নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদেরকে দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। আল-বায়ান
নিশ্চয় মুনাফিকগণ আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে শাস্তি দেন এবং তারা যখন সলাতের জন্য দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যভরে দাঁড়ায়, লোক দেখানোর জন্য, তারা আল্লাহকে সামান্যই স্মরণ করে। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে এবং তিনিও তাদেরকে ঐ প্রতারণা প্রত্যার্পণ করছেন; এবং যখন তারা সালাতের জন্য দাঁড়ায় তখন লোকদেরকে দেখানোর জন্য আলস্যভরে দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। মুজিবুর রহমান
Indeed, the hypocrites [think to] deceive Allah, but He is deceiving them. And when they stand for prayer, they stand lazily, showing [themselves to] the people and not remembering Allah except a little, Sahih International
১৪২. নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে বস্তুতঃ তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন(১)। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।(২)
(১) কাফেরদের ধোঁকার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলা যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। এতে আল্লাহর জন্য খারাপ গুণ বিবেচিত হবে না। কারণ, এটি তাদের কর্মের বিপরীতে আল্লাহর কর্ম। অনুরূপ আলোচনা সূরা আল-বাকারার ৯ ও ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যাতেও বর্ণিত হয়েছে। তবে তাদেরকে কিভাবে আল্লাহ তা'আলা ধোঁকায় ফেলবেন, তার বর্ণনায় সুদ্দী ও হাসান বসরী বলেন, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কিছু নূর বা আলো দেয়া হবে, ফলে তারা মুমিনদের সাথে চলতে থাকবে। যেমনিভাবে তারা দুনিয়াতে মুমিনদের সাথে ছিল। তারপর আল্লাহ তা'আলা তাদের সে নূর বা আলো ছিনিয়ে নিবেন। ফলে তাদের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। তখন তারা অন্ধকারে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ঠিক তখনি তাদের ও মুমিনদের মধ্যে প্রাচীর পড়ে যাবে। পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] মূলত: এটি সূরা আল-হাদীদের ১৩ নং আয়াতের তাফসীরও বটে।
(২) আয়াতে মুনাফিকদের তিনটি খারাপ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। এক. তারা তাদের সালাতে অলসতা করে। দুই. তারা সালাতে প্রদর্শনেচ্ছা সহকারে দাঁড়ায়। তিন. তারা খুব কমই আল্লাহর যিকর করে। পবিত্র কুরআনের অন্যান্য আয়াতেও তাদের এ বদ স্বভাবসমূহের কথা উল্লেখিত হয়েছে। যেমন, সূরা আত-তাওবাহঃ ৫৪; সূরা আল-মাউন: ৪-৬। তাছাড়া হাদীসেও মুনাফিকের এ সমস্ত চরিত্রের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঐটি হচ্ছে মুনাফিকের সালাত। সে সূর্যের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তারপর যখন সূর্য শয়তানের দু শিংয়ের মাঝখানে পৌছে (অর্থাৎ ডুবার কাছাকাছি পৌছে) তখন সে উঠে চারবার ঠোকর লাগায়। যাতে আল্লাহর স্মরণ খুব কমই করে থাকে। [মুসলিম: ৬২২]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪২) নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন[1] এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে[2] নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায়[3] এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে। [4]
[1] এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূরা বাক্বারার শুরুতে (৮-১৫ আয়াতে) করা হয়েছে।
[2] নামায ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন এবং অতি মহান ফরয কাজ। এতেও তারা অবহেলা ও অলসতা প্রদর্শন করত। কারণ তাদের অন্তর ঈমান, আল্লাহভীতি এবং ঐকান্তিকতা থেকে ছিল বঞ্চিত ও শূন্য। আর এ কারণেই বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামায তাদের উপর ভারী ছিল। যেমন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, (إِنَّ أَثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ ) অর্থাৎ, মুনাফিকদের উপর এশা এবং ফজরের নামায সব থেকে বেশী ভারী।’’ (বুখারী, মুসলিম ৬৫১নং)
[3] এই নামাযও তারা কেবল লোক প্রদর্শনের জন্য পড়ত। যাতে তারা মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিতে পারে।
[4] আল্লাহর স্মরণ নামে মাত্র করে অথবা নামায সংক্ষিপ্তাকারে পড়ে। অর্থাৎ, لاَ يُصَلُّوْنَ إِلاَّ صَلاَةً قَلِيْلَةً (নামায খুবই সংক্ষিপ্তাকারে পড়ে।) আর নামায আল্লাহর ভয় ও বিনয়-নম্রতা থেকে খালি হলে তা ধীর-স্থিরতার সাথে আদায় করা বড়ই কঠিন হয়। যেমন, [وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ] (বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে এ কঠিন।) (সূরা বাক্বারাহঃ ৪৫ আয়াত) থেকেও সে কথা জানা যায়। হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘‘এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায। সে বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করতে থাকে। অবশেষে যখন সূর্য শয়তানের দু’টি শিঙের মধ্যবর্তী স্থানে (অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে) পৌঁছে, তখন (তড়িঘড়ি) উঠে চারটি ঠোকর মেরে নেয়।’’ (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ অধ্যায়, মুঅত্তা, কুরআন অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান