সক্ষম নন! অতএব আমাদের কিয়ামতের আর ভয় কি?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৬ وَ یَرَی الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ هُوَ الۡحَقَّ ۙ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ﴿۶﴾
و یری الذین اوتوا العلم الذی انزل الیک من ربک هو الحق ۙ و یهدی الی صراط العزیز الحمید ۶

আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য এবং তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে হিদায়াত করে। আল-বায়ান

যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে সত্য বলে জানে এবং (তারা আরো জানে যে) তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত (আল্লাহ)’র পথে পরিচালিত করে। তাইসিরুল

যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য। ইহা মানুষকে পরাক্রমশালী ও প্রশংসা আল্লাহর পথ নির্দেশ করে। মুজিবুর রহমান

And those who have been given knowledge see that what is revealed to you from your Lord is the truth, and it guides to the path of the Exalted in Might, the Praiseworthy. Sahih International

৬. আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা জানে যে, আপনার রবের কাছ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা-ই সত্য; এবং এটা পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর পথ নির্দেশ করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তারা সুনিশ্চিতভাবে জানে যে, তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য;[1] এবং তা মানুষকে পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর পথ নির্দেশ করে। [2]

[1] এখানে يَرَى দেখার অর্থ হল অন্তর-চক্ষু দিয়ে দেখা; শুধু চোখের দেখা নয়। অর্থাৎ, ‘ইলমে ইয়াকীন’ দ্বারা সুনিশ্চিতরূপে জানে। ‘যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে’ বলে সাহাবায়ে-কিরামগণ অথবা আহলে কিতাবদের মু’মিন বা সকল মু’মিনদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিনগণ তা জানেন ও তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন।

[2] এর সংযোগ ‘সত্য’ শব্দের সাথে। অর্থাৎ, তারা এটাও জানে যে, এই কুরআন কারীম ঐ পথের দিশা দেয়, যা সেই আল্লাহর পথ, যিনি সৃষ্টি জগতে সকলের উপর প্রতাপশালী এবং আপন সৃষ্টির মাঝে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সে পথ হল তাওহীদের পথ, যে পথের দিকে সকল পয়গম্বরগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৭ وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا هَلۡ نَدُلُّکُمۡ عَلٰی رَجُلٍ یُّنَبِّئُکُمۡ اِذَا مُزِّقۡتُمۡ کُلَّ مُمَزَّقٍ ۙ اِنَّکُمۡ لَفِیۡ خَلۡقٍ جَدِیۡدٍ ۚ﴿۷﴾
و قال الذین کفروا هل ندلکم علی رجل ینبىکم اذا مزقتم کل ممزق ۙ انکم لفی خلق جدید ۚ۷

আর কাফিররা বলে, ‘আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, তোমরা যখন পুরোপুরি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে তখন নিশ্চয় তোমরা নতুনভাবে সৃজিত হবে’? আল-বায়ান

কাফিরগণ বলে- তোমাদেরকে কি আমরা এমন একজন লোকের সন্ধান দেব যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে, তোমরা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলেও তোমাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে? তাইসিরুল

কাফিরেরা বলেঃ আমরা কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দিব যে তোমাদেরকে বলে তোমাদের দেহ সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লেও তোমরা সৃষ্টি রূপে উত্থিত হবে? মুজিবুর রহমান

But those who disbelieve say, "Shall we direct you to a man who will inform you [that] when you have disintegrated in complete disintegration, you will [then] be [recreated] in a new creation? Sahih International

৭. আর কাফিররা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব যে তোমাদেরকে জানায় যে, তোমাদের দেহ সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লেও অবশ্যই তোমরা হবে নতুনভাবে সৃষ্ট!(১)

(১) এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা তাদের আখেরাত অস্বীকৃতির চরম সীমানায় গিয়ে এসব কথা বলত। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) অবিশ্বাসীরা বলে,[1] ‘আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেব[2] যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে,[3] তোমাদের দেহ সম্পূর্ণ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও তোমরা নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবে? [4]

[1] এটা মু’মিনদের মোকাবেলায় আখেরাত অস্বীকারকারীদের কথা, যা তারা নিজেদের মাঝে বলাবলি করত।

[2] উদ্দেশ্য মুহাম্মাদ (সাঃ), যিনি তাদের নিকট আল্লাহর নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন।

[3] অর্থাৎ, অবিশ্বাস্য, আশ্চর্য ও অদ্ভুত খবর, বুঝে আসে না এমন খবর!

[4] অর্থাৎ, মৃত্যুর পর যখন তোমরা মাটিতে মিশে ধূলিকণায় পরিণত হয়ে যাবে, তোমাদের দেহের কোন চিহ্নই থাকবে না, অথচ তোমাদেরকে কবর থেকে পুনরায় জীবিত করা হবে এবং পুনরায় পূর্বের আকার-আকৃতি তোমাদেরকে প্রদান করা হবে? এ সকল কথোপকথন তারা আপোসে ঠাট্টা-মজাক হিসাবে করত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৮ اَفۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ کَذِبًا اَمۡ بِهٖ جِنَّۃٌ ؕ بَلِ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ فِی الۡعَذَابِ وَ الضَّلٰلِ الۡبَعِیۡدِ ﴿۸﴾
افتری علی الله کذبا ام بهٖ جنۃ بل الذین لا یومنون بالاخرۃ فی العذاب و الضلل البعید ۸

সে কি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, না কি তার পাগলামী রয়েছে? বরং যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে না তারা আযাব ও সুদূর বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। আল-বায়ান

সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে বলে, না হয় সে পাগল। বস্তুতঃ যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারাই শাস্তি এবং সুদূর গুমরাহীতে পড়ে আছে। তাইসিরুল

সে কি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে অথবা সে কি উন্মাদ? বস্তুতঃ যারা আখিরাতে বিশ্বাস করেনা তারা শাস্তি ও ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে। মুজিবুর রহমান

Has he invented about Allah a lie or is there in him madness?" Rather, they who do not believe in the Hereafter will be in the punishment and [are in] extreme error. Sahih International

৮. সে কি আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, নাকি তার মধ্যে আছে উন্মাদনা?(১) বরং যারা আখিরাতের উপর ঈমান আনে না, তারা শাস্তি ও ঘোর বিভ্ৰান্তিতে রয়েছে।

(১) অর্থাৎ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এমন মারাত্মক অপবাদ আরোপ করছে যে, এ লোক যেহেতু মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কথা বলছে, তা হলে সে দু'অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। হয় সে ইচ্ছা করে আল্লাহর উপর মিথ্যা বানিয়ে বলছে, নতুবা তাকে পাগলামীতে পেয়ে বসেছে। কি বলছে তা জানে না। আল্লাহ তার জওয়াবে বলেন, তোমরা যা মনে করেছ ব্যাপারটি তা নয়। বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বড় সত্যবাদী। আর যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করবে না, আর সেটার জন্য আমল করবে না, তারা তো স্থায়ী কঠিন শাস্তিতে থাকবে। দুনিয়াতেও তারা সঠিক পথ থেকে অনেক দূরে থাকবে। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) সে কি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে অথবা সে উন্মাদ?’[1] বস্তুতঃ যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তারা শাস্তি এবং ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে। [2]

[1] অর্থাৎ, (তারা বলত,) দু’য়ের এক অবশ্যই হবে, হয় সে মিথ্যা বলছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী ও রিসালাতের দাবী করে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছে। অথবা তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এবং পাগলামির জন্য ঐ সব কথা বলছে, যা জ্ঞানে ধরার মত নয়।

[2] আল্লাহ তাআলা বলেন, আসল ব্যাপার তা নয়, যা তারা ধারণা করে। বরং ঘটনা হচ্ছে যে, জ্ঞান করে দেখা ও প্রকৃত বুঝার ক্ষমতা থেকে এরাই বঞ্চিত, যার ফলস্বরূপ তারা পরকালকে বিশ্বাস করার পরিবর্তে তা অস্বীকার করে। যার পরিণাম হল পরকালের চিরস্থায়ী শাস্তি এবং তারা এখন এমন ভ্রষ্টতার শিকার, যা সত্য থেকে অনেক দূরে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:৯ اَفَلَمۡ یَرَوۡا اِلٰی مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اِنۡ نَّشَاۡ نَخۡسِفۡ بِهِمُ الۡاَرۡضَ اَوۡ نُسۡقِطۡ عَلَیۡهِمۡ کِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّکُلِّ عَبۡدٍ مُّنِیۡبٍ ﴿۹﴾
افلم یروا الی ما بین ایدیهم و ما خلفهم من السماء و الارض ان نشا نخسف بهم الارض او نسقط علیهم کسفا من السماء ان فی ذلک لایۃ لکل عبد منیب ۹

তারা কি তাদের সামনে ও তাদের পেছনে আসমান ও যমীনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ্য করে না? যদি আমি ইচ্ছা করি তাহলে তাদেরকে সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আসমান থেকে এক খন্ড (আযাব) তাদের উপর নিপতিত করব, অবশ্যই তাতে রয়েছে আল্লাহমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য নিদর্শন। আল-বায়ান

তারা কি আকাশ ও পৃথিবীতে তাদের সামনে ও পেছনে লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছে করলে তাদেরকেসহ ভূমি ধ্বসিয়ে দেব অথবা আকাশের এক টুকরো তাদের উপর ফেলে দেব। প্রতিটি আল্লাহ অভিমুখী বান্দাহর জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল

তারা কি তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে, আসমান ও যমীনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ্য করেনা? আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকেসহ ভূমি ধ্বসিয়ে দিব অথবা তাদের উপর আকাশ মন্ডলের পতন ঘটাব; আল্লাহর অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। মুজিবুর রহমান

Then, do they not look at what is before them and what is behind them of the heaven and earth? If We should will, We could cause the earth to swallow them or [could] let fall upon them fragments from the sky. Indeed in that is a sign for every servant turning back [to Allah]. Sahih International

৯. তারা কি তাদের সামনে ও তাদের পিছনে, আসমান ও যমীনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ্য করে না?(১) আমরা ইচ্ছে করলে ধ্বসিয়ে দেব তাদেরসহ যমীন অথবা পতন ঘটাব তাদের উপর আসমান থেকে এক খণ্ড; নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আল্লাহ্‌র অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য।

(১) কাতাদাহ বলেন, তারা কি তাদের ডানে ও তাদের বাঁয়ে তাকিয়ে দেখে না যে, কিভাবে আসমান তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে? যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে যমীন তাদেরকে নিয়ে ধ্বসে যেতে পারে যেমন তাদের পূর্বে কিছু লোকের ব্যাপারে তা ঘটেছিল। অথবা আমরা আকাশ থেকে একটি টুকরো তাদের উপর নিক্ষেপ করতে পারি। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) ওরা কি ওদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে, তার প্রতি লক্ষ্য করে না?[1] আমি ইচ্ছা করলে ওদেরকে সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা ওদের ওপর আকাশ হতে (আযাবের) কোন অংশ পতিত করব।[2] আল্লাহ-অভিমুখী প্রতিটি দাসের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।

[1] অর্থাৎ, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেন যে, পরকালকে অস্বীকার আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করার ফল। তাছাড়া যে আল্লাহ বর্ণনাতীত উচ্চ ও প্রশস্ত আকাশের মত বস্তু এবং বিশাল লম্বা-চওড়া পৃথিবীর মত বস্তু সৃষ্টি করতে পারেন, সেই আল্লাহর জন্য তাঁরই সৃষ্টি করা বস্তুকে পুনরায় সৃষ্টি করা এবং তা পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা কি সম্ভব নয়?

[2] উক্ত আয়াতটি দুটি বিষয়ের বর্ণনা দিয়েছে; প্রথমতঃ আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা, যা এক্ষুনি বর্ণিত হল। দ্বিতীয়তঃ কাফেরদের জন্য সতর্কতা ও ধমক এইভাবে যে, যে আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন, উভয়ের উপরে ও মাঝে যা কিছু আছে তার সকল কিছুর উপর তাঁর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ, তিনি যখন ইচ্ছা তাদের উপর আযাব প্রেরণ করে সকলকে ধ্বংস করতে পারেন। মাটি ধসিয়েও তিনি ধ্বংস করতে পারেন, যেমন কারূনকে ধসিয়ে ছিলেন অথবা আকাশ থেকে কিছু নিক্ষেপ করেও ধ্বংস করতে পারেন, যেমন আইকাবাসীকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪:১০ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ مِنَّا فَضۡلًا ؕ یٰجِبَالُ اَوِّبِیۡ مَعَهٗ وَ الطَّیۡرَ ۚ وَ اَلَنَّا لَهُ الۡحَدِیۡدَ ﴿ۙ۱۰﴾
و لقد اتینا داوٗد منا فضلا یجبال اوبی معهٗ و الطیر ۚ و النا له الحدید ۙ۱۰

আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, আল-বায়ান

আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর আর পাখীদেরকেও (এ আদেশ করেছিলাম)। আমি লোহাকে তার জন্য নরম করেছিলাম। তাইসিরুল

আমি নিশ্চয়ই দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম, হে পবর্তমালা! তোমরা দাঊদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকূলকেও। তার জন্য নমনীয় করেছিলাম লৌহ – মুজিবুর রহমান

And We certainly gave David from Us bounty. [We said], "O mountains, repeat [Our] praises with him, and the birds [as well]." And We made pliable for him iron, Sahih International

১০. আর অবশ্যই আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দাউদকে দিয়েছিলাম মর্যাদা এবং আদেশ করেছিলাম, হে পর্বতমালা! তোমরা দাউদের সাথে বার বার আমার পবিত্ৰতা ঘোষণা কর এবং পাখিদেরকেও। আর তার জন্য আমরা নরম করে দিয়েছিলাম লোহা—

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) নিশ্চয় আমি দাঊদকে আমার তরফ থেকে অনুগ্রহ প্রদান করেছিলাম।[1] হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং হে পক্ষীকুল তোমরাও।[2] আর লৌহকে তার জন্য নম্র করেছিলাম। [3]

[1] অর্থাৎ নবুঅতের সাথে সাথে বাদশাহী এবং আরো কিছু বিশেষ মর্যাদা দান করেছিলেন।

[2] বিশেষ মর্যাদাসমূহের মধ্যে একটি মর্যাদা সুমধুর কণ্ঠস্বরের নিয়ামত ছিল। যখন তিনি আল্লাহর তসবীহ পাঠ করতেন, তখন তাঁর সাথে পাথরের পাহাড় তসবীহ পাঠে বিভোল হয়ে যেতো, পক্ষীকুল উড়া বন্ধ করে দিত এবং তসবীহর গুনগুন্ আওয়াজ আরম্ভ করত। أَوِّبِيْ এর অর্থ হল তসবীহ পাঠ কর। অর্থাৎ পাহাড় ও পাখিদেরকে আমি বলেছিলাম, সুতরাং এরাও দাঊদ (আঃ)-এর সাথে তসবীহ পাঠে রত হয়ে যেত। وَالطَّيْرَ শব্দটি يَاجِبَالُ এর স্থানের উপর আত্ব্ফ করা হয়েছে বলে শেষে যবর হয়েছে। কারণ جِبَالُ শব্দটিতে আনুমানিক যবরই আছে। মূলতঃ বাক্য এইভাবে হবে نَادَيْنَا الْجِبَالَ وَالطَّيْرَ (আমি পাহাড় ও পক্ষীদের ডাক দিয়ে বললাম,--)। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[3] অর্থাৎ লোহাকে আগুন দিয়ে গলানো ও হাতুড়ি দিয়ে পিটানো ছাড়াই তা মোম, সানা আটা এবং ভেজা মাটির মত যেভাবে চাইতেন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইচ্ছামত জিনিস-পত্র তৈরী করতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »