بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
১১:১০১ وَ مَا ظَلَمۡنٰهُمۡ وَ لٰكِنۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَمَاۤ اَغۡنَتۡ عَنۡهُمۡ اٰلِهَتُهُمُ الَّتِیۡ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ شَیۡءٍ لَّمَّا جَآءَ اَمۡرُ رَبِّكَ ؕ وَ مَا زَادُوۡهُمۡ غَیۡرَ تَتۡبِیۡبٍ ﴿۱۰۱﴾
و ما ظلمنهم و لكن ظلموا انفسهم فما اغنت عنهم الهتهم التی یدعون من دون الله من شیء لما جآء امر ربك و ما زادوهم غیر تتبیب ﴿۱۰۱﴾

আর আমি তাদের উপর যুলম করিনি, বরং তারা নিজদের উপর যুলম করেছে। তারপর যখন তোমার রবের নির্দেশ আসল তখন আল্লাহ ছাড়া যে সব উপাস্যকে তারা ডাকত, তারা তাদের কোন উপকার করেনি এবং তারা ধ্বংস ছাড়া তাদের আর কিছুই বৃদ্ধি করেনি। আল-বায়ান

আমি তাদের উপর যুলম করিনি বরং তারাই নিজেদের উপর যুলম করেছিল, কিন্তু তোমার প্রতিপালকের হুকুম যখন এসে গেল, তখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব ইলাহকে ডাকত ওগুলো তাদের কোনই কাজে আসল না, তারা ধ্বংস ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করতে পারল না। তাইসিরুল

আমি তাদের প্রতি অত্যাচার করিনি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে। বস্তুতঃ তাদের কোনই উপকার করেনি তাদের সেই উপাস্যগুলি যাদের তারা ইবাদাত করত আল্লাহকে ছেড়ে, যখন এসে পৌঁছল তোমার রবের হুকুম; তাদের ক্ষতি সাধন ছাড়া তারা আর কোনো কিছুই বৃদ্ধি করলনা। মুজিবুর রহমান

And We did not wrong them, but they wronged themselves. And they were not availed at all by their gods which they invoked other than Allah when there came the command of your Lord. And they did not increase them in other than ruin. Sahih International

১০১. আর আমরা তাদের প্রতি যুলুম করিনি কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। অতঃপর যখন আপনার রবের নির্দেশ আসল, তখন আল্লাহ ছাড়া তারা যে ইলাহসমূহের ইবাদাত করত তারা তাদের কোন কাজে আসল না। আর তারা ধ্বংস ছাড়া তাদের অন্য কিছুই বৃদ্ধি করল না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০১) আমি তাদের প্রতি অত্যাচার করিনি,[1] কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে।[2] বস্তুতঃ যখন তোমার প্রতিপালকের হুকুম এসে পৌঁছল, তখন তাদের সেই উপাস্যগুলি, আল্লাহকে ছেড়ে ওরা যাদের উপাসনা করত, তারা ওদের কোন কাজে লাগল না। উল্টো তারা তাদের ধ্বংসই বৃদ্ধি করল। [3]

[1] অর্থাৎ, তাদেরকে শাস্তি দিয়ে ও ধ্বংস করে।

[2] (বরং তারাই) কুফরী ও অবাধ্যতা করে (নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে।)

[3] অথচ তাদের বিশ্বাস এই ছিল যে, এরা তাদেরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে এবং মঙ্গল এনে দেবে। কিন্তু যখন আল্লাহর আযাব উপস্থিত হল, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাদের উক্ত বিশ্বাস ভ্রান্ত ছিল এবং এ কথা প্রমাণ হয়ে গেল যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ কারোর মঙ্গল বা অমঙ্গল করার ক্ষমতা রাখে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০২ وَ كَذٰلِكَ اَخۡذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الۡقُرٰی وَ هِیَ ظَالِمَۃٌ ؕ اِنَّ اَخۡذَهٗۤ اَلِیۡمٌ شَدِیۡدٌ ﴿۱۰۲﴾
و كذلك اخذ ربك اذا اخذ القری و هی ظالمۃ ان اخذهٗ الیم شدید ﴿۱۰۲﴾

আর এরূপই হয় তোমার রবের পাকড়াও যখন তিনি পাকড়াও করেন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড়ই যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে যখন তিনি পাকড়াও করেন কোন জনপদকে যখন তারা যুলমে লিপ্ত থাকে। অবশ্যই তাঁর পাকড়াও ভয়াবহ, বড়ই কঠিন। তাইসিরুল

‘এরূপই তোমার রবের পাকড়াও। তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদের পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যন্ত্রনাদায়ক, কঠোর। মুজিবুর রহমান

And thus is the seizure of your Lord when He seizes the cities while they are committing wrong. Indeed, His seizure is painful and severe. Sahih International

১০২. এরূপই আপনার রবের পাকড়াও! যখন তিনি পাকড়াও করেন অত্যাচারী জনপদসমূহকে নিশ্চয় তার পাকড়াও যন্ত্রণাদায়ক, কঠিন।(১)

(১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারীকে পৃথিবীতে সুযোগ ও অবকাশ দিয়ে থাকেন। আবার যখন তাকে ধরেন তখন আর ছাড়েন না। বর্ণনাকার সাহাবী আবু মূসা আশ'আরী বলেনঃ তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “এরূপই আপনার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন ওরা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয়ই তার শাস্তি মর্মম্ভদ, কঠিন।” [বুখারীঃ ৪৬৮৬, মুসলিমঃ ২৫৮৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) আর এরূপই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও; যখন তিনি কোন অত্যাচারী জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক, কঠিন। [1]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যেমন পূর্ববর্তী জনপদসমূহকে ধ্বংস করেছেন, অনুরূপ ভবিষ্যতেও তিনি অত্যাচারীদেরকে পাকড়াও করার ক্ষমতা রাখেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অবশ্যই অত্যাচারীদেরকে ঢিল দেন। কিন্তু যখন তাদেরকে পাকড়াও করেন, তখন কোন সুযোগ দেন না।’’ অতঃপর তিনি উক্ত আয়াত পাঠ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৩ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیَۃً لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ ذٰلِكَ یَوۡمٌ مَّجۡمُوۡعٌ ۙ لَّهُ النَّاسُ وَ ذٰلِكَ یَوۡمٌ مَّشۡهُوۡدٌ ﴿۱۰۳﴾
ان فی ذلك لایۃ لمن خاف عذاب الاخرۃ ذلك یوم مجموع له الناس و ذلك یوم مشهود ﴿۱۰۳﴾

নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। সেটি এমন একটি দিন, যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং সেটি এমন এক দিন, যেদিন সবাই হাযির হবে। আল-বায়ান

এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে তার জন্য যে আখেরাতের শাস্তিকে ভয় করে। এটা এমন দিন, যে দিনের জন্য সব মানুষকে একত্রিত করা হবে, এটা হাযির হওয়ার দিন। তাইসিরুল

এসব ঘটনায় সেই ব্যক্তিদের জন্য বড় উপদেশ রয়েছে যারা পরকালের শাস্তিকে ভয় করে; ওটা এমন একটি দিন হবে যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হল সকলের উপস্থিতির দিন। মুজিবুর রহমান

Indeed in that is a sign for those who fear the punishment of the Hereafter. That is a Day for which the people will be collected, and that is a Day [which will be] witnessed. Sahih International

১০৩. নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে(১)। সেটি এমন এক দিন, যেদিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে; আর সেটি এমন এক দিন যেদিন সবাইকে উপস্থিত করা হবে(২);

(১) অর্থাৎ ইতিহাসের এ ঘটনাবলীর মধ্যে এমন একটি নিশানী রয়েছে যে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করলে মানুষের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাবে যে, আখেরাতের আযাব অবশ্যই আসবে এবং এ সম্পর্কিত নবীদের দেয়া খবর সত্য। তাছাড়া এ নিশানী থেকে সেই আখেরাতের আযাব কেমন কঠিন ও ভয়াবহ হবে সেকথাও জানতে পারবে। ফলে এ জ্ঞান তার মনে ভীতির সঞ্চার করে তাকে সঠিক পথে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে।

(২) অর্থাৎ সেদিন আগের পরের সবাইকে একত্রিত করা হবে। কেউই বাকি থাকবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “আর আমি তাদের সবাইকে জমায়েত করেছি, তাদের কাউকেই ছাড়িনি।” [সূরা আল-কাহাফঃ ৪৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) নিশ্চয় এতে[1] সে ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে, যে ব্যক্তি পরকালের শাস্তিকে ভয় করে। ওটা এমন একটা দিন হবে, যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হবে সকলের উপস্থিতির দিন। [2]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহর ধর-পাকড়ে অথবা এই ঘটনাবলীতে, যা নসীহত ও শিক্ষার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে (তাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে)।

[2] অর্থাৎ, হিসাব ও প্রতিদানের জন্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৪ وَ مَا نُؤَخِّرُهٗۤ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعۡدُوۡدٍ ﴿۱۰۴﴾ؕ
و ما نؤخرهٗ الا لاجل معدود ﴿۱۰۴﴾

আর নির্দিষ্ট কিছুকালের জন্যই আমি তা বিলম্বিত করছি। আল-বায়ান

আমি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে বিলম্বিত করি মাত্র। তাইসিরুল

আর আমি ওটা শুধু সামান্য কালের জন্য স্থগিত রেখেছি। মুজিবুর রহমান

And We do not delay it except for a limited term. Sahih International

১০৪. আর আমরা তো কেবল নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যই সেটা বিলম্বিত করছি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৪) আর আমি ওটা নির্দিষ্ট একটি কালের জন্যই বিলম্বিত করছি। [1]

[1] অর্থাৎ, কিয়ামত সংঘটিত হওয়াতে দেরী হওয়ার একমাত্র কারণ হল যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন। অতঃপর যখন সেই নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তের জন্যও বিলম্ব করা হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৫ یَوۡمَ یَاۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ۚ فَمِنۡهُمۡ شَقِیٌّ وَّ سَعِیۡدٌ ﴿۱۰۵﴾
یوم یات لا تكلم نفس الا باذنهٖ فمنهم شقی و سعید ﴿۱۰۵﴾

যেদিন তা আসবে সেদিন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলবে না। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কেউ দুর্ভাগা, আর কেউ সৌভাগ্যবান। আল-বায়ান

সে দিন যখন আসবে তখন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারবে না, তাদের কেউ হবে হতভাগা, আর কেউ হবে সৌভাগ্যবান। তাইসিরুল

যখন সেই দিন আসবে তখন কোন ব্যক্তি আমার অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবেনা। অতঃপর তাদের মধ্যে কতক দুর্ভাগা হবে এবং কতক হবে ভাগ্যবান। মুজিবুর রহমান

The Day it comes no soul will speak except by His permission. And among them will be the wretched and the prosperous. Sahih International

১০৫. যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না।(১); অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য আর কেউ হবে সৌভাগ্যবান।(২)

(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ “সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্যরা কথা বলবে না এবং সে সঠিক বলবে।” [সূরা আন-নাবাঃ ৩৮] অর্থাৎ সেদিনের সেই আড়ম্বরপূর্ণ মহিমাম্বিত আদালতে অতি বড় কোন গৌরবান্বিত ব্যক্তি এবং মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাও টুঁ শব্দটি করতে পারবে না। আর যদি কেউ সেখানে কিছু বলতে পারে তাহলে একমাত্র বিশ্ব-জাহানের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মহান অধিকারীর নিজের প্রদত্ত অনুমতি সাপেক্ষেই বলতে পারবে।

(২) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যখন এ আয়াত “তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য আর কেউ হবে ভাগ্যবান” নাযিল হলো তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী! তা হলে কি জন্য আমল করব? যে ব্যাপারে চুড়ান্ত ফয়সালা হয়ে গেছে সেটার জন্য আমল করব নাকি চুড়ান্ত ফয়সালা হয়নি এমন বস্তুর জন্য আমল করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে উমর! বরং যে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এবং কলম দিয়ে লিখা হয়ে গেছে এমন বিষয়ের জন্য আমল করবে। তবে যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সেটাকে সহজ করে দেয়া হবে।” [তিরমিযীঃ ৩১১১] অর্থাৎ তাকদীরের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যদি সে ঈমানদার হিসেবে লিখা হয়ে থাকে তবে তার জন্য সৎকাজ করা সহজ করে দেয়া হবে। আর যদি বদকার ও কাফের হিসেবে লেখা হয়ে থাকে তবে সে ভাল কাজ করতে চাইবে না, ভাল কাজ করা তার দ্বারা সহজ হবে না। তাই প্রত্যেকের উচিত ভাল কাজ করতে সচেষ্ট হওয়া। কারণ ভাল কাজের প্রতি প্রচেষ্টাই তার ভাগ্য ভাল কি মন্দ হয়েছে তার প্রতি প্রমাণবহ। তা না করে নিছক তাকদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে বুঝতে হবে যে, সে অবশ্যই হতভাগা, তার তাকদীরে ভালো লিখা হয়নি। যা অধিকাংশ দুর্ভাগা মানুষ সবসময় করে থাকে। তারা ভাগ্যকে অযথা টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে এবং ভাগ্য নিয়ে অযথা বাদানুবাদ করে।

অপরপক্ষে, যাদের ভাগ্য ভাল, তারা তাকদীরের উপর ঈমান রাখে কিন্তু সেটাকে টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে ভাল কাজ করতে সদা সচেষ্ট থাকে। তারপর যদি ভাল কিছু পায় তবে বুঝতে হবে যে, প্রচেষ্টা করার কথাও তার তাকদীরে লিখা আছে। আর যারা সৎ কাজের চেষ্টা না করে অযথা তাকদীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের সম্পর্কে বুঝতে হবে যে, তারা সৎকাজের প্রচেষ্টা করবে না এটাই লিখা হয়েছিল সে জন্য তারা দুর্ভাগা। তাকদীর সম্পর্কে এটাই হচ্ছে মূল কথা। [দেখুন, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীনঃ আলকাওলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ ২/৪১৩-৪১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) যখন সেদিন আসবে, তখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবে না।[1] সুতরাং তাদের মধ্যে কেউ হবে দুর্ভাগ্যবান এবং কেউ হবে সৌভাগ্যবান।

[1] ‘কথাও বলতে পারবে না’ কথাটির অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার সামনে কারোর কোন কথা বলার বা সুপারিশ করার হিম্মত ও সাহস হবে না। তবে যদি তিনি অনুমতি দেন, তাহলে সে কথা স্বতন্ত্র। সুপারিশ সম্পর্কিত লম্বা হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সেই দিন আম্বিয়াগণ ছাড়া কারোর কথা বলার হিম্মত ও সাহস হবে না। আর আম্বিয়াগণের মুখে সেদিন একমাত্র এই কথা হবে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে পরিত্রাণ দাও, আমাকে পরিত্রাণ দাও।’’ (বুখারী)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৬ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ شَقُوۡا فَفِی النَّارِ لَهُمۡ فِیۡهَا زَفِیۡرٌ وَّ شَهِیۡقٌ ﴿۱۰۶﴾ۙ
فاما الذین شقوا ففی النار لهم فیها زفیر و شهیق ﴿۱۰۶﴾

অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে থাকবে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ। আল-বায়ান

যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তাদের জন্য আছে হা-হুতাশ আর আর্ত চীৎকার। তাইসিরুল

অতএব যারা দুর্ভাগা হবে তারাতো জাহান্নামে এরূপ অবস্থায় থাকবে যে, তাতে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ হতে থাকবে। মুজিবুর রহমান

As for those who were [destined to be] wretched, they will be in the Fire. For them therein is [violent] exhaling and inhaling. Sahih International

১০৬. অতঃপর যারা হবে হতভাগ্য তারা থাকবে আগুনে এবং সেখানে তাদের থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) অতএব যারা দুর্ভাগ্যবান তারা তো হবে দোযখে; তাতে তাদের চীৎকারও আর্তনাদ হতে থাকবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৭ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ ؕ اِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیۡدُ ﴿۱۰۷﴾
خلدین فیها ما دامت السموت و الارض الا ما شآء ربك ان ربك فعال لما یرید ﴿۱۰۷﴾

সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে*, অবশ্য তোমার রব যা চান**। নিশ্চয় তোমার রব তা-ই করে যা তিনি ইচ্ছা করেন। আল-বায়ান

সেখানে তারা স্থায়ী হবে চিরকালের জন্য যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছে করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই করতে সক্ষম যা তিনি করতে চান। তাইসিরুল

তারা অনন্তকাল সেখানে থাকবে, যে পর্যন্ত আসমান ও যমীন স্থায়ী থাকে। তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয় তাহলে ভিন্ন কথা; নিশ্চয়ই তোমার রাব্ব যা কিছু চান তা তিনি পূর্ণরূপে সমাধা করতে পারেন। মুজিবুর রহমান

[They will be] abiding therein as long as the heavens and the earth endure, except what your Lord should will. Indeed, your Lord is an effecter of what He intends. Sahih International

* ‘যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে’- এ কথা দ্বারা আরবী ভাষায় চিরস্থায়ীত্বের উদাহরণ দেয়া হয়ে থাকে।

১০৭. সেখানে তারা স্থায়ী হবে(১) যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীন বিদ্যমান থাকবে(২) যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছে করেন(৩); নিশ্চয় আপনার রব তাই করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।

(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মৃত্যুকে হাশরের মাঠে একটি সাদা-কালো ছাগলের সূরতে নিয়ে আসা হবে তারপর একজন আহবানকারী আহবান করবেন, হে জান্নাতবাসী। ফলে তারা ঘাড় উঁচু করবে এবং তাকাবে। তারপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি এটাকে চিন? তারা বলবেঃ হ্যাঁ, এটা হলো, মৃত্যু৷ তাদের প্রত্যেকেই তা দেখেছে। তারপর আহবানকারী আহবান করে ডাকবেন, হে জাহান্নামবাসী! তখন তারা ঘাড় উঁচু করে তাকাবে। তখন তাদের বলা হবে, তোমরা কি এটাকে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, আর তারা প্রত্যেকে তা দেখেছে, তারপর সেটাকে জবেহ করা হবে। তারপর বলবেনঃ হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে তোমরা এখানে থাকবে সুতরাং কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! স্থায়ীভাবে এখানে থাকবে সুতরাং কোন মৃত্যু নেই। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ তাদেরকে সতর্ক করে দিন পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা গাফিল এবং তারা বিশ্বাস করে না। (সূরা মারইয়ামঃ ৩৯) [বুখারীঃ ৪৭৩০]

(২) এ শব্দগুলোর অর্থ আখেরাতের আসমান ও যমীন হতে পারে। এ জন্যই হাসান বসরী বলেন, সেদিন আসমান ও যমীন তো পরিবর্তিত হবে। আর সে আসমান ও যমীন স্থায়ী হবে। তাই তাদের অবস্থারও পরিবর্তন হবে না। [ইবন কাসীর] অথবা এমনও হতে পারে যে, প্রতিটি জান্নাত ও জাহান্নামেরই আলাদা আসমান ও যমীন রয়েছে সে অনুসারে এটা বলা হয়েছে। এটি ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত। [ইবন কাসীর] অথবা এর অর্থ যতক্ষণ আসমান আসমান থাকবে আর যতক্ষণ যমীন যমীন থাকবে। আর আখেরাতে সেটা অপরিবর্তনীয়। এটি আব্দুর রহমান ইবন যায়দ বলেছেন। [ইবন কাসীর] অথবা নিছক সাধারণ বাকধারা হিসেবে একে চিরকালীন স্থায়িত্ব অর্থে বর্ণনা করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]

(৩) অর্থাৎ তাদেরকে এ চিরন্তন আযাব থেকে বাঁচাবার মতো আর কোন শক্তিই তো নেই। তবে আল্লাহ নিজেই কিছু ইচ্ছে করেন সেটা ভিন্ন। এখান প্রশ্ন হচ্ছে, কাফেরের আযাব তো কখনো শেষ হবে না, তা হলে এখানে ব্যতিক্রম কি হতে পারে? এ ব্যাপারে আলেমগণ বিভিন্ন মত দিয়েছেন। তবে সবেচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে তাই যা ইমাম ইবন জারীর তাবারীসহ অধিকাংশ সত্যনিষ্ঠ আলেম গ্রহণ করেছেন। আর তা হচ্ছে, এখানে গোনাহগার ঈমানদারদের কথা বলা হয়েছে। যাদেরকে আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবী-রাসূল, ফিরিশতা ও মুমিনদের সুপারিশের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তারপর রহমতের মালিক আল্লাহ তা'আলা নিজ হাতে এমন লোকদেরকে বের করবেন, যাদের অন্তরে সামান্যতম ঈমানও অবশিষ্ট ছিল। এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বিস্তারিত এসেছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) তারা অনন্তকাল সেখানে থাকবে, যতকাল আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে;[1] যদি না তোমার প্রতিপালকের অন্য ইচ্ছা হয়।[2] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা করেন, তা সম্পাদনে সুনিপুণ।

[1] এই বাক্য দ্বারা কিছু মানুষ এই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে যে, জাহান্নামের আযাব কাফেরদের জন্যও চিরস্থায়ী নয়; বরং সাময়িক। অর্থাৎ, ততদিন থাকবে, যতদিন আকাশ ও পৃথিবী থাকবে। (তারপর শেষ হয়ে যাবে।) কিন্তু এই কথা ঠিক নয়। কারণ এখানে مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأرضُ কথাটি আরববাসীদের দৈনন্দিন কথাবার্তা ও পরিভাষা অনুযায়ী অবতীর্ণ হয়েছে। আরববাসীদের অভ্যাস ছিল যে, যখন তারা কোন বস্তুর চিরস্থায়িতত্ত্ব প্রমাণ করার উদ্দেশ্য হত, তখন তারা বলত,(هذا دائمٌ دوام السموات والأرض) ‘‘এই বস্তু আকাশ ও পৃথিবীর মত চিরস্থায়ী।’’ সেই পরিভাষাকে কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ কাফের ও মুশরিকরা চিরকালব্যাপী জাহান্নামে থাকবে, যা কুরআন বিভিন্ন স্থানে, خَالِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছে। তার দ্বিতীয় এক অর্থ এও করা হয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবী থেকে উদ্দেশ্য হল ‘জিনস’ (শ্রেণী)। অর্থাৎ, ইহলৌকিক আকাশ ও পৃথিবী; যা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এ ছাড়া পারলৌকিক আকাশ ও পৃথিবী পৃথক হবে। যেমন কুরআনে তার পরিষ্কার বর্ণনা এসেছে। يوم تبدل الأرض غير الأرض والسموات অর্থাৎ, যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও।’’ (সূরা ইবরাহীম ৪৮) আর পারলৌকিক উক্ত আকাশ ও পৃথিবী, জান্নাত ও জাহান্নামের মত চিরস্থায়ী হবে। এই আয়াতে সেই পারলৌকিক আকাশ-পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে, ইহলৌকিক আকাশ-পৃথিবীর কথা নয়, যা ধ্বংস হয়ে যাবে। (ইবনে কাসীর) এই উভয় অর্থের যে কোন অর্থ নেওয়া হলে আয়াতের উদ্দেশ্য পরিষফুটিত হয়ে যাবে এবং উপস্থাপিত সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ইমাম শওকানী (রঃ) এর আরো কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন, যা জ্ঞানীরা দেখতে পারেন। (ফাতহুল কাদীর)

[2] এই ব্যতিক্রমেরও কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে সঠিক অর্থ এই যে উক্ত ব্যতিক্রম তওহীদবাদী মু’মিন পাপীদের জন্য। এই অর্থ অনুযায়ী এর পূর্ব আয়াতে شقي (দুর্ভাগ্যবান) শব্দটি ব্যাপক ধরতে হবে। অর্থাৎ কাফের ও পাপী মু’মিন উভয়কে বুঝাবে। আর إلا مَا شَاءَ رَبُّكَ দ্বারা পাপী মু’মিনরা ব্যতিক্রম হয়ে যাবে। আর ما شاء তে مَا হরফটি مَن এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৮ وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ سُعِدُوۡا فَفِی الۡجَنَّۃِ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ ؕ عَطَآءً غَیۡرَ مَجۡذُوۡذٍ ﴿۱۰۸﴾
و اما الذین سعدوا ففی الجنۃ خلدین فیها ما دامت السموت و الارض الا ما شآء ربك عطآء غیر مجذوذ ﴿۱۰۸﴾

আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে, তারা জান্নাতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান*, অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ। আল-বায়ান

আর যারা সৌভাগ্যবান হবে, তারা জান্নাতে স্থায়ী হবে যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য রকম ইচ্ছে করেন। এ হল এক অব্যাহত পুরস্কার। তাইসিরুল

পক্ষান্তরে যারা হয়েছে ভাগ্যবান, বস্তুতঃ তারা থাকবে জান্নাতে (এবং) তাতে তারা অনন্ত কাল থাকবে, যে পর্যন্ত আসমান ও যমীন স্থায়ী থাকে, কিন্তু যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয় তাহলে ভিন্ন কথা; ওটা অফুরন্ত দান হবে। মুজিবুর রহমান

And as for those who were [destined to be] prosperous, they will be in Paradise, abiding therein as long as the heavens and the earth endure, except what your Lord should will - a bestowal uninterrupted. Sahih International

* অর্থাৎ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিতে পারেন। তবে তিনি তা করবেন না। কেননা তিনি নিজেই তাদের স্থায়ীত্বের ঘোষণা দিয়েছেন।

১০৮. আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীন বিদ্যমান থাকবে, যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছে করেন(১); এটা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

(১) অর্থাৎ তাদের জান্নাতে অবস্থান করাও এমন কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নয় যে তা আল্লাহকে এমনটি করতে বাধ্য করে রেখেছে। বরং আল্লাহ যে তাদেরকে সেখানে রাখবেন এটা হবে সরাসরি তাঁর অনুগ্রহ। যদি তিনি তাদের ভাগ্য বদলাতে চান, তা করার পূর্ণ ক্ষমতা তাঁর আছে। [ইবন কাসীর] তাই তাদেরকে সর্বদা তাঁর জন্য তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করার ইলহাম করা হবে, যেমনি তাদেরকে নিঃশ্বাস নেয়ার ইলহাম করা হবে। [ইবন কাসীর] হাসান বসরী ও দাহহাক বলেন, এখানেও ব্যতিক্রম বলে গোনাহগার ঈমানদারদের বোঝানো হয়েছে। কারণ তারা কিছু সময় জাহান্নামে অবস্থান করবে তারপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৮) পক্ষান্তরে যারা সৌভাগ্যবান, তারা থাকবে বেহেশ্তে। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে, যতকাল আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে; যদি না তোমার প্রতিপালকের অন্য ইচ্ছা হয়।[1] এ হবে অফুরন্ত অনুদান। [2]

[1] এই ব্যতিক্রমও পাপী মু’মিনদের জন্য। অর্থাৎ, অন্য মু’মিনদের মত এই গোনাহগার মু’মিনরা প্রথম থেকে শেষ অবধি জান্নাতে থাকবে না। বরং শুরুতে কিছু দিন তাদেরকে জাহান্নামে থাকতে হবে, পরে আল্লাহর ইচ্ছায় আম্বিয়া ও মু’মিনদের সুপারিশে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যেমন সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত।

[2] غير مجذوذ এর অর্থ হল غير مقطوع অর্থাৎ, এমন অফুরন্ত অনুদান যা শেষ হওয়ার নয়। এই বাক্য দ্বারা এই কথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, যে সকল পাপী মু’মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে বে’র করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তারা ক্ষণস্থায়ী নয়, বরং চিরস্থায়ী হবে এবং সকল জান্নাতীগণ আল্লাহ প্রদত্ত অনুদান ও তাঁর নিয়ামত দ্বারা উপকৃত হতে থাকবে, তা কোন কালে কখনও শেষ হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১০৯ فَلَا تَكُ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّمَّا یَعۡبُدُ هٰۤؤُلَآءِ ؕ مَا یَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا كَمَا یَعۡبُدُ اٰبَآؤُهُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ ؕ وَ اِنَّا لَمُوَفُّوۡهُمۡ نَصِیۡبَهُمۡ غَیۡرَ مَنۡقُوۡصٍ ﴿۱۰۹﴾
فلا تك فی مریۃ مما یعبد هؤلآء ما یعبدون الا كما یعبد ابآؤهم من قبل و انا لموفوهم نصیبهم غیر منقوص ﴿۱۰۹﴾

সুতরাং এরা যাদের উপাসনা করে, তুমি তাদের ব্যাপারে সংশয়ে থেকো না। তারা তো ইবাদাত করে, যেমন ইতঃপূর্বে ইবাদাত করত তাদের পিতৃপুরুষগণ। নিশ্চয় আমি তাদের অংশ হ্রাস না করে তাদেরকে পুরোপুরি দেব। আল-বায়ান

কাজেই তারা যেগুলোর ‘ইবাদাত করে সেগুলোর ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হয়ো না। তারা যেগুলোর ‘ইবাদাত করে সেগুলো তা ছাড়া আর কিছুই নয় যেগুলোর ‘ইবাদাত পূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা করত, আমি অবশ্যই তাদের প্রাপ্য অংশ তাদেরকে পূর্ণ মাত্রাতেই দেব, কোনই কমতি করা হবে না। তাইসিরুল

সুতরাং এরা যার উপাসনা করে ওর সম্বন্ধে তুমি এতটুকুও সংশয় বোধ করনা; তারাও ঠিক সেই রূপেই ইবাদাত করছে যে রূপে তাদের পূর্ব-পুরুষরা ইবাদাত করত। এবং নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে তাদের (শাস্তির) অংশ পূর্ণভাবে দিয়ে দিব, একটুও কম না করে। মুজিবুর রহমান

So do not be in doubt, [O Muhammad], as to what these [polytheists] are worshipping. They worship not except as their fathers worshipped before. And indeed, We will give them their share undiminished. Sahih International

১০৯. কাজেই তারা যাদের ইবাদাত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থাকবেন না, আগে তাদের পিতৃপুরুষেরা যেভাবে ইবাদাত করত তারাও তাদেরই মত ইবাদাত করে।(১) আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরোপুরি দেব—কিছুমাত্র কম করব না।

(১) এর অর্থ এ নয় যে, এ মাবুদদের ব্যাপারে সত্যিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনে কোন প্রকার সন্দেহ ছিল। বরং আসলে একথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে সাধারণ মানুষকে শুনানো হচ্ছে। [কুরতুবী] এর অর্থ হচ্ছে, এরা যে এসব মাবুদের ইবাদত করছে এবং এদের কাছে প্রার্থনা করছে ও ভিক্ষা চাচ্ছে, নিশ্চয়ই এরা কিছু দেখে থাকবে যে কারণে এরা এদের থেকে উপকৃত হবার আকাংখা পোষণ করে-কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির মনে এ ধরনের কোন সংশয় থাকা উচিত নয়। সত্যি কথা হচ্ছে এই যে, এদের যাবতীয় ইবাদত, নযরানা ও প্রার্থনা আসলে কোন অভিজ্ঞতা ও সত্যিকার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নয় বরং এসব কিছু করা হচ্ছে নিছক অন্ধ অনুসৃতির ভিত্তিতে। এসব বেদী ও আস্তানা পূর্ববর্তী জাতিদেরও ছিল। কিন্তু যখন আল্লাহর আযাব এলো তখন তারা ধ্বংস হয়ে গেলো এবং বেদী ও আস্তানাগুলো কোন কাজে লাগলো না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৯) সুতরাং এরা যার উপাসনা করে, তার সম্বন্ধে তুমি এতটুকুও সংশয় করো না; তারাও ঠিক সে রূপেই উপাসনা করছে যেরূপে তাদের পূর্বে তাদের পূর্বপুরুষরা করত এবং নিশ্চয় আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পূর্ণভাবে দিয়ে দিব; একটুকুও কম করব না। [1]

[1] এর অর্থ সেই আযাব, তারা যার হকদার হবে, তাতে কোন কম করা হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১:১১০ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡكِتٰبَ فَاخۡتُلِفَ فِیۡهِ ؕ وَ لَوۡ لَا كَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّهُمۡ لَفِیۡ شَكٍّ مِّنۡهُ مُرِیۡبٍ ﴿۱۱۰﴾
و لقد اتینا موسی الكتب فاختلف فیه و لو لا كلمۃ سبقت من ربك لقضی بینهم و انهم لفی شك منه مریب ﴿۱۱۰﴾

আর অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর তাতে মতবিরোধ করা হয়েছিল। যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত*, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত। আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে ঘোর সন্দেহে রয়েছে। আল-বায়ান

ইতোপূর্বে আমি মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও মতবিরোধ করা হয়েছিল। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি কথা যদি আগেই বলে দেয়া না হত, তাহলে তাদের মাঝে অবশ্যই ফায়সালাই ক’রে দেয়া হত, এ ব্যাপারে তারা অবশ্য সন্দেহপূর্ণ সংশয়ে পড়ে আছে। তাইসিরুল

আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর ওতে মতভেদ করা হল। আর যদি একটি উক্তি তোমার রবের পক্ষ হতে পূর্বেই স্থিরীকৃত হয়ে না থাকত তাহলে ওদের চুড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। এবং এই লোকেরা এর সম্বন্ধে এমন সন্দেহে (পতিত) আছে যা তাদেরকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলে রেখেছে। মুজিবুর রহমান

And We had certainly given Moses the Scripture, but it came under disagreement. And if not for a word that preceded from your Lord, it would have been judged between them. And indeed they are, concerning the Qur'an, in disquieting doubt. Sahih International

* অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাড়াহুড়া করবেন না, এই সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতেন।

১১০. আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। আর আপনার রবের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের মীমাংসা তো হয়েই যেত।(১) আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিপতিত।(২)

(১) এ পূর্ব সিদ্ধান্ত বা বাক্য সম্পর্কে দুটি মত প্রসিদ্ধ। এক. পূর্ব থেকেই তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অবকাশ প্রদানের সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের উপর আযাব এসে যেতো। দুই. অথবা পূর্ব থেকেই যদি আল্লাহর সিদ্ধান্ত না থাকত যে, তিনি নবী-রাসূল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিবেন না, তাহলে অবশ্যই তাদের উপর শাস্তি আপতিত হতো। যেমন আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।” [সূরা আল-ইসরা: ১৫] [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ এ কুরআন সম্পর্কে আজ বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলছে, নানা রকম সন্দেহসংশয় পোষণ করছে, এটা কোন নতুন কথা নয়। বরং এর আগে মূসাকে যখন কিতাব দেয়া হয়েছিল তখন তার ব্যাপারেও এ ধরনের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করা হয়েছিল। [কুরতুবী; সা’দী] কাজেই হে নবী! এমন সহজ, সরল ও পরিষ্কার কথা কুরআনে বলা হচ্ছে এবং তারপরও লোকেরা তা গ্রহণ করছে না-এ অবস্থা দেখে আপনার মন খারাপ করা ও হতাশ হওয়া উচিত নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর ওতে মতভেদ করা হল।[1] যদি একটি উক্তি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্বেই স্থিরীকৃত হয়ে না থাকত, তাহলে ওদের মাঝে চূড়ান্ত মীমাংসা হয়েই যেত।[2] আর অবশ্যই তারা এ (কুরআন) সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে।

[1] অর্থাৎ, কিছু লোক সেই কিতাব মেনে নিল, আর কিছু লোক তা মেনে নিল না। এই কথা বলে নবী (সাঃ)-কে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, পূর্ব নবীগণের সাথেও এই ব্যবহার হতে থেকেছে, কিছু সংখ্যক মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান আনত এবং অন্যরা মিথ্যাজ্ঞান করত। অতএব তোমাকে মিথ্যাজ্ঞান করা হলে ঘাবড়ে যাবে না।

[2] এর অর্থ এই যে, যদি আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তির জন্য একটি সময় নির্ধারিত করে না রাখতেন, তাহলে তিনি তাদেরকে অবিলম্বে ধ্বংস করে দিতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১০১ থেকে ১১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »