পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা* পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। আল-বায়ান
পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। তাইসিরুল
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বারাকাতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান
Exalted is He who took His Servant by night from al-Masjid al-Haram to al-Masjid al-Aqsa, whose surroundings We have blessed, to show him of Our signs. Indeed, He is the Hearing, the Seeing. Sahih International
* ফিলিস্তীনে অবস্থিত বাইতুল মাকদিস, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল।
১. পবিত্ৰ মহিমাময় তিনি(১), যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন (২) আল-মসজিদুল হারাম (৩) থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত (৪) যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত, যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাতে পারি (৫); তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা (৬)
(১) سبحان শব্দটি মূলধাতু। এর অর্থ, যাবতীয় ত্রুটি ও দোষ থেকে পবিত্র ও মুক্ত। আয়াতে এর ব্যবহারিক অর্থ হচ্ছে, আমি তাঁকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করছি। [ফাতহুল কাদীর]
(২) মূলে أسرى শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার আভিধানিক অর্থ রাত্রে নিয়ে যাওয়া। এরপর ليلاً শব্দটি স্পষ্টতঃ এ অর্থ ফুটিয়ে তুলেছে। ليلاً শব্দটি نكره ব্যবহার করে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সমগ্র ঘটনায় সম্পূর্ণ রাত্রি নয়; বরং রাত্রির একটা অংশ ব্যয়িত হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে উল্লেখিত মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে “ইসরা” বলা হয় এবং সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর হয়েছে, তার নাম মে'রাজ। ইসরা অকাট্য আয়াত দ্বারা প্ৰমাণিত হয়েছে। আর মে'রাজ সূরা নাজমে উল্লেখিত রয়েছে এবং অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মান ও গৌরবের স্তরে بعبده শব্দটি একটি বিশেষ ভালবাসার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং কাউকে ‘আমার বান্দা’ বললে এর চাইতে বড় সম্মান মানুষের জন্যে আর হতে পারে না। [ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-উবুদিয়্যাহঃ ৪৭]
(৩) আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বললেনঃ মসজিদে-হারাম। অতঃপর আমি আরয করলামঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এতদুভয়ের নির্মাণের মধ্যে কতদিনের ব্যবধান রয়েছে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ বছর। তিনি আরও বললেনঃ এ তো হচ্ছে মসজিদদ্বয়ের নির্মাণক্রম। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আমাদের জন্য সমগ্ৰ ভূ-পৃষ্ঠকেই মসজিদ করে দিয়েছেন। যেখানে নামাযের সময় হয়, সেখানেই সালাত পড়ে নাও। [মুসলিমঃ ৫২০]
(৪) ইসরা ও মে'রাজের সমগ্র সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না, বরং সাধারণ মানুষের সফরের মত দৈহিক ও আত্মিক ছিল, একথা কুরআনের বক্তব্য ও অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্ৰমাণিত। আলোচ্য আয়াতের প্রথম سبحان শব্দের মধ্যে এদিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা, এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়। [ইবন কাসীর; মাজুমা ফাতাওয়া: ১৬/১২৫] মে'রাজ যদি শুধু আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্নজগতে সংঘটিত হত, তবে তাতে আশ্চর্যের বিষয় কি আছে? স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলিম, বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে, সে আকাশে উঠেছে, অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে। عبد শব্দ দ্বারা এদিকেই দ্বিতীয় ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, শুধু আত্মাকে দাস বলে না; বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই দাস বলা হয়। [ইবন কাসীর]
তারপর “এক রাতে নিজের বান্দাকে নিয়ে যান” এ শব্দাবলীও দৈহিক সফরের কথাই সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। স্বপ্নযোগে সফরের জন্য নিয়ে যাওয়া শব্দাবলী কোনক্রমেই উপযোগী হতে পারে না। তাছাড়া আয়াতে দেখানোর কথা বলা হয়েছে সেটাও শরীর ছাড়া সম্ভব হয় না। অনুরূপভাবে বুরাকে উঠাও প্রমাণ করে যে, ইসরা ও মি'রাজ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে সংঘটিত হয়েছিল। [দেখুন, ইবন কাসীর]।
এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মে'রাজের ঘটনা উন্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে বর্ণনা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আপনি কারও কাছে একথা প্ৰকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফেররা আপনার প্রতি আরও বেশী মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হত, তবে মিথ্যারোপ করার কি কারণ ছিল? তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘটনা প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা মিথ্যারোপ করল এবং ঠাট্টা বিদ্রুপ করল। এমনকি, অনেকের ঈমান টলায়মান হয়েছিল। ব্যাপারটি স্বপ্নের হলে এতসব তুলাকালাম কান্ড ঘটার সম্ভাবনা ছিল কি? সুতরাং আমাদের জন্য একথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই যে, এটি নিছক একটি রূহানী তথা আধ্যাতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। বরং এটি ছিল পুরোদস্তুর একটি দৈহিক সফর এবং চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ। আল্লাহ নিজেই তাঁর নবীকে এ সফর ও পর্যবেক্ষণ করান।
তাফসীর কুরতুবীতে আছে, ইসরার হাদীসসমূহ সব মুতাওয়াতির। নাক্কাশ এ সম্পর্কে বিশ জন সাহাবীর রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন এবং কাযী ইয়াদ শেফা গ্রন্থে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে এসব রেওয়ায়েত পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করে বর্ণনা করেছেন এবং পঁচিশ জন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের কাছ থেকে এসব রেওয়ায়েত বৰ্ণিত রয়েছে। যেমন, ওমর ইবনে খাত্তাব, আলী, ইবনে মাসউদ, আবু যর গিফারী, মালেক ইবনে ছ’ছা, আবু হুরায়রা, আবু সায়ীদ আল-খুদরী, ইবনে আব্বাস, শাদ্দাদ ইবনে আউস, উবাই ইবনে ক’ব, আবদুর রহমান ইবনে কুর্ত, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ, হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান, বুরাইদাহ, আবু আইউব আল-আনসারী, আবু উমামাহ, সামুরা ইবনে জুনদুব, সোহাইব রুমী, উম্মে হানী, আয়েশা, আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এরপর ইবনে-কাসীর বলেন, ইসরা সম্পর্কে সব মুসলমানের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু দ্বীনদ্রোহী যিন্দীকরা একে মানেনি।
মে'রাজের তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। মুসা ইবনে ওকবার রেওয়ায়েত এই যে, ঘটনাটি হিজরতের ছয়মাস পূর্বে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার মৃত্যুর পর সংঘটিত হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওফাত সালাত ফরয হওয়ার পূর্বেই হয়েছিল। ইমাম যুহরী বলেনঃ খাদীজার ওফাত নবুওয়াত প্ৰাপ্তির সাত বছর পরে হয়েছিল। কোন কোন রেওয়ায়েত রয়েছে, মে'রাজের ঘটনা নবুওয়ত প্ৰাপ্তির পাঁচ বছর পরে ঘটেছে। ইবনে ইসহাক বলেনঃ মে'রাজের ঘটনা তখন ঘটেছিল, যখন ইসলাম আরবের সাধারণ গোত্ৰসমূহে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এসব রেওয়ায়েতের সারমর্ম এই যে, মে'রাজের ঘটনাটি হিজরতের কয়েক বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেনঃ ইসরা ও মে'রাজের ঘটনা রবিউসসানী মাসের ২৭তম রাত্রিতে হিজরতের এক বছর পূর্বে ঘটেছে। আবার কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, নবুওয়ত প্ৰাপ্তির আঠার মাস পর এ ঘটনা ঘটেছে। কারও কারও মতে হিজরতের এক বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পরে কোন সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করেননি। [বিস্তারিত দেখুন, আশশাইখ সফিউর রহমান আল-মুবারকপূৱী: আর-রাহীকুল মাখতূম]
(৫) মে'রাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনাঃ ইমাম ইবনে কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে আলোচ্য আয়াতের তাফসীর এবং সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করার পর বলেনঃ সত্য কথা এই যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরা সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন; স্বপ্নে নয়। মক্কা মোকাররমা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে করেন। তারপরের সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো, বায়তুল-মোকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকটি অদূরে বেঁধে দেন এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের মসজিদে প্রবেশ করেন এবং কেবলার দিকে মুখ করে দুরাকাআত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সিঁড়ি আনা হয়, যাতে নীচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। তিনি সিঁড়ির সাহায্যে প্রথমে প্রথম আসমানে, তারপর অবশিষ্ট আসমানসমূহে গমন করেন।
এ সিঁড়িটি কি এবং কিরূপ ছিল, তার প্রকৃতস্বরূপ আল্লাহ্ তাআলাই জানেন। প্রত্যেক আসমানে সেখানকার ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং প্রত্যেক আসমানে সে সমস্ত নবী-রাসূলদের সাথে সাক্ষাত হয়, যাদের অবস্থান কোন নির্দিষ্ট আসমানে রয়েছে। যেমন, ষষ্ঠ আসমানে মূসা আলাইহিস সালাম এবং সপ্তম আসমানে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তিনি পয়গম্বরগণের স্থানসমূহও অতিক্রম করে এবং এক ময়দানে পৌছেন, যেখানে তাকদীর লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি ‘সিদরাতুল-মুনতাহা’ দেখেন, যেখানে আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙ এর প্ৰজাপতি ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। এখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলকে তাঁর স্বরূপে দেখেন। তাঁর ছয়শত পাখা ছিল। তিনি বায়তুল-মামুরও দেখেন।
বায়তুল-মামুরের নিকটেই কা'বার প্রতিষ্ঠাতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রাচীরের সাথে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এই বায়তুল মামুরে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। কেয়ামত পর্যন্ত তাদের পুর্নবার প্রবেশ করার পালা আসবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। সে সময় তার উম্মতের জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সালাত ফরয হওয়ার নির্দেশ হয়। তারপর তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেয়া হয়। এ দ্বারা ইবাদতের মধ্যে সালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি বায়তুল-মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন আসমানে যেসব পয়গম্বরের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল তারাও তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাবার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাযের সময় হয়ে যায় এবং তিনি পয়গম্বরগণের সাথে সালাত আদায় করেন।
সেটা সেদিনকার ফজরের সালাতও হতে পারে। ইবনে-কাসীর বলেনঃ নামাযে পয়গম্বরগণের ইমাম হওয়ার এ ঘটনাটি কারও মতে আসমানে যাওয়ার পূর্বে সংঘটিত হয়। কিন্তু বাহ্যতঃ এ ঘটনাটি প্রত্যাবর্তনের পর ঘটে। কেননা, আসমানে নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাতের ঘটনায় একথাও বর্ণিত রয়েছে যে, জিবরীল সব পয়গম্বরগণের সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। ইমামতির ঘটনা প্ৰথমে হয়ে থাকলে এখানে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এছাড়া সফরের আসল উদ্দেশ্য ছিল উর্ধ্ব জগতে গমন করা। কাজেই একাজটি প্রথমে সেরে নেয়াই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। আসল কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর সব পয়গম্বর বিদায় দানের জন্যে তার সাথে বায়তুল-মোকাদ্দাস পর্যন্ত আসেন এবং জিবরীলের ইঙ্গিতে তাকে সবাই ইমাম বানিয়ে কার্যতঃ তার নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়া হয়। এরপর তিনি বায়তুল মোকাদ্দেস থেকে বিদায় নেন এবং বোরাক সওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মোকার্রমা পৌঁছে যান।
৬. জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মিরাজের ব্যাপারে কুরাইশরা যখন আমাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করতে চেষ্টা করল তখন আমি কাবার হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আর আল্লাহ বাইতুল মাকদিসকে আমার সামনে উদ্ভাসিত করলেন। ফলে আমি তার দিকে তাকিয়ে তার চিহ্ন ও নিদর্শনগুলো তাদেরকে বলে দিতে থাকলাম। [বুখারীঃ ৩৮৮৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) পবিত্র ও মহিমময় তিনি[1] যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি[2] ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম হতে (ফিলিস্তীনের) মাসজিদুল আকসায়,[3] যার পরিবেশকে আমি করেছি বরকতময়,[4] যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই; [5] নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ।
[1] سُبْحَانَ হল, سَبَّحَ يُسْبِّحُ এর মাসদার (ক্রিয়া বিশেষ্য)। অর্থ হল, أُنَزِّهُ اللهَ تَنْزِيْهًا অর্থাৎ, আমি প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি থেকে আল্লাহর পবিত্র ও মুক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করছি। সাধারণতঃ এর ব্যবহার তখনই করা হয়, যখন অতীব গুরুতত্ত্বপূর্ণ কোন ঘটনার উল্লেখ হয়। উদ্দেশ্য এই হয় যে, বাহ্যিক উপায়-উপকরণের দিক দিয়ে মানুষের কাছে এ ঘটনা যতই অসম্ভব হোক না কেন, আল্লাহর নিকট তা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কেননা, তিনি উপকরণসমূহের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তো كُنْ শব্দ দিয়ে নিমিষে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। উপায়-উপকরণের প্রয়োজন তো মানুষের। মহান আল্লাহ এই সব প্রতিবন্ধকতা ও দুর্বলতা থেকে পাক ও পবিত্র।
[2] إِسْراءٌ শব্দের অর্থ হল, রাতে নিয়ে যাওয়া। পরে لَيْلًا উল্লেখ করে রাতের স্বল্পতার কথা পরিষ্কার করা হয়েছে। আর এরই জন্য لَيْلًا ‘নাকেরাহ’ (অনির্দিষ্ট) এসেছে। অর্থাৎ, রাতের এক অংশে অথবা সামান্য অংশে। অর্থাৎ, চল্লিশ রাতের এই সুদীর্ঘ সফর করতে সম্পূর্ণ রাত লাগেনি; বরং রাতের এক সামান্য অংশে তা সুসম্পন্ন হয়।
[3]أَقْصَى দূরত্বকে বলা হয়। ‘আল-বাইতুল মুকাদ্দাস’ বা ‘বাইতুল মাকদিস’ ফিলিস্তীন বা প্যালেষ্টাইনের কদস অথবা জেরুজালেম বা (পুরাতন নাম) ঈলীয়া শহরে অবস্থিত। মক্কা থেকে ক্বুদ্স চল্লিশ দিনের সফর। এই দিক দিয়ে মসজিদে হারামের তুলনায় বায়তুল মাকদিসকে ‘মাসজিদুল আকসা’ (দূরতম মসজিদ) বলা হয়েছে।
[4] এই অঞ্চল প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্য এবং নবীদের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবী রাখে। আর এই কারণে একে বরকতময় আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
[5] এটাই হল এই সফরের উদ্দেশ্য। যাতে আমি আমার এই বান্দাকে বিস্ময়কর এবং বড় বড় কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। তার মধ্যে এই সফরও হল একটি নিদর্শন ও মু’জিযা। সুদীর্ঘ এই সফর রাতের সামান্য অংশে সুসম্পন্ন হয়ে যায়। এই রাতেই নবী (সাঃ)-এর মি’রাজ হয় অর্থাৎ, তাঁকে আসমানসমূহে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন আসমানে নবীদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সপ্তাকাশের উপরে আরশের নীচে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’য় মহান আল্লাহ অহীর মাধ্যমে নামায এবং অন্যান্য কিছু শরীয়তের বিধি-বিধান তাঁকে দান করেন। এ ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা বহু সহীহ হাদীসে রয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত উম্মতের অধিকাংশ উলামা ও ফুকহা এই মত পোষণ করে আসছেন যে, এই মি’রাজ মহানবী (সাঃ)-এর সশরীরে এবং জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। এটা স্বপ্নযোগে অথবা আত্মিক সফর ও পরিদর্শন ছিল না, বরং তা ছিল দেহাত্মার সফর ও চাক্ষুষ দর্শন। (তা না হলে এ ঘটনাকে অস্বীকারকারীরা অস্বীকার করবে কেন?) বলা বাহুল্য, এ ঘটনা মহান আল্লাহ (অলৌকিকভাবে) তাঁর পূর্ণ কুদরত দ্বারা ঘটিয়েছেন। এই মি’রাজের দু’টি অংশ। প্রথম অংশকে ‘ইসরা’ বলা হয়; যার উল্লেখ এখানে করা হয়েছে। আর তা হল, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফর করার নাম। এখানে পৌঁছে নবী (সাঃ) সমস্ত নবীদের ইমামতি করেন। বায়তুল মাকদিস থেকে তাঁকে আবার আসমানসমূহে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এটা হল এই সফরের দ্বিতীয় অংশ। যাকে ‘মিরাজ’ বলা হয়েছে। এর কিঞ্চিৎ আলোচনা সূরা নাজমে করা হয়েছে এবং বাকী বিস্তারিত আলোচনা হাদীসসমূহে বর্ণিত রয়েছে। সাধারণভাবে সম্পূর্ণ এই সফরকে ‘মি’রাজ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ‘মি’রাজ’ সিড়ি বা সোপানকে বলা হয়। আর এটা রসূল (সাঃ)-এর পবিত্র মুখ-নিঃসৃত শব্দ عُرِجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ (আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয় বা আরোহণ করানো হয়) হতে গৃহীত। কেননা, এই দ্বিতীয় অংশটা প্রথম অংশের চেয়েও বেশী গুরুতত্ত্বপূর্ণ ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ব্যাপার। আর এই কারণেই ‘মিরাজ’ শব্দটাই বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। মি’রাজের সময়কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, তা হিজরতের পূর্বে সংঘটিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এক বছর পূর্বে। আবার কেউ বলেছেন, কয়েক বছর পূর্বে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপ মাস ও তার তারীখের ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ অথবা ২৭ তারীখে হয়েছে। কেউ বলেছেন, রজব মাসের ২৭ তারীখ এবং কেউ অন্য মাস ও অন্য তারীখের কথাও উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল কাদীর)
[মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবা (রাঃ) গণের নিকট তারীখের কোন গুরুত্ত্ব অথবা এ দিনকে স্মরণ ও পালন করার প্রয়োজনীয়তা ছিল না বলেই, তা সংরক্ষিত হয়নি। -সম্পাদক]
আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তা বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ বানিয়েছি। যেন তোমরা আমাকে ছাড়া কোন কর্মবিধায়ক না বানাও। আল-বায়ান
আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম আর সেটাকে করেছিলাম ইসরাঈল বংশীয়দের জন্য সত্যপথের নির্দেশক। (তাতে নির্দেশ দিয়েছিলাম) যে, আমাকে ছাড়া অন্যকে কর্ম নিয়ন্তা গ্রহণ করো না। তাইসিরুল
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাকে করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্য পথ নির্দেশক। আমি আদেশ করেছিলাম, তোমরা আমি ব্যতীত অপর কেহকেও কর্ম বিধায়করূপে গ্রহণ করনা। মুজিবুর রহমান
And We gave Moses the Scripture and made it a guidance for the Children of Israel that you not take other than Me as Disposer of affairs, Sahih International
২. আর আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তাকে করেছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক(১) যাতে তোমরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কর্মবিধায়করূপে গ্রহন না করো;(২)
১. মাত্র একটি আয়াতে মি'রাজের কথা আলোচনা করে তারপর হঠাৎ বনী ইসরাঈলের আলোচনা শুরু করে দেয়া হয়েছে। এটি মূলত: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করা। কারণ হচ্ছে, সাধারণত কুরআনের বহু স্থানে মূসা ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা, তাওরাত ও কুরআনের আলোচনা একসাথে থাকে। [ইবন কাসীর]
২. কর্মবিধায়ক তথা অভিভাবক অর্থাৎ বিশ্বস্ততা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভরসার ভিত্তিস্বরূপ যার উপর নির্ভর করা যায়। নিজের যাবতীয় বিষয় হাতে সোপর্দ করে দেয়া যায়। পথনির্দেশনা ও সাহায্য লাভ করার জন্য যার দিকে রুজু করা যায়। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তা'আলা। তাঁকে ব্যতীত আর কাউকে অভিভাবক, বন্ধু, সাহায্যকারী, ইলাহ যেন না মানা হয়। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক নবীর কাছেই এই বলে পাঠিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া যেন আর কারও ইবাদাত করা না হয়। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তা(কে) করেছিলাম বানী ইস্রাঈলের জন্য পথ-নির্দেশক; (বলেছিলাম,) তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকেও কর্মবিধায়ক রূপে গ্রহণ করো না ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে তাদের বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে আরোহণ করিয়েছিলাম, নিশ্চয় সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা। আল-বায়ান
(তোমরা তো) তাদের সন্তান! যাদেরকে আমি নূহের সঙ্গে নৌকায় বহন করেয়েছিলাম, সে ছিল এক শুকরগুজার বান্দা। তাইসিরুল
তোমরাইতো তাদের বংশধর যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম, সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ দাস। মুজিবুর রহমান
O descendants of those We carried [in the ship] with Noah. Indeed, he was a grateful servant. Sahih International
৩. তাদের বংশধর!(১) যাদেরকে আমরা নূহের সাথে আরোহণ করিয়েছিলাম(২); তিনি তো ছিলেন পরম কৃতজ্ঞ বান্দা।(৩)
১. এ আয়াতাংশের কয়েকটি অনুবাদ হতে পারে। এক. মূসা ছিলেন তাদের বংশধর, যাদেরকে আমরা নূহের কিশতিতে আরোহন করিয়েছিলাম। [আন-নুকাত ওয়াল উয়ুন; ফাতহুল কাদীর] দুই. হে তাদের বংশধর, যাদেরকে আমরা নূহের সাথে কিশতিতে আরোহন করিয়েছিলাম। তোমাদেরকেই বিশেষ করে এ নির্দেশ দিচ্ছি। [বাগভী; ইবন কাসীর; আদওয়াউল বায়ান] তিন. তোমরা আমাকে ব্যতীত আর কাউকে কর্মবিধায়ক বানিওনা। কারণ তারা তোমাদেরই মত মানুষ। যাদেরকে আমরা নূহের কিশতিতে আরোহন করিয়েছিলাম। [ফাতহুল কাদীর]
২. মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ তারা হলো, নূহের সন্তানসমূহ ও তাদের স্ত্রীগণ এবং নূহ। তার স্ত্রী তাদের সাথে ছিল না। [তাবারী।]
৩. অর্থাৎ নূহ ও তাঁর সাথীদের বংশধর হবার কারণে একমাত্র আল্লাহকেই অভিভাবক করা তোমাদের জন্য শোভা পায়। কারণ তোমরা যার বংশধর তিনি আল্লাহকে নিজের অভিভাবক করার বদৌলতেই প্লাবনের ধ্বংসকারিতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। বিভিন্ন হাদীসেও নূহ আলাইহিস সালামকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। শাফাআতের বৃহৎ হাদীসে এসেছে যে, লোকজন হাশরের মাঠে নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে নূহ! আপনি যমীনের অধিবাসীদের কাছে প্রথম রাসূল আর আল্লাহ। আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে ঘোষণা করেছে। [বুখারীঃ ৪৭১২]
নূহ আলাইহিস সালামকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে বলার পিছনে আরো একটি কারণ কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, নূহ আলাইহিস সালাম যখনই কোন কাপড় পরতেন বা কোন খাবার খেতেন তখনই আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। সে জন্য তাকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৬৩০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তোমরাই তো তাদের বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে (কিশতীতে) আরোহণ করিয়েছিলাম, নিশ্চয় সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ দাস। [1]
[1] নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের পর মানব বংশের উৎপত্তি তাঁর [নূহ (আঃ)] সেই ছেলেদের থেকে হয়েছে, যারা নূহ (আঃ) এর কিশতীতে সওয়ার ছিল এবং প্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল। এই জন্য বানী-ইস্রাঈলকে সম্বোধন করে বলা হল যে, তোমাদের পিতা নূহ (আঃ) আল্লাহর বড়ই কৃতজ্ঞ বান্দা ছিলেন। অতএব তোমরাও তোমাদের পিতার ন্যায় কৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন কর এবং আমি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে যে রসূল বানিয়ে প্রেরণ করেছি তাকে অস্বীকার করে সে নিয়ামতের কুফরী করো না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম যে, তোমরা যমীনে দু’বার অবশ্যই ফাসাদ করবে এবং ঔদ্ধত্য দেখাবে মারাত্মকভাবে। আল-বায়ান
আমি কিতাবের মাধ্যমে বানী ইসরাঈলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, তোমরা অবশ্য অবশ্যই পৃথিবীর বুকে দু’ দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর অবশ্য অবশ্যই অত্যধিক গর্বে ফুলে উঠবে। তাইসিরুল
এবং আমি কিতাবে (তাওরাতে) প্রত্যাদেশ দ্বারা বানী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় উদ্ধত্যকারী হবে। মুজিবুর রহমান
And We conveyed to the Children of Israel in the Scripture that, "You will surely cause corruption on the earth twice, and you will surely reach [a degree of] great haughtiness. Sahih International
৪. আর আমরা কিতাবে বনী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম(১) যে, অবশ্যই তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হবে।
১. কোন কোন মুফাস্সির বলেন, এখানে কিতাব বলতে এমন কিতাব বুঝানো হয়েছে। যার মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে এ বিষয়ে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখানে قَضَيْنَا শব্দের অর্থ হবে, ফয়সালা জানিয়ে দেয়া, খবর দেয়া। [আত-তাফসীরুস সহীহ] এ অর্থে কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। বলা হয়েছে, (وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ) “আমি তাকে এ বিষয়ে ফয়সালা জানিয়ে দিলাম যে, ভোরে ওদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।” [সূরা আল-হিজরঃ ৬৬] কারও কারও মতে, এখানে قَضَيْنَا শব্দটির অর্থ أَوْحَيْنَا বা আমরা ওহী প্রেরণ করেছি। এর কারণ এখানে শব্দটির পরে إِلَىٰ এসেছে। যদি জানানো বা খবর দেয়ার অর্থ হতো, তবে এর পরে إِلَىٰ ব্যবহৃত হতো না। আর যদি ফয়সালা করা বা বিচার করা অর্থ হতো, তবে শব্দটির পরে على আসতো। আর যদি পূর্ণ করার অর্থ হতো, তবে শব্দটির পরে ل আসত। সুতরাং এখানে قَضَيْنَا শব্দের অর্থ, أَوْحَيْنَا বা আমরা ওহী প্রেরণ করেছি হওয়াই বেশী যুক্তিযুক্ত। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) আর আমি (তাওরাত) কিতাবে বানী ইস্রাঈলকে জানিয়েছিলাম যে, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দু-দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হবে ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যখন এ দু’য়ের প্রথম ওয়াদা আসল, তখন আমি তোমাদের উপর আমার কিছু বান্দা পাঠালাম, যারা কঠোর যুদ্ধবাজ। অতঃপর তারা ঘরে ঘরে ঢুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাল। আর এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। আল-বায়ান
অতঃপর যখন দু’টির মধ্যে প্রথমটির সময় এসে উপস্থিত হল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দিলাম আমার বান্দাদেরকে যারা ছিল যুদ্ধে অতি শক্তিশালী, তারা (তোমাদের) ঘরের কোণায় কোণায় ঢুকে পড়ল, আর সতর্কবাণী পূর্ণ হল। তাইসিরুল
অতঃপর এই দু’এর প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম আমার দাসদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সমস্ত কিছু ধ্বংস করেছিল; শাস্তির প্রতিজ্ঞা কার্যকরী হয়েই থাকে। মুজিবুর রহমান
So when the [time of] promise came for the first of them, We sent against you servants of Ours - those of great military might, and they probed [even] into the homes, and it was a promise fulfilled. Sahih International
৫. অতঃপর এ দুটির প্রথমটির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হল তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম, যুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী আমাদের বান্দাদেরকে; অতঃপর তারা ঘরে ঘরে প্ৰবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। আর এটা ছিল এমন প্রতিশ্রুতি যা কার্যকর হওয়ারই ছিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) অতঃপর এই দু-এর প্রথম প্রতিশ্রুত কাল যখন উপস্থিত হল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর রণ-কুশলী বীর দাসদেরকে; যারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সমস্ত কিছু ধ্বংস করল; আর এ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হওয়ারই ছিল। [1]
[1] এখানে সেই লাঞ্ছনা ও ধ্বংসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা ব্যাবিলনের (অগ্নিপূজক) শাসক বুখতে নাসরের (বা বুখতে নাসসারের) হাতে খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ছয়শ’ সালে জেরুজালেমে ইয়াহুদীদের উপর আপতিত হয়েছিল। সে নির্বিচারে ব্যাপকভাবে ইয়াহুদীদেরকে হত্যা করেছিল এবং বহু সংখ্যক ইয়াহুদীকে দাস বানিয়েছিল। আর এটা তখন হয়েছিল, যখন তারা আল্লাহর একজন নবী শা’য়া (আঃ)-কে হত্যা অথবা আরমিয়া (আঃ)-কে বন্দী করেছিল এবং তাওরাতের বিধি-বিধানকে অমান্য করে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করার অপরাধ করেছিল। কেউ বলেন, বুখতে নাসরের পরিবর্তে মহান আল্লাহ জালূতকে শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর আধিপত্য দান করেছিলেন। সে তাদের উপর সীমাহীন যুলুম ও অত্যাচারের রুলার চালিয়েছিল। পরে ত্বালূতের নেতৃত্বে দাউদ (আঃ) তাকে হত্যা করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারপর আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য পালা ঘুরিয়ে দিলাম, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে তোমাদেরকে মদদ করলাম এবং জনবলে তোমাদেরকে সংখ্যাধিক্যে পরিণত করলাম। আল-বায়ান
অতঃপর আমি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলাম আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম, তোমাদেরকে জনবলে বহুগুণ বাড়িয়ে দিলাম। তাইসিরুল
অতঃপর আমি তোমাদের পুনরায় তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ করলাম। মুজিবুর রহমান
Then We gave back to you a return victory over them. And We reinforced you with wealth and sons and made you more numerous in manpower Sahih International
৬. তারপর আমরা তোমাদেরকে আবার তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম এবং সংখ্যায় গরিষ্ঠ করলাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য যুদ্ধের পালা ঘুরিয়ে (বিজয়) দিলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে করলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। [1]
[1] অর্থাৎ, বুখতে নাসর অথবা জালূতের হত্যার পর আমি পুনর্বার তোমাদেরকে মাল-ধন, সন্তান-সন্ততি এবং মান-সম্মান দানে ধন্য করলাম। অথচ এ সবই তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর তোমাদেরকে আরো অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ ও শক্তিশালী করে দিলাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজদের জন্যই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তা নিজদের জন্যই। এরপর যখন পরবর্তী ওয়াদা এল, (তখন অন্য বান্দাদের প্রেরণ করলাম) যাতে তারা তোমাদের চেহারাসমূহ মলিন করে দেয়, আর যেন মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন ঢুকে পড়েছিল প্রথমবার এবং যাতে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় যা ওদের কর্তৃত্বে ছিল। আল-বায়ান
তোমরা ভাল কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে, আর যদি তোমরা মন্দ কাজ কর, তাও করবে নিজেদেরই জন্য। অতঃপর যখন দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় আসলো, (তখন আমি তোমাদের শত্রুদেরকে শক্তি দিলাম) যেন তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয়, আর মাসজিদে (আকসায়) ঢুকে পড়ে যেভাবে তারা সেখানে প্রথমবার ঢুকে পড়েছিল, আর তাদের সম্মুখে যা পড়ে তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। তাইসিরুল
তোমরা সৎ কাজ করলে তা নিজেদেরই জন্য করবে এবং মন্দ কাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য; অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে আমি আমার দাসদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মাসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য। মুজিবুর রহমান
[And said], "If you do good, you do good for yourselves; and if you do evil, [you do it] to yourselves." Then when the final promise came, [We sent your enemies] to sadden your faces and to enter the temple in Jerusalem, as they entered it the first time, and to destroy what they had taken over with [total] destruction. Sahih International
৭. তোমরা সৎকাজ করলে সৎকাজ নিজেদের জন্য করবে এবং মন্দকাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য। তারপর পরবর্তী নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে (আমি আমার বান্দাদের পাঠালাম) তোমাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্ৰবেশ করেছিল আবার সেভাবেই তাতে প্ৰবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।(১)
১. কাদেরকে বনী ইসরাঈলের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং কারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল মুফাসসিরগণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতে বিভক্ত হয়েছেন। ইবন আব্বাস ও কাতাদা বলেন, তারা ছিল জালুত ও তার সৈন্যবাহিনী। তারা প্রথমে বনী-ইসরাঈলের উপর প্রাধান্য বিস্তার করলেও পরে সেটা উল্টো হয়ে যায়, কারণ, দাউদ জালুতকে হত্যা করেছিল। সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, এখানে যার কথা বলা হয়েছে সে ইরাকের মুওসিলের রাজা ও তার সেনাবাহিনী। অন্যরা বলেন যে, এখানে ব্যবিলনের বাদশাহ বুখতনাসরের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে অনেক বড় বড় কাহিনী আলোচিত হয়েছে সেগুলো বর্ণনা করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তোমরা সৎকর্ম করলে সৎকর্ম নিজেদেরই জন্য করবে, আর মন্দকর্ম করলে তাও নিজেদের জন্য; অতঃপর পরবর্তী প্রতিশ্রুত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার দাসদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন করবার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেই ভাবেই তাতে প্রবেশ করবার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবার জন্য।[1]
[1] দ্বিতীয়বার আবার তারা ফাসাদ সৃষ্টি করল। যাকারিয়া (আঃ)-কে হত্যা করল এবং ঈসা (আঃ)-কেও হত্যা করার প্রচেষ্টায় ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে বাঁচিয়ে নেন। এর ফলস্বরূপ রোমসম্রাট টিটাস (Titas)-কে আল্লাহ তাদের উপর আধিপত্য দান করেন। সে জেরুজালেমের উপর আক্রমণ করে তাদের লাশের গাদা লাগিয়ে দেয়, শত শত মানুষকে বন্দী করে, তাদের ধন-সম্পদ লুটে নেয় ধর্মপুস্তিকাগুলোকে পদতলে দলিত-মথিত করে, বায়তুল মাকদিস ও সুলাইমানী হাইকাল (উপাসনালয়)-কে ধ্বংস করে দেয় এবং তাদেরকে চিরদিনের জন্য বায়তুল মাকদিস থেকে বহিষ্কার করে দেয়। এইভাবে খুব করে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়। আর এই সর্বনাশ তাদের উপর নেমে এসেছিল সন ৭০ খ্রীষ্টাব্দে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় কর, তাহলে আমিও পুনরায় করব। আর আমি জাহান্নামকে করেছি কাফিরদের জন্য কয়েদখানা। আল-বায়ান
(এরপরও) হয়তো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন, কিন্তু যদি তোমরা (তোমাদের পূর্বকৃত পাপের) পুনরাবৃত্তি কর, তবে আমিও (পূর্বে দেয়া শাস্তির) পুনরাবৃত্তি করব। ঈমান প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য আমি জাহান্নামকে কারাগার বানিয়ে রেখেছি। তাইসিরুল
সম্ভবতঃ তোমাদের রাব্ব তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের পূর্ব আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তাহলে তিনিও তাঁর আচরণের পুনরাবৃত্তি করবেন; জাহান্নামকে আমি করেছি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য কারাগার। মুজিবুর রহমান
[Then Allah said], "It is expected, [if you repent], that your Lord will have mercy upon you. But if you return [to sin], We will return [to punishment]. And We have made Hell, for the disbelievers, a prison-bed." Sahih International
৮. সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের প্রতি দয়া করবেন, কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তবে আমরাও পুনরাবৃত্তি করব।(১) আর জাহান্নামকে আমরা করেছি কাফিরদের জন্য কারাগার।
১. অর্থাৎ তোমরা পুনরায় নাফরমানীর দিকে প্রত্যাবর্তন করলে আমিও পুনরায় এমনি ধরনের শাস্তি ও আযাব চাপিয়ে দেব। বর্ণিত এ বিধিটি কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এতে বনী-ইসরাঈলের সেসব লোককে সম্বোধন করা হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে বিদ্যমান ছিল। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, প্রথমবার মুসা আলাইহিস সালাম-এর শরীআতের বিরুদ্ধাচরণের কারণে এবং দ্বিতীয়বার ঈসা আলাইহিস সালাম-এর শরীআতের বিরুদ্ধাচরণের কারণে যেভাবে তোমরা শাস্তি ও আযাবে পতিত হয়েছিলে, এখন তৃতীয় যুগ হচ্ছে শরীআতে মুহাম্মদীয় যুগ যা কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর বিরুদ্ধাচরণ করলেও তোমাদেরকে পূর্বের পরিণতিই ভোগ করতে হবে। আসলে তাই হয়েছে। তারা শরীআতে-মুহাম্মদী ও ইসলামের বিরুদ্ধাচরণে প্রবৃত্ত হলে মুসলিমদের হাতে নির্বাসিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন; কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের পূর্ব আচরণের পুনরাবৃত্তি কর; তবে আমিও (আমার শাস্তির) পুনরাবৃত্তি করব।[1] আর জাহান্নামকে আমি করেছি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য কারাগার।[2]
[1] এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও, তাহলে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হবে। যার অর্থ হল, দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করবে। আর যদি পুনরায় আল্লাহর অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করে যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করায় লিপ্ত হও, তাহলে আমি আবারও তোমাদেরকে লাঞ্ছনা ও অবমাননাগ্রস্ত করব; যেমন ইতিপূর্বে দুইবার আমি তোমাদের সাথে এই ধরনের আচরণ করেছি। আর হলও তা-ই। এই ইয়াহুদীরা নিজেদের মন্দ আচরণ থেকে ফিরে আসেনি। তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতের ব্যাপারে সেই আচরণই প্রদর্শন করে, যে আচরণ প্রদর্শন করেছিল মূসা (আঃ) এবং ঈসা (আঃ)-এর নবুঅতের ব্যাপারে। যার ফলস্বরূপ তৃতীয়বার মুসলিমদের হাতে তাদেরকে অপদস্থ ও অপমানিত হতে হয় এবং অত্যধিক লাঞ্ছনার সাথে তাদেরকে মদীনা ও খায়বার থেকে নির্বাসিত হতে হয়।
[2] অর্থাৎ, দুনিয়ার এই লাঞ্ছনার পর জাহান্নামে আরো পৃথক শাস্তি রয়েছে, যা সেখানে তারা ভোগ করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আল-বায়ান
নিশ্চয়ই এ কুরআন সেই পথ দেখায় যা সোজা ও সুপ্রতিষ্ঠিত, আর যারা সৎ কাজ করে সেই মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। তাইসিরুল
এই কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশ করে এবং সৎ কর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। মুজিবুর রহমান
Indeed, this Qur'an guides to that which is most suitable and gives good tidings to the believers who do righteous deeds that they will have a great reward. Sahih International
৯. নিশ্চয় এ কুরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে যা আকওয়াম(১) (সরল, সুদৃঢ়) এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
১. কুরআন যে পথনির্দেশ করে, তাকে ‘আকওয়াম’ বলা হয়েছে। ‘আকওয়াম’ সে পথ, যা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিকটবর্তী, সহজ এবং বিপদাপদমুক্তও। সুতরাং কুরআনের প্রদর্শিত পথটি সহজ, সরল, সঠিক, কল্যাণকর, ইনসাফপূর্ণ। [আদওয়াউল বায়ান] এ থেকে বোঝা গেল যে, কুরআন মানুষের জীবনের জন্যে যেসব বিধি-বিধান দান করে, সেগুলোতে এ উপরোক্ত গুণগুলো বিদ্যমান রয়েছে। তাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। যদিও মুলহিদ ও আল্লাহবিরোধী মানুষ স্বল্পবুদ্ধির কারণে মাঝে মাঝে এ পথকে দুৰ্গম ও বিপদসংকুল মনে করতে থাকে এবং দ্বীনে ইসলামে বিভিন্নভাবে বদনামী করে থাকে। তারা মূলত আল্লাহর বিধানসমূহের হিকমত ও রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞ ও জানতে অপারগ। [আদওয়াউল বায়ান]
কিন্তু রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি জগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং ভূত ও ভবিষ্যৎ তাঁর কাছে সমান। একমাত্র তিনিই এ সত্য জানতে পারেন যে, মানুষের উপকার কোন কাজে ও কিভাবে বেশী। স্বয়ং মানুষ যেহেতু সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, তাই সে নিজের ভালমন্দও পুরোপুরি জানতে পারে না। কুরআন যে উত্তম পথের পথনির্দেশ করে তার উদাহরণ হলো, কুরআন তাওহীদের দিকে পথ নির্দেশ করে, যা মানবজীবনের সবচেয়ে চরম ও পরম পাওয়া। কুরআন তাওহীদের তিনটি অংশ অর্থাৎ প্রভুত্বে, নাম ও গুণে এবং ইবাদতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয় যা মানুষের জীবনকে এক সুন্দর ও সাবলীল গতিতে নিয়ে যায়। কুরআন তালাকের ক্ষমতা পুরুষের হাতে দিয়েছে।
কারণ, ক্ষেতের মালিকই জানেন কিভাবে তিনি সেটা পরিচালনা করবেন। কুরআন মিরাসের ক্ষেত্রে ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দিয়েছে। এটা তাঁর প্রাজ্ঞতার প্রমাণ। অনুরূপভাবে কুরআন কিসাসের প্রতি পথনির্দেশ করে যা মানুষের জানের নিরাপত্তা বিধান করে। তদ্রুপ কুরআন মানুষকে চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটার নির্দেশ দেয় যা মানুষের মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তেমনিভাবে কুরআন মানুষকে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর মেরে হত্যা এবং বেত্রাঘাতের প্রতি দিকনির্দেশনা দেয় যা মানুষের সম্মানের হেফাজতের গ্যারান্টি দেয়। সুতরাং কুরআন সত্যিকার অর্থেই এমন পথের দিকনির্দেশনা দেয় যা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে নিকটবর্তী, সহজ ও বিপদমুক্ত। [আদওয়াউল বায়ান; সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথনির্দেশ করে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না আমি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল-বায়ান
আর (তা সংবাদ দেয় যে) যারা আখেরাতে ঈমান আনে না, তাদের জন্য আমি ভয়ঙ্কর ‘আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি। তাইসিরুল
আর যারা পরকাল বিশ্বাস করেনা তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি। মুজিবুর রহমান
And that those who do not believe in the Hereafter - We have prepared for them a painful punishment. Sahih International
১০. আর যারা আখিরাতে ঈমান আনে না আমরা তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আর যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি মর্মান্তিক শাস্তি।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান