৫৩ সূরাঃ আন-নাজম | An-Najm | سورة النجم - আয়াতঃ ৩৯
৫৩:৩৯ وَ اَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی ﴿ۙ۳۹﴾
و ان لیس للانسان الا ما سعی ﴿۳۹﴾

আর এই যে, মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়। আল-বায়ান

আর এই যে, মানুষ যা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে তাছাড়া কিছুই পায় না, তাইসিরুল

আর এই যে, মানুষ তা’ই পায় যা সে করে, মুজিবুর রহমান

And that there is not for man except that [good] for which he strives Sahih International

৩৯. আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে(১),

(১) প্রত্যেক ব্যক্তি যা পরিণতি ভোগ করবে তা তার কৃতকর্মেরই ফল। চেষ্টা সাধনা ছাড়া কেউ-ই কিছু লাভ করতে পারে না। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষ যখন মরে যায় তখন তিনটি কর্ম ব্যতীত আর কোন কাজ তার জন্য বাকী থাকে না। সাদকায়ে জারিয়া বা উপকৃত হওয়ার মত জ্ঞান অথবা এমন সৎ সন্তান যে তার জন্য দোআ করে”। [মুসলিম: ১৬৩১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। [1]

[1] অর্থাৎ, যেরূপ কেউ কারো পাপের জন্য দায়ী হবে না, অনুরূপ পরকালে প্রতিদানও সে সেই জিনিসের পাবে, যাতে থাকবে তার নিজস্ব মেহনত ও পরিশ্রম। প্রকাশ থাকে যে, এই প্রতিদানের সম্পর্ক পরকালের সাথে, দুনিয়ার সাথে নয়। যেমন, কিছু সমাজবাদী শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ এই অর্থ বুঝিয়ে বলে থাকেন যে, কেউ অপর ব্যক্তিকে জমি চাষ করিয়ে উপার্জন করতে পারবে না। অনুরূপ অপর ব্যক্তিকে ঘর ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। (অথবা সেবাপার্জিত সম্পদ ছাড়া অন্য সম্পদে তার অধিকার নেই। অথচ উত্তরাধিকারসূত্রে তারাও সম্পদের মালিক হয়ে ও করে থাকেন।) পক্ষান্তরে এই আয়াতকে দলীল বানিয়ে যে উলামাগণ বলেছেন যে, কুরআন-খানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে না, তাঁদের কথা ঠিক। কারণ, এ আমল না মৃত ব্যক্তি করে, আর না এতে তার কোন পরিশ্রম থাকে। আর এই জন্য নবী করীম (সাঃ) তাঁর উম্মতকে মৃতদের জন্য কুরআন-খানী করার প্রতি না কোন উৎসাহ দান করেছেন, আর না সুস্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট কোন উক্তির মাধ্যমে এর প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন।

অনুরূপ সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-দের থেকেও এ কাজ বিধেয় হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এ কাজ কোন ভাল কাজ হলে, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণ তা অবশ্যই অবলম্বন করতেন। পক্ষান্তরে যাবতীয় ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত কাজ আছে, তার জন্য সুস্পষ্ট দলীল থাকা অত্যাবশ্যক। এ সবে (ব্যক্তিগত) মত ও অনুমান চলে না। হ্যাঁ দু’আ ও দান-খয়রাতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে। এ ব্যাপারে সকল উলামা একমত। কেননা, এটা বিধানদাতার পক্ষ থেকে সুসাব্যস্ত। আর যে হাদীসে মৃত্যুর পর তিনটি জিনিসের নেকী অব্যাহত থাকার কথা এসেছে, তো সেটাও প্রকৃতপক্ষে মানুষের নিজেরই আমল যা কোন না কোনভাবে তার মৃত্যুর পরেও জারী বা চালু থাকে। সন্তানদেরকে নবী করীম (সাঃ) মানুষের নিজস্ব উপার্জন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। (সুনানে নাসাঈ, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়) ‘সাদকায়ে জারিয়াহ’ (প্রবহমান দান) ওয়াকফের ন্যায় মানুষের নিজস্ব কীর্তিসমূহ। আল্লাহ বলেন,(وَنَكتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُم) ‘‘আমিই তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি।’’ অনুরূপ মানুষের মাঝে যে জ্ঞানের সে প্রচার-প্রসার করেছে এবং মানুষ যার অনুসরণ করেছে, সেটাও তার প্রচেষ্টা ও তারই আমল। আর নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করে, তার জন্য রয়েছে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব। এতে তাদের কারো সওয়াব এতটুকু পরিমাণও হ্রাস করা হয় না।’’ (মুসলিম, আবূ দাঊদ) কাজেই এই হাদীস আয়াতের পরিপন্থী বা বিরোধী নয়। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান