সূরাঃ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام - আয়াতঃ ১
৬:১ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ جَعَلَ الظُّلُمٰتِ وَ النُّوۡرَ ۬ؕ ثُمَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِرَبِّهِمۡ یَعۡدِلُوۡنَ ﴿۱﴾
الحمد لله الذی خلق السموت و الارض و جعل الظلمت و النور ۬ ثم الذین کفروا بربهم یعدلون ۱

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তারপর কাফিররা তাদের রবের সমতুল্য স্থির করে। আল-বায়ান

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো, এতদসত্ত্বেও যারা কুফরী করেছে তারা (অন্যকে) তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে। তাইসিরুল

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন আলো ও অন্ধকার; এ সত্ত্বেও যারা কাফির হয়েছে তারা অপর কিছুকে তাদের রবের সমকক্ষ নিরূপণ করেছে। মুজিবুর রহমান

[All] praise is [due] to Allah, who created the heavens and the earth and made the darkness and the light. Then those who disbelieve equate [others] with their Lord. Sahih International

১. সকল প্রশংসা আল্লাহরই(১) যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো।(২) এরপরও কাফেরগণ তাদের রব-এর সমকক্ষ দাঁড় করায়।(৩)

(১) এ সূরাটিকে (الْحَمْدُ لِلَّهِ) বাক্য দ্বারা আরম্ভ করা হয়েছে। এতে খবর দেয়া হয়েছে যে, সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এ খবরের উদ্দেশ্য মানুষকে প্রশংসা শিক্ষা দেয়া। যেন বলা হচ্ছে, হে মানুষ! তোমরা তার জন্যই যাবতীয় হামদ ও শোকর নির্দিষ্ট কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আরও সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন। তাঁর সাথে কাউকেও সামান্যতম অংশীদারও করবে না। এ বিশেষ পদ্ধতি শিক্ষাদানের মধ্যে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, পরিপূর্ণ হামদ বা প্রশংসা একমাত্র তাঁরই, যার কোন শরীক নেই। তাকে ব্যতীত আর যে সমস্ত উপাস্যের ইবাদাত করা হয়, তারা এ হামদ প্রাপ্য নয়। [তাবারী] সুতরাং কেউ প্রশংসা করুক বা না করুক, তিনি স্বীয় ওজুদ বা সত্তার পরাকাষ্ঠার দিক দিয়ে নিজেই প্রশংসনীয়। এ বাক্যের পর আসমান ও যমীন এবং অন্ধকার ও আলো সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করে তার প্রশংসনীয় হওয়ার প্রমাণও ব্যক্ত করা হয়েছে যে, যে সত্তা এহেন মহান শক্তি-সামর্থ্য ও বিজ্ঞবান, তিনিই হামদ বা প্রশংসার যোগ্য হতে পারেন। কাতাদা বলেন, এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানকে যমীনের পূর্বে, অন্ধকারকে আলোর পূর্বে এবং জান্নাতকে জাহান্নামের পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। [তাবারী]

(২) এ আয়াতে سماوات শব্দটিকে বহুবচনে এবং أرض শব্দটিকে একবচনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও অন্য এক আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসমানের ন্যায় যমীনও সাতটি। [যেমন, সূরা আত-তালাক ১২] এমনিভাবে ظلمات শব্দটিকে বহুবচনে এবং نور শব্দটিকে একবচনে উল্লেখ করার মাঝে ইঙ্গিত রয়েছে যে, نور বলে বিশুদ্ধ সরল পথ ব্যক্ত করা হয়েছে এবং তা মাত্র একটিই। আর ظلمات বলে ভ্রান্ত পথ ব্যক্ত করা হয়েছে, যা অসংখ্য। তাছাড়া نور বা আলো ظلمات বা অন্ধকার থেকে উত্তম। [বাহরে মুহীত, ইবন কাসীর]

(৩) আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য একত্ববাদের স্বরূপ ও সুস্পষ্ট প্রমাণ বর্ণনা করে জগতের ঐসব জাতিকে হুশিয়ার করা যারা মূলতঃ একত্ববাদে বিশ্বাসী নয় কিংবা বিশ্বাসী হওয়া সত্বেও একত্ববাদের তাৎপর্যকে পরিত্যাগ করে বসেছে। অগ্নি উপাসকদের মতে জগতের স্রষ্টা দু’জন - ইয়াযদান ও আহরামান। তারা ইয়াযদানকে মঙ্গলের স্রষ্টা এবং আহরামানকে অমঙ্গলের স্রষ্টা বলে বিশ্বাস করে। এ দুটিকেই তারা অন্ধকার ও আলো বলে ব্যক্ত করে। এমনিভাবে নাসারারা একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়ার সাথে সাথে ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার মাতা মারইয়াম আলাইহাস সালাম-কে আল্লাহ তা'আলার অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। এরপর একত্ববাদের বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা ‘একে তিন’ এবং ‘তিনে এক’ এর অযৌক্তিক মতবাদের আশ্রয় নিয়েছে। আরবের মুশরিকরা প্রতিটি পাহাড়ের প্রতিটি বড় পাথরকেও তাদের উপাস্য বানিয়েছে। [আল-মানার]

মোটকথা, যে মানবকে আল্লাহ তা'আলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা করেছিলেন, তারা যখন পথভ্রষ্ট হল, তখন চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, আকাশ, পানি, বৃক্ষলতা এমনকি পোকা-মাকড়কেও সিজদার যোগ্য উপাস্য, রুযীদাতা ও বিপদ বিদূরণকারী সাব্যস্ত করে নিল। কুরআনুল কারীমের আলোচ্য আয়াত আল্লাহ তা'আলাকে যমীন ও আসমানের স্রষ্টা এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভাবক বলে উপরোক্ত সব ভ্রান্ত বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেছে। কেননা, অন্ধকার ও আলো, আসমান ও যমীন এবং এতে উৎপন্ন যাবতীয় বস্তু আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্ট। অতএব, এগুলোকে কেমন করে আল্লাহ্ তা'আলার অংশীদার করা যায়? যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি যারা সৃষ্টি করতে পারে না তাদের মত? সুতরাং কিভাবে ইবাদাতে ও সম্মানে তাঁর সমকক্ষ কাউকে দাড় করানো যায়? [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো।[1] এতদসত্ত্বেও অবিশ্বাসীগণ তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ স্থির করে। [2]

[1] ظُلُمَات বলতে রাতের অন্ধকার এবং نُور বলতে দিনের আলো বুঝানো হয়েছে। অথবা কুফরীর অন্ধকার এবং ঈমানের জ্যোতি বুঝানো হয়েছে। ‘নূর’ (জ্যোতি) একবচন এবং ‘যুলুমাত’ (অন্ধকার) বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, অন্ধকারের কারণ অনেক এবং তার প্রকারাদিও বিভিন্ন। পক্ষান্তরে ‘নূর’ (জ্যোতি)র উল্লেখ জিন্‌স (জাত) স্বরূপ করা হয়েছে, যা তার সমস্ত প্রকারকে নিজের মধ্যে শামিল করে নেয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) আবার এটাও হতে পারে যে, হিদায়াত এবং ঈমানের রাস্তা যেহেতু একটাই, চার অথবা পাঁচ কিংবা ভিন্ন ভিন্ন নয়, তাই ‘নূর’কে একবচন শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে।

[2] অর্থাৎ, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান