অতঃপর তোমরা এ সবের পর বিমুখ হয়ে ফিরে গেলে। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না হত, তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে। আল-বায়ান
এরপরেও তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে; আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা তোমাদের প্রতি না থাকলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যেতে। তাইসিরুল
এরপর পুনরায় তোমরা ফিরে গেলে, অতএব যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর করুণা না থাকত তাহলে অবশ্যই তোমরা বিনাশ প্রাপ্ত হতে। মুজিবুর রহমান
Then you turned away after that. And if not for the favor of Allah upon you and His mercy, you would have been among the losers. Sahih International
৬৪. এরপরও তোমরা মুখ ফিরালে! অতঃপর তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা না থাকলে তোমরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে।(১)
১. এ আয়াতের সম্বোধন বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে সমস্ত ইয়াহুদীদের করা হচ্ছে, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে উপস্থিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ঈমান না আনাও যেহেতু উল্লেখিত প্রতিজ্ঞা ভংগেরই অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু তাদেরকে পূর্বোক্ত প্রতিজ্ঞা ভংগকারীদের আওতাভুক্ত করে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে যে, এরপরও আমি দুনিয়াতে তোমাদের উপর তেমন কোন আযাব নাযিল করিনি, যেমনটি পূর্বকালে প্রতিজ্ঞা ভংগকারীদের উপর নাযিল হয়ে থাকত। এটা একান্তই আল্লাহর রহমত।
তাফসীরে জাকারিয়া৬৪। এর পরেও তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা কুফরী করেছে, তারা চায় না যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর কোন কল্যাণ নাযিল হোক। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর রহমত দ্বারা খাস করেন এবং আল্লাহ মহান অনুগ্রহের অধিকারী। আল-বায়ান
গ্রন্থধারীদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী তারা ও মুশরিকরা এটা চায় না যে, তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছে স্বীয় দয়ায় নির্দিষ্ট করে নেন এবং আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। তাইসিরুল
আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কাফির (অর্থাৎ ইয়াহুদী ও নাসারা) এবং মুশরিকরা মোটেই পছন্দ করেনা যে, তোমাদের রবের পক্ষ হতে তোমাদের উপর কোন কল্যাণ বর্ষিত হোক, আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাঁর করুণার জন্য নির্দিষ্ট করে নেন এবং আল্লাহ মহা করুণাময়। মুজিবুর রহমান
Neither those who disbelieve from the People of the Scripture nor the polytheists wish that any good should be sent down to you from your Lord. But Allah selects for His mercy whom He wills, and Allah is the possessor of great bounty. Sahih International
১০৫. কিতাবীদের(১) মধ্যে যারা কুফরী করেছে তারা এবং মুশরিকরা এটা চায় না যে, তোমাদের রব-এর কাছ থেকে তোমাদের উপর কোন কল্যাণ নাযিল হোক। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছে নিজ রহমত দ্বারা বিশেষিত করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
(১) আহলে-কিতাব শব্দদ্বয়ের অর্থ কিতাবওয়ালা বা গ্রন্থধারী। আল্লাহ তা'আলা আহলে কিতাব বলে তাদেরকেই বুঝিয়েছেন, যাদেরকে তিনি ইতঃপূর্বে তার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত সম্বলিত গ্রন্থ প্রদান করেছেন। ইয়াহুদী এবং নাসারারা সর্বসম্মতভাবে আহলে কিতাব। এর বাইরে আল্লাহ তা'আলা অন্য কোন জাতিকে কিতাব দিয়েছেন বলে সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
তাফসীরে জাকারিয়া১০৫। গ্রন্থধারী (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান)দের মধ্যে যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অংশীবাদীগণ এটা চায় না যে, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ করা হোক, অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষভাবে আপন দয়ার পাত্ররূপে মনোনীত করেন এবং আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের আশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং হিজরত করেছে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, এরাই আল্লাহর রহমত আশা করে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করেছে ও ধর্ম-যুদ্ধ করেছে, তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশী এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। মুজিবুর রহমান
Indeed, those who have believed and those who have emigrated and fought in the cause of Allah - those expect the mercy of Allah. And Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International
২১৮. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে(১), তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
(১) জিহাদের শাব্দিক অর্থ হলো: চেষ্টা করা, সাধনা করা, তা কাজ অথবা কথা যেকোন মাধ্যমে হতে পারে। শর’য়ী পরিভাষায় - কাফের, সীমালংঘনকারী অথবা মুরতাদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকে জিহাদ বলে। কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনায় জিহাদের অসাধারণ ফীলতের কথা বিধৃত হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জিহাদকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এর বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, মারে ও মরে। তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং ওটাই তো মহাসাফল্য।” [সূরা আত-তাওবাঃ ১১১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদকে ইসলামের সর্বোচ্চ শিখর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেনঃ ‘সকল কিছুর মূল হলো ইসলাম। যার খুঁটি হলো সালাত এবং সর্বোচ্চ শিখর জিহাদ। [তিরমিযীঃ ২৬১৬] জিহাদের তুলনা অন্য কিছু দ্বারা হয় না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা জিহাদের পরিপূরক হতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেনঃ ‘আমি পাইনি’। [বুখারীঃ ২৮১৮] এছাড়া আল্লাহর পথে যারা জিহাদ করবে, তাদেরও অসংখ্য মর্যাদার কথা ঘোষিত রয়েছে কুরআন ও হাদীসে। যেমন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না”। [সূরা আল বাকারাহঃ ১৫৪]
অপর হাদীসে এসেছে, জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারীরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর সম্মানীত মেহমান। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘শহীদদের ছয়টি মর্যাদা রয়েছে - (১) রক্তের প্রথম ফোটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই তাকে মাফ করে দেয়া হয়। (২) জান্নাতে তার অবস্থানস্থল দেখিয়ে দেয়া হয়। (৩) কবরের আযাব থেকে মুক্ত থাকবে এবং মহা শংকার দিনে শংকামুক্ত থাকবে। (৪) তাকে ঈমানের অলংকার পরানো হবে। (৫) জান্নাতের হুর তাকে বিয়ে করানো হবে। (৬) তার নিকটাত্মীয়দের থেকে সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করার সুযোগ দেয়া হবে। [বুখারীঃ ২৭৯০]
আলোচ্য আয়াত দ্বারা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সব সময়ই জিহাদ ফরয। তবে কুরআনের কোন কোন আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের বর্ণনাতে বোঝা যায় যে, জিহাদের এ ফরয, ফরযে-“আইনরূপে প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয সাব্যস্ত হয় না, বরং এটা ফরযে কেফায়া। যদি মুসলিমদের কোন দল তা আদায় করে, তবে সমস্ত মুসলিমই এ দায়িত্ব থেকে রেহাই পায়। তবে যদি কোন দেশে বা কোন যুগে কোন দলই জিহাদের ফরয আদায় না করে, তবে ঐ দেশের বা ঐ যুগের সমস্ত মুসলিমই ফরয থেকে বিমুখতার দায়ে পাপী হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “আমাকে প্রেরণের পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে, আমার উম্মতের সর্বশেষ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে। [আবু দাউদঃ ২৫৩২]
কুরআনের অন্য এক আয়াতে এরশাদ হয়েছেঃ “আল্লাহ্ তা'আলা জান ও মালের দ্বারা জিহাদকারীগণকে জিহাদ বর্জনকারীদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন এবং উভয়কে পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন”। [সূরা আন-নিসাঃ ৯৫] সুতরাং যেসব ব্যক্তি কোন অসুবিধার জন্যে বা অন্য কোন দ্বীনী খেদমতে নিয়োজিত থাকার কারণে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে পারে নি, তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা পুরস্কার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, জিহাদ যদি ফরযে-আইন হতো, তবে তা বর্জনকারীদের সুফল দানের কথা বলা হত না।
তাছাড়া হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিহাদে অংশ গ্রহণ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার পিতা-মাতা কি বেঁচে আছেন? উত্তরে সে বলল, জি, বেঁচে আছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপদেশ দিলেনঃ তুমি পিতা-মাতার খেদমত করেই জিহাদের সওয়াব হাসিল কর। [মুসলিমঃ ২৫৪৯] এতেও বোঝা যায় যে, জিহাদ ফরযে-কেফায়া। যখন মুসলিমদের একটি দল ফরয আদায় করে, তখন অন্যান্য মুসলিম অন্য খেদমতে নিয়োজিত হতে পারে। তবে যদি মুসলিমদের নেতা প্রয়োজনে সবাইকে জিহাদে অংশ গ্রহণ করার আহবান করেন, তখন জিহাদ ফরযে-আইনে পরিণত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের এরশাদ হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর পথে বেরিয়ে যাও, তখনই তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে যমীনে ঝুঁকে পড়”। [সূরা আত-তাওবাঃ ৩৮] এ আয়াতে আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়ার সার্বজনীন নির্দেশ ব্যক্ত হয়েছে।
এমনিভাবে আল্লাহ না করুন, যদি কোন ইসলামী দেশ অমুসলিম দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সে দেশের লোকের পক্ষে এ আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তবে পাশ্ববর্তী মুসলিম দেশবাসীর উপরও সে ফরয আপতিত হয়। তারাও যদি প্রতিহত করতে না পারে, তবে এর নিকটবর্তী মুসলিম দেশের উপর, এমনি সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমের উপর এ ফরয পরিব্যপ্ত হয় এবং ফরযে-আইন হয়ে যায়। কুরআনের আলোচ্য আয়াতসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, জিহাদ স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণভাবে ফরযে-কেফায়া। আর যতক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ ফরযে-কেফায়া পর্যায়ে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তানদের পক্ষে পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়। কিংবা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশোধ করার পূর্ব পর্যন্ত এ ফরযে কেফায়াতে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়। আর যখন এ জিহাদ প্রয়োজনের তাকীদে ফরযে-আইনে পরিণত হয়, তখন পিতা-মাতা, স্বামী বা স্ত্রী ঋণদাতা কারোরই অনুমতির অপেক্ষা রাখে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(২১৮) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর পথে (ধর্মের জন্য) হিজরত (স্বদেশ ত্যাগ) করে ও জিহাদ (ধর্মযুদ্ধ) করে, তারাই আল্লাহর দয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা তাদের গৃহসমূহ থেকে বের হয়েছে মৃত্যুর ভয়ে এবং তারা ছিল হাজার-হাজার? অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা মরে যাও’! তারপর তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তো মানুষের উপর অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শুকরিয়া আদায় করে না। আল-বায়ান
তুমি কি সেই লোকদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা মৃত্যুকে এড়াবার জন্য নিজেদের ঘর থেকে হাজারে হাজারে বের হয়ে গিয়েছিল, তখন আল্লাহ তাদেরকে বললেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক’। তৎপর তাদেরকে জীবিত করে উঠালেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ লোকেদের প্রতি দয়াশীল কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর করে না। তাইসিরুল
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, মৃত্যুর বিভীষিকাকে এড়ানোর জন্য যারা নিজেদের গৃহ হতে বহির্গত হয়েছিল? অথচ তারা ছিল বহু সহস্র; তখন আল্লাহ তাদেরকে বললেনঃ তোমরা মর; পুনরায় তিনি তাদেরকে জীবন দান করলেন; নিশ্চয়ই মানবগণের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনা। মুজিবুর রহমান
Have you not considered those who left their homes in many thousands, fearing death? Allah said to them, "Die"; then He restored them to life. And Allah is full of bounty to the people, but most of the people do not show gratitude. Sahih International
২৪৩. আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি পরিত্যাগ করেছিল(১) অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমরা মরে যাও’। তারপর আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেছিলেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাং লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না(২)।
(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, কোন এক শহরে ইসরাঈল-বংশধরের কিছু লোক বাস করত। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। সেখানে এক মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হয়। তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে শহর ত্যাগ করে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক প্রশস্ত ময়দানে গিয়ে বসবাস করতে লাগল। আল্লাহ্ তা'আলা তাদের কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠালেন তাদেরকে এবং দুনিয়ার অন্যান্য জাতিকে একথা অবগত করানোর জন্য যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে কেউ রক্ষা পেতে পারে না। ফেরেশতা দু'জন ময়দানের দু’ধারে দাঁড়িয়ে এমন এক বিকট শব্দ করলেন যে, তাদের সবাই একসাথে মরে গেল। দীর্ঘকাল পর ইসরাঈল-বংশধরদের একজন নবী সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে সেই বন্ধ জায়গায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় হাড়-গোড় পড়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলেন। তখন ওহীর মাধ্যমে তাকে মৃত লোকদের সমস্ত ঘটনা অবগত করানো হল। তখন তিনি দোআ করলেন এবং আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। [ইবনে কাসীর]
এ ঘটনাটি দুনিয়ার সমস্ত চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবীকে সৃষ্টিবলয় সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়। তদুপরি এটা কেয়ামত অস্বীকারকারীদের জন্য একটা অকাট্য প্রমাণ হওয়ার সাথে সাথে এ বাস্তব সত্য উপলব্ধি করার পক্ষেও বিশেষ সহায়ক যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে থাকা তা জিহাদ হোক বা প্লেগ মহামারীই হোক, আল্লাহ এবং তার নির্ধারিত নিয়তি বা তাকদীরের প্রতি যারা বিশ্বাসী তাদের পক্ষে সমীচীন নয়। যার এ বিশ্বাস রয়েছে যে, মৃত্যুর একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের এক মুহুর্ত পূর্বেও তা হবে না এবং এক মূহুর্ত পরেও তা আসবে না, তাদের পক্ষে এরূপ পলায়ন অর্থহীন এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
(২) এ আয়াত কয়েকটি বিষয়ের সমাধান করে দিয়েছে। প্রথমতঃ আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের উপর কোন তদবীর কার্যকর হতে পারে না। জিহাদ বা মহামারীর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাচানো যায় না, আর মহামারীগ্রস্ত স্থানে অবস্থান করাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। মৃত্যুর একটি সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যার কোন ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। দ্বিতীয়তঃ কোনখানে কোন মহামারী কিংবা কোন মারাত্মক রোগ-ব্যাধি দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া বৈধও নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এরশাদ মোতাবেক অন্য এলাকার লোকের পক্ষেও মহামারীগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া বৈধ নয়। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘সে রোগের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের পূর্ববতী বিভিন্ন উম্মতের উপর আযাব নাযিল করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা শুনবে যে, কোন শহরে প্লেগ প্রভৃতি মহামারী দেখা দিয়েছে, তখন সেখানে যেও না। আর যদি কোন এলাকাতে এ রোগ দেখা দেয় এবং তুমি সেখানেই থাক, তবে সেখান থেকে পলায়ন করবে না।‘ [বুখারী ৩৪৭৩, মুসলিম: ২২১৮]
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে এই যে, কোথাও যাওয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে না, আবার কোনখান থেকে পালিয়ে যাওয়াও মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নয়’! এ মৌলিক বিশ্বাসের পাশাপাশি আলোচ্য নির্দেশটি নিঃসন্দেহে বিশেষ তাৎপর্যপূৰ্ণ।
প্রথমতঃ মহামারীগ্রস্ত এলাকার বাইরের লোককে আসতে নিষেধ করার একটি তাৎপর্য এই যে, এমনও হতে পারে যে, সেখানে গমন করার পর তার হায়াত শেষ হওয়ার দরুনই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সে মৃত্যুবরণ করলঃ এতদসত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তির মনে এমন ধারণা হতে পারে যে, সেখানে না গেলে হয়ত সে মারা যেত না। তাছাড়া অন্যান্য লোকেরও হয়ত এ ধারণাই হবে যে, এখানে না এলে মৃত্যু হত না। অথচ যা ঘটেছে তা পূর্বেই নির্ধারিত ছিল। যেখানেই থাকত, তার মৃত্যু এ সময়েই হত! এ আদেশের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহসংশয় থেকে রক্ষা করা হয়েছে। যাতে করে তারা কোন ভুল বোঝাবুঝির শিকার না হয়।
দ্বিতীয়তঃ এতে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন যে, যেখানে কষ্ট হওয়ার বা মৃত্যুর আশংকা থাকে, সেখানে যাওয়া উচিত নয়; বরং সাধ্যমত ঐসব বস্তু থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা কর্তব্য, যা তার জন্য ধ্বংস বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া নিজের জানের হেফাযত করা প্রত্যেক মানুষের জন্য ওয়াজিব ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়মের চাহিদাও তাই যে, আল্লাহর দেয়া তাকদীরে পূর্ণ বিশ্বাস রেখে যথাসাধ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যেসব স্থানে প্রাণ নাশের আশংকা থাকে, সেসব স্থানে না যাওয়াও এক প্রকার সতর্কতামূলক তদবীর। এমনিভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদেরকে সে স্থান থেকে পলায়ন করতে নিষেধ করার মাঝেও বহু তাৎপর্য নিহিতঃ একটি হচ্ছে এই যে, যদি এ পলায়নের প্রথা চলতে থাকে, তবে সাধারণভাবে ও সমষ্টিগতভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা সক্ষম ও সবল তারা তো সহজেই পালাতে পারে, কিন্তু যারা দুর্বল তাদের কি অবস্থা হবে? আর যারা রোগাক্রান্ত, তাদের সেবা-শুশ্রুষা কিংবা মরে গেলে দাফন-কাফনেরই বা কি ব্যবস্থা হবে? দ্বিতীয়তঃ যারা সেখানে ছিল, তাদের মধ্যে হয়ত রোগের জীবাণু প্রবেশ করে থাকবে। এমতাবস্থায় তারা যদি বাড়ী-ঘর থেকে বের হয়ে থাকে, তবে তাদের দুঃখ-দুর্দশা আরও বেড়ে যাবে। কারণ প্রবাস জীবনে রোগাক্রান্ত হলে যে কি অবস্থা তা সবারই জানা।
তৃতীয়তঃ যদি তাদের মধ্যে রোগের জীবাণু ক্রিয়া করে থাকে, তবে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। আর যদি নিজের জায়গায় আল্লাহর উপর ভরসা করে পড়ে থাকে, তবে হয়ত নাজাত পেতে পারে। আর যদি এ রোগে মারা যাওয়াই তার ভাগ্যে থাকে, তবে ধৈর্য ও স্থিরতা অবলম্বনের বদলায় শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। প্লেগ মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘এ রোগটি আসলে শাস্তিরূপে নাযিল হয়েছিল এবং যে জাতিকে শাস্তি দেয়া উদ্দেশ্য হত তাদের ভেতর পাঠানো হত। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা একে মুমিনদের জন্য রহমতে পরিবর্তিত করে দিয়েছেন। আল্লাহর যেসব বান্দা এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া সত্বেও নিজ এলাকায়ই ধৈর্য সহকারে বসবাস করে এবং এ বিশ্বাস রাখে যে, তার শুধু সে বিপদই হতে পারে, যা আল্লাহ তা'আলা তার জন্য লিখে রেখেছেন, তবে এমন ব্যক্তি শহীদের মত সওয়াব পাবে। [বুখারীঃ ৫৭৩৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ প্লেগ শাহাদাত এবং প্লেগ আক্রান্ত ব্যক্তি শহীদ [বুখারীঃ ৫৭৩২] এর ব্যাখ্যাও তাই। [মাআরিফুল কুরআন থেকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪৩) তুমি কি তাদের দেখনি, যারা মৃত্যু-ভয়ে হাজারে হাজারে আপন ঘর-বাড়ি পরিত্যাগ করেছিল? অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক।’ পরে তাদেরকে জীবিত করলেন।[1] নিশ্চয়, আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
[1] এ ঘটনা বিগত কোন জাতির। কোন সহীহ হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা আসেনি। তফসীরের বর্ণনায় এটাকে বনী-ইস্রাঈলদের যুগের ঘটনা বলা হয়েছে এবং যে নবীর দু’আয় তাদেরকে মহান আল্লাহ পুনরায় জীবিত করেছিলেন, তাঁর নাম ‘হিযক্বীল’ বলা হয়েছে। এরা জিহাদে নিহত হয়ে যাওয়ার ভয়ে অথবা মহামারী রোগের ভয়ে নিজেদের ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল; যাতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদেরকে মৃত্যু দিয়ে প্রথমতঃ এ কথা জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য থেকে বেঁচে তোমরা কোথাও যেতে পারবে না। দ্বিতীয়তঃ এও জানিয়ে দিলেন যে, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হলেন মহান আল্লাহ। তৃতীয়তঃ আল্লাহ তাআলা পুনরায় সৃষ্টি করার উপর ক্ষমতাবান। তিনি সমস্ত মানুষকে ঐভাবেই জীবিত করবেন, যেভাবে তাদেরকে মৃত্যু দিয়ে জীবিত করে দিলেন। পরের আয়াতে মুসলিমদেরকে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। জিহাদের পূর্বে এই ঘটনা বর্ণনা করার যৌক্তিকতা হল, জিহাদ থেকে পিছপা হয়ো না। জীবন ও মরণ তো আল্লাহর হাতে এবং এই মরণের সময়ও নির্ধারিত। অতএব জিহাদ থেকে পালিয়ে তা রোধ করতে পারবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাজিত করল এবং দাঊদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাঊদকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে যা ইচ্ছা শিক্ষা দিলেন। আর আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই যমীন ফাসাদপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর উপর অনুগ্রহশীল। আল-বায়ান
অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে (শত্রুদেরকে) পরাজিত করল এবং দাঊদ জ্বালুতকে কতল করল এবং আল্লাহ দাঊদকে রাজ্য ও হেকমত দান করলেন এবং তাকে শিক্ষা দিলেন যা ইচ্ছে। যদি আল্লাহ মানবজাতির একদলকে অন্যদল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ সর্বজগতের প্রতি কৃপালু। তাইসিরুল
তখন তারা আল্লাহর হুকুমে জালুতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করল এবং দাঊদ জালুতকে হত্যা করল। এবং আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন; আর যদি আল্লাহ এক দলকে অপর দলের দ্বারা প্রদমিত না করতেন তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবী অশান্তিপূর্ণ হত, কিন্তু আল্লাহ বিশ্ব জগতের প্রতি অনুগ্রহকারী। মুজিবুর রহমান
So they defeated them by permission of Allah, and David killed Goliath, and Allah gave him the kingship and prophethood and taught him from that which He willed. And if it were not for Allah checking [some] people by means of others, the earth would have been corrupted, but Allah is full of bounty to the worlds. Sahih International
২৫১. অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে (কাফেরদেরকে) পরাভূত করল এবং দাউদ জালুতকে হত্যা করলেন। আর আল্লাহ্ তাকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আর আল্লাহ্ যদি মানুষের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহশীল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫১) সুতরাং তখন তারা আল্লাহর ইচ্ছায় তাদেরকে পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল।[1] আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করলেন[2] এবং তিনি ইচ্ছানুযায়ী তাকে শিক্ষা দান করলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা দমন না করতেন, তাহলে নিশ্চয় পৃথিবী (অশান্তিপূর্ণ ও) ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি অনুগ্রহশীল।[3]
[1] দাঊদ (আঃ) তখন না নবী ছিলেন, না রাজা। বরং ত্বালূতের সৈন্যদলের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন। তাঁরই হাতে মহান আল্লাহ জালূতকে ধ্বংস করলেন এবং অল্প সংখ্যক ঈমানদার দ্বারা বিশাল এক জাতিকে জঘন্যভাবে পরাজিত করলেন।
[2] এর পর মহান আল্লাহ দাঊদ (আঃ)-কে রাজত্বও দিলেন এবং নবুঅতও। ‘হিকমত’ বলতে কেউ বলেছেন, নবুঅত। কেউ বলেছেন, লোহার কারিগরী এবং কেউ বলেছেন, যুদ্ধ সম্বন্ধীয় বিষয়ের এমন পারদর্শিতা, যা আল্লাহর ইচ্ছায় উক্ত স্থানে বড় নিষ্পত্তিকর সাব্যস্ত হয়েছিল।
[3] এখানে আল্লাহর এক নিয়মের কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একদল মানুষের মাধ্যমেই অপর একদল মানুষের যুলুম-অত্যাচার ও ক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করে থাকেন। তিনি যদি এ রকম না করে কোন একই পক্ষকে সব সময়ের জন্য ক্ষমতা ও এখতিয়ার দিয়ে রাখতেন, তাহলে এ পৃথিবী যুলুম-অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। কাজেই আল্লাহর এই নিয়ম বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের একটি দৃষ্টান্ত। মহান আল্লাহ সূরা হজ্জের ৩৮ ও ৪০ নং আয়াতেও এ কথা উল্লেখ করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। আল-বায়ান
হে আমাদের প্রতিপালক! সৎ পথ প্রদর্শনের পরে তুমি আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না, আমাদেরকে তোমার নিকট হতে রহমত প্রদান কর, মূলতঃ তুমিই মহান দাতা। তাইসিরুল
হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার নিকট হতে করুণা প্রদান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রভূত প্রদানকারী। মুজিবুর রহমান
[Who say], "Our Lord, let not our hearts deviate after You have guided us and grant us from Yourself mercy. Indeed, You are the Bestower. Sahih International
৮. হে আমাদের রব সরল পথ দেয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিও না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান কর। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমাদেরকে যদি আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা হয় অথবা তোমরা মারা যাও, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়া তারা যা জমা করে তা থেকে উত্তম। আল-বায়ান
যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অতি উত্তম তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে। তাইসিরুল
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও তাহলে আল্লাহর নিকট হতেই ক্ষমা রয়েছে এবং তারা যা সঞ্চয় করেছে তদপেক্ষা তাঁর করুণা শ্রেষ্ঠতর। মুজিবুর রহমান
And if you are killed in the cause of Allah or die - then forgiveness from Allah and mercy are better than whatever they accumulate [in this world]. Sahih International
১৫৭. তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হলে অথবা তোমাদের মৃত্যু হলে, যা তারা জমা করে, আল্লাহর ক্ষমা এবং দয়া অবশ্যই তার চেয়ে উত্তম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৭) যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও অথবা মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তারা যা সঞ্চয় করে, তা থেকে উত্তম আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া। [1]
[1] যে কোনভাবেই হোক না কেন মৃত্যু তো আসবেই, তাই এমন মৃত্যু যদি ভাগ্যে জুটে, যে মৃত্যুর পর মানুষ আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর দয়া লাভের যোগ্য হয়ে যায়, তবে এটা হবে তার জন্য পার্থিব সেই সমূহ ধন-সম্পদ থেকেও উত্তম, যা মানুষ সারা জীবন উপার্জন করে থাকে। কাজেই আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছপা না হয়ে সেদিকে বড়ই উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে অগ্রসর হতে হবে। আর নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উৎসাহ থাকলে তাঁর ক্ষমা ও দয়া সুনিশ্চিত হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। আল-বায়ান
সুতরাং আল্লাহর পরম অনুগ্রহ যে তুমি তাদের উপর দয়ার্দ্র রয়েছ, এবং যদি তুমি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হৃদয় হতে তবে অবশ্যই তারা তোমার নিকট হতে সরে যেত। সুতরাং তাদের দোষ ক্ষমা কর এবং আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং কাজ-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর, অতঃপর যখন (কোন ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা কর; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন। তাইসিরুল
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত; এবং তুমি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতে তাহলে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংসর্গ হতে অন্তর্হিত হত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অতঃপর তুমি যখন সংকল্প কর তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীগণকে ভালবাসেন। মুজিবুর রহমান
So by mercy from Allah, [O Muhammad], you were lenient with them. And if you had been rude [in speech] and harsh in heart, they would have disbanded from about you. So pardon them and ask forgiveness for them and consult them in the matter. And when you have decided, then rely upon Allah. Indeed, Allah loves those who rely [upon Him]. Sahih International
১৫৯. আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন(১) যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন(২), তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন(৩); নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন।
(১) আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেনঃ হে আবু উমামা! মুমিনদের মাঝে কারো কারো জন্য আমার অন্তর নরম হয়ে যায়। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২১৭]
(২) অর্থাৎ ইতোপূর্বে যেমন কাজে-কর্মে এবং কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে তাদের সাথে পরামর্শ করতেন, তেমনিভাবে এখনও তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তাদের মনে প্রশান্তি আসতে পারে। এতে হেদায়াত দেয়া হয়েছে যে, কল্যাণ কামনার যে অনুরাগ তাদের অন্তরে বিদ্যমান, তা তাদেরকে পরামর্শের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে প্রকাশ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে বলেছেন, “যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার”। [ইবন মাজাহ ৩৭৪৫] অর্থাৎ সে আমানতের সাথে পরামর্শ দিবে, ভুল পথে চালাবে না এবং আমানত হিসেবেই সেটা তার কাছে রাখবে।
এই আয়াতে সমাজ সংস্কারক ও দ্বীন-প্রচারকদের জন্য কয়েকটি বিষয়কে অপরিহার্য বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রথমতঃ আচার-ব্যবহার ও কথা-বার্তায় রূঢ়তা পরিহার করা। দ্বিতীয়তঃ সাধারণ লোকদের দ্বারা কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে গেলে কিংবা কষ্টদায়ক কোন বিষয় সংঘটিত হলে সে জন্য প্রতিশোধমুলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ক্ষমা প্রদর্শন করা এবং সদয় ব্যবহার করা। তৃতীয়তঃ তাদের পদস্খলন ও ভুলভ্রান্তির কারণে তাদের কল্যাণ কামনা থেকে বিরত না থাকা। তাদের জন্য দোআ-প্রার্থনা করতে থাকা এবং বাহ্যিক আচার আচরণে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার পরিহার না করা। উল্লেখিত আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রথমে তো সাহাবীদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারপর আচরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে হেদায়াত দেয়া হয়েছে।
পরামর্শ গ্রহণ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা কুরআনের দু’জায়গায় সরাসরি নির্দেশ দান করেছেন। একটি হলো এই আয়াতে এবং দ্বিতীয়টি হলো সূরা আশ-শূরার সে আয়াতে যাতে সত্যিকার মুসলিমদের গুণবৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে একটি গুণ এই বলা হয়েছে যে, “(যারা সত্যিকার মুসলিম) তাদের প্রতিটি কাজ হবে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে”। এতদুভয় আয়াতে যেভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে পরামর্শের অপরিহার্যতা প্রতীয়মান হয়, তেমনিভাবে এতে ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিধান সংক্রান্ত কয়েকটি মূলনীতিও সামনে এসে যায়। তা হলো এই যে, ইসলামী রাষ্ট্র হলো পরামর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র যাতে পরামর্শের ভিত্তিতে নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে থাকে। এমনকি আলোচনা ও পরামর্শ করাকে ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য একটি মৌলিক বিষয় হিসাবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
(৩) উল্লেখিত আয়াতে লক্ষণীয় যে, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ করার নির্দেশ দেয়ার পর বলা হয়েছে “পরামর্শ করার পর আপনি যখন কোন একটি দিক সাব্যস্ত করে নিয়ে সেমতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করুন”। এতে নির্দেশ বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্প হওয়াকে শুধুমাত্র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিই সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘আযামতুম’ বলা হয়নি, যাতে সংকল্প ও তা বাস্তবায়নে সাহাবায়ে কেরামের সংযুক্ততাও বুঝা যেতে পারত। এই ইঙ্গিতের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পরামর্শ করে নেয়ার পর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমীর যা করবেন তাই হবে গ্রহণযোগ্য। কোন কোন সময় উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের অভিমত বেশী শক্তিশালী হত, তখন সেমতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতেন।
অথচ পরামর্শ সভায় অধিকাংশ সময় এমনসব মনীষী উপস্থিত থাকতেন, যারা ইবন আব্বাসের তুলনায় বয়স, জ্ঞান ও সংখ্যার দিক দিয়ে ছিলেন গরিষ্ঠ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামও অনেক সময় শায়খাইন অর্থাৎ আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাহাবীদের মতের উপর প্রধান্য দান করেছেন। এমন কি এমন ধারণাও করা হতে লাগল যে, উল্লেখিত আয়াতটি এতদুভয়ের সাথে পরামর্শ করার জন্যই নাযিল হয়ে থাকবে। মোটকথা: সর্বাবস্থায় সংখ্যাগরিষ্টের মতই গ্রহণ করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। বরং এখানে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার কাছাকাছি যা হবে তা-ই হবে গ্রহণযোগ্য।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৯) আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি হয়েছিলে কোমল-হৃদয়; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ হতে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।[1] আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।[2] অতঃপর তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর। [3] নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদের ভালবাসেন।
[1] মহান নৈতিকতার অধিকারী নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর আল্লাহর কৃত অনুগ্রহসমূহের একটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে, তোমার মধ্যে যে কোমলতা ও নম্রতা তা আল্লাহর রহমতেরই ফল। আর দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য তো এই কোমলতার প্রয়োজন অনেক। তুমি যদি কোমল ও নরম না হয়ে কঠিন হৃদয়ের মালিক হতে, তাহলে মানুষ তোমার কাছে না এসে আরো দূরে সরে যেত। কাজেই তুমি মানুষের সাথে ব্যবহারে ক্ষমা ব্যবহার করতে থাক।
[2] অর্থাৎ, মুসলিমদের মনস্তষ্টির জন্য পরামর্শ করে নিবেন। এই আয়াত দ্বারা পরামর্শ করার গুরুত্ব, তার উপকারিতা এবং তার প্রয়োজনীয়তা ও বৈধতা প্রমাণিত হয়। পরামর্শ করার এই নির্দেশ কারো নিকট ওয়াজিব এবং কারো নিকট মুস্তাহাব। (ইবনে কাসীর) ইমাম শওকানী লিখেছেন যে, ‘শাসকদের জন্য অত্যাবশ্যক হল, তাঁরা এমন সব ব্যাপারে উলামাদের সাথে পরামর্শ করবেন, যে সব ব্যাপারে তাঁদের জ্ঞান নেই অথবা যে ব্যাপারে তাঁরা সমস্যায় পড়েন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সাথে সৈন্য সংক্রান্ত বিষয়ে, জনগণের দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের সাথে জনসাধারণের কল্যাণ প্রসঙ্গে এবং অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলে নিযুক্ত সরকারী দায়িত্বশীলদের সাথে সেই অঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ করবেন।’ ইবনে আত্বিয়্যাহ বলেন, ‘এমন শাসকদের বরখাস্ত করার ব্যাপারে কোনই দ্বিমত নেই, যাঁরা আলেম ও দ্বীনদারদের সাথে কোন পরামর্শ করেন না।’ আর এই পরামর্শ সেই সব বিষয়ের মধ্যেই সীমিত থাকবে, যে সব ব্যাপারে শরীয়ত নীরব (যে সম্বন্ধে শরীয়তের সুস্পষ্ট কোন সমাধান নেই) অথবা যার সম্পর্ক হল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সাথে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] অর্থাৎ, পরামর্শ করার পর যে মতের উপর তোমার সংকল্প সৃষ্টি হবে, আল্লাহর উপর ভরসা করে তা কার্যকরী করবে। এ থেকে প্রথমতঃ জানা গেল যে, পরামর্শ করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ হবে শাসকের, পরামর্শদাতাদের অথবা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেদের হবে না, যেমন সাধারণতন্ত্র রাষ্টে হয়ে থাকে। দ্বিতীয়তঃ সম্পূর্ণ ভরসা ও নির্ভর করতে হবে মহান আল্লাহর উপরে, পরামর্শদাতাদের জ্ঞান-বুদ্ধির উপরে নয়। পরের আয়াতেও আল্লাহর উপর ভরসা করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম। আল-বায়ান
যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে, তারা নাবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নি‘মাত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! তাইসিরুল
আর যে কেহ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নাবীগণ, সত্য সাধকগণ, শহীদগণ ও সৎ কর্মশীলগণ; এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী। মুজিবুর রহমান
And whoever obeys Allah and the Messenger - those will be with the ones upon whom Allah has bestowed favor of the prophets, the steadfast affirmers of truth, the martyrs and the righteous. And excellent are those as companions. Sahih International
৬৯. আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক(১) (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ(২) যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন- তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী!(৩)
(১) সিদ্দীক বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যে পরম সত্যনিষ্ঠ ও সত্যবাদী। তার মধ্যে সততা ও সত্যপ্রিয়তা পূর্ণমাত্রায় বিরাজিত থাকে। নিজের আচার আচরণ ও লেনদেনে সে হামেশা সুস্পষ্ট ও সরল-সোজা পথ অবলম্বন করে। সে সবসময় সাচ্চাদিলে হক ও ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে সে পর্বত সমান অটল অস্তিত্ব নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না। সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে, তার আত্মীয়অনাত্বীয়, বন্ধু-শক্র, আপন-পর কেউই তার কাছ থেকে নির্লজ্জ ও নিখাদ সত্যপ্রীতি, সত্য-সমর্থন ও সত্য-সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুরই আশংকা করে না। কোন রকম দ্বিধা-সংকোচ ও বিরোধিতা তাদের মনে কখনও স্থান পায় না। যেমন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ।
(২) সালেহীন বা সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তার নিজের চিন্তাধারা, আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা, সংকল্প, কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য-সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এর সাথে নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে। আর যারা প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্ষেত্রেই সৎকর্মসমূহের অনুবর্তী।
(৩) জান্নাতের পদমর্যাদাসমূহ আমলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। জান্নাতীদের পদমর্যাদা তাদেরই আমল তথা কৃতকর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। প্রথম শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা নবী-রাসূলগণের সাথে জান্নাতের উচ্চতর স্থানে জায়গা দেবেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদেরকে নবীগণের পরবর্তী মর্যাদার লোকদের সাথে স্থান দেবেন। তাদেরকেই বলা হয় সিদ্দীকীন। অতঃপর তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা থাকবেন শহীদগণের সাথে। আর চতুর্থ শ্রেণীর লোকেরা থাকবেন সালেহীনদের সাথে। সারকথা, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যশীল বান্দাগণ সে সমস্ত মহান ব্যক্তিদের সাথে থাকবেন, যারা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ও মকবুল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “জান্নাতবাসীরা নিজেদের জানালা দিয়ে উপরের শ্রেণীর লোকদেরকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে, যেমন পৃথিবীতে তোমরা সূদুর দিগন্তে নক্ষত্রকে দেখ। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি শুধু নবী-রাসূলগণ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই না, এমন কিছু লোক যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নবী-রাসূলদের সত্যায়ন করেছে।” [বুখারীঃ ৩২৫৬, মুসলিমঃ ২৮৩১] তাই যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভে ধন্য হতে চাইবে, তাদেরকে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসার মাধ্যমেই লাভ করতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল যে, সে লোকটির মর্যাদা কেমন হবে, যে লোক কোন গোষ্ঠীর ভালবাসা পোষণ করে, কিন্তু আমলের বেলায় এ দলের নির্ধারিত মান পর্যন্ত পৌছতে পারেনি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রতিটি লোকই যার সাথে তার ভালবাসা, তার সাথে থাকবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, পৃথিবীতে কোন কিছুতেই আমি এতটা আনন্দিত হইনি যতটা এ হাদীসের কারণে আনন্দিত হয়েছি। কারণ, এ হাদীসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যাদের গভীর ভালবাসা রয়েছে তারা হাশরের মাঠেও তার সাথেই থাকবেন। [বুখারীঃ ৬১৬৭, মুসলিমঃ ২৬৩৯]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আপনি আমার কাছে আমার নিজের আত্মার চেয়েও প্রিয়। আপনি আমার নিকট আমার পরিবার-পরিজন, সম্পদ, সন্তানসন্তুতিদের থেকেও প্রিয়। আমি আমার ঘরে অবস্থানকালে আপনার কথা স্মরণ হলে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে না দেখি ততক্ষণ স্থির থাকতে পারি না। যখন আমি আমার ও আপনার মৃত্যুর কথা স্মরণ করি তখন বুঝতে পারি যে, আপনি নবীদের সাথে উচু স্থানে অবস্থান করবেন। আর আমি যদি জান্নাতে প্রবেশ করি তবে আপনাকে দেখতে না পাওয়ার আশংকা করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীর কথার তাৎক্ষনিক কোন জওয়াব দিলেন না। শেষ পর্যন্ত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত নাযিল করলেন। [আল-মু’জামুস সাগীর লিত তাবরানী ১/২৬; মাজমাউদ যাওয়ায়িদ ৭/৭]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি শুনেছিলাম যে, নবীদেরকে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়া ও আখেরাত যে কোন একটি বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থতার পর মারা গেলেন, সে অবস্থায় তার মুখ থেকে এ আয়াত শুনতে পেলাম। তখন আমি বুঝলাম যে, তাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। আর তিনি আখেরাত বেছে নিয়েছেন।” [বুখারী ৪৪৩৫; মুসলিম: ২৪৪৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৯) আর যে কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে, (শেষ বিচারের দিন) সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক (নবীর সহচর), শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম। [1]
[1] আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার প্রতিদানের কথা বলা হচ্ছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, (المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ) "মানুষ তার সাথে থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে।" (বুখারী ৬১৬৮, মুসলিম ২৬৪১নং) আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ)-এর এই কথা শুনে সাহাবাগণ যত আনন্দিত হয়েছিলেন এত আনন্দিত আর কখনও হন নি। কারণ, তাঁরা জান্নাতেও রসূল (সাঃ)-এর সঙ্গ লাভ চাইতেন। আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কোন কোন সাহাবী নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন যে, মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে সর্বোচ্চ স্থান দান করবেন। আর আমরা তার থেকে নিম্নস্তরের স্থানই লাভ করব এবং এইভাবে আমরা আপনার সঙ্গ-সংসর্গ এবং আপনার দর্শন লাভ থেকে বঞ্চিত থাকব, যা দুনিয়াতে আমরা পাই। তাই আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করে তাঁদেরকে সান্ত্বনা দিলেন। (ইবনে কাসীর) কোন কোন সাহাবী তো বিশেষভাবে রসূল (সাঃ)-এর সাথে জান্নাতে থাকার দরখাস্ত করেছিলেন। (أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الجَنَّةِ) আর এর জন্য রসূল (সাঃ) তাদেরকে বেশী বেশী নফল নামায পড়ার তাকীদ করেছিলেন। (فَأَعِنِّي عَلى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُوْدِ) ‘‘তুমি বেশী বেশী সিজদা করে আমার সাহায্য কর।’’ (মুসলিম ৪৮৯নং) এ ছাড়া আরো একটি হাদীসে এসেছে যে, (التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الْأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ ) ‘‘সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী আম্বিয়া, সিদ্দীক এবং শহীদদের সাথে থাকবে।’’ (তিরমিযী ১২০৯নং) সিদ্দীকত্ব (সত্য-নিষ্ঠা) হল পূর্ণ ঈমান ও পূর্ণ আনুগত্যের নাম। নবুঅতের পর এর মান। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের মধ্যে আবূ বাকার সিদ্দীক (রাঃ) এই স্থান লাভ করার ব্যাপারে ছিলেন সবার ঊর্ধে। আর এই জন্যই সকলের ঐকমত্যে নবীগণ ছাড়া অন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে নবী করীম (সাঃ)-এর পর তিনিই হলেন সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সৎকর্মশীল বা নেক লোক তাঁকে বলা হয়, যিনি আল্লাহ এবং তাঁর বান্দাদের অধিকারসমূহ পূর্ণরূপে আদায় করেন এবং তাতে কোন প্রকার ত্রুটি করেন না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএই অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আল-বায়ান
এটা আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ, সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তাইসিরুল
এটাই আল্লাহর অনুগ্রহ এবং আল্লাহর জ্ঞানই যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান
That is the bounty from Allah, and sufficient is Allah as Knower. Sahih International
৭০. এগুলো আল্লাহর অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ। বস্তুতঃ মহাজ্ঞানী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাকে আঁকড়ে ধরেছে তিনি অবশ্যই তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর দিকে সরল পথ দেখাবেন। আল-বায়ান
অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে আর তাঁকে দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরে থাকে, অচিরেই তিনি তাদেরকে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তাঁর দিকে সরল-সুদৃঢ় পথে পরিচালিত করবেন। তাইসিরুল
অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাঁকে সুদৃঢ় রূপে ধারণ করেছে, ফলতঃ তিনি তাদেরকে স্বীয় করুণা ও কল্যাণের দিকে প্রবিষ্ট করাবেন এবং স্বীয় সরল পথ প্রদর্শন করবেন। মুজিবুর রহমান
So those who believe in Allah and hold fast to Him - He will admit them to mercy from Himself and bounty and guide them to Himself on a straight path. Sahih International
১৭৫. সুতরাং যারা আল্লাহতে ঈমান এনেছে এবং তাকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করেছে তাদেরকে তিনি অবশ্যই তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তাদেরকে সরল পথে তার দিকে পরিচালিত করবেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭৫) অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে ও তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে, তাদেরকে তিনি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশাধিকার প্রদান করবেন এবং তাঁর নিকট পৌঁছনোর জন্য তাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার দ্বীন হতে ফিরে গেলে সত্বর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসবে, তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করবে না, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ- যাকে ইচ্ছে তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম হতে বিচ্যুত হবে, (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই, কেননা) আল্লাহ সত্ত্বরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে, তারা মুসলিমদের প্রতি মেহেরবান থাকবে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবেনা; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন; বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, whoever of you should revert from his religion - Allah will bring forth [in place of them] a people He will love and who will love Him [who are] humble toward the believers, powerful against the disbelievers; they strive in the cause of Allah and do not fear the blame of a critic. That is the favor of Allah; He bestows it upon whom He wills. And Allah is all-Encompassing and Knowing. Sahih International
৫৪. হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়(১) আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না(২); এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।(৩)
(১) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর হুশিয়ারী দেয়া হচ্ছে যে, যারাই আল্লাহর পথ ও তাঁর দ্বীন থেকে পিছু ফিরে যাবে, তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ্ তাআলা তার দ্বীনের জন্য নতুন কোন জাতিকে এগিয়ে আনবেন। [তাবারী] আইয়াদ আল আশ'আরী বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আবু মূসা, এরা হল তোমার সম্প্রদায়। আর রাসূল হাত দিয়ে ইশারা করছিলেন আবু মূসা আল-আশ'আরীর দিকে। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩১৩]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ “তোমাদের মধ্যে কারো হক জানা থাকলে সে যেন তা বলতে কাউকে ভয় না করে। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ হাদীস বর্ণনা করে কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আল্লাহর শপথ আমরা অনেক বিষয় দেখেছি, কিন্তু ভয় করেছি। [ইবন মাজাহঃ ৪০০৭; তিরমিযী: ২১৯১]
(৩) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মুসলিমদের স্বার্থেই তাদেরকে অমুসলিমদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, সত্যদ্বীন ইসলামের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন। কোন ব্যক্তি কিংবা দলের বক্রতা ও অবাধ্যতা দূরের কথা, স্বয়ং মুসলিমদের কোন ব্যক্তি কিংবা দল যদি সত্যি সত্যিই ইসলাম ত্যাগ করে বসে এবং সম্পূর্ণ দ্বীনত্যাগী হয়ে অমুসলিমদের সাথে হাত মিলায়, তবে এতেও ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না- হতে পারে না। মুসলিমরাও যদি দ্বীনত্যাগী হয়ে যায়, আল্লাহ তা'আলা তাদের জায়গায় অন্য কোন জাতির অভ্যুত্থান ঘটাবেন। সে জাতির মধ্যে বেশ কিছু গুণ থাকবে। তাদের প্রথম গুণ হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে ভালবাসবেন এবং তারা নিজেরাও আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাসবে।
এ গুণটি দুটি অংশে বিভক্ত- এক. আল্লাহর সাথে তাদের ভালবাসা। একে কোন না কোন স্তরে মানুষের ইচ্ছাধীন মনে করা যায়। দুই. আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ভালবাসা। এতে বাহ্যতঃ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের কোন ভূমিকা নেই। যে বিষয়টি মানুষের ইচ্ছা ও সামর্থ্যের বাইরে, তা মানুষকে শুনানোরও কোন বাহ্যিক সার্থকতা নেই। কিন্তু কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াতের পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, এ ভালবাসার উপায়-উপকরণগুলোও মানুষের ইচ্ছাধীন। মানুষ যদি এসব উপায়কে কাজে লাগায়, তবে তাদের সাথে আল্লাহ তা'আলার ভালবাসা অবশ্যম্ভাবী।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “হে রাসূল, আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবাস, তবে আমার অনুসরন কর। এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে ভালবাসতে থাকবেন, আর আল্লাহ তোমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা করে দিবেন; এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৩১] এ আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার ভালবাসা লাভ করতে চায়, তার উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণে অবিচল থাকা। এমনটা করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ভালবাসবেন বলে ওয়াদা দিয়েছেন। তাদের দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে যে, তারা মুসলিমদের সামনে নম্র হবে এবং কোন ব্যাপারে মতবিরোধ হলে সত্যপন্থী হওয়া সত্বেও সহজে বশ হয়ে তারা ঝগড়া ত্যাগ করবে। এ অর্থেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমি ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যস্থলে বাসস্থান দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করছি, যে সত্যপন্থী হওয়া সত্বেও ঝগড়া ত্যাগ করে’। [আবু দাউদঃ ৪৮০০]
মোটকথা, তারা মুসলিমদের সাথে স্বীয় অধিকার কাজ-কারবারের ব্যাপারে কোনরূপ ঝগড়াবিবাদ রাখবে না। তাদের তৃতীয় গুণ হচ্ছে যে, তারা কাফেরদের উপর প্রবল, শক্তিশালী ও কঠোর। উদ্দেশ্য এই যে, তারা আল্লাহ ও তার দ্বীনের শক্রদের মোকাবেলায় কঠোর ও পরাক্রান্ত। শক্ররা তাদেরকে সহজে কাবু করতে পারে না। উভয় বাক্য একত্রিত করলে সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, তারা হবে এমন এক জাতি, যাদের ভালবাসা ও শক্রতা নিজ সত্ত্বা ও সত্ত্বাগত অধিকারের পরিবর্তে শুধু আল্লাহ, তার রাসূল ও তার দ্বীনের খাতিরে নিবেদিত হবে।
এ একই বিষয়বস্তু সম্বলিত অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, (أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ) -অর্থাৎ “কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” [সূরা আল-ফাতহঃ ২৯) তাদের চতুর্থ গুণ হচ্ছে, “তারা সত্য দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জিহাদে প্রবৃত্ত হবে।” এর সারমর্ম এই যে, কুফর ও দ্বীনত্যাগের মোকাবেলা করার জন্য শুধু কতিপয় প্রচলিত ইবাদাত এবং নম্র ও কঠোর হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দীপনাও থাকতে হবে। এই উদ্দীপনাকে পূর্ণতা দানের জন্য পঞ্চম গুণ বলা হয়েছে, “দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত ও সমুন্নত করার চেষ্টায় তারা কোন ভৎসনাকারীর ভৎসনারই পরোয়া করবে না।” [ইবন কাসীর থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ ধর্ম হতে ফিরে গেলে[1] আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে,[2] তারা হবে বিশ্বাসীদের প্রতি কোমল ও অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না,[3] এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
[1] আল্লাহ তাআলা নিজের ইলম মোতাবেক বলেছেন; যা নবী করীম (সাঃ)-এর মৃত্যুর পরপরই প্রকাশ পেয়েছিল। তা হচ্ছে, ইসলাম-ত্যাগের ফিতনা; আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের নিরলস প্রচেষ্টায় যার সমাপ্তি ঘটেছিল।
[2] ধর্ম-ত্যাগীদের পরিবর্তে আল্লাহ এমন এক কওমকে নির্বাচিত করবেন, যাদের চারটি স্পষ্ট গুণ বর্ণনা করা হয়েছে; (ক) আল্লাহর প্রতি ভালবাসা রাখা ও তাঁর ভালবাসার পাত্রতে পরিণত হওয়া। (খ) ঈমানদারদের প্রতি কোমল ও বিনম্র এবং কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হওয়া। (গ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এবং (ঘ) আল্লাহর ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে পরোয়া না করা। সাহাবায়ে কেরামগণ (রাঃ) এই সমস্ত গুণের অধিকারী ছিলেন। যার কারণে আল্লাহ তাঁদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে মহা সৌভাগ্যবান বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর দুনিয়াতেই তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন।
[3] এটা ঐ ঈমানদারগণের ৪র্থ নম্বর গুণ। অর্থাৎ, মহান আল্লাহর আনুগত্য ও হুকুম পালনের ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় ও পরোয়া করবে না। এ গুণটিও বড় গুরুত্বপূর্ণ গুণ। সমাজে যখন কোন পাপের প্রচলন ব্যাপক হয়ে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে এই গুণ ছাড়া নেকীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করা সম্ভব নয়। সমাজে কত শত এমন মানুষ আছে যাঁরা পাপাচরণ, আল্লাহ-দ্রোহিতা এবং সামাজিক অশ্লীলতা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে, কিন্তু এই নিন্দুকের নিন্দা ও তিরস্কারের মোকাবেলা করার মত ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে পাপের ঐ দলদল হতে বের হতে পারে না এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার মত তওফীকও লাভ করে না। এই জন্যেই পরবর্তীতে আল্লাহ বলেছেন, যাদের মধ্যে এই চারটি গুণ বিদ্যমান আছে তাদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার’? বল, ‘আল্লাহর জন্য’; তিনি তাঁর নিজের উপর রহমত লিখে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না। আল-বায়ান
বল, আসমানে আর যমীনে যা আছে তা কার? বল, আল্লাহরই। দয়া করা তিনি তাঁর জন্য কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন, তিনি কিয়ামাত দিবসে তোমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না। তাইসিরুল
তুমি জিজ্ঞেস করঃ আকাশমন্ডলী ও ধরাধামে অবস্থিত যা কিছু রয়েছে তার মালিক কে? তুমি বলঃ তা সবই আল্লাহর মালিকানায়, অনুগ্রহ করা তিনি তাঁর নীতি বলে গ্রহণ করেছেন, তিনি তোমাদের সকলকে কিয়ামাত দিবসে অবশ্যই সমবেত করবেন যে দিন সম্পর্কে কোন সন্দেহই নেই; যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ও ধবংসের মুখে ফেলেছে তারাই বিশ্বাস করেনা। মুজিবুর রহমান
Say, "To whom belongs whatever is in the heavens and earth?" Say, "To Allah." He has decreed upon Himself mercy. He will surely assemble you for the Day of Resurrection, about which there is no doubt. Those who will lose themselves [that Day] do not believe. Sahih International
১২. বলুন, আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার? বলুন, আল্লাহরই,(১) তিনি তার নিজের উপর দয়া করা লিখে নিয়েছেন।(২) কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই একত্র করবেন(৩), এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না।(৪)
(১) এ আয়াতে কাফেরদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছেঃ নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ে যা আছে, তার মালিক কে? অতঃপর আল্লাহ নিজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাচনিক উত্তর দিয়েছেনঃ সবার মালিক আল্লাহ। কাফেরদের উত্তরের অপেক্ষা করার পরিবর্তে নিজেই উত্তর দেয়ার কারণ এই যে, এ উত্তর কাফেরদের কাছেও স্বীকৃত। তারা যদিও শির্ক ও পৌত্তলিকতায় লিপ্ত ছিল, তথাপি ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল ও সবকিছুর মালিক আল্লাহ তা'আলাকেই মানতো অর্থাৎ তারা তাওহীদুর রবুবিয়াতের এ অংশে বিশ্বাসী ছিল। আর তারা যেহেতু তাওহীদের এ অংশে বিশ্বাস করছে, তাদের উচিত হবে তাওহীদের বাকী অংশ তাওহীদুল উলুহিয়ার স্বীকৃতি দেয়া এবং একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা। [সা’দী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
(২) সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেন, তখন একটি ওয়াদাপত্র লিপিবদ্ধ করেন। এটি আল্লাহ্ তা'আলার কাছেই রয়েছে। এতে লিখিত আছেঃ আমার অনুগ্রহ আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে। [বুখারী: ৭৪০৪; মুসলিম: ২৭৫১]
(৩) এ বাক্যে إلى শব্দটি فى অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাতে মর্ম দাঁড়িয়েছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা পূর্বের ও পরের সব মানুষকে কেয়ামতের দিন সমবেত করবেন কিংবা এখানে কবরে একত্রিত করা বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে কবরে একত্রিত করতে থাকবেন এবং কেয়ামতের দিন সবাইকে জীবিত করবেন আর তোমাদেরকে তোমাদের কর্মকাণ্ডের শাস্তি প্রদান করবেন। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(৪) এতে ইঙ্গিত আছে যে, আয়াতের শুরুতে বর্ণিত আল্লাহ্ তা'আলার ব্যাপক অনুগ্রহ থেকে যদি কাফের ও মুশরিকরা বঞ্চিত হয়, তবে স্বীয় কৃতকর্মের কারণেই হবে। কারণ, তারা অনুগ্রহ লাভের উপায় অর্থাৎ ঈমান অবলম্বন করেনি। আল্লাহ্ তাআলা আখেরাত ও কিয়ামতের বাস্তবতার উপর অনেক দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, যাতে তা বাস্তব সত্যরূপে মানুষের কাছে প্রতিভাত হয়। কিন্তু তারা অস্বীকার ছাড়া কিছুই করেনি। তারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছে, ফলে তারা আল্লাহ্র অবাধ্যতায় নিপতিত হয়েছে এবং কুফরী করার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে। এতে করে তারা তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই বরবাদ করেছে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) বল, ‘আকাশ ও ভূমন্ডলে যা আছে তা কার?’ বল, ‘তা আল্লাহরই।’ দয়া করা তিনি নিজ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন।[1] কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই সমবেত করবেন, এতে কোনই সন্দেহ নেই। যারা নিজেই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা বিশ্বাস করবে না।
[1] যেমন হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যখন মহান আল্লাহ সৃষ্টদের সৃষ্টি করলেন, তখন আরশে লিখে দিলেন, إِنَّ رَحْمَتِيْ تَغْلِبُ غَضَبِيْ ‘‘আমার দয়া আমার ক্রোধের উপরে বিজয়ী।’’ (বুখারীঃ তাওহীদ অধ্যায়, মুসলিমঃ তাওবা অধ্যায়) তবে এ দয়া ও রহমত কিয়ামতের দিন কেবল ঈমানদারদের জন্য হবে। আর কাফেরদের প্রতি প্রতিপালক চরম ক্রোধান্বিত হবেন। অর্থাৎ, দুনিয়াতে তো তাঁর রহমত অবশ্যই ব্যাপক; যার দ্বারা মু’মিন ও কাফের, সৎ ও অসৎ এবং বাধ্যজন ও অবাধ্যজন সকলেই উপকৃত হচ্ছে। মহান আল্লাহ কোন ব্যক্তিরই রুযী অবাধ্যতার কারণে বন্ধ করেন না। তবে তাঁর রহমতের এই ব্যাপকতা দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। প্রতিফল ও প্রতিদানের স্থান আখেরাতে আল্লাহর সুবিচারক হওয়ার গুণের পূর্ণ বিকাশ ঘটবে, যার ফলে সেখানে ঈমানদাররা তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করবে এবং কাফের ও ফাসেকরা জাহান্নামের চিরন্তন শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এই জন্য কুরআনে বলা হয়েছে, {وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآياتِنَا يُؤْمِنُونَ} ‘‘আমার দয়া প্রতিটি জিনিসের উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।’’ (সূরা আ’রাফ ১৫৬)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না তার সংশোধনের পর এবং তাঁকে ডাক ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। আল-বায়ান
শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হওয়ার পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, আর তাঁকে ভয়-ভীতি ও আশা-ভরসা নিয়ে ডাকতে থাক, আল্লাহর দয়া তো (সব সময়) তাদের নিকটে আছে যারা সৎ কাজ করে। তাইসিরুল
দুনিয়ায় শান্তি শৃংখলা স্থাপনের পর বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করনা, আল্লাহকে ভয়-ভীতি ও আশা আকাংখার সাথে ডাক, নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাহমাত সৎকর্মশীলদের অতি সন্নিকটে। মুজিবুর রহমান
And cause not corruption upon the earth after its reformation. And invoke Him in fear and aspiration. Indeed, the mercy of Allah is near to the doers of good. Sahih International
৫৬. আর যমীনে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না(১) আর আল্লাহ্কে ভয় ও আশার সাথে ডাক(২) নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ মুহসিনদের খুব নিকটে।(৩)
(১) এখানে صلاح ও فساد শব্দ দুটি পরস্পর বিরোধী। صلاح শব্দের অর্থ সংস্কার আর إصلاح শব্দের অর্থ সংস্কার করা এবং فساد শব্দের অর্থ অনর্থ ও গোলযোগ আর إفساد শব্দের অর্থ অনর্থ সৃষ্টি করা। মূলতঃ সমতা থেকে বের হয়ে যাওয়াকে ফাসাদ বলা হয়; তা সামান্য হোক কিংবা বেশী। কম বের হলে কম ফাসাদ এবং বেশী বের হলে বেশী ফাসাদ হবে। কাজেই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না, আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক সংস্কার করার পর।
আল্লাহ্ তা'আলার সংস্কার কয়েক প্রকার হতে পারে। (এক) প্রথমেই জিনিসটি সঠিকভাবে সৃষ্টি করা। যেমন, সূরা মুহাম্মাদের ২নং আয়াতে বলা হয়েছে; (وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ) (দুই) অনর্থ আসার পর তা দূর করা। যেমন, সূরা আল-আহযাবের ৭১নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ (يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ) (তিন) সংস্কারের নির্দেশ দান করা। যেমন, এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ “যখন আল্লাহ্ তা'আলা পৃথিবীর সংস্কার সাধন করেছেন, তখন তোমরা তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।” এখানে পৃথিবীর সংস্কার সাধন করার দুটি অর্থ হতে পারে।
(এক) বাহ্যিক সংস্কার; অর্থাৎ পৃথিবীকে চাষাবাদ ও বৃক্ষ রোপনের উপযোগী করেছেন, তাতে মেঘের সাহায্যে পানি বর্ষণ করে মাটি থেকে ফল-ফুল উৎপন্ন করেছেন এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর জন্য মাটি থেকে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন। (দুই) পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ ও অর্থগত সংস্কার করেছেন। নবী-রাসূল, গ্রন্থ ও হেদায়াত প্রেরণ করে পৃথিবীকে কুফর, শির্ক, পাপাচার ইত্যাদি থেকে পবিত্র করেছেন। সৎ আমল দিয়ে পূর্ণ করেছেন। আয়াতে উভয় অর্থ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সংস্কারও উদ্দিষ্ট হতে পারে। অতএব আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে পৃথিবীর সংস্কার সাধন করেছেন। এখন তোমরা এতে গোনাহ ও অবাধ্যতার মাধ্যমে গোলযোগ ও অনর্থ সৃষ্টি করো না। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় ও আশা সহকারে ডাক। একদিকে দোআ অগ্রাহ্য হওয়ার ভয় থাকবে এবং অপরদিকে তার করুণা লাভের পূর্ণ আশাও থাকবে। এ আশা ও ভয়ই দৃঢ়তার পথে মানবাত্মার দুটি বাহু। এ বাহুদ্বয়ের সাহায্যে সে ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ করে এবং সুউচ্চ পদ মর্যাদা অর্জন করে। এ বাক্য থেকে বাহ্যতঃ প্রতীয়মান হয় যে, আশা ও ভয় সমান সমান হওয়া উচিত। কোন কোন আলেম বলেন, জীবিতাবস্থায় ও সুস্থতার সময় ভয়কে প্রবল রাখা প্রয়োজন, যাতে আনুগত্যে ত্রুটি না হয়, আর যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয়, তখন আশাকে প্রবল রাখবে। কেননা, এখন কাজ করার শক্তি বিদায় নিয়েছে। করুণা লাভের আশা করাই এখন তার একমাত্র কাজ। [কুরতুবী]
মোটকথা, দোআর দু’টি আদব হল- বিনয় ও নম্রতা এবং আস্তে ও সংগোপনে দোআ করা। এ দুটি গুণই মানুষের বাহ্যিক দেহের সাথে সম্পৃক্ত। কেননা, বিনয়ের অর্থ হল দোআর সময় দৈহিক আকার-আকৃতিকে অপারগ ও ফকীরের মত করে নেয়া, অহংকারী ও বেপরোয়ার মত না হওয়া। দোআ সংগোপনে করার সম্পর্কও জিহবার সাথে যুক্ত। এ আয়াতে দোআর আরো দুটি আভ্যন্তরীণ আদব বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর সম্পর্ক মানুষের মনের সাথে। আর তা হল এই যে, দো'আকারীর মনে এ ভয় ও আশংকা থাকা উচিত যে, সম্ভবতঃ দোআটি গ্রাহ্য হবে না এবং এ আশাও থাকা উচিত যে, দোআ কবুল হতে পারে। তবে দোআকারীর মনে এটা প্রবল থাকতে হবে যে, তার দোআ কবুল হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে ডাকবে যে, তোমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি তা কবুল করবেন। [তিরমিযীঃ ৩৪৭৯, হাকেমঃ ১/৪৯৩, মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৭৭]
(৩) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার করুণা সৎকর্মীদের নিকটবর্তী। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদিও দোআর সময় ভয় ও আশা উভয় অবস্থাই থাকা বাঞ্চনীয়, কিন্তু এতদুভয়ের মধ্যে আশার দিকটিই থাকবে প্রবল। কেননা, বিশ্ব প্রতিপালক পরম দয়ালু আল্লাহর দান ও অনুগ্রহে কোন ক্রটি ও কৃপণতা নেই। তিনি মন্দ লোকের দোআও কবুল করতে পারেন। কবুল না হওয়ার আশংকা স্বীয় কুকর্ম ও গোনাহর অকল্যাণেই থাকতে পারে। কারণ, আল্লাহর রহমতের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সৎকর্মী হওয়া প্রয়োজন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কেউ সুদীর্ঘ সফর করে, স্বীয় বেশভূষা ফকীরের মত করে এবং আল্লাহর সামনে দোআর হস্ত প্রসারিত করে; কিন্তু তার খাদ্য, পানীয় ও পোষাক সবই হারাম- এরূপ লোকের দো'আ কিরূপে কবুল হতে পারে? [মুসলিমঃ ১০১৫]
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বান্দা যতক্ষণ কোন গোনাহ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের দোআ না করে এবং তড়িঘড়ি না করে, ততক্ষণ তার দোআ কবুল হতে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তড়িঘড়ি দোআ করার অর্থ কি? তিনি বলেনঃ এর অর্থ হল এরূপ ধারণা করে বসা যে, আমি এত দীর্ঘ দিন থেকে দোআ করছি, অথচ এখনো পর্যন্ত কবুল হল না। অতঃপর নিরাশ হয়ে দোআ ত্যাগ করা। [মুসলিমঃ ২৭৩৫] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখনই আল্লাহর কাছে দোআ করবে তখনই কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়ে দোআ করবে। [মুসনাদ আহমাদঃ ২/১৭৭, তিরমিযীঃ ৩৪৭৯] অর্থাৎ আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডারের বিস্তৃতিকে সামনে রেখে দোআ করলে অবশ্যই দোআ কবুল হবে বলে মনকে মজবুত কর। এমন মনে করা, গোনাহর কারণে দোআ কবুল না হওয়ার আশংকা অনুভব করা এর পরিপন্থী নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৬) পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর ওতে বিপর্যয় ঘটায়ো না এবং তাঁকে ভয় ও আশার সঙ্গে আহবান কর। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী। [1]
[1] এই আয়াতগুলোতে চারটি জিনিসের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। (ক) আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি সহকারে এবং গোপনে দু’আ করা। যেমন, হাদীসেও এসেছে যে, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা নিজের উপর দয়ার্দ্র হও। কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না, বরং তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সব কিছু শোনেন এবং দেখেন।’’ (বুখারীঃ দু’আ অধ্যায়, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়) (খ) দু’আতে বাড়াবাড়ি না করা। অর্থাৎ, নিজের যোগ্যতা ও মর্যাদার ঊর্ধ্বে যেন দু’আ না করা হয়। (অনুপযুক্ত কিছু চাওয়া না হয়।) (গ) শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ফাসাদ বা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা। অর্থাৎ, আল্লাহর অবাধ্যতা করে ফাসাদ সৃষ্টি করার কাজে যেন অংশ না নেওয়া হয়। (ঘ) আল্লাহর শাস্তির ভয় যেন অন্তরে থাকে এবং তাঁর দয়ার আশাও। এইভাবে যারা দু’আ করে, তারাই হল সৎকর্মশীল। আর অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতি নিকটবর্তী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলল, ‘আমার রব, ক্ষমা করুন আমাকে ও আমার ভাইকে এবং আপনার রহমতে আমাদের প্রবেশ করান। আর আপনিই রহমকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আল-বায়ান
মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আর আমার ভাইকে ক্ষমা কর, আর আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর, তুমিই সর্বাধিক বড় দয়াবান।’ তাইসিরুল
তখন মূসা বললঃ হে আমার রাব্ব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন! আর আমাদেরকে আপনার রাহমাতের মধ্যে দাখিল করুন! আপনি সব চেয়ে দয়াবান। মুজিবুর রহমান
[Moses] said, "My Lord, forgive me and my brother and admit us into Your mercy, for You are the most merciful of the merciful." Sahih International
১৫১. মূসা বললেন, হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আপনার রহমতের মধ্যে প্রবিষ্ট করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫১) মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে তোমার করুণায় আশ্রয় দান কর। আর তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয় আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি।’ তিনি বললেন, ‘আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে। আল-বায়ান
‘আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও আর পরকালেও। আমরা তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি।’ আল্লাহ বললেন, ‘শাস্তি তো আমি যাকে ইচ্ছে দেই, আর আমার রহমত সব বিষয়ে পরিব্যাপ্ত আর তা আমি তাদের জন্য লিখে দিব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে, যাকাত দিবে আর যারা আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাসী হবে।’ তাইসিরুল
অতএব আমাদের জন্য এই দুনিয়ায় ও পরকালে কল্যাণ নির্ধারিত করে দিন, আমরা আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ যাকে ইচ্ছা আমি আমার শাস্তি দিয়ে থাকি, আর আমার করুণা ও দয়া প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে রয়েছে, সুতরাং আমি তাদের জন্যই কল্যাণ অবধারিত করব যারা পাপাচার হতে বিরত থাকে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনে। মুজিবুর রহমান
And decree for us in this world [that which is] good and [also] in the Hereafter; indeed, we have turned back to You." [Allah] said, "My punishment - I afflict with it whom I will, but My mercy encompasses all things." So I will decree it [especially] for those who fear Me and give zakah and those who believe in Our verses - Sahih International
১৫৬. আর আপনি আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে কল্যাণ লিখে দিন এবং আখেরাতেও। নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে ফিরে এসেছি।(১) আল্লাহ বললেন, ‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি আর আমার দয়া- তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে(২)। কাজেই আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, ঈমান আনে।
(১) কুরআনের শব্দ هُدْنَا অর্থ আমরা ফিরে এসেছি অথবা তাওবাহ করেছি। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এই শব্দ থেকে তাদের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াহুদ’। [ইবন কাসীর]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়েই অহংকার করল। জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার কাছে প্রবেশ করে প্রতাপান্বিত অত্যাচারী, অহংকারী, রাজা-বাদশা ও নেতাগোছের লোকেরা। আর জান্নাত বলল, হে রব! আমার কাছে প্রবেশ করে দূর্বল, ফকীর, মিসকীনরা। তখন আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার শাস্তি। তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমি তাকে তা পৌছাই। আর জান্নাতকে বললনে, তুমি আমার রহমত, যা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর তোমাদের প্রত্যেককেই পূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। তখন জাহান্নামে তার বাসিন্দাদের নিক্ষেপ করা হবে ...” [মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩; ৭৮]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তাআলা একশত রহমত সৃষ্টি করেছেন। তা থেকে মাত্র একটি রহমত তিনি সৃষ্টিকুলকে দিয়েছেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের চেয়েও প্রকাণ্ড। এর কারণেই মা তার সন্তানকে দয়া করে, এর কারণেই পাখি ও জীব-জন্তু পানি পান করে। অতঃপর যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তখন তিনি সমস্ত সৃষ্টিকুল থেকে এ রহমতটি নিয়ে নিবেন এবং এটি ও বাকী ৯৯টির সবগুলিই তিনি মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট করবেন। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর এ আয়াত, “কাজেই আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে” এর মর্ম।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ১৩/১৮২]
কাতাদা ও হাসান বলেন, দুনিয়াতে তিনি নেককার ও বদকার সবার জন্যই রহমত লিখেছেন তবে আখেরাতে তা শুধু মুত্তাকীদের জন্য। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ইবন আব্বাস বলেন, এখানে তাকওয়া অর্থ শির্ক থেকে বেঁচে থাকা। [তাবারী] কাতাদা বলেন, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৬) এবং আমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নির্ধারণ কর, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করছি।’[1] আল্লাহ বললেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত।[2] সুতরাং আমি তা (দয়া) তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা সাবধান হয়, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে।
[1] অর্থাৎ, তওবা করছি।
[2] এটি মহান আল্লাহর করুণার পরিব্যাপ্তিই বটে যে, পৃথিবীতে সৎ-অসৎ মু’মিন-কাফের সবাই আল্লাহর করুণা হতে উপকৃত হচ্ছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহর করুণার একশত অংশ আছে। তার মধ্যে একটি অংশ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। যার কারণে সৃষ্টি এক অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকে; এমনকি পশুরাও নিজ নিজ বাচ্চার উপর মায়া করে নিজেদের পা তুলে নেয়। আর তিনি করুণার ৯৯ ভাগ অংশ নিজের কাছে রেখেছেন।’’ (মুসলিম ২১০৮, ইবনে মাজাহ ৪২৯৩নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, আর আল্লাহর পথে নিজদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তারা বড়ই মর্যাদাবান আর তারাই সফলকাম। আল-বায়ান
যারা ঈমান আনে, হিজরাত করে, আর নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, আল্লাহর নিকট তাদের বিরাট মর্যাদা রয়েছে, এরাই হল সফলকাম। তাইসিরুল
যারা ঈমান এনেছে ও হিজরাত করেছে, আর নিজেদের ধন ও প্রাণ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা মর্যাদায় আল্লাহর কাছে অতি বড়, আর তারাই হচ্ছে পূর্ণ সফলকাম । মুজিবুর রহমান
The ones who have believed, emigrated and striven in the cause of Allah with their wealth and their lives are greater in rank in the sight of Allah. And it is those who are the attainers [of success]. Sahih International
২০. যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্ৰেষ্ঠ। আর তারাই সফলকাম।(১)
(১) এ আয়াতে পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লেখিত ‘সমান নয়’ এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] বলা হয়েছেঃ “যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে মাল ও জান দিয়ে যুদ্ধ করেছে, আল্লাহর কাছে রয়েছে তাদের বড় মর্যাদা এবং তারাই সফলকাম।” পক্ষান্তরে তাদের প্রতিপক্ষ মুশরিকদের কোন সফলতা আল্লাহ দান করেন না। তবে সাধারণ মুসলিমগণ এ সফলতার অংশীদার, কিন্তু দেশত্যাগী মুজাহিদগণের সফলতা সবার উর্ধ্বে। তাই পূর্ণ সফলতার অধিকারী হল তারা। সে হিসেবে অর্থ দাঁড়ায়, “যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে তারা তাদের থেকে উত্তম যারা ঈমান আনলেও হিজরত করেনি। কারণ, তারা হিজরত না করার কারণে অনেক জিহাদেই অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এ আয়াতে হিজরত বলে মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করা বোঝানো হয়েছে। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) যারা ঈমান এনেছে, (দ্বীনের জন্য স্বদেশত্যাগ) হিজরত করেছে এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় বড়। আর তারাই হল সফলকাম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন রহমত ও সন্তুষ্টির এবং এমন জান্নাতসমূহের যাতে রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ী নিআমত। আল-বায়ান
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর দয়া ও সন্তুষ্টির, আর জান্নাতের যেখানে তাদের জন্য আছে স্থায়ী সুখ-সামগ্রী। তাইসিরুল
তাদের রাব্ব তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন রাহমাতের ও অতি সন্তুষ্টির, আর এমন জান্নাতের যার মধ্যে তাদের জন্য চিরস্থায়ী নি’আমাত থাকবে। মুজিবুর রহমান
Their Lord gives them good tidings of mercy from Him and approval and of gardens for them wherein is enduring pleasure. Sahih International
২১. তাদের রব তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন, স্বীয় দয়া ও সন্তোষের(১) এবং এমন জান্নাতের যেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী নেয়ামত।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেউ জান্নাতে যাবে, সে শুধু নে'আমতই প্রাপ্ত হবে, কখনও নিরাশ হবে না, তার প্রতি কঠোরতা করা হবে না। তার কাপড় কখনও পুরান হবে না, তার যৌবনও কখনও শেষ হবে না। [মুসলিম: ২৮৩৬] অন্য হাদীসে এসেছে, যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ জিনিস দেব। তারা বলবে, হে আমাদের রব! এর থেকেও শ্রেষ্ঠ জিনিস কি? তিনি বলবেন, আমার সন্তুষ্টি। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজ দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; যেখানে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি রয়েছে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতথায় তারা থাকবে চিরকাল। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার। আল-বায়ান
যেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহর কাছেই তো রয়েছে মহাপুরস্কার। তাইসিরুল
ওর মধ্যে তারা অনন্তকাল থাকবে, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট রয়েছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। মুজিবুর রহমান
[They will be] abiding therein forever. Indeed, Allah has with Him a great reward. Sahih International
২২. সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার।(১)
(১) আরাম-আয়েশের স্থায়িত্বের জন্য দুটি বিষয় আবশ্যক। এক. নেয়ামতের স্থায়িত্ব। দুই. নেয়ামত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়া। তাই আল্লাহর সৎ বান্দাদের জন্যে এ আয়াতে এবং পূর্বের আয়াতে এ দুটি বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। আয়াতে আল্লাহর সৎ বান্দাদের জন্য যে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে তার বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে, তাদের অন্তরে খুশীর অনুপ্রবেশ ঘটানো, তাদের সফলতার নিশ্চয়তা, আল্লাহ্ তা'আলা যে তাদের উপর সন্তুষ্ট সেটা জানিয়ে দেয়া, তিনি যে তাদের প্রতি দয়াশীল সেটার বর্ণনা, তিনি যে তাদের জন্য স্থায়ী নে’আমতের ব্যবস্থা করেছেন সেটার পরিচয় দেয়া। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে আছে মহাপ্রতিদান। [1]
[1] এই সব আয়াতে সেই ঈমানদারদের ফযীলত ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা হিজরত করেছেন এবং জান-মাল দিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। আল্লাহর নিকটে তাঁদের মর্যাদা সবার উচ্চে এবং তাঁরাই সফলকাম মানুষ। তাঁরাই আল্লাহর রহমত ও তাঁর সন্তুষ্টি এবং চিরস্থায়ী নিয়ামতের হকদার। তারা এর হকদার নয়, যারা নিজেদের মুখে সরল সাজে এবং নিজেদের বাপ-দাদাদের তরীকাকেই আল্লাহর প্রতি ঈমানের তুলনায় শ্রেয় ও প্রিয় মনে করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। আল-বায়ান
হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নাসীহাত আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমাত। তাইসিরুল
(হে মানব জাতি!) তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ হতে এমন বিষয় সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নাসীহাত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মু’মিনদের জন্য ওটা পথ প্রদর্শক ও রাহমাত। মুজিবুর রহমান
O mankind, there has to come to you instruction from your Lord and healing for what is in the breasts and guidance and mercy for the believers. Sahih International
৫৭. হে লোকসকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে উপদেশ ও অন্তরসমূহে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।(১)
(১) এখানে কুরআনুল কারীমের চারটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে-
এক. (مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ) مَوْعِظَةٌ ও وَعْظٌ এর প্রকৃত অর্থ হলো উৎসাহ কিংবা ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে পরিণাম সম্পর্কে স্মরণ করে দেয়া। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ এমন বিষয় বর্ণনা করা, যা শুনে মানুষের অন্তর কোমল হয় এবং আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে পড়ে। পার্থিব গাফলতীর পর্দা ছিন্ন হয়ে মনে আখেরাতের ভাবনা উদয় হয়। যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লিলতা থেকে বিরত করে। [ইবন কাসীর] কুরআনুল কারীমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই ‘মাওয়ায়েযে হাসানাহ'-এর অত্যন্ত সালঙ্কার প্রচারক। এর প্রতিটি জায়গায় ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে ভীতি-প্রদর্শন, সওয়াবের সাথে সাথে আযাব, পার্থিব জীবনের কল্যাণ ও কৃতকার্যতার সাথে সাথে ব্যর্থতা ও পথভ্রষ্টতা প্রভৃতির এমন সংমিশ্রিত আলোচনা করা হয়েছে, যা শোনার পর পাথরও পানি হয়ে যেতে পারে।
দুই. কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় গুণ (وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ) বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। شِفَاءٌ অর্থ রোগ নিরাময় হওয়া আর صُدُوْرٌ হলো صَدْرٌ এর বহুবচন, যার অর্থ বুক। আর এর মর্মার্থ অন্তর। সারার্থ হচ্ছে যে, কুরআনুল কারীম অন্তরের ব্যাধিসমূহ যেমন সন্দেহ, সংশয়, নিফাক, মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদির জন্য একান্ত সফল চিকিৎসা ও সুস্থতা এবং রোগ নিরাময়ের অব্যৰ্থ ব্যবস্থাপত্র। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে অন্তরে যে সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা রয়েছে সেগুলোর জন্যও মহৌষধ। [ইবন কাসীর] সঠিক আকীদা বিশ্বাস বিরোধী যাবতীয় সন্দেহ কুরআনের মাধ্যমে দূর হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, কুরআনের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, এটি বিশেষতঃ অন্তরের রোগের শিফা; দৈহিক রোগের চিকিৎসা নয়। কিন্তু অন্যান্য মনীষীবৃন্দ বলেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে কুরআন সর্ব রোগের নিরাময়, তা অন্তরের রোগই হোক কিংবা দেহেরই হোক। [আদ-দুররুল মানসূর]। তবে আত্মিক রোগের ধ্বংসকারিতা মানুষের দৈহিক রোগ অপেক্ষা বেশী মারাত্মক এবং এর চিকিৎসাও যে কারো সাধ্যের ব্যাপার নয়। সে কারণেই এখানে শুধু আন্তরিক ও আধ্যাত্মিক রোগের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে একথা প্রতীয়মান হয় না যে, দৈহিক রোগের জন্য এটি চিকিৎসা নয়। হাদীসের বর্ণনা ও উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এর প্রমাণ যে, কুরআনুল কারীম যেমন আন্তরিক ব্যাধির জন্য অব্যর্থ মহৌষধ, তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধির জন্যও উত্তম চিকিৎসা।
তিন. কুরআনুল কারীমের তৃতীয় গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো হেদায়াত। অর্থাৎ যে তার অনুসরণ করবে তার জন্য সঠিক পথের দিশা প্রদানকারী। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কুরআনকে হেদায়াত বলে অভিহিত করেছেন। যেমন সূরা আল-বাকারার ২য় আয়াত, সূরা আল ইসরার নবম আয়াত, সূরা আল-বাকারাহঃ ৯৭, ১৮৫, সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৮, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭, সূরা আল-আরাফঃ ৫২, ২০৩, সূরা ইউসুফঃ ১১১, সূরা আন-নাহলঃ ৬৪, ৮৯, ১০২, সূরা আয-যুমারঃ ২৩, সূরা ফুসসিলাতঃ ৪৪, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০।
চার. কুরআনুল করীমের চতুর্থ গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো রহমত। যার এক অর্থ হচ্ছে নে’আমত। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে সূরা আল-ইসরার ৮২, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭, আল-আরাফঃ ১৫২, ২০৩, সূরা ইউসুফঃ ১১১, সূরা আন-নাহলঃ ৬৪, ৮৯, সূরা আল-ইসরাঃ ৮২, সূরা আন-নামলঃ ৭৭, সুরা লুকমানঃ ৩, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০, সূরা আল-কাসাসঃ ৮৬ নং আয়াতেও কুরআনকে রহমত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই কিন্তু মুমিনদের জন্য কারণ তারাই এর দ্বার উপকৃত হয়, কাফেররা এর দ্বারা উপকৃত হয় না, কারণ তারা এ ব্যাপারে অন্ধ। [মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৭) হে মানব জাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের তরফ হতে উপদেশ[1] ও অন্তরের রোগের নিরাময়[2] এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথপ্রদর্শক ও করুণা সমাগত হয়েছে। [3]
[1] অর্থাৎ যে ব্যক্তি মন দিয়ে কুরআন পাঠ করবে এবং তার অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, কুরআন তার জন্য উপদেশ। ওয়াযের প্রকৃত অর্থ হল পরিণাম ও ফলাফল স্মরণ করিয়ে দেওয়া; চাহে তা উৎসাহ দানের মাধ্যমে হোক বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। আর একজন উপদেষ্টা (বক্তা) একজন ডাক্তারের মত, তিনি রোগীকে ঐ সকল বস্তু থেকে বিরত থাকতে বলেন, যা রোগীর শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনুরূপ কুরআনও উৎসাহদান ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে ওয়ায-নসীহত করে এবং ঐ সকল পরিণাম ও ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক করে, যা আল্লাহর অবাধ্যাচরণের কারণে ভোগ করতে হবে। আর ঐ সকল কর্ম থেকে নিষেধ করে যে কর্ম দ্বারা মানুষের আখেরাত বরবাদ হয়।
[2] অর্থাৎ, অন্তরে তাওহীদ ও রিসালাত এবং সঠিক ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে যে সন্দেহ ও সংশয়ের রোগ সৃষ্টি হয়, তা দূরীভূত করে এবং কুফরী ও মুনাফিকীর পঙ্কিলতা ও আবর্জনা থেকে হৃদয়কে পরিষ্কার করে দেয়।
[3] এই কুরআন মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত (সুপথ ও করুণা) লাভের অসীলা। প্রকৃতপক্ষে কুরআন পৃথিবীর সকলের জন্য হিদায়াত ও রহমত লাভের কারণ। কিন্তু যেহেতু মু’মিনগণই তার দ্বারা উপকৃত হয়, ফলে এখানে শুধু তাদের জন্যই হিদায়াত ও রহমত বলা হয়েছে। এই বিষয়টি কুরআন কারীমের সূরা বানী ইস্রাঈলের ৮২নং আয়াত ও সূরা সাজদাহর ৪৪নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে। এ ছাড়া (هدًى للمُتَّقِين) এর টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান