লগইন করুন
৬ সূরাঃ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام - আয়াত নং - ১২ - মাক্কী
বল, ‘আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার’? বল, ‘আল্লাহর জন্য’; তিনি তাঁর নিজের উপর রহমত লিখে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না। আল-বায়ান
বল, আসমানে আর যমীনে যা আছে তা কার? বল, আল্লাহরই। দয়া করা তিনি তাঁর জন্য কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন, তিনি কিয়ামাত দিবসে তোমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না। তাইসিরুল
তুমি জিজ্ঞেস করঃ আকাশমন্ডলী ও ধরাধামে অবস্থিত যা কিছু রয়েছে তার মালিক কে? তুমি বলঃ তা সবই আল্লাহর মালিকানায়, অনুগ্রহ করা তিনি তাঁর নীতি বলে গ্রহণ করেছেন, তিনি তোমাদের সকলকে কিয়ামাত দিবসে অবশ্যই সমবেত করবেন যে দিন সম্পর্কে কোন সন্দেহই নেই; যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ও ধবংসের মুখে ফেলেছে তারাই বিশ্বাস করেনা। মুজিবুর রহমান
Say, "To whom belongs whatever is in the heavens and earth?" Say, "To Allah." He has decreed upon Himself mercy. He will surely assemble you for the Day of Resurrection, about which there is no doubt. Those who will lose themselves [that Day] do not believe. Sahih International
১২. বলুন, আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার? বলুন, আল্লাহরই,(১) তিনি তার নিজের উপর দয়া করা লিখে নিয়েছেন।(২) কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই একত্র করবেন(৩), এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না।(৪)
(১) এ আয়াতে কাফেরদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছেঃ নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ে যা আছে, তার মালিক কে? অতঃপর আল্লাহ নিজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাচনিক উত্তর দিয়েছেনঃ সবার মালিক আল্লাহ। কাফেরদের উত্তরের অপেক্ষা করার পরিবর্তে নিজেই উত্তর দেয়ার কারণ এই যে, এ উত্তর কাফেরদের কাছেও স্বীকৃত। তারা যদিও শির্ক ও পৌত্তলিকতায় লিপ্ত ছিল, তথাপি ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল ও সবকিছুর মালিক আল্লাহ তা'আলাকেই মানতো অর্থাৎ তারা তাওহীদুর রবুবিয়াতের এ অংশে বিশ্বাসী ছিল। আর তারা যেহেতু তাওহীদের এ অংশে বিশ্বাস করছে, তাদের উচিত হবে তাওহীদের বাকী অংশ তাওহীদুল উলুহিয়ার স্বীকৃতি দেয়া এবং একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা। [সা’দী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
(২) সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেন, তখন একটি ওয়াদাপত্র লিপিবদ্ধ করেন। এটি আল্লাহ্ তা'আলার কাছেই রয়েছে। এতে লিখিত আছেঃ আমার অনুগ্রহ আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে। [বুখারী: ৭৪০৪; মুসলিম: ২৭৫১]
(৩) এ বাক্যে إلى শব্দটি فى অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাতে মর্ম দাঁড়িয়েছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা পূর্বের ও পরের সব মানুষকে কেয়ামতের দিন সমবেত করবেন কিংবা এখানে কবরে একত্রিত করা বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে কবরে একত্রিত করতে থাকবেন এবং কেয়ামতের দিন সবাইকে জীবিত করবেন আর তোমাদেরকে তোমাদের কর্মকাণ্ডের শাস্তি প্রদান করবেন। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(৪) এতে ইঙ্গিত আছে যে, আয়াতের শুরুতে বর্ণিত আল্লাহ্ তা'আলার ব্যাপক অনুগ্রহ থেকে যদি কাফের ও মুশরিকরা বঞ্চিত হয়, তবে স্বীয় কৃতকর্মের কারণেই হবে। কারণ, তারা অনুগ্রহ লাভের উপায় অর্থাৎ ঈমান অবলম্বন করেনি। আল্লাহ্ তাআলা আখেরাত ও কিয়ামতের বাস্তবতার উপর অনেক দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, যাতে তা বাস্তব সত্যরূপে মানুষের কাছে প্রতিভাত হয়। কিন্তু তারা অস্বীকার ছাড়া কিছুই করেনি। তারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছে, ফলে তারা আল্লাহ্র অবাধ্যতায় নিপতিত হয়েছে এবং কুফরী করার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে। এতে করে তারা তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই বরবাদ করেছে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) বল, ‘আকাশ ও ভূমন্ডলে যা আছে তা কার?’ বল, ‘তা আল্লাহরই।’ দয়া করা তিনি নিজ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন।[1] কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই সমবেত করবেন, এতে কোনই সন্দেহ নেই। যারা নিজেই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা বিশ্বাস করবে না।
[1] যেমন হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যখন মহান আল্লাহ সৃষ্টদের সৃষ্টি করলেন, তখন আরশে লিখে দিলেন, إِنَّ رَحْمَتِيْ تَغْلِبُ غَضَبِيْ ‘‘আমার দয়া আমার ক্রোধের উপরে বিজয়ী।’’ (বুখারীঃ তাওহীদ অধ্যায়, মুসলিমঃ তাওবা অধ্যায়) তবে এ দয়া ও রহমত কিয়ামতের দিন কেবল ঈমানদারদের জন্য হবে। আর কাফেরদের প্রতি প্রতিপালক চরম ক্রোধান্বিত হবেন। অর্থাৎ, দুনিয়াতে তো তাঁর রহমত অবশ্যই ব্যাপক; যার দ্বারা মু’মিন ও কাফের, সৎ ও অসৎ এবং বাধ্যজন ও অবাধ্যজন সকলেই উপকৃত হচ্ছে। মহান আল্লাহ কোন ব্যক্তিরই রুযী অবাধ্যতার কারণে বন্ধ করেন না। তবে তাঁর রহমতের এই ব্যাপকতা দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। প্রতিফল ও প্রতিদানের স্থান আখেরাতে আল্লাহর সুবিচারক হওয়ার গুণের পূর্ণ বিকাশ ঘটবে, যার ফলে সেখানে ঈমানদাররা তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করবে এবং কাফের ও ফাসেকরা জাহান্নামের চিরন্তন শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এই জন্য কুরআনে বলা হয়েছে, {وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآياتِنَا يُؤْمِنُونَ} ‘‘আমার দয়া প্রতিটি জিনিসের উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।’’ (সূরা আ’রাফ ১৫৬)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান