যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বারণ করেছে, তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আল-বায়ান
যারা কুফুরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন। তাইসিরুল
যারা কুফরী করে এবং অপরকে আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত করে তিনি তাদের কাজ ব্যর্থ করে দেন। মুজিবুর রহমান
Those who disbelieve and avert [people] from the way of Allah - He will waste their deeds. Sahih International
১. যারা কুফরী করেছে এবং অন্যকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত করেছে তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যৰ্থ করে দিয়েছেন(১)।
(১) মূল আয়াতে (أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ) উল্লেখিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের কাজ-কর্মকে বিপথগামী করে দিয়েছেন, পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন। [দেখুন-আয়সারুত-তাফসীর, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অপরকে আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত করেছে[1] তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন।[2]
[1] কেউ কেউ এ থেকে কুরাইশ কাফেরদেরকে বুঝিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বুঝিয়েছেন আহলে-কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান)-দেরকে। তবে এটি ব্যাপক, তারা সহ সকল অবিশ্বাসীরাই এর অন্তর্ভুক্ত।
[2] এর একটি অর্থ এই যে, তারা নবী করীম (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র করেছিল, মহান আল্লাহ সেগুলোকে ব্যর্থ করে তা তাদের উপরেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় অর্থ হল, তাদের মধ্যে উত্তম যে কিছু নৈতিকতা ছিল; যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, বন্দীদের মুক্ত করা এবং অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি অথবা কা’বাগৃহ ও হাজীদের খিদমত করা, এ সবের কোন প্রতিদান তারা আখেরাতে পাবে না। কারণ, ঈমান ব্যতীত আমলের কোন নেকী নির্ধারিত হয় না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে ‘আর তা তাদের রবের পক্ষ হতে (প্রেরিত) সত্য, তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দেবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন। আল-বায়ান
আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আর মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে- কারণ তা তাদের প্রতিপালকের প্রেরিত সত্য- তিনি তাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেবেন, আর তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাবেন। তাইসিরুল
যারা ঈমান আনে, সৎ কাজ করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আর উহাই (কুরআন) তাদের রাব্ব হতে সত্য; তিনি তাদের মন্দ কাজগুলি ক্ষমা করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন। মুজিবুর রহমান
And those who believe and do righteous deeds and believe in what has been sent down upon Muhammad - and it is the truth from their Lord - He will remove from them their misdeeds and amend their condition. Sahih International
২. আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে, আর তা-ই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রেরিত সত্য, তিনি তাদের মন্দ কাজগুলো বিদূরিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন।(১)
(১) আয়াতে বর্ণিত بال শব্দটি কখনও অবস্থার অর্থে এবং কখনও অন্তরের অর্থে ব্যবহৃত হয়। [ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) এবং যারা বিশ্বাস করেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস করেছে,[1] আর তা তাদের প্রতিপালক হতে সত্য; তিনি তাদের পাপরাশি ক্ষমা করেছেন[2] এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দিয়েছেন। [3]
[1] যদিও বিশ্বাস ও ঈমান আনার মধ্যে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি প্রেরিত ওহী অর্থাৎ, পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনাও শামিল, তবুও এর গুরুত্ব ও মর্যাদাকে আরো বেশী সুস্পষ্ট করার জন্য এটাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
[2] অর্থাৎ ঈমান আনার পূর্বেকার ভুল-ভ্রান্তি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেন। যেমন, নবী করীম (সাঃ)ও বলেছেন, ‘‘ইসলাম পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে দেয়।’’ (সহীহুল জামে’, আলবানী)
[3] بَالَهُمْ এর অর্থ أَمْرَهُمْ، شَأنَهُمْ، حَالَهُمْ এগুলোর অর্থ প্রায় একই ধরণের। অর্থাৎ, তাদেরকে পাপাচার থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে কল্যাণ ও মঙ্গলের পথ প্রদর্শন করেছেন। আর একজন মু’মিনের জন্য অবস্থা ভালো হওয়ার এটাই সর্বোত্তম চিত্র। এর অর্থ এই নয় যে, ধন-সম্পদের মাধ্যমে তাদের অবস্থা ভালো করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, সকল মু’মিন ধন-সম্পদ পায় না। তাছাড়া পার্থিব ধন-সম্পদ লাভ অবস্থা ভাল হওয়ার সুনিশ্চিত প্রমাণও নয়। বরং এতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশী থাকে। এই জন্য নবী করীম (সাঃ) অধিক মাল পছন্দ করতেন না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতা এজন্য যে, যারা কুফরী করে তারা বাতিলের অনুসরণ করে, আর যারা ঈমান আনে তারা তাদের রবের প্রেরিত হকের অনুসরণ করে। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন। আল-বায়ান
এর কারণ এই যে, যারা কুফুরী করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে, আর যারা ঈমান আনে তারা তাদের প্রতিপালকের প্রেরিত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের (মধ্যেকার পাপী এবং পুণ্যবানের) দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন। তাইসিরুল
এটা এ জন্য যে, যারা কুফরী করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে এবং যারা ঈমান আনে তারা তাদের রাব্ব হতে প্রেরিত সত্যেরই অনুসরণ করে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মুজিবুর রহমান
That is because those who disbelieve follow falsehood, and those who believe follow the truth from their Lord. Thus does Allah present to the people their comparisons. Sahih International
৩. এটা এজন্যে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে এবং যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের প্রেরিত সত্যের অনুসরণ করেছে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্তসমূহ উপস্থাপন করেন।(১)
(১) আয়াতের অন্য অর্থ হচ্ছে, এভাবে আল্লাহ তা'আলা উভয় দলকে তাদের অবস্থান সঠিকভাবে বলে দেন। তাদের একদল বাতিলের অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত চেষ্টা-সাধনাকে নিস্ফল করে দিয়েছেন। কিন্তু অপর দল ন্যায় ও সত্যের আনুগত্য গ্রহণ করেছে। তাই আল্লাহ তাদেরকে সমস্ত অকল্যাণ থেকে মুক্ত করে তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) এটা[1] এই জন্য যে, যারা অবিশ্বাস করেছে তারা মিথ্যার অনুসরণ করেছে এবং যারা বিশ্বাস করেছে তারা তাদের প্রতিপালক হতে (আগত) সত্যের অনুসরণ করেছে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। [2]
[1] ذَلِكَ এটি হয় ‘মুবতাদা’ (উদ্দেশ্য পদ) কিংবা ঊহ্য উদ্দেশ্য পদের বিধেয় পদ। أَيْ: الأَمْرُ ذَلِكَ এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে সেই সব শাস্তি ও অঙ্গীকারের প্রতি, যা কাফের ও মু’মিনদের জন্য বর্ণিত হয়েছে।
[2] যাতে মানুষ কাফেরদের জন্য বরাদ্দ পরিণাম থেকে দূরে থাকে এবং সেই সরল ও সঠিক পথ অবলম্বন করে; যে পথে চলে ঈমানদারগণ চিরন্তন সফলতা ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভে ধন্য হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতএব তোমরা যখন কাফিরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত কর। পরিশেষে তোমরা যখন তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করবে তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে নাও। তারপর হয় অনুগ্রহ না হয় মুক্তিপণ আদায়, যতক্ষণ না যুদ্ধ তার বোঝা রেখে দেয়*। এটাই বিধান। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তিনি কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করবেন না। আল-বায়ান
অতঃপর যখন তোমরা কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত হানো, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাস্ত কর, তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ কর। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। এ নির্দেশই তোমাদেরকে দেয়া হল। আল্লাহ ইচ্ছে করলে (নিজেই) তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান (এজন্য তোমাদেরকে যুদ্ধ করার সুযোগ দেন)। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় তিনি তাদের কর্মফল কক্ষনো বিনষ্ট করবেন না। তাইসিরুল
অতএব যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধে মুকাবিলা কর তখন তাদের গর্দানে আঘাত কর, পরিশেষে যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে পরাভূত করবে তখন তাদেরকে কষে বাঁধবে; অতঃপর হয় অনুকম্পা, না হয় মুক্তিপণ। তোমরা জিহাদ চালাবে যতক্ষণ না ওরা অস্ত্র নামিয়ে ফেলে। এটাই বিধান। এটা এ জন্য যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে অপরদের দ্বারা পরীক্ষা করতে। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তিনি কখনও তাদের আমল বিনষ্ট হতে দেননা। মুজিবুর রহমান
So when you meet those who disbelieve [in battle], strike [their] necks until, when you have inflicted slaughter upon them, then secure their bonds, and either [confer] favor afterwards or ransom [them] until the war lays down its burdens. That [is the command]. And if Allah had willed, He could have taken vengeance upon them [Himself], but [He ordered armed struggle] to test some of you by means of others. And those who are killed in the cause of Allah - never will He waste their deeds. Sahih International
* অর্থ যুদ্ধ বন্ধ হওয়া।
৪. অতএব যখন তোমরা কাফিরদের সাথে মুকাবিলা কর তখন ঘাড়ে আঘাত কর, অবশেষে যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত করবে তখন তাদেরকে মজবুতভাবে বাঁধ; তারপর হয় অনুকম্প, নয় মুক্তিপণ। যতক্ষণ না যুদ্ধ এর ভার (অস্ত্র) নামিয়ে না ফেলে। এরূপই, আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তিনি কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট হতে দেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) অতএব যখন তোমরা অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধে মোকাবিলা কর, তখন তাদের গর্দানে আঘাত কর,[1] পরিশেষে যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করবে, তখন তাদেরকে কষে বাঁধবে; [2] অতঃপর হয় অনুগ্রহ, না হয় মুক্তিপণ;[3] যে পর্যন্ত না যুদ্ধ তার অস্ত্ররাজি নামিয়ে ফেলে।[4] এটাই বিধান।[5] আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের নিকট হতে প্রতিশোধ নিতে পারতেন,[6] কিন্তু তিনি চান তোমাদের কিছুকে অপরদের দ্বারা পরীক্ষা করতে।[7] যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তিনি কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না। [8]
[1] উভয় দলের কথা উল্লেখ করার পর এখন কাফের এবং যে কিতাবধারীদের সাথে কোন চুক্তি হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। হত্যার পরিবর্তে গর্দান কাটার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে রয়েছে কাফেরদের সাথে চরম কঠোরতা প্রদর্শনের নির্দেশ। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[2] অর্থাৎ, তুমুল যুদ্ধ এবং তাদেরকে অধিকহারে হত্যা করার পর তাদের মধ্যে যারা তোমাদের হাতে ধরা পড়বে, তাদেরকে বন্দী করে শক্তভাবে বেঁধে রাখ। যাতে তারা পালাতে না পারে।
[3] مَنٌّ এর অর্থ হল, কোন বিনিময় না নিয়ে কেবল অনুগ্রহ করে ছেড়ে দেওয়া। আর فِدَاء এর অর্থ হল, কিছু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া। যুদ্ধবন্দীদের ব্যপারে এই স্বাধীনতা বা এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে যে, পরিস্থিতি ও অবস্থা অনুপাতে যেটাই ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সর্বাধিক উত্তম হবে, সেটাই অবলম্বন করা যাবে।
[4] অর্থাৎ কাফেরদের সাথে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। অথবা এর অর্থ এই যে, যুদ্ধরত শত্রু পরাস্ত হয়ে কিংবা সন্ধির আশ্রয় নিয়ে অস্ত্র রেখে দেয় অথবা ইসলাম বিজয়ী হয় এবং কুফরীর সমাপ্তি ঘটে। উদ্দেশ্য হল, এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া অবধি কাফেরদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ চলতেই থাকবে। তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে এবং যুদ্ধবন্দীদের ক্ষেত্রে উক্ত দু’টি সিদ্ধান্তই (মুক্তিপণ নিয়ে বা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া) তোমাদের এখতিয়ারাধীন থাকবে। কেউ বলেছেন, এই আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে; বিধায় এখন হত্যা ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে সঠিক কথা এই যে, আয়াতটি রহিত নয়, বরং অব্যাহত। সুতরাং শাসকের চারটি জিনিসের এখতিয়ার আছেঃ কাফেরদের হত্যা করবে, না হয় বন্দী। বন্দীদের মধ্যে কাউকে অথবা সবাইকে হয় অনুগ্রহ করে ছেড়ে দেবে, না হয় মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়বে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[5] কিংবা তোমরা এ রকমই করো। افْعَلُوْا ذَلِكَ বা ذَلِكَ حُكْمُ الْكُفَّار
[6] কাফেরদেরকে বিনাশ করে কিংবা শাস্তি দিয়ে। অর্থাৎ, তোমাদের তাদের সাথে যুদ্ধ করার কোন প্রয়োজনই পড়ত না।
[7] অর্থাৎ, তোমাদেরকে একে অপরের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে। যাতে তিনি জেনে নেন যে, তোমাদের মধ্যে তাঁর পথে মুজাহিদ কারা? যাতে তিনি তাদেরকে প্রতিদান দেন এবং কাফেরদেরকে তাদের হাতে পরাস্ত করেন।
[8] অর্থাৎ, তাদের পুণ্য ও পুরস্কার বিনষ্ট করবেন না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅচিরেই তিনি তাদেরকে হিদায়াত দিবেন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিবেন। আল-বায়ান
তিনি তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন আর তাদের অবস্থা ভাল করে দেন। তাইসিরুল
তিনি তাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দিবেন। মুজিবুর রহমান
He will guide them and amend their condition Sahih International
৫. অচিরেই তিনি তাদেরকে পথনির্দেশ করবেন(১) এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দিবেন।
(১) এখানে হেদায়াত করা বা পথপ্রদর্শনের অর্থ স্পষ্টত জান্নাতের দিকে পথপ্রদর্শন করা। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) তিনি তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেবেন। [1]
[1] অর্থাৎ, তাদেরকে এমন কাজের তাওফীক দান করবেন, যার ফলে তাদের জান্নাতের পথ সুগম হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। আল-বায়ান
অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন যা তাদেরকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তাইসিরুল
তিনি তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার কথা তিনি তাদেরকে জানিয়েছিলেন। মুজিবুর রহমান
And admit them to Paradise, which He has made known to them. Sahih International
৬. আর তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে জানিয়েছিলেন।(১)
(১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ এই আল্লাহর কসম, যিনি আমাকে সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, তোমরা দুনিয়াতে যেমন তোমাদের স্ত্রী ও গৃহকে চিন, তার চাইতেও বেশী জান্নাতে তোমাদের স্থান ও স্ত্রীদেরকে চিনবে [বুখারী: ৬৫৩৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার কথা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। [1]
[1] অর্থাৎ, কোন পথ প্রদর্শন ছাড়াই তা চিনে নিবে এবং যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা নিজে নিজেই আপন আপন ঘরে গিয়ে ঢুকে পড়বে। একটি হাদীস থেকেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়; যাতে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন; ‘‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! একজন জান্নাতীর তার জান্নাতের ঘরের পথের জ্ঞান দুনিয়ার ঘরের চেয়েও অনেক বেশী হবে।’’ (বুখারী, রিক্বাক অধ্যায়ঃ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন। আল-বায়ান
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন আর তোমাদের পাগুলোকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, if you support Allah, He will support you and plant firmly your feet. Sahih International
৭. হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় করবেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন[1] এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। [2]
[1] আল্লাহর সাহায্য করার অর্থ, আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করা। কারণ, তিনি উপায়-উপকরণ অনুযায়ী তাঁর দ্বীনের সাহায্য তাঁর মু’মিন বান্দাদের দ্বারাই করেন। এই মু’মিন বান্দারা আল্লাহর দ্বীনের সংরক্ষণ ও তার দাওয়াত-তবলীগের কাজ করেন তাই তিনি তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। অর্থাৎ, তাঁদেরকে কাফেরদের উপর জয়যুক্ত করেন। যেমন, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) ও প্রাথমিক শতাব্দীগুলির মুসলিমদের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে; তাঁরা দ্বীনের (খাদেম) হয়ে গিয়েছিলেন, ফলে আল্লাহও তাঁদের (সহায়) হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা দ্বীনকে বিজয়ী করলে, আল্লাহও তাঁদেরকে পৃথিবীতে জয়যুক্ত করেছিলেন। যেমন, তিনি অন্যত্র বলেন, {وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَنْصُرُه} (الحج: ৪০) অর্থাৎ, ‘‘আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে।’’ (সূরা হাজ্জ ৪০)
[2] এটা যুদ্ধের সময়। تَثْبِيْتُ أَقْدَامٍ এটা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতার অর্থেই বলা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, ইসলাম অথবা পুলসিরাতের উপর তাদের পা সুদৃঢ় রাখবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা কুফরী করে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আল-বায়ান
যারা কুফরী করে তাদের জন্য দুর্ভোগ আর তিনি তাদের কর্মকে বিনষ্ট করে দেবেন। তাইসিরুল
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কাজ ব্যর্থ করে দিবেন। মুজিবুর রহমান
But those who disbelieve - for them is misery, and He will waste their deeds. Sahih International
৮. আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দেবেন।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আল-বায়ান
তা এজন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে, কাজেই আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করেন। তাইসিরুল
এটা এ জন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কাজ নিস্ফল করে দিবেন। মুজিবুর রহমান
That is because they disliked what Allah revealed, so He rendered worthless their deeds. Sahih International
৯. এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা তা অপছন্দ করে।[1] সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দেবেন। [2]
[1] অর্থাৎ, কুরআন ও ঈমানকে তারা অপছন্দ করে।
[2] কর্মসমূহ বলতে এমন কর্মসমূহ, যা বাহ্যতঃ কল্যাণকর, কিন্তু তাদের ঈমান না থাকার কারণে তারা আল্লাহর নিকট তার কোন প্রতিদান পাবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতবে কি তারা যমীনে ভ্রমণ করেনি, তারপর দেখেনি যারা তাদের পূর্বে ছিল তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে এর অনুরূপ পরিণাম। আল-বায়ান
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি তাদের আগে যারা ছিল তাদের পরিণাম কী হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, কাফিরদের জন্য আছে অনুরূপ শাস্তি। তাইসিরুল
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম। মুজিবুর রহমান
Have they not traveled through the land and seen how was the end of those before them? Allah destroyed [everything] over them, and for the disbelievers is something comparable. Sahih International
১০. তবে কি তারা যমীনে ভ্ৰমণ করে দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল?[1] আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম। [2]
[1] যাদের বহু নিদর্শন তাদের এলাকায় বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় কোন কোন জাতির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নসমূহ বিদ্যমান ছিল। এই জন্য তাদেরকে ঘুরে-ফিরে তাদের ভয়ানক পরিণাম দেখতে বলা হয়েছে, যাতে তা দেখে তারা ঈমান নিয়ে আসে।
[2] এখানে মক্কাবাসীদেরকে ভয় দেখানো হয়েছে যে, তোমরা যদি কুফরী থেকে ফিরে না এস, তবে তোমাদের জন্যেও অনুরূপ শাস্তি হতে পারে এবং বিগত বহু কাফের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার ন্যায় তোমাদেরকেও ধ্বংস করে দেওয়া হতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান