নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী। আল-বায়ান
বাস্তবিকই রাতে বিছানা ছেড়ে উঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং (কুরআন) স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদাতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়ঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল। মুজিবুর রহমান
Indeed, the hours of the night are more effective for concurrence [of heart and tongue] and more suitable for words. Sahih International
৬. নিশ্চয় রাতের বেলার উঠা(১) প্রবৃত্তি দলনে প্রবলতর(২) এবং বাকস্ফুরাণে অধিক উপযোগী।(৩)
(১) نَاشِئَة শব্দের ব্যাখ্যায় কয়েকটি মত আছে। একটি মত হলো, এর মানে রাতের বেলা শয্যা ত্যাগকারী ব্যক্তি। দ্বিতীয় মতটি হলো এর অর্থ রাত্রিকালীন সময়। [ইবন কাসীর]
(২) আয়াতে وطأً শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এতো ব্যাপক যে, একটি মাত্ৰ বাক্যে তা বুঝানো সম্ভব নয়। এর একটি অর্থ হলো, রাতের বেলা ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য শয্যা ত্যাগ করে ওঠা এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা যেহেতু মানুষের স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ, মানুষের মন ও প্রবৃত্তি এ সময় আরাম কামনা করে, তাই এটি এমন একটি কাজ ও চেষ্টা-সাধনা যা প্রবৃত্তির জন্য অত্যন্ত কঠিন। দ্বিতীয় অর্থ হলো, রাত্ৰিবেলার সালাত দিনের সালাত অপেক্ষা অধিক স্থায়ী ও ফলপ্রসু। কেননা, দিনের বেলা মানুষের চিন্তা-চেতনা বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু রাত্ৰিবেলা তা থেকে মুক্ত হয়। আরেকটি অর্থ হলো, ইবাদতকারী ব্যক্তিকে সক্রিয় রাখার পন্থা, কেননা রাত্ৰিবেলা বিভিন্ন চিন্তা-চেতনা ও কাজ থেকে মুক্ত হওয়ায় সে সময়ে ইবাদতে নিবিষ্ট হওয়া যায়। [কুরতুবী]
(৩) أقوم শব্দের অর্থ অধিক সঠিক। আর قِيلًا শব্দের অর্থ কথা। তাই এর আভিধানিক অর্থ হলো, “কথাকে আরো বেশী যথার্থ ও সঠিক বানায়।” অর্থাৎ রাত্ৰিবেলায় কুরআন তেলাওয়াত অধিক শুদ্ধতা ও স্থিরতা সহকারে হতে পারে। এর মূল বক্তব্য হলো, সে সময় মানুষ আরো বেশী প্রশান্তি, তৃপ্তি ও মনোযোগ সহকারে বুঝে কুরআন মাজীদ পড়তে পারে। কারণ, তখন বিভিন্ন প্রকার ধ্বনি ও হট্টগোল দ্বারা অন্তর ও মস্তিস্ক ব্যাকুল হয় না। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর ব্যাখ্যা করেছেন “গভীর চিন্তা-ভাবনা ও মনোনিবেশসহ কুরআন পাঠের জন্য এটা একটা অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত সময়।” [আবু দাউদ: ১৩০৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নিশ্চয়ই রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দলনে অধিক সহায়ক [1] এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অধিক অনুকূল। [2]
[1] এর দ্বিতীয় অর্থ হল, রাতের নির্জন পরিবেশে নামাযী তাহাজ্জুদের নামাযে যে কুরআন পাঠ করে তার অর্থসমূহ অনুধাবন করার ব্যাপারে (মুখ বা) কানের সাথে অন্তরের বড়ই মিল থাকে।
[2] এর দ্বিতীয় অর্থ হল, দিনের তুলনায় রাতে কুরআন পাঠ বেশী পরিষ্কার হয় এবং মনোনিবেশ করার ব্যাপারে বড়ই প্রভাবশালী হয়। কারণ, তখন অন্য সকল শব্দ নিশ্চুপ-নীরব হয়। পরিবেশ থাকে নিঝুম-নিস্তব্ধ। এই সময় নামাযী যা কিছু পড়ে, তা শব্দের গোলযোগ ও পৃথিবীর হট্টগোল থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং তার মাঝে নামাযী তৃপ্তি লাভ করে ও তার প্রতিক্রিয়া অনুভব করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান