তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? আল-বায়ান
ক্ষমতা পেলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। তাইসিরুল
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। মুজিবুর রহমান
So would you perhaps, if you turned away, cause corruption on earth and sever your [ties of] relationship? Sahih International
২২. সুতরাং অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভবত তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন(১) ছিন্ন করবে।
(১) أرْحِامٌ শব্দটি رِحْمٌ এর বহুবচন। এর অর্থ জননীর গর্ভাশয়। সাধারণ সম্পর্ক ও আত্মীয়তার ভিত্তি সেখান থেকেই সুচিত হয়, তাই বাকপদ্ধতিতে رِحْمٌ শব্দটি আত্মীয়তা ও সম্পর্কের অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম আত্মীয়তার হক আদায় করার জন্যে খুবই তাকীদ করেছে। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি আত্মীয়তা বজায় রাখবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে নৈকট্য দান করবেন এবং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে ছিন্ন করবেন। [বুখারী: ৫৫২৯] আত্মীয় ও সম্পর্কশীলদের সাথে কথায়, কর্মে ও অর্থ ব্যয়ে সহৃদয় ব্যবহার করার জোর নির্দেশ আছে। অন্য এক হাদীসে আছে, আল্লাহ তা'আলা যেসব গোনাহের শাস্তি দুনিয়াতেও দেন এবং আখেরাতেও দেন, সেগুলোর মধ্যে নিপীড়ন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার সমান কোন গোনাহ নেই। [ইবনে মাজাহঃ ৪২১১]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আয়ুবৃদ্ধি ও রুযী রোযগারে বরকত কামনা করে সে যেন আত্মীয়তার সাথে সহৃদয় ব্যবহার করে। [মুসনাদে আহমাদ ৫/২৭৯] সহীহ হাদীসসমূহে আরও বলা হয়েছে যে, আত্মীয়তার অধিকারের ক্ষেত্রে অপরপক্ষ থেকে সদ্ব্যবহার আশা করা উচিত নয়। যদি অপরপক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন ও অসৌজন্যমূলক ব্যবহারও করে, তবুও তার সাথে তোমার সদ্ব্যবহার করা উচিত। এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ সে ব্যক্তি আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহারকারী নয় যে কোন প্রতিদানের সমান সদ্ব্যবহার করে; বরং সেই সদ্ব্যবহারকারী, যে অপরপক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সদ্ব্যবহার অব্যাহত রাখে। [বুখারী: ৫৫৩২]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে[1] এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।
[1] একে অপরকে হত্যা করে। অর্থাৎ এখতিয়ার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) تَوَلَّيْتُمْ এর অর্থ করেছেন, ‘‘তোমরা জিহাদ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও’’। অর্থাৎ, তোমরা পুনরায় সেই মূর্খতার যুগে ফিরে যাবে এবং পরস্পর খুনোখুনি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আয়াতে সাধারণভাবে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি এবং বিশেষভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। আর পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হল, মৌখিকভাবে, কর্মের মাধ্যমে এবং মাল-ধন ব্যয় করার মাধ্যমে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার কর। বহু হাদীসেও এ বিষয়ে বড়ই তাকীদ ও ফযীলতের কথা এসেছে। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান