তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব। আল-বায়ান
তারাই হল প্রকৃত কাফির আর কাফিরদের জন্য আমি অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। তাইসিরুল
ওরাই প্রকৃত অবিশ্বাসী, এবং আমি অবিশ্বাসীদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। মুজিবুর রহমান
Those are the disbelievers, truly. And We have prepared for the disbelievers a humiliating punishment. Sahih International
১৫১. তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমরা প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(১)
(১) পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত স্পষ্ট ঘোষণা ঐসব বিভ্রান্ত লোকদের হীনমন্যতা ও গোজামিলকেও ফাঁস করে দিয়েছে, যারা অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজেদের দ্বীন ও দ্বীনী বিশ্বাসকে বিজাতির পদমূলে উৎসর্গ করতে ব্যগ্র। যারা কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট ফয়সালাকে উপেক্ষা করে অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরকেও মুক্তি লাভ করবে বলে বুঝাতে চায়। অথচ তারা অধিকাংশ রাসূলকে অথবা অন্তত কোন কোন নবীকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের কাফের ও জাহান্নামী হওয়ার কথা অত্র আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফ, ন্যায়নীতি, সমবেদনা,সহানুভূতি, উদারতা ও ইহসান বা হিতকামনার দিক দিয়ে ইসলাম নজীরবিহীন। ইসলাম একদিকে মুসলিমদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও পরমসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যেমন উদার ও অবারিত দ্বার, অপরদিকে স্বীয় সীমারেখা সংরক্ষণের ব্যাপারে অতি সতর্ক, সজাগ ও কঠোর। ইসলাম অমুসলিমদের প্রতি উদারতার সাথে সাথে কুফর ও কু-প্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম ও অমুসলিমরা দুটি পৃথক জাতি এবং মুসলিমদের জাতীয় প্রতীক ও স্বাতন্ত্র্য সযত্নে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। শুধু ইবাদাতের ক্ষেত্রেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখলে চলবে না, বরং সামাজিকতার ক্ষেত্রেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। এ কথা কুরআন ও হাদীসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআনুল কারীম ও ইসলামের অভিমত যদি এই হতো যে, যে কোন ধর্মমতের সাহায্যে মুক্তি লাভ করা সম্ভব, তাহলে ইসলাম প্রচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খেলাফায়ে রাশেদীনের জিহাদ পরিচালনা করা এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত ও কুরআন নাযিল করারও কোন প্রয়োজন থাকতো না। পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, “নিশ্চয় যারা সত্যিকারভাবে ঈমান এনেছে (মুসলিম হয়েছে) এবং যারা ইয়াহুদী হয়েছে এবং নাসারা (খৃষ্টান) ও সাবেয়ীনদের মধ্যে যারা আল্লাহ তা'আলা প্রতি ও কেয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান এনেছে আর সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তার সমীপে তাদের জন্য পূর্ণ প্রতিদান সংরক্ষিত রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৬২]
এ আয়াত থেকেও ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। কেননা, কুরআনের পরিভাষায় আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমান শুধু তখনই গ্রহণযোগ্য ও ধর্তব্য হয় যখন তার সাথে নবী-রাসূল, ফিরিশতা ও আসমানী কিতাবের প্রতিও ঈমান আনা হয়। তাই তাদের প্রত্যেককে সাধারণ মুসলিমদের মত পুরোপুরি ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ্ তা'আলার প্রতি ঈমানের পাশাপাশি নবী-রাসূলগণের প্রতিও ঈমান আনা অপরিহার্য। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে (চিনে রাখুন যে) তারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা'আলাই তাদের মোকাবেলায় যথেষ্ট এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।” [সূরা আল বাকারাহঃ ১৩৭]
সূরা আন-নিসার আলোচ্য আয়াতে আরো স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার প্রেরিত কোন একজন নবীকেও যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে সে প্রকাশ্য কাফের, তার জন্য জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব অবধারিত রাসূলের প্রতি ঈমান ছাড়া আল্লাহ তা'আলার প্রতি সত্যিকার ঈমান সাব্যস্ত হয় না। শেষ আয়াতে পুনরায় দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আখেরাতের মুক্তি ও কামিয়াবী শুধু ঐসব লোকের জন্যই সংরক্ষিত যারা আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমানের সাথে সাথে তার নবী ও রাসূলগণের প্রতি যথার্থ ঈমান রাখে। বস্তুত: কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা ও তাফসীর করে। কুরআনী তাফসীরের পরিপন্থী কোন তাফসীর বর্ণনা কারো জন্য জায়েয নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫১) তারাই হল প্রকৃতপক্ষে অবিশ্বাসী।[1] আর আমি অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।
[1] আহলে কিতাবদের সম্পর্কে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা কিছু নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আর কিছু নবীগণকে অমান্য করে। যেমন, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি এবং খ্রিষ্টানরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, নবীগণের মধ্যে পার্থক্যকারীগণ (ঈমানদার নয়); বরং পুরোপুরি কাফের।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান